অরূপ রতন
অরূপ রতন


বর্ধমান চলেছি। লোকাল ট্রেন। অফিস টাইম। চূচূড়া ষ্টেশনে ট্রেন থামতে যাএীরা একেবারে হুড়মুড়িয়ে উঠতে শুরু করল। দুজন স্ত্রীলোক দুই বোঝা জালট নিয়ে উঠতে যাএীদের সঙ্গে বচসা লেগে যায়। কামরার ক্রিয়দংশে দক্ষযজ্ঞ লাগে আর কি। এরমধ্যে ভীড় ঠেলে একটি মেয়ে ভেতরে এল। আমরা মুখোমুখি। বছর বাইশের হবে। চুরিদারের ওড়না দিয়ে তার গোটা মুখ ঢাকা। তার চোখদুটি পর্দার বাইরে।ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে। জ্যৈষ্ঠের গরমে লৌহশকটে বন্দী মানুষগুলোর গলদঘর্ম অবস্থা তখন এই অবগুন্ঠন সত্যিই বিস্ময় লাগায়। খোলা মাঠের দমকা বাতাসে মেয়েটির অবগুন্ঠন খুলে যায়। সাথে সাথে তার এলো চুল লুকিয়ে রাখা রূপকে আড়াল করে। প্রকৃতি যেন নিজেই চায় না সে অবগুন্ঠন উন্মোচিত হোক। কিন্তু তার চোখ চুলের সে ভার বইতে নারাজি। তাকে সরাতেই হল।
বয়স রূপ অবস্থা এমনকি উচ্ছাসের মুখে একটাই উদাহরণ কোথাও রূপের ঘাটতি নেই - আছে এবং তা বড় রকমের। ঘাটতি হীন রূপের বাজারে সেই রূপ হল অনন্যা।
মেয়েটির কপালের নিচে নাকের স্থানে রয়েছে দুটি নাসারন্ধ্র। নাক নেই। ডান গাল জুড়ে প্রকাণ্ড এক কালো জরুল। রূপহীন হয়েও তার চোখের কোনে যে রূপ ফুটে উঠল, সে অরূপরতন।
দ্বিতীয়জন দেখার আগে সে নিজেকে ওড়নায় ঢেকে নিল। অন্যরা মেঠো হাওয়ায় নিজেকে একটু জিইয়ে নিতে ব্যস্ত।