POULAMI GUHA

Horror Inspirational

3.3  

POULAMI GUHA

Horror Inspirational

অসময়ের বন্ধু

অসময়ের বন্ধু

2 mins
493


রাতের কলকাতা শহর টা দেখতে একদম অন্যরকম,অবশ্য রাতের কলকাতা দেখার অভিজ্ঞতা রবির নতুন নয়।পুরোনো রংচটা সাদা এম্বাসেডর নিয়ে রবি চলেছে শহরের পথে।শীতের রাত,ব্যস্ততা নেই বললেই চলে।গলিগুলো কুয়াশায় সাদা হয়ে আছে।

 তার বন্ধ হয়ে যাওয়া হাত ঘড়িটার আওয়াজ পেল।রাত ১টা ১০।

"ট্যাক্সি যাবে?"পাশ থেকে শুনতে পেল রবি।কিন্তু কিসের আশঙ্কায় প্যাসেঞ্জারের পাশে একমুহুর্ত না দাঁড়িয়ে সে চলে গেল।

                রীনা প্রায় দেড়ঘন্টা হল গলির মুখে দাঁড়িয়ে।গায়ের চাদরটা আরেকবার ভালো করে জড়িয়ে নিল।মুখছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আশেপাশে কয়েকজন মানুষ পথ চলতে তার দিকে আড় চোখে দেখছে।আচ্ছা!কেউ কি বুঝতে পারছে তার শরীরের অসহ্য যন্ত্রণার কথা?ফোনটাও তো বাড়ি ফেলে এসেছে,এবার??

রবি আবারও দুজন প্যাসেঞ্জার কে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলে রাস্তা দিয়ে।

গাড়িটা প্রথম চালাতে সে শুরু করেছিল,,আজ তা 20 বছর আগের কথা--সব আজও ছবির মতো মনে পড়ে তার । গ্যারেজে কাজ করতে করতে অনেকটাই গাড়ি চালানো শিখে গেছিলো সে।আজ একযুগ হয়ে গেল।

         রীনা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।শীতের দাপট বেড়েই চলেছে।হাইওয়ের ছোট ধাবাটা ছাড়া আর সারা রাস্তায় একটাও আলো নেই।

রবির গাড়ির হেডলাইট টা জ্বলছে না।তাই রীনার সামনে দিয়ে গাড়িটা কখন গেছে সে খেয়াল করেনি।দেখতে পেয়েই ডাকতে ডাকতে দৌড়ালো গাড়ির পিছনে।

সাদা গাড়িটা দাঁড়ালো বটে।রীনা হাপাতে হাপাতে দরজা খুলে ভিতরে বসলো।দরজা বন্ধ করতে গিয়ে রীনা শুনলো দরজা টা যেন আর্তনাদ করে উঠলো।বড্ড পুরানো গাড়ি,কাঁচগুলো ভাঙা,কালো হয়ে গেছে,গায়েও অনেক জায়গায় ক্ষত।তা হোক।এতক্ষণ তবু কিছু আশার আলো দেখতে পেল।বললো,"ধন্যবাদ দাদা।আমায় কাছের কোনো হাসপাতালে নিয়ে চলুন।আমার বড় অসুখ।"

হাতঘড়িতে 4টে কুড়ি।রবির আজ তার স্ত্রী এর কথা বড্ডো মনে পড়ছে।সারাদিন গাড়ি চালিয়ে তার দিকে তাকানোর সময় হয়নি রবির।সংসারের অভাব অভিযোগ তাকে এক হাতে সামলাতে হয়েছে।তবু কোনোদিন কোনো নালিশ জানায়নি,,রবি থাকতে তার দুঃখ কিসের?সেই তার স্ত্রীর সব।।চোখটা জলে ঝাপসা হয়ে এলো।পাশদিয়ে একটা প্রকান্ড মালবাহী গাড়ি রাতের নিস্তব্ধতা চুরমার করে দিয়ে গেল।

রীনা এবার অস্থির হয়ে উঠছে।বারবার ঘড়ি দেখছে।সাড়ে চারটে বাজলো।আরো কত সময় লাগবে?কতক্ষন সে যন্ত্রনা সহ্য করতে পারবে?এবার সে রবি কে জিজ্ঞাসা করলো-"দাদা,আপনি হাসপাতাল চেনেন তো."

রবি চমকে উঠলো।পিছনে না তাকিয়ে,গলার স্বর যত সম্ভব নিচু করে বলল-জী!

কেমন যেন লাগলো গলাটা রীনার।তার এবার ভয় হচ্ছে।সে হাসপাতালে পৌছাতে পারবে তো?তার শরীর ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসছে।

 রবি বার বার ঘড়ি দেখছে।5টা 20।গাড়ির যন্ত্র গুলো মাঝে মাঝে আর্তনাদ করছে।সেদিকে অবশ্য রবির মন নেই।সে গাড়ির গতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।হঠাৎ রবি পিছনের সিট থেকে রীনার গোঙানির আওয়াজ পেল।যন্ত্রনায় ছটফট করছে মেয়েটা।দূরে পুব আকাশে আলোর রেখা।সূর্য উঠবে একটু পরেই।ঘড়িতে পৌনে ছটা।রবি দুহাতে শক্ত করে ধরেছে স্টিয়ারিং টা।

সেই রাতটার কথা বার বার রবির মনে পড়ছে।এই গাড়ি নিয়েই সে ছুটে চলছিল,,এমনিই হাইওয়ে ধরে।আঘাতটা আচমকাই আসে।রবিকে স্থানীয় কিছু মানুষ পরের দিন ভোরে উদ্ধার করে।অবশ্য হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।মৃত্যুর পরও এই গাড়িই তার একমাত্র আকর্ষণ,তার গাড়ির নেশা চিরন্তন।

হাসপাতালের কাছে পৌঁছে গেছে প্রায়।রীনা কখন যেন জ্ঞান হারিয়েছে।রবি জানে সকালে হাসপাতালের রক্ষীরা তাকে উদ্ধার করবে । তবে তার জ্ঞান ফিরলে সে জানবে না কে ছিল সেই রাতের উপকারী ড্রাইভার দাদাটি...।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror