Mystic Writer🥀 খামখেয়ালি

Abstract Fantasy Others

4.0  

Mystic Writer🥀 খামখেয়ালি

Abstract Fantasy Others

ভালো আছি

ভালো আছি

6 mins
202


বাইরে ঝমঝমিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, ঝড়ো হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে গাছের ডালপালা। দূরে কোথাও বজ্রপাত হচ্ছে মনে হয় মাঝে মাঝে আওয়াজ ভেসে আসছে। বাইরের পরিবেশ যাই হোক না কেন ঘরের ভিতর বিরাজ করছে পিনপতন নিস্তব্ধতা। ঘরের একটা কোনে জড়ো সড়ো হয়ে বসে আছে একটা ছেলে। হাত থেকে ঝরে পড়ছে লাল রঙের তরল পদার্থ। চোখের কোনে হালকা জলও চিকচিক করছে। কিন্তু কথায় আছে না পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই তাই বারবার চোখ মুছে নিতে চাইছে ছেলেটা কিন্তু আজ চোখের জল বড্ড অবাধ্য হয়ে ঝড়ে পড়ছে তার তার গাল বেয়ে। 

ছেলেটার মন আজ বড্ড অশান্ত। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো।  

        কলেজের করিডোর দিয়ে ছুটে চলেছে একটি মেয়ে। একটা ক্লাসের সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল মেয়েটি। উপরে বড় বড় করে লেখা ইউনিয়ন রুম।  

   একবার উঁকি মেরে দেখল ভিতরে তারপর ঢুকে সোজা একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটাও হঠাৎ এমন কাণ্ডে অবাক হয়ে গেছে। কিছু একটা আন্দাজ করে পিছনে ঘুরে দেখল মেয়েটাকে তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো। 

      মেয়েটা একটু রেগে ছেলেটাকে তার দিকে ফেরালো,

- মেঘ! তুমি না খুব বাজে। আমাকে ইগনোর করছো? সাহস তো কম নয় তোমার।

- তোমাকে ইগনোর কেন করতে যাব তুমি এভাবে আচমকা জড়িয়ে ধরলে মানুষ ভয় পায় তো নাকি?

- রাখো তো তোমার ভয় তোমার কাছে! পুরো মুডটাই নষ্ট করে দিলে। 

- কি হয়েছে বলো তো! তোমার ড্রামা শেষ হওয়ার নয়। ড্রামা কুইন! 

- তোমারই তো ড্রামা কুইন। 

- বল এবার ব্যাপারটা কি? 

- ব্যাপারটা হল... যে... 

- এত সাসপেন্স ক্রিয়েট করো না তো বলো ব্যাপারটা কি! 

- আগামী মাসে সৃষ্টি

দিদিভাইয়ের বিয়ে! 

- কী? ওয়াও! আর ও আমাকে বলেনি ধোকেবাজ কোথাকার! 

- আরে দাঁড়াও দাঁড়াও! ও বলবে কিন্তু জানতে পারলে। 

- মানে? 

- মানে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড জানেনা যে তার মনের মানুষের সাথেই তার বিয়ে ঠিক হয়েছে! ইন ফ্যাক্ট ওর বিয়ে বলেও ওকে জানানো হয়নি। 

- ওহো সারপ্রাইজ! 

- হ্যাঁ! 

- যাই হোক আমাদেরও দিন আসছে! তোমার দিদির বিয়েটার পর আমাদেরও কিছু একটা হওয়ার চান্স আছে। 

    কথাটা শুনেই মেয়েটার হাসি মিলিয়ে গেল। মুখটা মলিন হয়ে এল। মনে মনে বলল,

    "যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। দিদিভাইয়ের বিয়ের পরেই। "

    তারপর মুখে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে বলল, 

- কলেজ তো শেষ চলো নদীর পাড়ে যাব। 

- আচ্ছা চলো। 

   বলেই মেয়েটার হাতটা ধরে বেরিয়ে চলে গেল কলেজ থেকে।


      একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে গিয়ে বসে আছে মেঘ ও তার বৃষ্টি। অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বৃষ্টি প্রথম বলে উঠলো, 

- যদি আমি কোনদিন হারিয়ে যাই তখন তুমি কি করবে মেঘ? 

