Manik Goswami

Romance Classics

3  

Manik Goswami

Romance Classics

অনুরাগ

অনুরাগ

9 mins
240



বাঁশ বাগানের মাথার ওপর থেকে সূর্য্য একটু ঢলে যেতেই ঘন কালো মেঘে তাকে আড়াল করে নিলো। শক্তিশালী সূর্য্যের সব জারিজুরি শেষ। মেঘের আস্তরণ সরিয়ে নিজের দীপ্তি প্রকাশে অক্ষম। এখুনি উঠবে ঝড়। বাতাস বইবে তার সমস্ত শক্তিকে একত্রিত করে। গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাবার। বেশ কিছুক্ষন রুদ্ররূপে সংহার করার মনোভাব নিয়ে দাপট দেখাবে উথাল হাওয়া। গর্জন করে উঠবে বজ্রগর্ভ মেঘ। হয়তো দুএকটা প্রাণের বিনিময়ে তুষ্টতা পাবে, প্রকৃতি শান্ত হবে বৃষ্টির ধারাপাতে।

আশঙ্কা ছিল অনেক। কিন্তু তবুও, আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে গেলো হঠাৎ। কালো মেঘ বাতাসের ডানায় ভর করে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলো দিগন্তে। ফুটে উঠলো সোনালী আলোর আভাস। উজ্জ্বল চকচকে দিন।

একসাথে মধ্যাহ্ন ভোজের কথা ছিল সৃষ্টি আর সমরের। কথা ছিল সমর আজকে অফিসের কাজ সেরে বেলা দেড়টা-দুটো নাগাদ বাড়ি ফিরে আসবে। দুজনে একসাথে খাওয়া দাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়েই বিকেলের দিকে গাড়ি চড়ে হাওয়া খেতে বেরোবে। বেলা তিনটে হয়ে গেছে, সমরের দেখা নেই। সৃষ্টির মুখ গম্ভীর হতে শুরু করেছে। একটু একটু রাগও হচ্ছে। এর পরেই হয়তো কালো হয়ে আসা মুখের মেঘ থেকে ঝরে পড়বে অঝোর বর্ষা।

এক বছরও হয়নি সৃষ্টির সাথে বিয়ে হয়েছে সমরের। হ্যাঁ, রীতিমতো সম্বন্ধ করেই। মোটামুটি ভালোই একটা চাকুরী করে সমর । শিক্ষিত ছেলে, অল্প বয়স, ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আরো উন্নতি করবে। সুদূর প্রসারী এই দৃষ্টি শক্তির ওপর নির্ভর করেই সৃষ্টির বাবা সমরকেই তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এককথায় সমর ভালো ছেলে। পড়াশোনায় ভালো, চাকুরীটাও করে ভালো। গবেষণা মূলক কাজই করে। বৈজ্ঞানিক। সৃষ্টিও গ্রাজুয়েশন করেছে। পড়াশোনায় আহামরি কিছু করে দেখাতে না পারলেও মোটামুটি ভালোই ফল করেছে। সৃষ্টির একটা খুব ভালো গুণ অবশ্যই আছে। ওর বৈষয়িক বুদ্ধি খুবই উন্নত। এই কমাসেই সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে সমর। সময়ানুযায়ী উপযুক্ত, সুন্দর কথা বলতে পারে। সবসময় ঠিক গুছিয়ে বলতে না পারলেও যুক্তি দিয়ে কথা বলার ক্ষমতাটা বেশ ভালোই রপ্ত করেছে। সমর সেইজন্যে একটু হলেও গর্ব অনুভব করতে থাকে। মুখে প্রশংসা করতে না পারলেও মনে মনে তারিফ করতে থাকে। সমর আবার বেশি কথা বলতে চায় না। সম্ভবত সুন্দর করে গুছিয়ে সময়োপযোগী উচিত কথা বলতে না পারার আক্ষেপের কারণেই। তার ওপর বৈজ্ঞানিক মানুষ। নিজের কাজের মধ্যেই ডুবে থাকে। দেখলে মনে হবে সারাক্ষণই কিছু না কিছু চিন্তা করেই যাচ্ছে। হয়তো বা বিরাট কিছু একটা আবিষ্কার করেই ফেলবে। সন্ধ্যের পর অফিস থেকে ফিরলে ওই চা-নাস্তা খেতে খেতে যেটুকু কথা হয় সৃষ্টির সাথে। ঐটুকু সময়ের মধ্যেই সৃষ্টি সারাদিনের ব্যস্ততার ফিরিস্তি দিয়ে থাকে সমরকে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সমর সে মধুরসের আস্বাদ নিতে থাকে। সমরের কিছু বলার থাকে না, এমনকি অফিসের কোনো খবরও বলতে চায় না, শুধু শুনতেই থাকে। আসলে সারাটা দিন এমন ব্যস্ততার মধ্যে কেটে যায় যে সময় কখন কিভাবে পার হয়ে যায় মনে করতেই পারে না। সৃষ্টিকে শোনানোর মতো কোনো কথা বা ঘটনাই নেই। সৃষ্টি দু 'একদিন সমরের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছে যে অফিসে আজ কি হলো, কি করলে। এমন নিরস উত্তর পেয়েছে যে নিজে থেকে আর জিজ্ঞেস করার তাগিদই অনুভব করেনি।

ডাইনিং টেবিলের ওপর খাবারগুলো গুছিয়ে ঢেকে রেখে সৃষ্টি এসে বসে সোফাটার ওপর। একটু একটু রাগও হতে থাকে সমরের ওপর। কি এমন কাজের চাপ যে কথা দিয়েও কথা রাখতে পারে না, আসবে বলে গিয়েও সময়মতো আসতে পারে না। বৌ এর চাইতে ওর কাজই বড় হয়ে উঠলো। এমন মানুষের সাথে বিয়ে হওয়ায় জীবনটাই একেবারে অন্যরকম হয়ে গেলো। না আছে আনন্দ, না আছে খুশি। সারাদিন শুধু পথ চেয়ে বসে থাকা। সন্ধ্যেবেলায় ঘরে ফিরলেও বা কতটা সময় দিতে পারে বৌকে। কতটুকু সময়ই নিজের হাতে রাখে বৌয়ের সাথে দুদণ্ড বসে একটু গল্প করার জন্য। চা টা খাওয়া হয়ে গেলেই তো আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে, আবার কাজের মধ্যে ডুবে যায়। কি যে কাজ করে এতো। কখনো কখনো তো ডিনারের পরেই আবার কাজ নিয়ে বসে পড়ে। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতেই থাকে। আরে বাবা, পরের দিন সকালেই তো আবার অফিসে বেরিয়ে পড়তে হবে। সেখানে গিয়ে কাজটুকু করে ফেললেই তো হয়। এখন তো একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়তে পারে। এইভাবে রাত জাগতে থাকলে শরীরের ওপরও তো তার প্রভাব পড়বে। আমি না হয় বেশি পড়াশোনা করিনি, তাবোলে এটুকুও কি বুঝি না যে শরীরের ওপর অত্যাচার করে কেউ সুস্থ থাকতে পারে না, এমনকি উন্নতিও করতে পারে না। সাতপাঁচ ভেবেই চলেছে সৃষ্টি। চারটে বাজে, এখনও তো এলো না। তবে কি আসবে না এখন। আমি কি তাহলে একাই খেয়ে নেবো। প্রতিদিনই তো দুপুরের খাবারটা এক একাই খেতে হয়। আজ একটা দিন একটু সুযোগ এসেছিলো দুপুরে দুজনে বসে একসাথে গল্প করতে করতে খেয়ে নেওয়া যাবে। সেটাও হবে না মনে হচ্ছে। কি যে করি, একটুও ভালো লাগছে না।

