Anjali Mitra

Children Stories Inspirational

3.5  

Anjali Mitra

Children Stories Inspirational

নিমন্ত্রণ

নিমন্ত্রণ

3 mins
62


 সবার স্কুল জীবনই বড্ড বেশি মধুর হয়। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে যায়। কেউ হয়ে ওঠে ডাক্তার কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার। কেউ ব্যারিস্টার আবার কেউ বা ব্যাবসাদার। তবে গুটিকয়েক বেশকিছু মানুষ তলছানিতেই পড়ে রয়। নিষ্প্রভ গোধূলির পড়ন্ত বিকেলের আলোয় তারা ক্রমশ আবছা হতে থাকে। তবে স্বপ্নের জাল সবেতেই বিদ্যমান। ঠিক তেমনভাবেই স্বপ্ন দেখেছিল কাছাড়ি গলির বস্তিতে থাকা আদুরে। বাবা-মায়ের দিন রাতভর অক্লান্ত পরিশ্রমের কঠোরতা বুঝতে পেরে সে চেয়েছিল নিজের পায়ে দাঁড়াতে। স্বপ্নপূরণের অদম্য আকাঙ্ক্ষা তার ইচ্ছে শক্তিকে দু গুণ বাড়িয়ে তুলেছিল। সমাজের চক্ষুশূল লোকলজ্জা কে এড়িয়ে সে হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয়। প্রতি বৎসর সেরার সেরা শিরোপা মাথায় নিয়ে সে যখন বস্তিতে ফেরে, তাকে নিয়ে সবাই গর্ব করে বলে " আমাদের আদুরে প্রথম হয়েছে গো, প্রথম হয়েছে" আবার কেউবা বলে "দে আদুরে দুটো মিষ্টি খাইয়ে যা"। স্কুলের হেড দিদিমণি আদুরীকে বড্ড ভালোবাসেন। তিনি সময়ে-অসময়ে সর্বদা পাশে থাকেন । পড়াশোনায় একটু ফাঁকি দিলে বকাবকিও করেন আবার কাছে ডেকে নেন এতে আদুরে খুব আনন্দ উপভোগ করে। আদুরের হেড দিদিমনিকে সে খুব ভালোবাসে। তিনিই একমাত্র ওর আদর্শ। 12 ক্লাসের পর নিজের উপার্জন করা প্রথম টিউশনির টাকায় দিদিমণিকে গিফট দিতে গেলে সে বেজায় বকুনি খায়। সেদিন দিদিমণি তাকে বলেছিল যেদিন নিজে উপার্জন করে দিতে পারবি সেদিন নেব। কথাটা বড্ড মনে লেগেছিল আদুরের। তারপর থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছর স্কুলের হেড দিদিমণির সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। আদুরে প্রত্যেকদিন মনে মনে খুব কষ্ট পেত আর ভাবতো, তার প্রিয় দিদিমনি হয়তো তাকে ভুলে গেছেন। পাঁচ বছর পর হঠাৎ একদিন দিদিমণির সঙ্গে সেই চেনা স্টেশনে দেখা হলো। কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে প্রনাম করতেই দিদিমনি অভিমান ভরা কন্ঠে বললেন এই পাঁচ বছরে কি একবারও এই দিদিমনির কথা মনে পড়েনি? আদুরে মাথা নিচু করে কেঁদে ফেলল। উত্তর দিলো হ্যাঁ দিদি মনি মনে পড়েছে বৈকি তবে কাছে আসতে ভয় পেতাম। সেদিন আপনি আমার উপহারটা ভালোবেসে না নেওয়ায় কষ্ট পেয়েছিলাম আর ঠিক করেছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর আপনার সামনে যাব। 

দিদিমণি জিজ্ঞেস করলেন তা এখন কি করছিস? উত্তরে আদুরে বলল " আমি junior barrister in Baruipur "। কথাটি শুনে দিদিমণি ও খুব খুশি হলেন। বললে বাহ সেদিনের বকুনি টাও তাহলে কাজে দিয়েছে। আদুরে খিল খিল করে হাসল আর বলল এবার একদিন আপনার বাড়িতে যাব দিদিমনি। দিদিমণি বললেন হ্যাঁ নিশ্চয়ই আসবি তোদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা। এরপর ১২ই ফেব্রুয়ারি আদুরে প্রথম দিদিমনির বাড়িতে গেল। সারাদিন সেখানে গল্প মজা হইচই আড্ডা খাওয়া-দাওয়া সব কিছুর শেষে দিদিমণি তাকে প্রশ্ন করল এবার বিয়ে কবে করছিস বল?ব্যাগের দ্বিতীয় চেন খুলে একটা শাড়ি বের করে দিদিমনির হাতে দিয়ে বলল এটা আপনার জন্য। আমার প্রথম উপার্জনের টাকায় কেনা। পড়বেন কিন্তু আপনি পড়লে আমার খুব ভালো লাগবে । তারপর ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে দিদিমনির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে মাথা নিচু করে বলল আগামী 3rd মার্চ আমার বিয়ে। আপনাকে আশীর্বাদ আর গায়ে হলুদের নিমন্ত্রণ রইল আসবেন কিন্তু আপনি না এলে আমি গায়ে হলুদে বসবো না । আপনার আশির্বাদ ছাড়া আমার জীবনের কোন কাজই সফল নয় তাই আমার এই শুভ ক্ষনে আপনার আশীর্বাদ খুব করে চাইছি প্লিজ আসবেন, আমার খুব ভালো লাগবে। 

গর্বে দিদিমনির চোখ থেকে জল গড়িয়ে এলো তিনি বললেন নিশ্চয়ই আসব। 


Rate this content
Log in