Dr . Ramen Goswami

Romance Classics Others

4.5  

Dr . Ramen Goswami

Romance Classics Others

কেন যে দেখা হয়েছিল

কেন যে দেখা হয়েছিল

14 mins
439



                       

রাজ, বিশাল, মন্ডল, আর পল্টু চার বন্ধু । চারজনেই ইঞ্জিনিয়ার কলেজে পড়ে । চারজনের বন্ধুত্ব হয়েছিল বাঁকুড়া উন্নয়নি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে । চারজনেই এসেছিল গরীব পরিবার থেকে । তাদের ইচ্ছে ছিল নিজেদেরকে তুলে ধরা । ইঞ্জিনিয়ার মানেই যে গাঁজা, মদ, ড্রাগস সে ধারনা সকলেরই জানা । তারা সেইসবকিছু থেকে কিছুদিন নিজেদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পুরো ইঞ্জিনিয়ারিং জীবনটা থেকে ওগুলোকে দূরে রাখতে পারেনি । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করার কয়েকদিন পর চারজনের বাড়ি থেকেই ধীরে ধীরে খবর আসতে লাগল বাড়ি থেকে পড়াশুনার খরচ দিতে সমস্যা হচ্ছে । চারজনের বন্ধুত্ব বেশ গাঢ়। বাড়ি থেকে এই সব খবর শুনে তারাও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল । চারজনেই একদিন বেরোলো বাইক নিয়ে । তখন বিশালের মাথায় একটা প্ল্যান এল, বিশাল বলল,

-আমাদের কলেজের সবথেকে বড়োলোক মেয়ে কোনটি ? চল তাকে কিডন্যাপ করব আর তড় বাবার কাছ থেকে টাকা চাইব । অর্থের অভাবে মানুষ সবকিছুই করে ।

তারপর সেদিন তারা চলে এসেছিল । পরদিন খোঁজ করল সারা কলেজে । দেখল কলেজে মার্সিডিজ গাড়ি করে একটি মেয়ে আসে । তারা সাথে সাথেই পরিকল্পনা করল পরের দিনই মেয়েটাকে কিডন্যাপ করবে । পরদিন হিসাব মতো তারা রেডি থাকল মুখে বাঁদর টুপি পড়ে মুখ চোখ সব ঢেকে, কিন্তু সেদিন সেটা আর হল না । দরোয়ান এসে সমস্ত যেন ভেস্তে দিল । তারপর দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল, “ আজ তো কিছু করতেই হবে “। তাই যথাক্রমে চারজনে মিলেই মেয়েটার মার্সিডিজ গাড়িটা ঢোকার আগেই গাড়িটাকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে তুলে নিল । ওরা একটা গাড়ি ভাড়া করেছিল আর ড্রাইভারকে চার হাজার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল । বিকনার একটা হোটেলে পল্টু আগে থেকেই কথা বলে রেখেছিল, তাই গাড়িটা সোজা গিয়ে থামল সেই হোটেলের সামনে । মেয়েটা যাতে চিৎকার করতে না পরে তাই মেয়েটার মুখে কাপড় বেঁধে দিয়েছিল আগে থেকেই । কিন্তু তারা কেউই মেয়েটার সাথে কোন খারাপ আচার আচরণ বা খারাপ ব্যবহার করেনি । হোটেলের ভিতর ঢোকার পরই ওরা ভদ্রতার সাথে মেয়েটাকে সবকিছু খুলে বলেছিল, “তোকে আমরা কিডন্যাপ করেছি কারন আমাদের এই এই অবস্থা তাই তড় বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য ।“

মেয়েটা শুধু কাঁদতে লাগল । প্রথং দিন মেয়েটাকে খবর দিয়েছিল নান আর চিলি চিকেন, কিন্তু মেয়েটা খায়নি থালাটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল । মেয়েটার কাছ থেকে সবকিছু কাড়িয়ে নিয়ে ফোন স্যুইচ অফ করে রেখে দিয়েছিল । পরের দিন ওরা মেয়েটাকে রুমের মধ্যে চাবি দিয়ে রেখে চলে গিয়েছিল নিজেদের ক্লাস করতে । এরকমভাবে দু তিন দিন গেল । মেয়েটা দু তিন দিন কিছুই খায়নি । তারপর হোটেল মালিক বলল, “ তোরা যে কাজটা করছিস আমি আর তোদের সাথ দেব না । তোরা মেয়েটাকে নিয়ে এখান থেকে চলে যা এবার ।“ বাধ্য হয়ে ওরা মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল আর গিয়ে উঠল একটা অচেনা অজানা জায়গায় জঙ্গলের মাঝখানে একটা পোড়ো বাড়িতে । সময়টা বর্ষাকাল থাকার জন্য সাপ আর মশার উপদ্রব ছিল খুব বেশি । ঐ পোড়ো বাড়ি থেকে পঁয়ত্রিশ কিমি দূরে একটি বাজার আছে যেখান থেকে খাবার দাবার আনতে গেলে তাঁকে সত্তর কিমি যাওয়া আসা করতে হবে । তাই চার বন্ধু ভাগাভাগি করে নিল কে কখন যাবে । এদিকে না খেয়ে খেয়ে মেয়েটার মুখ ধীরে ধীরে ফুলে গেল । এদিকে সাতদিন পেরিয়ে গেল, মেয়ের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, ফোন ট্রেস করা হচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় তাও সম্ভব হচ্ছে না । বাবা চারিদিকে খোঁজ লাগাচ্ছে কিন্তু কোন খবর পাচ্ছে না ।

বিকাশ মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটা বন্ধুত্ব করেছে তাই মেয়েটার আর তাদের সাথে খেতে কোন প্রবলেম নেই । বিকাশের সাথেই রাজেরও প্রথম বন্ধুত্ব হয়েছিল । মেয়েটার সাথে ঐ চারজনের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল ওরা একসাথেই খেত, মেয়েটা সবকিছু পরিস্কার করতো, বাসন ধুয়ে দিত, পল্টু জল আনত । কিন্তু সমস্যা চিল একটাই- পটি যাওয়া, কারন ওদের চারজনেরই জঙ্গলে বা বাইরে কোথাও পটি করা অভ্যাস নেই, তবুও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতো ওরা । তারপর মেঘনার সাথে ভালোভাবে বন্ধুত্ব হয়ে যাওয়ার পর একদিন মেঘনাকে দিয়ে ওর বাবাকে ফোন করানো হল, “আমি মোটামুটি আছি, তুমি তাড়াতাড়ি এদের টাকা দেওয়ার ব্যাবস্থা করো ।“ তারপর আবার ফোন স্যুইচ অফ । ওরা বারো লাখ টাকা চেয়েছিল । ওদের সাথে থাকতে থাকতে মেঘনার মন পরিবর্তন হল, একদিন পল্টুকে মেঘনা জিজ্ঞাসা করল, “ পল্টু, কি ব্যাপার তোমরা সকলেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ো তো আমায় হটাত কিডন্যাপ করলে কেন তোমরা ?”

পল্টুর গল্প

পল্টু বলতে শুরু করল, “ আমি একটা গরীব পরিবারের ছেলে, বাবা জমিজমা চাষাবাদ করে । আমরা এক ভাই এক বোন । বাবা অনেক কস্ট করে মানুষ করেছে । দিদির বয়ে গেল কিন্তু দিদির শ্বশুর বাড়ি খুব বড়োলোক হওয়ার জন্য দিদির উপর অত্যাচার করত। দেড় লাখ টাকার কথা হয়েছিল পণ দেওয়ার কিন্তু পরে আরও তিন লাখ বাড়িয়ে দেয় । অনেকটা সেই নিরুপমার মতো অত্যাচার করত । কিন্তু দিদি সবকিছু গোপন করে আমাদের থেকে । হয়ত বাবাকে বললে বাবা ব্যবস্থা করতে পারত না তাই বাবাকে বলেনি । সন্দেহ বাড়তে লাগল আমাদের যখন দুই বছর ধরে দিদির শ্বশুর বাড়ি থেকে সম্পর্ক রাখা কমতে থাকতে দেখল, তখন বাবা দিদিকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল,

-কি ব্যাপার ?

-কই কিছুই না, তোমার জামাই সময় পায় না তাই আর কি ।

আগের বছর আমি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার সাত দিন পর খবর আসে দিদি গলায় দড়ি নিয়ে মারা গেছে । দিদি তখন সাত মাসের প্রেগন্যান্ট ছিল । খবর শোনা মাত্রই বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে । আমি আমার যতটুকু বুদ্ধি ততটুকু বুদ্ধি দিয়ে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট করায় আর ওখানে ধরা পড়ে দিদি সুইসাইড করেনি, দিদিকে মেরে ফেলে দেওয়া হয় । টাকার অভাবে দিদিকে হারিয়ে ফেলেছি তাই মনে একটা জেদ ছিল টাকা রোজগার করতেই হবে নিজেকে তুলে ধরতেই হবে তাই এই কোর্সে আসা । এখানে ফিরে আসার পর টিউশন ধরলাম । টিউশন পড়াতাম নিজেও পড়তাম, কিন্তু সবকিছু বাগিয়ে উঠতে পারছিলাম না সেই সময় এই তিনজনের সাথে বন্ধুত্ব হয় । তারপর তুমি যে জায়গায় আমরাও সেই জায়গায় ।“

বিশালের গল্প

বিশাল বলে, “ আমি হচ্ছি এক বিহারী ব্রাহ্মণ । আমার বাড়ি বিহারেই কিন্তু কাজের সুত্রে বাবা এখানে চলে আসে । এখানে এসে বাবা আমাদের দু ভাইকে পড়ানোর চেষ্টা করে । কোনোরকমে একটা স্টল ভাড়া নিয়ে ফুচকা বিক্রি করে আমাদের বড়ো করে তুলেছিল বাবা । সেই ফুচকা স্টল ভাড়া নিতে গিয়ে বাবাকে লোন তুলতে হয় । কখনও ভালো বিক্রি, কখনও খারাপ বিক্রি । যত ভালো বিক্রি হতো বাবা টাকাটা মিটিয়ে দিতে পারত । কিন্তু ফুচকা স্টলে কি আর খুব বেশি টাকা রোজগার হয় । তাই দেখতে দেখতে দশ বছর হয়ে গেল লোন শোধ না করতে পেরে সেটাও বেড়ে দাঁড়িয়ে গেল আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। তখন বাবাও খিটখিটে হয়ে গেল । মায়ের সাথে প্রতিদিন ঝগড়া হতে লাগল রাত্রি বেলা । চাপা সুরে দুজনের মধ্যে ঝামেলা হতে থাকত যাতে আমরা না শুনতে পায় । কিন্তু এখন বড়ো হয়ে সব বুঝতে পারি । আজ চার মাস হল বাবা মারা গেছে । বাবা সুইসাইড করেছে রেললাইনে মাথা দিয়ে । আর তারপর থেকে পুরো লোনের বোঝা এখন আমার ঘাড়ে, তারপর নিজের পড়াশুনা । আমি দিন মজুরের কাজও করি, কিন্তু তবুও সব সামলাতে পারি না । তারপর তুই যেখানে আমিও সেখানে ।“

মণ্ডলের গল্প

“আমি সুঁড়িদের ছেলে । আমাদের দোকান ছিল । তবে শুনেছি বিয়ে হওয়ার পর থেকে মা নাকি বাবাকে বলেছিল লোককে মদ আর চা বিক্রি করতে । কিন্তু বাবা মায়ের কথা শুনেনি । বাবা আর মায়ের মধ্যে মতের অমিল ছিল তাই ওদের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত । কিন্তু সেই ঝামেলা হতে হতে বাবা একদিন জোরজবরদস্তি করে ওঠে মাসির সাথে যখন মাসি আমাদের বাড়ি আসে । সমাজের জন্য মাসিকে বিয়ে করতে বাধ্য হয় বাবা আর মা সেসব মেনে নিতে পারে নি এমনকি আমরা কেউই আজও পর্যন্ত মেনে নিতে পারিনা ওটা । মা নিজেকে শেষ করে দেয় আর আমি আর দিদি একলা হয়ে যায় কারন মাসি আমাদের দেখেও না একটু । কিন্তু মা বলেছিল অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করতে । এখন বড়ো হয়েছি তাই মায়ের বলা কথাটার মানে এখন বুঝতে পারি । আমাদেরকে ত্যজপুত্র করা হয়েছিল । তবে দিদির একটা হিল্লে হয়ে গেছে । দিদিকে যে পছন্দ করত সেই বিয়ে করেছে আর জামাইবাবু সত্যিই খুব ভালো মানুষ, জামাইবাবুই আমাকে পড়াচ্ছে আমার দেখশুনা করে কিন্তু কতদিন আমি জামাইবাবুর কাঁধে বোঝা হয়ে থাকবো । নিজেরও খারাপ লাগে আর জামাইবাবুর মা’ও মাঝে মাঝে বলে, “এমন একটা বিয়ে করলি যে মেয়েটার জন্যও অনেককিছু করলি আর তার ভাইয়ের জন্যও করলি, আর কতদিন করবি বাবা ?” একদিন এই কথাটা শুনে খুব গায়ে লেগে গেল এসে বিয়ার খাচ্ছিলাম আর এদের সাথে পরিচয় হল আর তারপর বন্ধুত্ব । তারপর তুই যেখানে আমরাও সেখানে ।“

রাজকে মেঘনা জিজ্ঞাসা করল,

-সবাই সব কিছু বলল এবার তুই তোর সম্পর্কে কিছু বল

রাজ বলে,

-না থাক কাল বলবো

ধীরে ধীরে ওদের কাছে থাকা জমানো টাকাগুলো সব শেষ হয়ে যেতে লাগল, মেঘনা শুনে বলল,

-ঠিক আছে কাল বাবাকে আর একবার ফোন করে বলবো টাকা পাঠাতে । চাপ নিস না ।

নিজে থেকেই মেঘনা ওর বাবাকে ফোন করে বলে দিল, “ এরা পনের লাখ টাকা চাইছে বাবা, তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো পাঠিয়ে আমাকে নিযে যাও এখান থেকে । নাহলে এরা আমায় মেরে দেবে ।“ যদিও এগুলো মেঘনার বানানো কথা । ক্রমাগত মেঘনা ওদের সাথে জড়িয়ে পড়ল । কিন্তু রাজকে নিয়ে ওর খুব কৌতূহল । ছেলেটা সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের । দেখতে সুন্দর, ছয় ফুট লম্বা, চোখে চশমা, পুরো নাম রাজ গোস্বামী । মেঘনা ভাবে আমি কি প্রেমে পড়ে গেলাম নাকি । সে তো জানে ছেলেটা কে ? কেন সমস্ত বিপদ থেকে বাঁচানোর একমাত্র বন্ধু হল রাজ । সমস্ত ছেলেগুলোকে বলেছে, আমার কাছে যেন কেউ না আসে, কেউ যেন আমাকে স্পর্শ না করে । আমার প্রটেক্টার কি তাহলে রাজই । অজ বারো দিন হল বাড়ির বাইরে আছি কোন ক্ষতি হয়নি আমার, রাজের জন্য একটা ছেলেও আমার কাছে আসেনি । আমাকে এই পোড়ো বাড়ির ভেতরে রাখে আর ওরা সবাই বাইরে পড়ে থাকে । ঝড়, বৃষ্টি, এই সাপের উপদ্রব, মশার উপদ্রব আরও কতকিছু সব সহ্য করে ।

পরদিন সকালে মেঘনা একবার চেষ্টা করল ওখান থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য । ও ভাবলো, ধীরে ধীরে ও রাজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে । তাই ওকে এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করতে হবে কারন ওর মনের মধ্যে দয়া জন্ম নিচ্ছে ওদের প্রতি । মেঘনা আরও ভাবলো, কেন ওর বাবা টাকা দিতে যাবে ওদেরকে ? এসব ভাবতে ভাবতে মেঘনা ভোরবেলা ওখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা করল । দুপুর গড়িয়ে এসেছে কিন্তু সময় কত বুঝতে পড়ছে না মেঘনা কারন ফোন তো রয়েছে ওদের কাছে । খিদেও লেগেছে খুব আর চলতে পারছে না মেঘনা । এদিকে মেঘনাকে না দেখতে পেয়ে চার বন্ধু বেরিয়ে পরে মেঘনাকে খুঁজতে । কারন যদি একবার ধর পড়ে যায় ওর তাহলে ওদের কেরিয়ার শেষ । মেঘনাকে এতটা বিশ্বাস করেছিল ওরা যে মেঘনা এরকম কাজ করবে ভাবতে পারেনি । দুপুর শেষ হয়ে বিকেল হল জঙ্গল থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পেল না মেঘনা । মেঘনার জুতো ছিড়ে গেছে, পায়ে পেরেক ঢুকেছে পা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, আর হাঁটতে পারছে না বসে পড়েছে একটা গাছের নিচে । অস্ফুট স্বরে মেঘনা কাঁদছে আর ভাবছে একবার বাবা আর একবার রাজ । সন্ধ্যা ঘনিয়ে যাবে এমন অবস্থায় রাজ খুঁজে পায় মেঘনাকে । ওকে দেখতে পেয়ে বলে,

-আমি জানতাম তুই একবার হলেও পালাবার চেষ্টা করবি । কারন তুই তো ভাবিস আমরা কিডন্যাপার । সবাইকে কি হয়রানিটা করালি বল তো ।

-না, তোরা আমার বাবার টাকাই কেন নিবি ? কেন আমাকে কিডন্যাপ করবি ?

-তোকে সব বোঝাবো, তুই এখন চল আমার সাথে

-না আমি যেতে পারব না, আমার পায়ের অবস্থা দেখ

রাজ দেখল পা দিয়ে রক্ত পড়ছে । তাই দেখে রাজ বলল,

-ঠিক আছে, তুই আমার পিঠে চাপ ।

মেঘনার সংকোচ বোধ হল কারন দুজনেরই উঠতি যৌবন, পিঠে কি করে চাপবে । ও বলে উঠল,

-না, আমি হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করছি ।

পাঁচ সাত মিনিট হাঁটার পর মেঘনা ধপ করে পড়ে গেল, হাঁটা তার পক্ষে সম্ভব নয় আর তাই রাজকে বলল,

-রাজ তুই আমায় পিঠে নিয়ে নে

-আমি জানতাম তুই পিঠে চাপবি না তবুও আমি বন্ধুত্বের খাতিরে বলেছিলাম, তুই তো আমায় কিডন্যাপার ভাবিস তাই না । আসলে জন্মগত দিক দিয়ে কেউ কিডন্যাপার হয়ে জন্মায় না ।

রাজের পিঠে চাপার পর মেঘনার বুকটা রাজের পিঠের সাথে স্পর্শ হয় । মেঘনার শরীরে সাথে সাথেই একটা অন্যরকম অনুভূতি হয় । মেঘনার সারা শরীরে একটা শিহরণ খেলা করল । হাত দুটো এনে টাইট করে ধরল রাজকে । মেঘনার জাঙ দুটো ধরে রেখেছে রাজ। আস্তে আস্তে হেঁটে আই জঙ্গলটা শেষ করার চেষ্টা করছে, সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না পরিস্কারভাবে । তবুও রাজ এগিয়ে যাচ্ছে, যেন রাজের সবকিছুই চেনা । যত রাজ এগিয়ে যাচ্ছে তত মেঘনা তার পা গুলো দিয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে রাজকে আরও শক্তভাবে । কখনও ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে যাচ্ছে, কখনও চুলের কাছে মুখ নিয়ে যাচ্ছে মেঘনা । রাজের গায়ের ঘ্রাণ নিচ্ছে, রাজের গায়ের একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ, যেটা নেওয়ার জন্য মেঘনা ছটফট করছে । রাজ কিন্তু মেঘনাকে এক মনে নিয়ে যাচ্ছে, তার মনে কোনোরকম চিন্তা ভাবনা আসছে না এসব নিয়ে, কিন্তু মেঘনার মনে মনে একটা অন্য ধরনের চিন্তাভাবনা চলছে । মেঘনা ভাবছে, রাজকে ঐ জায়গা থেকে বের করবে যাতে টাকার জন্য আবার কোন খারাপ কাজের সাথে যুক্ত না হয়, রাজকে ও বিয়ে করবে । আজ অবধি মেঘনা কারো শরীরে স্পর্শ করেনি আজ রাজের শরীরে প্রথম সে স্পর্শ করেছে, রাজের গায়ের গন্ধ মেঘনার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে । মেঘনা কথাগুলো ভাবছে আর রাজের ঘাড়ে, চুলে, কাঁধে, পিঠে চারিদিকে যেন অগণিত কিস করে যাচ্ছে অদৃশ্য ভাবে যাতে রাজ বুঝতে না পারে । কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটা খাল ছিল, অন্ধকার থাকায় রাজ বুঝতে পারেনি, মেঘনাকে নিয়ে পড়ে ঐ খালের মধ্যে । সাথে সাথে মাথাটা পাথরে লেগে মাথা ফেটে যায় রাজের, কিন্তু বুঝতে পারে না রাজ তাই আবার মেঘনাকে তুলে হাঁটতে শুরু করে রাজ । যখন সেই পোড়ো বাড়ির টিমটিমে আলোতে বাকি বন্ধুরা অপেক্ষা করে রাজের জন্য দেখে রাজ মেঘনাকে পিঠে নিয়ে আসছে, তারা দেখে মেঘনার পায়ে পেরেকটা যে বের করেছিল সেই রক্তটা জমাট বেঁধে আছে মেঘনার পায়ে কিন্তু রাজের মাথা থেকে কাঁচা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে । তিন বন্ধু কাঁদতে শুরু করল রাজের ঐ অবস্থা দেখে । রাজের মাথার মধ্যে একটা গর্ত দেখা গেছে সামনে কপালের কাছে । সেটা দেখে মেঘনা ছটফট করতে লাগল । মেঘনা বলল,