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। সমরই ফোন করেছে। - ‘'সৃষ্টি, কিছু মনে করোনা লক্ষ্মীটি। রাগ কোরোনা প্লিজ। সকাল থেকেই এমন একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে সময়ই পাচ্ছি না তোমাকে ফোন করবার। এই এখন একটু অবসর পেয়েছি, তাই ফোন করলাম। সরি, আজ আর দুজনের একসাথে খাওয়া হয়ে উঠছে না, আমাকে আবার কাজটা নিয়ে বসে যেতে হবে। যত রাতই হোক, আজকেই কাজটা শেষ করে রিপোর্ট জমা করতেই হবে। আমার ফিরতে আজ রাত হয়ে যাবে। মন খারাপ কোরোনা প্লিজ। দুপুরে নিশ্চয়ই খাও নি এখনও। আর দেরি কোরোনা, খেয়ে নাও। রাতে খাওয়ার সময় অনেক অনেক গল্প করবো।হ্যাঁ, আজকে আর সন্ধ্যেবেলায় গাড়ি চড়ে হাওয়া খেতে বেরোনো হবে না ঠিকই, তবে অন্য কোনো দিন অবশ্যই সেটা পূরণ হবে। খেয়ে নিও লক্ষ্মীটি। আমার ওপর বা আমার কাজের ওপর রাগ করে না খেয়ে বসে থেকো না প্লিজ'।

- 'তুমি নিজে খেয়েছো কি কিছু' ? সৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো হঠাৎ।

- 'না, আজকে টিফিন করার সময়টা কখন পার হয়ে গেছে জানতেই পারিনি। আসলে এমন একটা কাজের চাপ এসে পড়েছে যে সেটা যতক্ষণ না শেষ করে রিপোর্টটা জমা দিতে পারছি, মনের থেকে একদমই স্বস্তি পাচ্ছি না। এখন এই বেলায় এক কাপ চা আর একটা টিফিন কেক নিয়ে বসেছি। একটু কথা বলার সময় পেয়েছি, তাই সেই সুযোগে তোমাকে ফোনটাও করে নিলাম। যাই হোক আজকে যা যা হয়নি সব ডিউ রেখে দাও, পরে সময় করে সুদে আসলে সব মিটিয়ে দেবো' ।

ডিনার টেবিলে বসে সৃষ্টির গম্ভীর মুখের দিয়ে চেয়ে সমর একটু ভয় পেয়ে গেছে বলে মনে হলো। বলতে থাকলো,- ’'কি করবো বলো; এই প্রজেক্টের কাজটা অনেক দিন ধরেই চলছে। অবশ্য শেষ হয়েই আসছিলো। আর দিন সাতেকের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়ে দিতে পারবো সেই চিন্তা করেই কাজটা এগোচ্ছিল নিজের গতিতে। সকালে অফিস যেতেই প্রথম যে ফোন কলটি আসে সেটা ছিল এই প্রজেক্টের কাজ সম্বন্ধীয়। ফোনের ও প্রান্ত থেকে জানায় যে, যেমন করেই হোক কাজটা আজই শেষ করে রিপোর্টও জমা করতে হবে। ফোনটা আমাদের ডিপার্টমেন্টাল হেডের কাছেই আসে। আমি অফিস পৌঁছনোর প্রায় সাথে সাথেই তিনি আমাকে ডেকে পাঠান। আমার কাছে প্রজেক্টের স্টেটাস সম্বন্ধে জানতে চান। আমি জানাই যে কাজ তো মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। রিপোর্টও অলমোস্ট তৈরী হয়েই গেছে। শুধু কয়েকটা গ্রাফ বানানো বাকি আছে, আর সেই গ্রাফের ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টেও কিছু পরিবর্ধন করতে হবে। মেইন ফিচারস গুলোকে হাইলাইট করতে হবে। আরও টুকিটাকি কিছু কাজ কমপ্লিট করে রিপোর্ট লেখাটা শেষ হলে পুরোটা একবার রিভিউ করতে হবে। ছোট খাটো কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লে করতে হবে। কিন্তু সে সব করতে এতো সময় লেগে যাবে আর এইভাবে ইনভল্ভড হয়ে পড়তে হবে, সেটা আগে বুঝতে পারিনি। কাজের গুরুত্ব টা উপলব্ধি করে যতটা মন দিয়ে কাজ করা যায়, করেছি। সেটাই স্যাটিসফেকশন, সেটাই আনন্দ। যাক শেষ পর্যন্ত সব কাজটাই ঠিকঠাক শেষ করে রিপোর্টটাও যে জমা দিতে পেরেছি, সেটাই মনে অনেক স্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই কোম্পানির অধিকারিকরাও বেলার দিকে অফিসে এসে পৌঁছান। অবশ্য তাদের কিছুক্ষন বসতে হয়েছে। তবে তাদের হাতে সময় মতো রিপোর্টটা তুলে দেবার পর যে আনন্দটা আমি পেয়েছি সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। তারাও দেখলাম বেজায় খুশি। আমাদের এই প্রচেষ্টার এবং তার সাফল্যের জন্য তারা উচ্ছ্বসিত। অনেক সাধুবাদ দিয়ে গেলেন তারা। কিন্তু সত্যি বলতে কি এতো খুশি হওয়া সত্ত্বেও অফিসের কাজের দিকটা দেখতে গিয়ে আমি তোমার ওপর অনেক অবিচার করে ফেলেছি সৃষ্টি। আমি প্রথমেই তার জন্য মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি। বিশ্বাস করো তোমার গম্ভীর মুখটার দিকে চেয়ে আমার খুব ভয় করছিলো, ভয় অবশ্য এখনও করছে। হয়তো ঝড়টা এখনই উত্তাল হয়ে পড়বে, দাপট দেখাতে থাকবে। ঝড়ের আগের গুমোট ভাবটা তোমার মুখের গম্ভীরতাতেই প্রকাশ পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, যে কোনো মুহূর্তেই বিরাট ঝড়ের দাপটে সব কিছু কেমন ওলোট পালট হয়ে যাবে। স্পষ্ট প্রকাশিত হয়েছে ঝড়ের পূর্বাভাস। তারপরেই হয়তো অঝোর ধারায় বর্ষণ শুরু হয়ে যাবে। অভিযোগের বিদ্যুতের চমক লাগবে আমার হৃদয়ে। সে চমক আমাকে সহ্য করতে হবে করুণাধারায় একাত্ম হয়ে গিয়ে।

খাওয়া হয়ে গেছে, কিন্তু সমরের কথা বলার পালা এখনও চলছে। তার মুখে শুধু আত্মপক্ষ সমর্থনের সুর। আর মাঝে মাঝে সৃষ্টির মনের দরোজায় জল ঢেলে সারাদিনের জমে থাকা তাপটাকে শান্ত করার প্রক্রিয়া। সমরের চোখে মুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ, কি জানি কি হবে। সৃষ্টি এখনও গম্ভীর হয়ে আছে, মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তেই ঝড় আছড়ে পড়বে। সমর মনে মনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে থাকে যেন সব কিছু শান্ত হয়ে যায়। আকাশে মেঘ জমলেও সে মেঘ যে সবসময় ঝড় কে আহবান করে আনবে তা নাও হতে পারে। ধীরে ধীরে সে মেঘ কেটে আবার উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠতে পারে। সৃষ্টির গম্ভীর মুখে অবশেষে কথা ফুটলো। বলে উঠলো, - ’'সারাদিন অনেক পরিশ্রম হয়েছে। শারীরিক পরিশ্রম না হলেও মানসিক চাপের মধ্যে তো ছিলে সারাদিন। চোখ মুখ দেখেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে পরিশ্রান্ত হয়ে গেছো। মুখ হাত ধুয়ে সোজা বিছানায় গিয়ে বসো। চোখ বন্ধ করে একটু বিশ্রাম নেবার চেষ্টা করো। হাতের কাজগুলো সেরে নিয়ে আমি আসছি’'। সমরের মনের মধ্যে জমতে থাকা একরাশ দুশ্চিন্তা হঠাৎ করে কেমন হালকা হয়ে গেলো। কি শান্তি যে লাগছে এখন। 

সৃষ্টি ঘরে এসে সমরের পাশে বসেই বলতে শুরু করে, - '’চুপটি করে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকো। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, আরাম পাবে। একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করো। সারাদিনে যে পরিমান কাজের চাপ সহ্য করেছো তাতে শরীরের ওপর দিয়ে যে ধকলটা গেছে সেটা মানসিক স্থিতিটাকে নষ্ট করে দেবার জন্য যথেষ্ট। যাই হোক কাজটা যখন ঠিকমতো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সুষ্ঠূভাবে শেষ করতে পেরেছো, সেটা তোমার মনের মধ্যে যে প্রশান্তি এনে দিয়েছে তাতেই অনেকটা হালকা অনুভব করছো। তবুও এখন তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন। একটু বিশ্রাম নিলেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সুযোগমতো সমর আবার বলতে শুরু করে, - ’'সৃষ্টি, আমি সত্যিই দুঃখিত। কথা দিয়েও কথা রাখতে না পারায় তোমার ওপর আমি অবিচার করেছি। তোমার সব খুশিতে, সব আশাতে আমি জল ঢেলে দিয়েছি। তোমার রাগ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আমারও অবশ্য কিছু করার ছিল না। অফিসে বস যখন কাজের কথাটা জানিয়ে বলে মোস্ট আর্জেন্ট, তখন আমারও খুব রাগ হচ্ছিলো। পরে ভাবলাম, অফিসের কাজটাকে তো প্রাধান্য দিতেই হবে। বৈজ্ঞানিক হিসেবে আমার দায়িত্বটা তো আমি এড়িয়ে যেতে পারিনা। বসও বললেন, 'আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে আসি, অর্থাৎ যে কাজ করলে দেশ ও দশের মঙ্গল হবে সেখানে সময়ের মূল্যে তাকে বিচার করবে না। কাজটা আজকের মধ্যেই শেষ করে রিপোর্টটা তাদের হাতে তুলে দেওয়াটা আমাদের কাছে একটা বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ যেটা আমরা কোনো সময়েই ইগনোর করতে পারিনা’'। তাই চ্যালেঞ্জটা একসেপ্ট করে নিলাম। আর এখন এটা ভেবেই ভালো লাগছে যে, আমি পেরেছি। একটা প্রায় অসম্ভব কাজটাকে একদিনে সম্ভব করতে পেরেছি। সৃষ্টি প্লিজ, তুমি আর মনের মধ্যে রাগ বা অভিমান কিছুই জমিয়ে রেখো না। আমি কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে এরকম দায়িত্ব আমি আর নিজের ওপর নেবো না'’ । কথাটা শুনেই সৃষ্টি একটু জোর গলাতেই বলে উঠলো, - “কি বলছো কি তুমি। এরকম দায়িত্ব আর নেবে না মানে ? ভবিষ্যতে এই ধরণের কথা আমি যেন আর তোমার মুখ থেকে না শুনি। তোমার এই দায়িত্বপূর্ণ কাজের তুলনায় আমাদের গাড়ি চড়ে হওয়া খেতে বেড়াতে যাওয়াটাই তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। তুমি এটা মনে রেখো যে তুমি দুপুরে আসতে পারোনি বলে তোমার ওপর আমার রাগ বা অভিমান বলে কিছুই নেই। আর করবোই বা কেন। যে কোনো কাজের মূল্যই আমার কাছে অনেক অনেক বেশি। তাছাড়া কাজটা সময়মতো শেষ করতে পেরে যে পরিমান অনাবিল আনন্দ তুমি পেয়েছো, এক ঘন্টা তোমার সাথে ঘুরে বেরিয়ে সে পরিমান আনন্দ কি আমি তোমাকে দিতে পারতাম। একদমই পারতাম না। সুতরাং কোনো দুঃখ নয়, কোনো আক্ষেপ নয়। যা করেছো, জানবে তাতে তুমি আমাকে গর্বিতই করেছো। অভিমান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। প্রথম দিকে একটু খারাপ লাগছিলো ঠিকই। কিন্তু তোমাকে দেখে, তোমার কাহিনী শুনে, তোমার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে সেটা অনুভব করতে পেরেই আমার আর কোনো অভিযোগই নেই তোমার বিরুদ্ধে। যাও এবার শুয়ে পড়'।

সমরের মনে হলো সমস্ত স্বর্গটাকে তার হাতের মুঠোয় পাওয়া হয়ে গেছে। দুহাত দিয়ে সে ওই সুখের স্বর্গটাকে আগলে রাখতে চায়। কি প্রশান্তি আজ মনে। সারা জীবন ধরে এই প্রশান্তিটাকে উপলব্ধি করেই খুশির সাগরে ভেসে থাকা যায়।

                                          ---- x ----


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance