অন্তিম মুহুর্ত
অন্তিম মুহুর্ত
অন্তিম মুহুর্ত
কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী
হাতেযে সময় খুব অল্প সেটা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিলেন অনুব্রত বাবু। তারপরও তিনি একটা যুদ্ধ করে চলেছেন আরও কিছু মুহুর্তের জন্য। দেহটা কেমন যেন সঙ্গ দিচ্ছেনা। অনুব্রত বাবুর এই মহুর্তে সম্বল সুধুমাত্র ব্রেনটাই। অনুব্রত বাবুর মস্তিষ্ক তার এই সত্তর বছরের হিসাব চাইছে তারকাছে। তার মস্তিষ্ক তাকে প্রশ্ন করছে সে এই পৃথিবীতে এসে কি এমন কার্য করেছে যে সে চলেযাবার পরেও এই পৃথিবী তাকে মনে রাখবে? পৃথিবীকি তাকে কিছুই করবার সুযোগ দেয়নি? একটা অনুশোচনা কেমন যেন তার এই অন্তিম মুহুর্তে কি মারাত্মক টানাপোড়েনের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ফেলছে। কোন জবাব কেন পাচ্ছেননা তিনি। এতগুলো বছর ধরে সে বহু কর্মকাণ্ডইনা করেছেন তিনি। কত অর্থই না উপার্যন করেছেন তিনি। যেখানে মানুষ দুবেলা দুমুঠো অন্যের জন্য হাহাকার করেছে ঠিক সেই সময় তিনি অর্থের জোরে বানিয়েছিলেন প্রাশাদ সমান অট্টালিকা। সংসারের লোকেদের জন্য কি করেননি তিনি কিন্তু তাকে মনে রাখবার মতো কি করেছেন এ জবাব কিছুতেই মিলিয়ে উঠতে পারছেনা তিনি।
সকাল পযর্ন্ত তার দেহটা বেশ সঙ্গদিয়েছে তাকে। হঠাৎ দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরথেকেই সব কিছু বদলে গিয়েছে। এখন নিজের ঘরের নরম বিছানায় একাকি শুয়ে হয়তো মুহুর্তের অপেক্ষায়। আশেপাশে কেউ নেই, আছে কিছু প্রশ্ন যা তাকে তাড়া করে বেরাচ্ছে। অনুব্রত বাবু ভাবছেন সত্যিই তো জীবনে অনেকটাই সময় পেয়েছি আমি কিন্তু আমিতো নিজেকে ছাড়া কিছুই ভাবিনি। যা করেছি আমার কথা ভেবে, আমার সংসার, আমার স্ত্রী, আমার সন্তান, আমার সম্পত্তি। জীবন তাকে অনেক সুযোগ দিয়েছিল অনেক কিছুই করবার কিন্তু তিনি আমার আমার করতে করতে যখন অন্তিম মুহুর্তে উপনিত হয়েছেন তখন তার চারপাশে কেউ নেই কিছুই নেই এমনকি তার দেহটাও তাকে সঙ্গ দিচ্ছেনা। সমগ্র দেহটা এতটাই ভারি হয়ে গিয়েছে যে তিনি হাজার চেষ্টা করেও সেটাকে এক ইঞ্চি নাড়াতে পারছেন না। চোখ দুটোও কেমন যেন স্থিতাবস্থা ধারণ করছে। চোখের সামনেটা কেমন যেন ধুসর হয়ে উঠছে, দিনের তীব্র আলোক যেন কুহেলিকার কুজ্ঝটিকায় ম্লান হয়ে যাচ্ছে, প্রাণবায়ু কেমন যেন সঙ্গ দিচ্ছেনা তার। বুকের উপর যেন একটা বিশাল পাথর চাপিয়ে দিয়েছে কেউ। মস্তিষ্ক ভিন্ন সর্বাঙ্গ তার সঙ্গ ত্যাগ করেছে কিন্তু মস্তিষ্ক সঙ্গদিলেও সে বারেবারে একটাই প্রশ্নের মুখোমুখি এনে দাঁড় করাচ্ছে তাকে এই পৃথিবীতে তার উপস্থিতর ভূমিকা কতটুকু।
ধড়ফড় করে উঠে বসেন অনুব্রত বাবু। তার সারাটা দেহে ঘাম জমেছে, কপালের বলিরেখা ঘামে ভিজে চকচক করছে। কানের পাশদিয়ে কয়েক বিন্দু ঘাম ঘারবেয়ে নেবে আসছে। নিজের হাত পা গুলোকে একটু নাড়িয়ে দেখে নিলেন তিনি। না অন্তিম মুহুর্ত এখনো আসেনি তার জীবনে অথবা তার জন্ম রহস্য বোঝাতেই হয়তো ভগবান তাকে এই চরম মুহূর্তের মুখোমুখি করেছেন আজ। সত্যিই তো এই প্রশ্নের কোন জবাব নেই অনুব্রত বাবুর কাছে তিনিতো সুধু নিজের জন্যই ভেবেছেন সারাটা জীবন। আজ জীবনের অন্তিম পর্বে এসে তার এই বিবেক দংশন। অনুব্রত বাবু বিছানা থেকে নেমে এক গ্লাস জল পান করেন, তারপর ধিরে ধিরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করেন আমার পরিচয় কি? আমি অশিম চ্যাটার্জীর পুত্র নাকি সুরবালার স্বামী নাকি প্রতিকের, সুবিরের বাবা? এখানে একটিও আমার পরিচয় নয় কারণ এখানি আমিয়ে অনুব্রত তার কোন বেক্ষায় নেই। এবার তিনি বেশিনের সামনে জান চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়ে ফিরে এসে তার প্রয়াত মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি জানি আমার হাতে সময় খুব অল্প কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই আমি চেষ্টা করবো নিজের পরিচয় রেখে যাবার, যাতে আমার অবর্তমানে এই পৃথিবী আমায় ভুলে না যায়। আমি সারাটা জীবন সুধু ভুল করে এসেছি মা। সারাজীবন আমার আমার করেছি কিন্তু একটি বারের জন্য ভাবিনি আমার অস্তিত্ব কতটুকু। আমরা চিতা অথবা কবরেই শেষ হয়ে যাব যদি কিছু থাকে তা আমাদের অস্তিত্বের প্রমাণ মাত্র। তুমি আমার আশীর্বাদ কোরো মা শেষ যুদ্ধে যেন আমি জয়লাভ করতে পাড়ি।
🙏 সমাপ্ত 🙏
