Ramen Goswami

Classics Others

4.4  

Ramen Goswami

Classics Others

বৌ ভাগ

বৌ ভাগ

3 mins
423


তারা ছিল দুই ভাই । বড়ো ভাইয়ের নাম দীপক আর ছোটো ভাই তারক । বৌদির নাম সর্বজয়া । ছোটো ভাইটি প্রথম থেকেই খুব ডানপিটে স্বভাবের। তাই সকলকেই জ্বালাতন করাটা ছিল তার স্বভাব । ছেলেটিকে নিয়ে তাই বাড়িতে প্রতিদিনই ঝামেলা হয় । রোজএ কেউ না কেউ আসে তার বিরুদ্ধে নালিশ করতে । দাদাকে খুব অপমান করে যায় তারা । একদিন ছেলেটি একটি কুকুরের ল্যাজে আগুন ধরিয়ে দেয় । আর সেই কুকুরের মনিব আসে হাজির হয় তারকদের বাড়িতে । যথারীতি তার দাদাকে জানায় সবকিছু । সব শুনে দাদ তো রেগে আগুন ।

দাদা: কেন করেছিস এসব ?

তারক : কুকুরটা একটা ছাগলকে ধরে কামড়েছিল তাই কুকুরটাকে মেরেছি । কুকুরটা ছাগল ধরে কামড়ালে কিছু নয় আর আমি কুকুরকে কিছু করলেই দোষ ।

কুকুরের মনিব আর কিছু না বলে চলে গেল কিন্তু বাড়িতে সেদিন তুমুল ঝামেলা হল । দাদা বলল – অনেক সহ্য করেছি আর নয় এইবার একটা ব্যবস্থা করতে হবে । রোজ রোজ এত লোকের অপমান তোর জন্য কেন শুনতে হবে আমাকে । হয় তুই আর এই বাড়িতে থাকবি না নয়তো সব ভাগাভাগি হবে এরপর ।

তখন তারকও বলল – ঠিক আছে যদি সব ভাগাভাগি করতেই হয় তাহলে বৌদিকেও ভাগ দিতে হবে আমায় । এই কথা শুনে দাদাতো আরও চটে গেল তারককে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিল ।

দুদিন পেরিয়ে গেল তারককে বাড়ি ঢুকতে দেয়নি ওর দাদা এমনকি খেতেও দেয়নি কিছু । একটা পানের দোকান এ গেল তারক বলল একটা পাউরুটি দিতে । দোকানি : পয়সা না দিলে তোকে কিছুই দেব না ।

তারক : পয়সা দেব তোকে দুদিন পর, আমার ভাগের জমিগুলো সব বিক্রি করে তোকে টাকা দেব ।

দোকানি : তোর দাদা এসেছিল দোকানে বলেছে তোর দাদা সব জমিজমা ঘরবাড়ি ভাগাভাগি করবে । আগে হোক তারপর আসবি ।

তারক : দাদা সব সম্পত্তি অর্ধেক ভাগ করার কথা বলেছে তোকে আর বৌদিকে ভাগ করার কথাটা বলেনি তোকে ।

কথাটা শুনা মাত্রই দোকানি এবং দোকানের আশেপাশে থাকা সব লোক তারককে খুব মেরে তাড়িয়ে দিল ওখান থেকে ।

ওদিকে মাধুরী, যাকে তারক ভালবাসত সব শুনে সেও তারককে খুব অপমান করল, তুমি এত খারাপ তারক যে বৌদিকেও ভাগ চায় । এই বলে সেও তারককে ছেড়ে দিল । বলল তারকের সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না ।

চারদিন কেটে গেছে তারক বাড়ি ঢোকেনি কিছু খাইও নি । পঞ্চায়েত থেকে লোক এসেছে তাদের সম্পত্তির ভাগাভাগি করতে ।

পঞ্চায়েত প্রধান শৈলেন্দ্রবাবু বললেন – তোমাদের বাবার থাকা সমস্ত টাকা পয়সা, জমিজমা, ঘরবাড়ি সব সম্পত্তি তোমাদের দুই ভাইকে অর্ধেক অর্ধেক ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে ।

শৈলেন্দ্রবাবুর কথা শুনে তারক বলল – যদি বাবার থাকা সব টাকা পয়সা ভাগ করা হয় তবে সেই টাকা থেকেই দাদা বিয়ে করেছে তাই ঐ বৌদিকেও অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করতে হবে ।

যখনি এই কথা বলেছে তারক পঞ্চায়েত প্রধানসহ বাকি সমস্ত লোক মিলে তারককে খুব মারধর করল । তারকের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে, সারা শরীরে মারের ক্ষত ।

পঞ্চায়েত প্রধান সবকিছু ভাগাভাগি করতে যাবে ঠিক সেই সময় তারক বলে উঠল – মা’কে কখনও পাইনি, মায়ের দুধও পান করিনি, ছোটবেলা থেকে এই বৌদিকেই মা’র মতো করে পেয়েছি । সম্পত্তি ভাগের সময় দাদা যদি আমার এই মাকেও কেড়ে নিয়ে চলে যায় তাহলে আমি আরেক মা’কেও হারাবো ।

একথা শুনা মাত্রই পঞ্চায়েত প্রধান ধপ করে পায়ের উপর বসে পড়ল, তরকের দাদা তারকের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল, দূরে দাড়িয়ে থাকা বৌদি শুধু কাঁদতে লাগল । এগিয়ে এসে দাদাকে বলল- দেখলে তো বলেছিলাম তোমায় তারকের মনে কোনো খারাপ ভাবনা নেই, ও খুব সরল । আর যারা তারককে মেরেছিল তারা এসে তারকের রক্ত মুছতে লাগল ।

ইতিমধ্যে মাধুরীর এই চারদিনে অন্য একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেই ছেলেটি এসে মাধুরীকে বলে যে, তুমি এতদিন ধরেও তারককে চিনতে পারলে না, তারপর সব ঘটনা মাধুরী ওর কাছে শুনল । সব শেষে ছেলেটি মাধুরীকে বলল তোমার সাথে সম্পর্ক রাখাই উচিত নয় কারো যে তারকের মতো সরল মনের ছেলেকে চরিত্রহীন বলে ।

তখন মাধুরী আসে ওই ভিড়ে সবার সামনে তারকের কাছে ক্ষমা চাইতে, তারক বলে সবাই আমাকে ভুল বুঝলেও তুমিও আমাকে ভুল বুঝবে, তুমিও চিনতে পারলে না আমাকে । এমনকি এই চারদিনের মধ্যে অন্য একজনের সাথে সম্পর্কও তৈরি করলে তোমাকে আমি মেনে নিতে পারব না আর । বৌদি বলল ওকে মেনে নে তারক ওকে ক্ষমা করে দে । বৌদির কথায় তারক মাধুরীকে ক্ষমা করে দিয়ে মেনে নিল ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics