The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sucharita Das

Romance Classics

3.4  

Sucharita Das

Romance Classics

ভালোবাসা

ভালোবাসা

7 mins
284


"তৃনা তোকে এত সুন্দর দেখতে, কলেজের সব হ্যান্ডসাম ছেলেরা তোর জন্য পাগল। অথচ তুই কাউকেই পাত্তা দিস না। কেন বল্ তো?কলেজ জীবনে ওরকম একটা আধটা মিথ্যে প্রেম তো সবাই করে। এই আমাকেই দেখ্, নীলেশ, দিব্যেন্দুরা আমাকে কিছু খাওয়াতে পারলে ধন্য হয়ে যায়। আমিও বেশ ওদের সঙ্গে গিয়ে ফুচকা,আলুকাবলি, এটা,ওটা খেয়ে আসি। ওরাও খুশি আমিও খুশি। কারুর মনে কি দুঃখ দিতে আছে বল? অথচ তুই একটা মেয়ে হয়েছিস, শুধু কলেজ আর বাড়ি। এর বাইরে তোর তৃতীয় কোনো জীবন নেই যেন। কি করে পারিস বল্ তো? ইংলিশের নতুন প্রোফেসরও তো ক্লাস করতে করতে সেদিন তোর দিকেই দেখছিল বারবার। মনে হচ্ছে দু দিনেই তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আর তুই? আরে বাবা অ্যাট লিস্ট একটা প্রেমও তো করতে পারতিস বল্।" পায়েলের কথায় তৃনা কোনো গ্ৰাহ্য না করেই বললো,"পরে আমার প্রেম কাহিনী নিয়ে ভাববি, এখন তাড়াতাড়ি পা চালা। না হলে বাস পাব না।" বলেই তৃনা এগিয়ে গেল বাস স্ট্যান্ডের দিকে। পায়েলও ওর পিছনে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটতে শুরু করলো। আকাশটাও মেঘলা হয়ে আছে। কে জানে বৃষ্টি হবে কিনা। বাসে উঠে দুই বান্ধবী জানলার ধারের একটা সিটে বসলো। তৃনা আনমনে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে। কালো মেঘে আকাশটা ঢেকে গেছে। তৃনা পায়েল কে বললো, এখনই বৃষ্টি নামবে, ছাতাও তো নিইনি আজ দুজনে। ভিজে যাব একেবারে। পায়েল নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, "জলের সঙ্গে সিক্ত বসন/অঙ্গে লেপ্টে থাকুক/ দেহের ভাঁজে বৃষ্টি ফোঁটা/প্রেমের নকশা আঁকুক।" তৃনা ওর পিঠে আলতো হাতে মেরে বললো," অনেক কাব্য হয়েছে তোর, এবার চল্ পায়েল। বৃষ্টি নামবে এবার সত্যিই।


তৃনারা এই পাড়াতে নতুন বাড়ি করে এসেছে। মফঃস্বল এলাকা, শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, অথচ সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা আছে। ওর বাবা রিটায়ারমেন্টের পর থাকবার জন্য এরকমই একটা জায়গা খুঁজছিল। এখান থেকে তৃনার কলেজ বাসে করে পনেরো মিনিটের মতো। সেভাবে এখনও কারুর সঙ্গে চেনাজানা হয়নি এ পাড়ায়। তৃনা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাঁটছিলো বাস থেকে নেমে। হঠাৎই ওর সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। তৃনা একটু ভয় পেয়ে গেল। একে মেঘলা আবহাওয়া, ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে, লোকজনও সেভাবে নেই রাস্তাঘাটে। তার মধ্যে এইরকম অচেনা কোনো গাড়ি সামনে এসে দাঁড়ালে ভয় তো পাবেই। তৃনা এগিয়ে যেতে গেল। হঠাৎই গাড়ির দরজা খুলে যে বেরিয়ে এলো, তাকে তৃনা এইভাবে দেখবে ভাবতে পারেনি। ওদের কলেজের নতুন ইংলিশের প্রোফেসর দিব্যজ্যোতি সেন ওর সামনে দাঁড়িয়ে। তৃনা ক্লাস করতে করতে অত ভালো করে দেখেনি। এখন দেখলো, বেশ সুদর্শন চেহারা, বয়সও কম। ধূর,ও এসব দেখছেই বা কেন, আর ভাবছেই বা কেন ওই প্রোফেসরকে নিয়ে। চোখাচোখি হতে ও একটু হেসে এগিয়ে যেতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সামনের ব্যক্তিটি গম্ভীর গলায় বললো,"গাড়িতে ওঠো, বাড়িতে ছেড়ে দিচ্ছি।" তৃনা গাড়িতে উঠতে গিয়েও ভাবলো,"কেন উঠবে ও অচেনা কারুর গাড়িতে এ ভাবে?" সামনের ব্যক্তিটি বোধহয় ওর মনের কথা বুঝতে পেরে গিয়েছিল, বললো," তোমরা যে পাড়াতে এসেছো, ওখানে আমরা কুড়ি বছর ধরে আছি। ওখানেই আমার বাড়ি। এবার বুঝলে তো কেন নিয়ে যেতে চাইছি।" সামনের ব্যক্তিটির বলার মধ্যে এমন কিছু ছিল, যে তৃনা আর আপত্তি করতে পারলো না। গাড়িতে উঠে বসলো।




এর দু তিন দিন পর কলেজে পায়েল কে কথাগুলো বলতেই পায়েল বড় বড় চোখ করে খুব আগ্ৰহের সঙ্গে তৃনার সব কথা শুনে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো, "আমার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে/ রাখো তোমার হাত/ শেষ বিকালে শুরু হোক/ প্রেমের ধারাপাত।" তৃনা ওকে বললো, "আবার শুরু হয়ে গেলি তুই।" মুখে তৃনা পায়েল কে যাই বলুক, ও নিজেও লক্ষ্য করেছে, সেদিনের পর থেকে ওদের ইংলিশের প্রোফেসর দিব্যজ্যোতি সেন ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। ক্লাসেও মাঝে মাঝেই ওর দিকে এমনভাবে দেখে, সবাই বুঝতে পারে সেটা। তৃনা তো লজ্জায় সোজাসুজি তাকিয়ে থাকতেও পারে না ওর দিকে।কেমন যেন একটা অজানা লজ্জাবোধ ওকে ঘিরে রেখেছে। আর পায়েলটার প্রেম বর্ণনা তো এমনিতেই শুরু হয়ে যায়। সেদিন ওরা দুজন বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই ওদের সামনে দিব্যজ্যোতি সেনের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। পায়েল তৃনাকে জোরে চিমটি কেটে বলে, "দেখেছিস তো, আমি ঠিকই বলেছিলাম, তোর প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছেন আমাদের প্রোফেসর মশাই।" দিব্যজ্যোতি ওদের দুজনকে উঠে আসতে বললো গাড়িতে। পায়েল কে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে , তৃনা কে সঙ্গে নিয়ে দিব্যজ্যোতি বাড়িতে যাবার সময় বললো," বিয়ে করবে আমাকে? তুমি যদি রাজি থাকো, তাহলে ভবিষ্যতে বাড়িতে বলবো, তোমার বাবা, মায়ের সঙ্গে কথা বলবার জন্য। এখনই নয়, তিন, চার বছর পর।" এইভাবে হঠাৎ করে, এক দু দিনের পরিচয়ে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে বলে তৃনার জানা ছিলো না। ও কিছু বললো না। মন দেওয়া নেওয়ার সম্পর্কে তৃনা কখনও বিশ্বাসী ছিল না, আজও নেই। চট্ করে প্রেমে পড়ে যাওয়া, না জেনে বুঝে কারুর ভালোবাসায় হাবুডুবু খাওয়া, এসব ব্যাপারে তৃনা একেবারেই বিশ্বাসী নয়। আর ঠিক সেই কারণেই সে এখনও একা। কিন্তু এই মুহূর্তে মুখে সে যাই বলুক না কেন, প্রোফেসর দিব্যজ্যোতি সেনের আবির্ভাব ওর জীবনে সবকিছুই ওলট পালট করে দিচ্ছে যে। এটা ভালোবাসা নাকি নিছকই ভালোলাগা ? তৃনাকে নিরুত্তর দেখে দিব্যজ্যোতি আবার বললো,"শুধু এই টুকু বলো তোমার জীবনে কি অন্য কেউ আছে?" তৃনা এই কথার উত্তরে 'না' বলেছিল শুধু। এই মুহূর্তে তৃনার বুকের ভেতর যেন শত হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ হচ্ছিল। দরদর করে ঘামছিল ও। এক অজানা ভয়, লজ্জাবোধ, ভালোলাগার অনুভূতিতে তৃনার মনে শিহরণ জেগে উঠেছিল। যে অনুভূতি এর আগে কখনও হয়নি ওর । তাহলে কি ও নিজেও দিব্যজ্যোতির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে? দিব্যজ্যোতি ওর নরম হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,"ভালোবাসি তোমাকে। সারা জীবন আমার করে রাখতে চাই"। তৃনা কোনো উত্তর দিলো না। ভালোবাসার স্পর্শে ও বিহ্বল তখন। দিব্যজ্যোতির হাতের মুঠোয় বন্দী ওর নরম হাতদুটো তখন ভিজে যাচ্ছিলো,ওর চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। আর তৃনার তখন পায়েলের কথাগুলো মনে পড়ছে----

"জলের সঙ্গে সিক্ত বসন/অঙ্গে লেপ্টে থাকুক/দেহের ভাঁজে বৃষ্টি ফোঁটা/প্রেমের নকশা আঁকুক।



 এর মাঝে কেটে গেল আরো তিন বছর। সত্যি সময় যে কখন নদীর স্রোতের মতো চলে যায়, সেটা বোঝা যায় না। তৃনার এ বছর মাস্টার্স কমপ্লিট হলো। ওর খুব ইচ্ছা কলেজে লেকচারার হিসাবে জয়েন করবার। তার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে ও যথাসাধ্য। দিব্যজ্যোতি ওকে এ ব্যাপারে সবরকম সাহায্য করবে আশ্বাস দিয়েছে। প্রেম, ভালোবাসায় অবিশ্বাসী তৃনার মনে কবে যে দিব্যজ্যোতি সেন নিজের একটা পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে, সেটা তৃনা নিজেও বুঝতে পারেনি। আসলে পবিত্র ভালোবাসার মধ্যে একটা অদ্ভুত জোর আছে। যার স্পর্শে মানুষ দিন দিন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখে। পায়েল তো সেদিন কথায় কথায় ওকে বলেও দিলো,"আমাদের তৃনা কি তাহলে এবার প্রোফেসর দিব্যজ্যোতি সেনের রাস্তাতেই হাঁটতে চাইছে। প্রোফেসর মশাই ভালোই মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন তৃনা দেবীকে। তৃনা লজ্জা পেয়ে পায়েল কে বললো, " জানিনা ,তবে দিব্যজ্যোতি সেন আমাকে এটা শিখিয়েছে যে, ভালোবাসলে মানুষ দুর্বল হয়ে যায় না সবসময়, বরং ভালোবাসা মানুষকে সমৃদ্ধ করে সবদিক থেকে। আসলে দিব্যজ্যোতি সবসময় চেয়েছে তৃনা জীবনে এগিয়ে চলুক। আর ঠিক সেই কারণেই তৃনা দিনের পর দিন মনে মনে আকৃষ্ট হয়েছে দিব্যজ্যোতির প্রতি। জোর করে ভালোবাসায় বিশ্বাসী না দিব্যজ্যোতি সেন। কারণ ভালোবাসা কখনও জোর খাটিয়ে হয় না। নিজের ভদ্র স্বভাব আর প্রকৃত ভালোবাসা দিয়ে দিব্যজ্যোতি তৃনার মনের অন্তঃপুরে অনেক দিন আগেই একটা পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে।




সেদিন তৃনাকে ফোন করে দিব্যজ্যোতি বললো,"আজ একবার কলেজ ছুটির পর দেখা করতে পারবে? কিছু কথা বলার আছে।" তৃনা সম্মতি জানালো। কলেজ ছুটির পর বাইরে অপেক্ষা করছিল তৃনা। দিব্যজ্যোতি নিজের গাড়িতে ওকে তুলে নিলো। একটা পার্কে গিয়ে ওরা কিছুক্ষণ বসলো। দিব্যজ্যোতি ওকে বললো,"এবার কি বিয়ের জন্য কথা বলতে বলবো বাড়িতে ? বিয়ের পর চাকরিতে জয়েন করলে তোমার আপত্তি নেই তো?" তৃনা 'হ্যাঁ' বললো। দিব্যজ্যোতি ওর হাত দুটো ধরে বললো,"থ্যাংক য়ু। এতদিন আমাকে ভরসা করে থাকার জন্য।" তৃনা যত দেখছে এই মানুষটাকে অবাক হয়ে যাচ্ছে। সেই প্রথম দিন থেকে এই মানুষটা কখনও শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেনি। এত ভদ্র, সভ্য, সুপুরুষ তো যে কোনো মেয়েরই কাম্য। সত্যিই সে ভাগ্যবতী। পরদিন কলেজে পায়েল কে সব কথা জানাতেই পায়েল ওকে জড়িয়ে ধরলো আনন্দে।



দু বাড়ির সম্মতিতে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল। বিয়ের দিন তৃনাকে ভীষণ সুন্দর লাগছিল লাল বেনারসীতে‌। দিব্যজ্যোতির পছন্দেই তৃনা বিয়ের জন্য লাল বেনারসী নিয়েছিল। দিব্যজ্যোতির মতে, বিয়ের দিন কনেকে লাল বেনারসীতে যতটা সুন্দর লাগে, অন্য রঙে নাকি ততটা সুন্দর লাগে না। আর তাই দিব্যজ্যোতির ইচ্ছানুযায়ী তৃনা নিজেকে লাল বেনারসীতে সাজিয়েছিল। শুভদৃষ্টির সময় দুটো মুগ্ধ চোখের দৃষ্টি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। দুটো হৃদয় বিবাহের পবিত্র মন্ত্রোচ্চারনের মধ্যে দিয়ে একে অপরকে আপন করে নিয়েছিল। 

বউভাতের দিন তৃনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। দিব্যজ্যোতি বারবার তৃনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল। আজকের রাতটার জন্য সে কত বছর অপেক্ষা করেছিল। ওদের ফুলশয্যার ঘরে দিব্যজ্যোতি তৃনার মুখটা নিজের দুহাতে বন্দী করে বললো,"তুমি জানো না কতো অপেক্ষা করেছিলাম এই দিনটার জন্য। একদিনের জন্যও তোমাকে না ভেবে থাকিনি। আমাদের অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতাম আমি প্রত্যেকটা মুহূর্ত। খুব ভালোবাসি তোমাকে তৃনা।" দিব্যজ্যোতির দু হাতে বন্দী তখনও তৃনার মুখ। তৃনার চোখদুটো তখন এক পরম সুখানুভূতির আবেশে বন্ধ হয়ে আসে। নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে আত্মসমর্পণে যে এত সুখ, তা তৃনা আগে জানতো না। ওর শুধু একটা কথাই তখন মনে পড়ছে----

ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তারে,

ভালোবেসে ভালোবাসা আপন করে যারে


     

           





  








Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance