STORYMIRROR

Rajkumar Mahato

Drama Tragedy Inspirational

4  

Rajkumar Mahato

Drama Tragedy Inspirational

ভালোবাসার বন্ধন

ভালোবাসার বন্ধন

3 mins
252

- কিরে তুই এই বছরও আসবি না?

- না বোন। এই বছরও ছুটি পেলাম না।

- এই নিয়ে দুই বছর হল, তুই আসছিস না। আমি রাখি পাঠাই আর তুই খালি রাখি পড়া হাতের একটা ছবি পাঠাস। একটা পুরো ছবি পাঠাস না দাদা। কতদিন দেখিনি তোকেরে।

- আচ্ছা। তুই কিন্তু আজকেই রাখিটা কোরিয়ার করে দিস। তা নাহলে আমি ঠিক দিনে রাখিটা পাবনা।

- আচ্ছা। ভালো ভাবে থাকিস। তোকে যেন দেখতে পাই তাড়াতাড়ি। 

ফোনটা রেখে দিল রমজান।সীমান্তে থাকা রমজান আজ দু বছর সোনালির দাদা সুব্রত হয়ে উঠেছে। 

সুব্রত হয়ে আজ দু বছর রমজান সোনালির পাঠানো রাখি পড়ে। আর শুধু কব্জি অবধি ছবি পাঠায় সোনালিকে। আর সোনালি সেটা দেখেই খুশি হয়ে যায়।


গত তিন বছর আগের কথা। আগাগোড়াই সোনালি তার দাদার খুব কাছের। মাঝে মাঝে একটু আধটু খুনসুটি হলেও তাদের ভালোবাসায় কোন কমতি আসেনা। 

তারপর সুব্রতর সৈনিক হয়ে দেশের জন্য লড়তে যাওয়া। তবে প্রায় প্রতি বছর সে রাখির দিনে অন্তত ফিরে এসে বোনের হাত থেকে রাখিটা পড়ত। 

সুব্রতর খুব কাছের বন্ধু রমজান। দিনে দশ বার সুব্রত নিজের বোনের কথা বলত রমজানকে। রমজানের নিজের কোন বোন নেই। তাই সে মনে মনেই সোনালিকে নিজের বোন মানতে থাকে।

সুব্রত বাড়ি আসার সময় তার হাতে অনেক জিনিস পাঠিয়ে দিত রমজান। আর সোনালি সেই সব জিনিস পেয়ে ফোন করে রমজানকে কত ধন্যবাদ দিত।

- ভাইজান দাদার সাথে তুমি এলেনা কেন?

- ছুটি দিলনা রে বোন। ও তো রাখির জন্য ছুটি পেয়ে গেল আমিই পেলাম না।

- দাদার হাতে রাখি পাঠাব। পড়ে আমাকে ছবি পাঠিও। কেমন?

- হ্যাঁ, অবশ্যই।

সুব্রতর হাতে পাঠানো রাখি পড়ে কব্জি অবধি ছবি পাঠাত রমজান সোনালিকে। 

সেবছর কারগিলে যুদ্ধ চলছে তাই রাখিতেও ছুটি পায়নি সুব্রত। যখন শয়ে শয়ে ভাইরা মরছে তার বোনেরা দিদিরা রাখি নিয়ে বাড়িতে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। 

আর মাত্র একদিন বাকি রাখি বন্ধনের। যুদ্ধের সময় বন্দুক হাতে বালির বস্তার আড়ালে থেকে সুব্রত রমজানকে বলল - ভাই আমার বোনটা আমায় খুব ভালোবাসে রে। আমার যদি কিছু হয়ে যায় ওকে একটু দেখিস তুই। মন থেকে দাদা মানে ও তোকে।

- চিন্তা করিসনা ভাই। আছি তো। তোর কিছু হবেনা। 

সঙ্গে সঙ্গে একটা বিকট শব্দ। আর ওপার থেকে আসা বুলেটটা সুব্রতর বুকের এফোড় ওফোড় হয়ে গেল। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সুব্রত। 

কারগিল তো আমাদের হয়ে গেছিল কিন্তু শয়ে শয়ে বোন দিদিরা তাদের রাখি পড়েনোর জন্য হাতটা হারিয়েছিল।

সুব্রতর দেহটা তার পরদিন বাড়িতে নিয়ে এল রমজানেরা। সেইদিন রাখি বন্ধন। তখনও সোনালি রাখি নিয়ে অপেক্ষা করছে। সে মানতেই চাইছে না তার ভাই আর নেই। শেষ দেখাও দেখেনা সে সুব্রতকে। বড় মানসিক আঘাত পেয়ে শুরু হয় তার চিকিৎসা। সেই তখন থেকে রমজান হয়ে উঠেছে সুব্রত। আর সোনালি রমজানকেই নিজের দাদা ভেবে এখনও রাখি পাঠায়। আর রমজান সেটা পড়ে ছবি পাঠায় সোনালিকে।


রাখি বন্ধন কেবল ভাই বোনের বন্ধন না। ভালোবাসার বন্ধন। তাই দুটি ধর্মকেও এক করার সাহস রাখে সে। 


তবে রমজানের মনে একটা ভয় যেদিন সোনালি ঠিক হয়ে যাবে সেদিন থেকে কি সে তার বোনকে হারাবে। হয়ত না। এই বন্ধনটা হয়ত অতটাও ঠুনকো হবে না। এযে ভালোবাসার বন্ধন, রাখি বন্ধন। 



ಈ ವಿಷಯವನ್ನು ರೇಟ್ ಮಾಡಿ
ಲಾಗ್ ಇನ್ ಮಾಡಿ

Similar bengali story from Drama