- তোমাকে কোনদিন হারাতেই দেবো না! বেঁধে রাখবো নিজের কাছে। 

    বলেই বৃষ্টির হাতের উপর হাত রাখল মেঘ। মেঘের কাঁধে মাথা রেখে অনেকক্ষণ বসে থাকলো বৃষ্টি অস্তগামী সূর্যের পানে চেয়ে। 

    আশেপাশে কোথাও একটা জোরে বাজ পড়ার আওয়াজে বাস্তবে ফিরে এলো মেঘ। এবার সে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, 

   " কেন করলে বৃষ্টি এটা তুমি? কেন কেন কেন? কি দোষ করেছিলাম আমি? একবার কি আমাকে সব সত্যিটা বলা যেত না? তুমি এটা একদম ঠিক করোনি বৃষ্টি একদম না! " 

  বৃষ্টির আওয়াজের সাথে সাথে ওর গলার স্বর ও মিলিয়ে গেল এই বদ্ধ দরজার মাঝে। কেউ টের পেল না এই ভেঙে যাওয়া হৃদয়ের। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠল আজকে সৃষ্টির সাথে দেখা হওয়া মুহূর্তটা। 


   অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফেরার পথে দেখা হয়ে যায় বৃষ্টির বোন সৃষ্টির সাথে। একটা সময় বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল দুজনে আর এই কয় বছর কোনরকম কোন কন্টাক্ট রাখেনি কেউ কারোর সাথে। সৃষ্টির বিয়ের পর থেকেই তো এই আমূল পরিবর্তন। প্রথমে মেঘ ভেবেছিল যে এটা হয়তো সৃষ্টির ম্যারেড লাইফের কারণে কিন্তু পরে বুঝতে পারল না এটা তা নয়। কারণ সৃষ্টি মেঘকে ছাড়া বাকি বন্ধুদের সাথে কন্টাক্ট রেখেছিল। আজ হঠাৎ বেস্ট ফ্রেন্ডকে সামনে দেখে নিজেকে আটকাতে পারে নি মেঘ  ছুটে গিয়েছিল সৃষ্টির কাছে তাকে জিজ্ঞেস করতে,

     "এতদিন কোথায় ছিলি কন্টাক্ট কেন রাখিস নি দুই বোন? তোরা না আমাকে বড্ড জালাস। আর শোন বৃষ্টি কে বলিস আমি রাগ করেছি। আর আমার অভিমান এবার এত তাড়াতাড়ি ভাঙবে না। "

  সৃষ্টি যে মেঘ কে এখানে আশা করেনি সেটা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মেঘের এরকম কথা শুনে কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে বলে উঠলো, 

    "আর কি করবো বল বিয়ের পরে তো আর সময়ই হয় না।" 

     " মিথ্যে বলিস না সৃষ্টি তোর বিয়ের পর থেকে বৃষ্টি আমার সাথে কন্টাক্ট করছে না তুই আমার সাথে কন্টাক ছিন্ন করলি যেখানে আমাদের বাকি বন্ধুদের সাথে তো তুই কন্টাক্ট রেখেছিস! কারণটা কি? আর বৃষ্টি সে কোথায়? তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম আমি ওখানে আমাকে বলল তোর বাবা মা বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছে। "

     " দেখ মেঘ আমি তোকে তেমন কিছু বলতে পারব না কারণটা বলতে পারিস একান্ত ব্যক্তিগত।"

     " তুই আমার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দেখাচ্ছিস আমি বৃষ্টি কে ভালবাসতাম। সৃষ্টি এটা তুইও জানিস। নিজের থেকেও বেশি ভালবাসতাম তাকে আর তুই আজকে এই কথা বললি? "

     " হাইপার হোস না মেঘ শোন আমি বলছি। আমি তোকে বেশি কিছু বলতে পারব না এটা রাখ অনেক দিন থেকেই তোকে দেবো ভাবছি কিন্ত তোর সামনে যাওয়ার সাহস হয়ে ওঠেনি ।" বলেই একটা লেটার ওর হাতে ধরিয়ে চলে গেছিলো সৃষ্টি। 

     প্রথমে প্রচন্ড রাগ হলেও যখন লেটারটা খুলে দেখলো প্রথমে স্তব্ধ হয়ে গেছিল মেখ। কারণ এটা ছিল বৃষ্টির তার মেঘ কে লেখা একটা লেটার।


  "প্রিয় মেঘ 


       আমি জানি হয়তো তুমি এই লেটারটা পেয়ে অবাক হয়েছো কিন্তু কি করবো বলো তোমার সামনে তো যেতে পারবো না আমি। আমি জানি আমি তোমার সাথে হঠাৎ করে কন্টাক্ট ছিন্ন করেছিলাম তার কারণটা আমি তোমাকে আজ বলতে চাই। না আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি না তোমাকেই ভালোবাসি আজও। কিন্তু কি করবো বলো কিছু করার ছিল না। আমি তো তোমার সাথে নিজের জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সবার ইচ্ছা তো সবসময় পূরণ হয় না। তাই হয়তো আমার ইচ্ছাটাও ইচ্ছাই রয়ে গেল। আমার ভাগ্যে হয়তো এটাই লেখা ছিল। হয়তো তুমি ভাবছো এত ভালবাসার পরও আমি কেন তোমার সামনে আসছি না তাই তো? কিন্তু কি করবো বলো আমি তো আর এই দুনিয়াতে নেই। হ্যাঁ মেঘ তুমি ঠিক দেখছো আমি এই দুনিয়াতে নেই। দিদির বিয়ের কিছুদিন আগেই জানা যায় যে আমার ক্যান্সার হয়েছে থার্ড স্টেজ। কারো কিছু করার ছিল না। আমি জানতাম তুমি এটা জানলে খুব ভেঙে পড়বে। তাই আমি তোমাকে জানতে দিইনি। দিদির বিয়েটা ওই কারণে খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়েছিল। না এটা সত্যি যে দিদিভাই কিছুই জানতো না কিন্তু এটা জানত আমার ক্যান্সার হয়েছে। তোমাকে যাতে সত্যিটা না বলে তাই আমি ওকে বলেছিলাম যাতে তোমার সাথে কন্টাক্ট না রাখে। ও প্রতিজ্ঞা করেছিল আমার কাছে তাই ভাঙতে পারে নি। সরি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে তোমার থেকে দূরে রাখার জন্য। কিন্তু কি করবো বলো আমি যে তোমার ভেঙে পড়া মুখটা দেখতে পারতাম না তাই তোমার থেকে লুকিয়ে গেছিলাম কথাটা। আমি জানিনা আমার মৃত্যুর কতদিন পর তুমি এই চিঠিটা পেয়েছো কিন্তু আমি অসহায়। আমার ভাগ্যে যেটা লেখা ছিল না তা কি করে হতে পারে বলো? তবুও অনেক চেষ্টা করেছিলাম তোমার কাছে ফিরে আসার অনেক লড়াই করেছিলাম হসপিটালের বেডে শুয়ে কিন্তু পারলাম না। আমার শেষ রক্ষা হলো না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। প্লিজ আমার জন্য নিজের লাইফটা নষ্ট করো না। যখন কোন ভালো জীবনসঙ্গী পাবে তাকে বিয়ে করো। একটা ভালো সংসার করো। আমি হয়তো তোমার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারিনি কিন্তু হ্যাঁ আমি ফিরে আসব! কথা দিলাম অবশ্যই ফিরে আসবো তোমার মেয়ে হয়ে। আমায় ভুলে যেও না। খুব ভালোবাসি তোমায়। 


ইতি         

তোমার বৃষ্টি "     


      সে লেটারটা পাওয়ার পরের থেকে খুব ভেঙ্গে পড়েছিল মেঘ কিন্তু না সে হারতে চায়নি। পরে জানতে পেরেছিল মেয়ের শোকে ওই বাড়িটা বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে গেছিলেন বৃষ্টির বাবা মা। কারন ওই বাড়িতে থাকলে বৃষ্টির মা শক টা কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। প্রথমে ভেঙে পড়লেও সে বৃষ্টির কথা রেখেছে। তার বিয়েও হয়েছে একটা নতুন সংসারও করেছে। আর আজ ওর একটা মেয়েও হয়েছে। হ্যাঁ বৃষ্টি ফিরে এসেছে বৃষ্টি তার কথা রেখেছে।

    "জানতাম বৃষ্টি তুমি অবশ্যই আসবে। বৃষ্টি তার মেঘ কে কথা দিয়েছে তা সে কোনদিন ভাঙবে না। দেখো বৃষ্টি দেখো আমি তোমার কথা রেখেছি। আমি বিয়ে করেছি। দেখো আমি খুব ভালো আছি। "


       কিছু ভালোবাসা হয়তো এমনই হয় চাইলেও একসাথে থাকা যায় না। কিন্ত ঠিক কোন না কোন উপায়ে ফিরে আসে আমাদের কাছে। হ্যাঁ সে ফিরে আসে বার বার বারম্বার। 


             ***************



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract