Prerona DasGupta

Horror Crime

2.8  

Prerona DasGupta

Horror Crime

অতৃপ্তের প্রতিশোধ

অতৃপ্তের প্রতিশোধ

5 mins
395



"অবশেষে নরক যন্ত্রনা পেয়ে তারাও মারা গেলেন। তার স্বামীও কি বাদ গেল? না, প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে রইল সেও। সেই ভয়ঙ্কর নরকযন্ত্রণার হাত থেকে বৃদ্ধ পিসিমা ছাড়া পেলেও এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রয়ে গেলেন তিনি।........."


লোকদেখানো হলেও আজ ভারী খুশির দিন দাশগুপ্ত পরিবারের। কারণ আজ এই বাড়ীর গৃহবধুর পাঁচ মাসের সাধ ভক্ষণ অনুষ্ঠান। সাধের কাজে ব্যস্ত সে নিজেও, বলাবাহুল্য লোকদেখানো এই সাধের সব আয়োজন মৌসুমিকে নিজেই করতে হচ্ছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের আয়োজিত এই সাধভক্ষণ অনুষ্ঠানের ব্যাপারই আলাদা। বাড়ির আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশী সবাই এই অনুষ্ঠানের অংশ হলেও মৌসুমীর বাপের বাড়ির কেউ কিন্তু এই সাধের অংশ নয়। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হলেও এটাই সত্যি যে মৌসুমির মধ্যবিত্ত পরিবার বিয়ের এক বছর পরেও তাদের কোন পণ শোধ করতে পারেনি আর তাই তার এই বড়লোক শ্বশুরবাড়িতে কোন জায়গা হয়নি তাদের। মেনিমুখো বর সজল দাশগুপ্ত নিজের বাড়ির লোকের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করে না কোনদিন। রোজনামচা জীবনে মৌসুমী তাই আজ ভীষণ ক্লান্ত। গর্ভবতী অবস্থাতেও রেহাই পেল না সে। সমস্ত বাড়ি পরিষ্কার থেকে শুরু করে ভারী বালতি করে জল তুলে আনা আবার কখনো বা শাশুড়ি অনিমা দেবীর ফাইফরমাশ খাটা, বলাবাহুল্য নিত্যদিনের সমস্ত কাজকর্ম তাকে একাই করতে হয়। বৃদ্ধ পিসিমা তাকে কিছুটা সাহায্য করলেও প্রতিনিয়ত সে নির্যাতিত হয় তার সম্ভ্রান্ত শ্বশুরবাড়ির লোকজনের থেকে। কারন শুধু একটাই মৌসুমীর বাড়ির লোক তাদের চাহিদা মত পণ দিতে পারেননি। এভাবেই সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই আজ বিকেলের চায়ের টেবিলে অনিমা দেবী বলে ওঠে - 'কি বৌমা এবারও কি তোমার বাড়ির লোক কিছু পাঠাতে পারবে না? আর কিন্তু কোনো বাহানা শুনব না সোজা গিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসব তোমার বাপের বাড়িতে।' মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল মৌসুমী। শুরু হল ঝামেলা। ক্লান্ত মৌসুমী অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো সজলের দিকে কিন্তু সজল তার পক্ষ নিল না। চুপ করে সে দেখল তার গর্ভবতী বউকে তার মায়ের হাতে মার খেতে‌। পণ দেওয়ার এই ঝামেলায় গত তিনদিন যাবত যে সে অভুক্ত তার কোনো খোঁজই রাখেনি সজল। অত্যন্ত পরিশ্রম আর অত্যাচারে ভেঙে পড়ল মৌসুমী, প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল সে। ভয়ংকর এই যন্ত্রণায় ককিয়েঁ উঠল সে। একটা সময় পর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অচৈতন্য হয়ে পড়ল মৌসুমী। বুড়ি পিসিমার একান্ত চেষ্টায় যখন তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হল তখন প্রায় সব শেষ। অপারেশন থিয়েটারে মারা গেল মৌসুমী সাথে তার সদ্যোজাত ছেলেও। 


     সদ্যজাত মৃত শিশুটিকে কবর দেওয়ার সাথে সাথেই পুড়িয়ে ফেলা হলো মৌসুমিকে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল সে। আজ তার তিন দিনের কাজ,পুরোহিত মশাইয়ের মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথেই আচমকা পড়ে গেল মৌসুমীর ছবিটি। আর তারপরই বিঘ্ন ঘটতে লাগলো শ্রাদ্ধের কাজে, একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই সম্পন্ন করা হলো তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। দেখতে দেখতে সময় কাটতে লাগলো আর ঘটতে থাকল বেশ কিছু অদ্ভুত কার্যকলাপ। কখনো বা ছোট শিশুর কান্নার আওয়াজ আবার কখনো রান্নাঘর থেকে ঝনঝনিয়ে বাসন পড়ার‌ শব্দ। নিজেদের মনের ভুল ভেবে এই সমস্ত কিছু খুব সহজেই অগ্রাহ্য করে গেলেন অনিমা দেবী এবং বাকি সকলে। মৌসুমী মারা যাবার পর প্রায় পাঁচ মাস কেটে গেল এভাবেই। অনিমা দেবী এবং কত্তামশাই নিজেদের ছেলের জন্য আবারও পাত্রী খুঁজতে শুরু করলেন। তবে এবার আর মধ্যবিত্ত না অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে বিয়ে ঠিক হল সজলের। দ্বোজবরের বিয়ে সে তো আর চারটি খানি কথা নয়। আজ পাত্রী দেখে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ঢুকতে গিয়েই যেন চমকে উঠল সজল। আবছা ছায়ায় সে পরিষ্কার দেখতে পেল কে যেন দোল দিচ্ছে তারই ছোটবেলাকার সেই দোলনায় যা তার পিসিমা বের করে রেখেছিলেন মৌসুমীর সদ্যোজাত সন্তানের জন্য। দোলনার কেঁচ - কুঁচ আওয়াজে কেমন যেন মাথা ঘোরাতে লাগলো তার। নিজের মনের ভুল ভেবে সেই রাত্রে সে ঘুমাতে চলে গেল। পরের দিন চায়ের টেবিলে যখন প্রত্যেকে সজলের বিয়ের আলোচনায় ব্যস্ত ঠিক সেই সময় দোতলার ঘরের সদ্যোজাত শিশুর ভীষন কান্নার আওয়াজ প্রত্যেককে যেন শিহরিত করে তুলল, ছুটে গেলো প্রত্যেকে সেই ঘরে। কিন্তু কোথায় কেউ তো নেই। প্রত্যেকে অবাক হলেও বুড়ি পিসিমা কিন্তু মুচকি হাসলো সেদিন সবার চোখের আড়ালে।‌


15 ই নভেম্বর, পাত্রীর বাড়ি থেকে দেখতে আসছে আজ সজলকে। প্রত্যেকে আজ ভীষণ ব্যস্ত কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝে বিঘ্ন ঘটতে লাগল বারংবার। কখনোবা গুনগুন করে গানের আওয়াজ আবার কখনোবা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ। কেমন এক ভয়াবহতা বিরাজ করছে সবার মধ্যে, লক্ষণ ঠিক নয় বুঝে অনিমা দেবী বাড়ির বাইরে পাকা কথার জন্য সময় ঠিক করলেন। সন্ধ্যে ছটা বাড়ির সবাই যখন বিয়ের পাকা কথার জন্য বের হতে যাবে ঠিক তখনই খুব অদ্ভুত ভাবেই জ্বলতে নিভতে শুরু করলো দাশগুপ্ত বাড়ির সব আলো। শিশুর কান্নার আওয়াজে ফেটে পড়তে লাগলো চারিদিক। প্রত্যেকে ঘর থেকে বের হবার জন্য রাস্তা খুঁজতে লাগলো কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু শেষ। বন্ধ হয়ে গেছে ঘর থেকে বেরোবার সমস্ত পথ। এক বীভৎস ভয়ঙ্কর রূপে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মৌসুমী, কোলে তার সেই সদ্যোজাত ছেলে। হাড় হিম হয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতি সকলের। পাগলের মত ছুটে বেড়াতে লাগল প্রত্যেকে। নিভে গেল সমস্ত আলো। ফুটফুটে সেই বাচ্চাটা দ্রুত থেকে দ্রুততর গতিতে হামা দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল সজলের দিকে আর সজল!!! সে ভয়ে এক পা এক পা করে পেছতে শুরু করলো। যে ছুরির আঘাতে বারবার আহত হয়েছে মৌসুমী আজ সেই ছুরিই তার হাতে। তার সেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল সে অনিমা দেবীর দিকে। রাম নাম জপ করেও সেদিন মুক্তি পেলেন না অনিমা দেবী, ভগবানও সেদিন যেন মৌসুমীর সহায় হয়ে আছেন। যে হাত দিয়ে তিনি দিনের-পর-দিন মৌসুমীর উপর অত্যাচার করে গেছেন সেই হাত কেটে ফেলল মৌসুমী, ঝর ঝর করে রক্ত পড়তে লাগলো - ছুটে পালাতে গেলেন তিনি কিন্তু আজ যে ওনার নিস্তার নেই। ছুরির ফলার এক ভয়ঙ্কর কোপে আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। আবার সেই ছুরি হাতে নিয়েই এগুতে লাগলো সে কত্তামশায়ের দিকে। রক্তমাখা সেই ছুরি নিমেষের মধ্যেই ক্ষতবিক্ষত করে দিল কত্তামশায়ের দেহ। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মারা গেলেন দুজনেই। ছোট্ট শিশু হামা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তার বাবার দিকে, এই যেন ধরে ফেলল সজলকে। ভয়ে একপা একপা করে পিছাতে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গেল সজল। রক্তাক্ত অবস্থায় সেও অচৈতন্য হয়ে পড়ে রইল সেখানেই। পূর্ণ হল মৌসুমীর সমস্ত প্রতিশোধ। মৌসুমির বিকট হাসির আওয়াজ আর তার ছেলের খিলখিল করে হেসে ওঠার আওয়াজে ফেটে পড়তে লাগলো সেই বাড়ি যেখানে একদিন তাকে দিনের-পর-দিন অত্যাচারিত হতে হয়েছিল। চারিদিকের সেই ভয়ঙ্কর পরিবেশ নিমেষেই স্তব্ধ হয়ে গেল। মিলিয়ে গেল তারা দুজনেই। সবাই মারা গেলেও বুড়ি পিসিমার কোনো ক্ষতি কিন্তু হয়নি, তিনি সাক্ষী থেকে গেলেন এই ভয়ঙ্কর ঘটনার। মুক্তি পেল আজ মৌসুমীর বিদেহী আত্মা। পূর্ণ হল তার সকল প্রতিশোধ……..

      


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror