The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

শুভায়ন বসু

Romance Tragedy

4  

শুভায়ন বসু

Romance Tragedy

অন্য প্রেম

অন্য প্রেম

5 mins
24.2K


 ইন্জিনিয়ারিং পাশ ক’রে কুনালের চাকরি হয়ে গেল জামশেদপুরে। কলকাতার দামাল ছেলেটা, চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় দিল পুরনো শহর, পুরনো বন্ধু-বান্ধব- আত্মীয়স্বজন ,এমনকি পুরনো প্রেমিকাকে পর্যন্ত। চার ঘণ্টা জার্নি করে রোজ রোজ তো আর বাড়ি ফেরা যায়না, মাসে দু’মাসে ছুটিতে একবার বাড়ি আসতে পারে বটে ,কিন্তু সবার সঙ্গে সেই যোগাযোগটা কমে গেল। প্রতিবার যখন ছুটির শেষে আবার জামশেদপুরে ফিরে যেতে হত, বুকটা যেন ফেটে যেত, চোখে জল এসে যেত কুনালের।


  কিন্তু সময় থেমে থাকে না। মানুষ সব পরিস্থিতিকেই মানিয়ে চলতে জানে। জামশেদপুরে আস্তে আস্তে মন বসতে লাগল কুনালের, কিছু বন্ধুও হল, কলিগ স্থানীয়। বেশকিছু বাঙালির বাস এখানে, তাছাড়া স্থানীয় মানুষজনও খারাপ নয়। তাদেরকেই আত্মীয় করে নেওয়া ছাড়া আর উপায়ই বা কি?

  হঠাৎ একদিন বিকেলে, কুণালের মোবাইলে একটা ফোন এল। মেয়েটা কাকে যেন খুঁজছে। বোঝা গেল,আসলে রং নাম্বার। ফোনটা কাটতে গিয়েও, কুণালের মনে হল, আরে মেয়েটার গলাটা তো বেশ মিষ্টি , কেমন যেন মাদকতাময় ।ততদিনে শম্পার সঙ্গে সম্পর্কটা কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। কুনাল জানতে চাইল, ‘কিছু যদি মনে না করেন, আপনার নামটা বলবেন?’ ‘ঝিমলি’ উত্তর আসে উল্টোদিক থেকে। তারপর দু এক কথার পর ফোনটা ছেড়ে দেয় কুনাল। কিন্তু ঝিমলিকে ভুলতে পারে না। বেশ সুন্দর গলাটা ওর, ভালো কথাও বলতে পারে । কেমন দেখতে কে জানে?


  শেষকালে রং নাম্বারের সূত্রেই রাইট পার্টনার পেয়ে গেল দুজনে। দুজনের কথা জমে উঠতে থাকে, কখনো বা মেসেজের পর মেসেজ। ফেসবুক ,হোয়াটসঅ্যাপ কোনটাই অবশ্যই ঝিমলির নেই,ও থাকে মুর্শিদাবাদের এক অখ্যাত গ্রাম ভৈরবটোলায়। কিন্তু কিভাবে যেন, দুজনে দুজনের আকর্ষনে বাঁধা পড়ে যায় ,এক দুর্নিবার আকর্ষণ, অকারন আবেগ।ক্রমশঃ কুনাল আর ঝিমলি একে অপরের মনের মানুষ হয়ে যায়,মেড ফর ইচ আদার যাকে বলে আর কি।


  কুনাল একদিন ঝিমলিকে বলে,

’শুধুই কি আমরা ফোনফ্রেন্ড?আমি তোমাকে দেখতে চাই, সামনাসামনি ।‘

‘কেন?এই তো বেশ চলছে। এখন আমার দেখা করার প্রবলেম আছে।‘

 ‘কিসের প্রবলেম?’ ,কুনাল অধীর। ‘তুমি বুঝবে না, আমার বাড়িতে খুব কড়াকড়ি । তুমি দেখা করতে এসেছ জানলে, সর্বনাশ হবে। আমাকে আর তোমাকে ফোন করতে দেবে না।‘  


‘ঠিক আছে, সামনে দেখতে না পাই, একটা ছবি অন্ততঃ পাঠাও, প্লিজ।তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।‘

 ‘কিভাবে পাঠাবো?’ 

‘কেন? ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে! ইউজ করতে শুরু কর এবার, কতবার তো বললাম।‘ 

‘ধুর, আমার ফোনে ওসব হবেই না। আমারটা যে স্মার্টফোন নয়।‘

 ‘তো একটা স্মার্ট ফোন কিনে নাও না।‘ 


‘না গো, অত সোজা নয় ।বাবা আমাকে কিনেই দেবেনা ।বাবার সামান্য রোজকার, মিলে চাকরি করে। এই ফোনটা কিনে দিয়েছে এই ঢের।‘ 

‘আরে বাবাকে বলেই দেখ না,নইলে টিউশনির পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কেন।‘

 ‘দেখি,সে অনেক সময় লাগবে।আমার জমানো টাকাতেই তো প্রতি মাসে রিচার্জ করি, ওটাও বাবা দেয় না। আমার কাছে স্মার্টফোন স্বপ্নই!’

 ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে ,কিন্তু আমাকে তোমার একটা ছবি পাঠাতেই হবে, আমার চাই। প্লিজ, না বলো না। তোমার কোন বন্ধুর থেকে অন্তত পাঠাও।‘ 

‘আচ্ছা দেখছি, দাঁড়াও, পরে বলছি।‘ এইভাবেই চলতে থাকে, ছবি আর পাঠানো হয় না। কুনাল ততদিনে ঝিমলির প্রেমে পাগল, ঘন্টার পর ঘন্টা দুজনে কত প্রাণের-মনের কথা হয়।কুনাল বুঝতে পারে ,ঝিমলি ঠিক ওর মনের মত, যেমনটি ও চায়।এক দুর্নিবার আকর্ষণে, ঝিমলির পিছনে দেহমন ঢেলে দেয় কুনাল। ওর জীবন এখন ঝিমলিকে ঘিরেই, বাড়ি ফেরার তাগিদও এখন আর ততোটা অনুভব করে না ।কুনাল একদিন ভাবল, মুর্শিদাবাদে চলে যাবে,ঝিমলিকে নিজের মাইনের টাকা থেকে একটা স্মার্টফোন কিনে দেবে।। কিন্তু ঝিমলি বারণ করে,পরে জানাবে বলে। বাড়িতে নাকি সমস্যা হবে। কুনাল তখন ঝিমলির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, ঝিমলিও।কুনাল বুঝতে পারে না,এত যদি ভালবাসা, ঝিমলির দেখা করতে বা ফটো পাঠাতে এত আপত্তি কিসের!


  একদিন হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটে।কুনাল সেদিন ওর মোবাইল নাম্বারটা রিচার্জ করতে ভুলে গেছে, ব্যালেন্স নেই, আউটগোইংও বন্ধ। ওখানে ও একটা লোকাল নাম্বার নিয়েছিল ,সেটা থেকেই তখন ও ঝিমলিকে ফোন করে। ওদিকে একজন ফোন তোলে ,কিন্তু ঝিমলির গলা নয়, এ গলা পুরুষালী।কুনাল কথা বলতে, মুহুর্তেই সেই গলা আবার ঝিমলিতে পরিণত হয় ।কথাবার্তা সেদিন আর সেরকম জমেনা। কুনাল একটু সন্দেহগ্রস্ত হয়।ওর কয়েকজন বন্ধুর ,কয়েকটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা ওর মনে পড়ে যায়। ওরা হিজড়ের প্রেমে পড়েছিল। মেয়ের গলা নকল করে ওরা,কুনালের বন্ধুদের ফাঁসাত। আর ওরাও, কতবার মেয়ে ভেবে আসলে সেই হিজড়েদের রিচার্জ করে দিয়েছে বা অনলাইনে কোন গিফট কিনে পাঠিয়েছে। এইভাবে প্রেমের ফাঁদে পড়ে , অনেক টাকা ক্ষুইয়ে ওরা শেষমেষ বোকা বনে যায়, দেখা করতে যাবার জন্য জোর করতেই, সব সম্পর্ক হিজড়েরা কেটে দিয়েছে। এসব মনে পড়ায়, কুনাল একটু দ্বিধাগ্রস্থ হয়। এরকম কোন ফাঁদে ও’ও পা দিয়ে ফেলল না তো !ঝিমলির গলাটা কেমন যেন ছেলেদের মতো লাগল, হিজড়ে নয়তো! অন্য নম্বর থেকে ফোন আসাতে কি সহজাত গলাটা বেরিয়ে এসেছিল? ছবিই বা পাঠায় না কেন, দেখাই বা করেনা কেন? পরের দিনই , সন্দেহগ্রস্ত হয়ে, কুনাল এইসব প্রশ্নে জেরবার করে দেয় ঝিমলিকে। ঝিমলি আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করে,বোঝায় কুনালকে। কিন্তু কুনাল যা বোঝার বুঝে যায়।রেগে ঝিমলিকে বলে,


 ‘আর কোন সম্পর্ক থাকবে না তোমার সঙ্গে। আমি বুঝে গেছি তুমি মেয়ে নও,হিজড়ে। অভিনয় করছ আমার সঙ্গে ।আমার সঙ্গে ভালোবাসার খেলা খেলছ।‘


 ‘কি বলছ কি কুনাল!কি খেলা খেলেছি তোমার সঙ্গে? কোনদিনও কি কিছু সুবিধা নিয়েছি তোমার থেকে? তোমাকে আমি ভালোবাসি।‘


কুনাল একটু দোনামোনায় পড়ে,ঠিকই তো, বন্ধুদের শোনা গল্পের মতো ঝিমলি তো কোনদিন রিচার্জ করতে বা গিফট পাঠাতে বলেনি। তাহলে? কিন্তু সন্দেহটা ওর মনে গেঁথে যায়।


 আরো ভালভাবে পরীক্ষা করার জন্য কুনাল এবার ওর বন্ধু অনুপের সাহায্য চায়। অনুপ মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে থাকে,ঝিমলিদের গ্রামটাও চেনে।দুদিনেই খবর পেয়ে যায় কুনাল,যা সন্দেহ করেছিল,ঠিক তাই।ওর করা ফোনও, কোন ছেলেই তুলেছে। তাছাড়া অনুপ বলে, ‘ওই এলাকায় প্রচুর হিজড়ে থাকে,ওরা এসবই করে তো,তুই জানতিস না? তুইও শেষে ওদের পাল্লায় পড়লি?’ অনুপ ব্যঙ্গ করে। কুনাল ভেঙে পড়ে।ছি,ছি, কি না কি, ভেবে এসেছে এতদিনের ফোনফ্রেন্ডকে। মনের কত কথা বলেছে,শুধু ওই সুন্দর গলার মোহে। এত যাকে ভালবেসে ফেলেছে, সে হিজড়ে! ঝিমলিকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেছিল, সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেল! ঝিমলি মেয়ে নয়! রাগে, অপমানে নিজের চূড়ান্ত হয়রানিতে ,বোকা বনে গিয়ে, দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে আবারও আর একটা অন্য নাম্বার থেকে ঝিমলিকে ফোন করে দেখে, যা ভেবেছিল ঠিক তাই, পুরুষকন্ঠ ।বেশ দু’চার কথার পরে, নিজের পরিচয় দিয়ে, নিজের আসল গলা চেনায় কুনাল।রেগে বলে,’ছিঃ ,ঝিমলি। তুমি মেয়ে সেজে আমাকে বোকা বানালে? এতদিন আমাকে নিয়ে খেলা করলে? আজ থেকে আমি তোমার সঙ্গে আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না। সব সম্পর্ক শেষ।দূর হয়ে যাও আমার জীবন থেকে। মিথ্যেবাদী।‘ ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতে থাকে ঝিমলি, আবার মেয়েলি গলায়। ওর কি দুটো সত্ত্বা আছে নাকি? নাকি পুরোটাই অভিনয়? ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেনা,কুনাল। শুধু ওদের ঘৃণা করতে হয়, সেইটুকু জানে। ও মেয়ে নয়, তাই আকর্ষণের আর একটুও অবশিষ্ট থাকে না, কুণালের। শরীর যেখানে নেই, সেখানে মন আসে কি করে?

  কুনাল ফোনটা কেটে দেওয়ার পর, ঝিমলি পাগলের মত বিছানায় ঝাঁপিয়ে প’ড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।মেয়েলি কান্না,ওর শাড়ি অবিন্যস্ত হয়ে যায়। শাড়ির ভেতর ওর শরীর, সেটা পুরো মেয়েলি নয়। কিন্তু মন? সেটাতো মেয়েরই ছিল। তাতে কোনো ফাঁকি ছিল না। মনের তো আর ট্রান্সজেন্ডার হয়না!


Rate this content
Log in

More bengali story from শুভায়ন বসু

Similar bengali story from Romance