ভাগ্যের পরিহাস
ভাগ্যের পরিহাস
"মাম্মাম ও মাম্মাম কোথায় তুমি? এসো না আমার কাছে দেখো আমার কত জ্বর এসেছে....মাথাটাও ব্যথা করছে ...তুমি আসবে না মাম্মাম ও মাম্মাম? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মাম্মাম..এসো তাড়াতাড়ি চলে এসো.. "
জ্বরের ঘোরে ছোট্ট 5 বছরের তৃষা অনবরত মা কে ডেকে চলেছে। পেশায় তিনি একজন IPS ।অথচ বছর দুই আগে তৃষার মা তাকে আশ্রমে রেখে চলে গিয়েছেন। কন্যা সন্তান হওয়ার তীব্র যন্ত্রণা তাকে প্রতিমুহূর্তে গ্রাস করছে। ছোট্ট তৃষা সর্বক্ষণ তার মাকে খুঁজে বেড়ায়। আশ্রমের জবা দিদি তাকে খুব ভালবাসে। ছোট থেকেই নিজের সন্তানের মতোই তৃষা কে আগলে রেখেছেন। এই দুই বছরে তিনি তৃষাকে অত্যন্ত মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছেন। অন্য বাচ্চাদের প্রতি তার এতটা মায়া কখনো পড়েনি। প্রায় 10 বছর ধরে তিনি এই আশ্রম এ কাজ করছেন । প্রতিবছর কোন না কোন বাচ্চা অবশ্যই আসে ,তবে তাদের কারও প্রতি কখনো মায়া সৃষ্টি হয়নি জবা দেবী র।
14 বছর বয়সে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর পরিবার তাকে ত্যাগ দিয়েছেন।তাই তারপর থেকে তিনি আশ্রমেই আছেন। আজ তার বড় সাধ জেগেছে মা ডাক শোনার। কিন্তু তার কাছে বিবাহের কোন উপায় নেই আর বর্তমান মানব সমাজ পতিতা নারীদের প্রতি একটু বেশি সবল। তাই তিনি ঠিক করেছেন , তৃষাকে দত্তক নেবেন। একটা ছোট্ট বাড়ি ভাড়া করে সেখানে দুজনে থাকবে। অনেক ভালোবাসা আদর যত্ন স্নেহ দিয়ে তৃষাকে বড় করে তুলবেন।
......................
কল্পনার জগত থেকে বাইরে পা দিয়ে তিনি বাস্তবের ভিড়ে মিশে গেলেন। সকালে উজ্জ্বল সূর্যের স্নাতক আলোতে গা ভাসিয়ে তিনি তৈরি হলেন। আশ্রমের হেড অফ দা চাইল্ড ডিপার্টমেন্ট এ কথা বললেন এবং সেখান থেকে জবা দেবীর আরজি মেনে নেওয়া হলো।
.............
অবশেষে দুর্গা কলোনির অত্যন্ত গভীর একটি ছোট্ট ঘর থেকে আওয়াজ শোনা গেল
" কি হয়েছে সোনা? এইতো আমি মাম্মাম এসে গেছে আর চিন্তা করোনা। এবার সব কষ্ট সেরে যাবে আমি আছি তো। "