STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

অন্তহীন

অন্তহীন

3 mins
249

প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে শ‍্যামলি ডাক্তারি করছে একটা বেসরকারি হাসপাতালে। অনেক রকম মানুষ কে... নিয়ে চলতে হয় শ‍্যামলিকে। কেউ কেউ বড্ড অবুঝ, আবার কেউ কেউ ভীষন রাগি। তবে ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সুন্দর ভাবে ম‍্যানেজ করে শ‍্যামলি। কারন ডাক্তারি পড়ার সময় শ‍্যামলি মনে মনে এটাই শপথ করেছিল নিজের সবটুকু দিয়ে অপরজনকে সাহায্য করবে। তাই দিবারাত্রি সেই চেষ্টাই চালিয়ে যায় শ‍্যামলি।যখন কেউ সুস্থ হয়ে হাসিখুশি মনে আপনজনের সাথে নতুন করে জীবনে ফিরে যায় তখন নিজের অজান্তেই শ‍্যামলির মনটা আনন্দে ভরে ওঠে,আবার কেউ কেউ এই হাসপাতাল কক্ষ থেকেই না.... ফেরার দেশে পাড়ি দেয়। প্রতিদিন কত নতুন নতুন প্রান জন্ম নেয় এই হাসপাতালে। ভালো খারাপ কত রকমের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফেলেছে শ‍্যামলি এই ডাক্তারি করতে করতে।

তবে মাস দুয়েক আগে দুজন পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে এই বেসরকারী হাসপাতালে। ওনাদের নিজেদের বলতে এখনও কেউ দেখা করতে আসেনি। ছেলে মেয়েরা নাকি সব বিদেশবাসী। ওনারা একাই থাকেন। একজন অনুরাধা দেবী আর একজন শুধাংশু বাবু। মাস দুয়েকের মধ‍্যে দুজনের মধ‍্যে বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সেটা সবার চোখে পড়েছে। শুধাংশু বাবুর বয়স ষাটের কাছাকাছি, আর অনুরাধা দেবীর পঞ্চাশ এর কাছাকাছি। ওনারা এক সময় একই পাড়ায় বসবাস করতেন,তারপর সময়ের স্রোতে জীবন ভেসে গেল জীবনের মত। তবে বহুদিন পর আবার এইভাবে কোনদিনও দেখা হবে কল্পনাও করতে পারেনি। ওনাদের একান্ত অনুরোধে ওনাদের একই সঙ্গে রাখা হয়েছে। 

শ‍্যামলি রোজ একবার করে এসে ওনাদের সাথে দেখা করে গল্প করে যায়। অদ্ভুত এই মানুষ দুটো, সহজে সবাই কে... আপন করে নেয়। সব সময় সবার মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। নিজেদের জীবনের ফেলে আসা সুখো স্মৃতি জড়ানো এত সুন্দর সুন্দর গল্প বলে যে... শুনতে খুব ভালো লাগে। ওনারা আসার পর থেকে হাসপাতালে একটা অন‍্য রকম পরিবেশ তৈরী হয়েছে। তবে ওনাদের গল্প শুনে শ‍্যামলী এইটুকু বুঝতে পেরেছে,, এক সময় ওনাদের মধ‍্যে একটা গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল, যেটা হয়তো বড়ির লোক এবং পরিস্থিতির চাপে পূর্ণতা পায়নি, অথবা হয়তো কেউ মুখফুটে কাউকে মনের কথা খুলে বলতেই পাড়েনি।

শ‍্যমলি সেদিন বাড়ি ফেরার সময় ওনাদের কেবিনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ‍্য করল, শুধাংশু বাবু অনুরাধা দেবীর চোখের দিকে চেয়ে আপন মনে সুন্দর প্রকৃতির বর্ননা করছেন, আর অনুরাধা দেবী চোখ বন্ধ করে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছেন, মনে হচ্ছে যেন সবকিছু অনুভব করতে পারছেন। ওনাদের একসাথে দেখলে মনের মধ‍্যে অপার শান্তি অনুভব করে শ‍্যামলি। সত‍্যি ভালোবাসা নিঃস্বার্থও হয়!!! এই মানুষ দুটো তার জলজ‍্যান্ত উদাহরন। কিন্তু রাত পুরোপুরি পার হওয়ার আগেই শ‍্যামলির কাছে ফোন এল অনুরাধা দেবীর অবস্থা খুব খারাপ, তাড়াতাড়ি হাসপাতাল যেতে হবে।

শ‍্যামলি ফোনটা রেখে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। দুটো কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ার জন‍্য অনেক চেষ্টা করেও অনুরাধা দেবীকে ফেরানো গেলনা!!! তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত‍্যাগ করলেন। তবে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে তিনি নিজের হৃদপিণ্ডটা দান করে গেলেন শুধাংশু বাবুকে।

-------------অনুরাধা দেবী শেষ নিঃশ্বাস ত‍্যাগ করার আগে, শুধাংশু বাবুর হাত ধরে অস্পষ্ট স্বরে বলে ছিলেন, আমি তোমার মধ‍্যেই থাকব শুধাংশু!!! আমাকে থাকতে দেবে তো!!!

------------------শুধাংশু বাবু পরম যত্নে অনুরাধা দেবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিলেন তুমি সবসময় আমার সাথেই ছিলে, আর থাকবেও। শুধাংশু বাবুর চোখের কোনটা জলে চিকচিক করে উঠেছিল।

অনুরাধা দেবী পরম শান্তিতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন। অনুরাধা দেবীর না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ‍্যে শুধাংশু বাবুকে অপরেশন থিয়েটারে ঢোকানো হয়েছিল এবং অনুরাধাদেবীর হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল শুধাংশু বাবুর শরীরে। অনুরাধা দেবী ওনার ভালোবাসার মানুষের মধ‍্যে এভাবেই বেঁচে রইলেন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance