অপেক্ষা
অপেক্ষা
"এই খাতাটা কার গো দিদুন, এত পুরোনো?", বইয়ের তাক ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ খাতাটা দেখতে পায় ছোট্ট পুপুল, প্রশ্ন করে ওর দিদুনকে।
দশমীর বরণডালা সাজাচ্ছিলেন প্রতিমা দেবী,খাতাটা নাতনি হাতে দেখতে পেয়ে চোখদুটো ঝাপসা হয়ে ওঠে , স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে একটা চেনা মুখ
-"তুমি অহন পোলা মাইয়া গো লিয়া ওপারে চইল্যা যাও, এইহানে সবকিছু ঠিকঠাক হইলে আবার তোমাগো হগ্গলরে ফিরায়া আনুম... ", কানে বাজতে থাকে স্বামীর বলা শেষ কথাগুলো।
সেই ফরিদপুরের বাড়িটা, পুকুর, মাঠ, দুর্গাপুজো সবকিছু মনে পড়তে থাকে একে একে। এপারে চলে আসার পর কেটে গেছে অগুনতি সময়, ফিরে আসেনি স্বামী, যাওয়া হয়নি আর নিজের দেশে।
এখনো শেষ সম্বল বলতে শুধু অন্তহীন অপেক্ষা.....
-"বাবার শেষ কাজটা এবার করে নাও মা, আমরা তো সবাই চেষ্টা করলাম খোঁজ নেওয়ার,সবরকম ভাবে চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোথাও কোনো খবর মেলেনি, পুলিশ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছে...." ছেলেমেয়েরা অনেকবার বুঝিয়েছে, কিন্তু তাতেও কোনো কথা শোনেননি প্রতিমা দেবী। আজও তিনি অপেক্ষায় প্রহর গোনেন, একদিন তার স্বামী ঠিক ফিরে আসবে, একদিন আবার তিনি ফিরে যাবেন নিজের শিকড়ে...
-"দিদিভাই, খাতাখান তোমাগো দাদুনের", খাতাটা নাতনির হাত থেকে নিয়ে খুললেন প্রতিমা দেবী,
প্রথম পাতায় লেখা,
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি..."
©