-এখনি বাবাকে ফোন কর, বাবাকে ফোন করলেই বাবা টাকা নিয়ে আসবে ।

কিন্তু রাজ বলে,

-মন পরিবর্তন করেছি । টাকা পয়সা কিছুই নেব না, তোকে কাল তোর বাবার কাছে ফিরিয়ে দেব ।

এদিকে রাজের নামে ওয়ারেন্ট বেড়িয়ে গেছে রাজের নামে পুলিশের কাছে । কারন ওরা যে গাড়িটা ভাড়া করেছিল সেটা রাজের সাথেই কথা হয়েছিল, যে হোটেল রুমটা বুক করা হয়েছিল সেটাও রাজের নামে বুক ছিল, যে ফোন থেকে মেঘনার বাবাকে ফোন করা হচ্ছিল সেটা রাজের ছিল । রাজকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে । রাজ সম্পর্কে কি জানা গেল।

 পল্টু হটাত বলে উঠল, “রাজের খুব জ্বর এসেছে ।“ আর সেই জ্বরের ঘোরে রাজ বকছে, “মা তুমি, তুমি এসেছ মা । একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, আমার ঘুম আসছে মা ।“ সারা রাত্রি তিন বন্ধু আর মেঘনা মিলে রাজকে দেখভাল করল । মেঘনা যেন ভুলেই গেছে তার পায়ে কি হয়েছে । রাজকে দেখে শুধু ছটফট করছে । রাজ দুবার বমিও করে সারাদিন রোদে টো টো করে ঘুরে বেড়িয়েছে মেঘনাকে খুঁজতে । মেঘনা ভাবে, রাজের কি তবে মাথায় লেগেছে জোরে, ওর কি কোন ইন্টারনাল হ্যামারেজ হল, কই চোখে মুখে বা নাক কান দিয়ে তো কোনো রক্ত বেড়িয়ে আসছে না । না, হয়তো সারাদিন না খাওয়ার জন্য এটা হয়েছে, ওকে এখনি নুন চিনি বা ওয়ারেশ দিতে হবে, কিন্তু জঙ্গলের এই পর বরিতে এসব কথায় পাবে মেঘনা । তখন মেঘনা ঠিক করল, না আর এখানে থাকা ঠিক হবে না। তখন প্রায় ভোর হয়েই এসেছে ।

খুব সকালেই তারা সবাই বেড়িয়ে গেল সেখান থেকে মেঘনাকে ওর বাড়ি দিয়ে আসতে । বাঁকুড়া পৌঁছে রাজ তার তিন বন্ধুকে বলল, “তোরা চলে যা, আমি মেঘনাকে দিয়ে আসছি ওর বাড়ি । কোনো প্রবলেম হলে আমি ফোন করব তোদের কিন্তু তোরা কথা দে আমায় যে আর কোনোদিন কোনো খারাপ কাজে যুক্ত হবি না তোরা আর মদ অন্তত খাবি না । কারন তোদের তিনজনেরই পরিবারের সাথে মদ রিলেটেড । আমি রজনীগন্ধা খাই, নিজের মতো কাজ করি, আর সেটার ফল ভালো হোক বা খারাপ মদ অন্তত খাই না, আর কোনো নেশাও করি না ।“

তারপর রাজ মেঘনাকে নিয়ে এগিয়ে গেল । মেঘনাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল কিন্তু মেঘনার বাড়ির ভিতর পুলিশ ছিল । পুলিশ মেঘনাকে জিজ্ঞাসা করল,

-এই ছেলেটি কে ?

-এই আমাকে কিডন্যাপ করেছিল

সাথে সাথে পুলিশ হ্যান্ডকাফ পড়াল রাজের হাতে কিন্তু মেঘনা বলল,

-দাঁড়ান অফিসার । একটু অপেক্ষা করুন ।

রাজকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল ওর হাতের হ্যান্ডকাফ খুলে দেওয়া হল । মেঘনা রাজের মাথায় পটি লাগিয়ে দিল, নিজের পায়েও ব্যান্ডেজ বাঁধল । মেঘনার মা জিজ্ঞাসা করল, কেন এমন করল সে, আর যদি করলই তাহলে টাকা না নিয়ে নিজেই বাড়ীতে ফিরিয়ে দিতে এল কেন ?

রাজ বলতে শুরু করল,

-আমি খুব গরীব পরিবারের ছেলে । ছোটবেলাতেই মা বাবাকে হারিয়েছি । অনাথ আশ্রম থেকে বড়ো হয়েছি । মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে ফার্স্ট হওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে স্কলারশিপ পেয়েছি । স্কলারশিপের ঐ টাকাগুলো আমি রেখেছিলাম আমার ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করার জন্য, হয়তো হয়েও যেত । কিন্তু অমর ঐ তিন বন্ধুর জন্য অমর সমস্ত টাকা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যেতে লাগল । ওদের সমস্যা দেখা দেওয়ার পর আমি ওদের টাকা দিতাম আমার আই স্কলারশিপের টাকা থেকেই। দিনের পর দিন ওরা সেই টাকাগুলো খরচ করে নেশা করতে লাগল, ওরা যেন নেশার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ল । তাই ওদের ওখান থেকে বাঁচানোর জন্যই এই পথ বেছে নিতে হল, সাথ দিলাম ওদের । আমার আজ এই পনের দিনে সব টাকা শেষ, আমার কাছে ছিল পঁচাশি হাজারের মতো । আমি আপনার মেয়েকে দিয়ে গেলাম । নিয়ে গিয়েছিলাম তিন বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য, তিন বন্ধুকে পড়ানোর জন্য । কিন্তু কাল আমার মন পরিবর্তন হল । ভাবলাম ওদেরকে ঠিক করতে গিয়ে আমি যে কাজটা করছি সেটা ভালো নয় তাই আজ ওকে বাড়ি দিতে এলাম । আমার নিজের স্বার্থের জন্য আমি কোনো কাজ করিনি আর আমি মিথ্যা কথা বলতে পছন্দও করি না ।

অনাথ আশ্রমে ফোন করে জানা গেল, হ্যাঁ রাজ মাধ্যমিকে বোর্ডে সেকেন্ড হয়েছিল আর উচ্চ মাধ্যমিকে সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট থেকে বোর্ডে ফার্স্ট হয়েছিল । রাজের কোনো কথায় মিথ্যে নয় । রাজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখা গেল আশি হাজারের মতোই টাকা ছিল, যেটা এই কদিনে তোলা হয়েছে । পুলিশ সব কিছু খোঁজ নিয়ে দেখে বলল, “ ছেলেটার বলা সব কথায় সত্যি ।“

কিন্তু রাজ বলল, “ না যে কাজটা আমি করেছি সেটা ভালো নয়, ভুল কাজ । জেলই হচ্ছে আমার একমাত্র জায়গা । আপনারা যদি আমায় না নিয়ে যান আমি হীনমন্যতায় ভুগবো।“

মেঘনা বলল, “ হতেই পারে না, আমি তোকে বিয়ে করবো এখনই ।“

বাবা কখনই রাজী নয় কিন্তু মেয়ের আবদারের কাছে হার মানল । পল্টু, বিশাল আর মণ্ডলের খরচা দেওয়ার কথা মেঘনার বাবা নিজেই বলল । ওদের বিয়ে স্থির হল, সবাই খাচ্ছে পার্টিতে, প্রচুর লোক । রাজ তার তিন বন্ধুকে নিয়ে মেঘনার কাছে গিয়ে বলল,

-মেঘনা আমার একটা কথা বলার আছে ।

-কি কথা ?

-দ্যাখ তোর জীবনটা আমি শেষ করে দিতে পারি না তোকে বিয়ে করে, কেন যে দেখা হয়েছিল সেদিন ?

-না, তুই আমার জীবনটা শেষ করছিস না বরং তুই না থাকলে আমি অনেক কিছু জানতে পারতাম না ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance