অঙ্কুরের ভাবনা
অঙ্কুরের ভাবনা
বিহু তখন খুব ছোট্ট। তিন বছর হবে । শিশু মনে তার নানা জিজ্ঞাসা। কখনো কল্প কাহিনী, কখনো বাস্তব সব যেন ঘেঁটে যায় । অবুঝ মনে সে একদিন মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো , কি করে ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা হয় । মা আপন খেয়ালে শিশু মনের নাগালের হদ্দি টুকু মেপে বলেছিল মুরগি ডিমের ওপর বসে নিজের শরীরের তাপ দেয় আর তাতেই ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা হয় । বিহুর মন কি বুঝলো সে নাগাল মা পেলো না । পরদিন মা স্কুল থেকে ফিরে ঘরে ঢুকতেই এক বিভৎস আঁশটে গন্ধ পেলো । গন্ধে গা গুলিয়ে যেতে লাগলো কিন্তু কিছুতেই গন্ধের উৎস খুঁজে পেলো না । এঘর ওঘর, মাসী কে জিজ্ঞাসা, উহু কিছুতেই তো মায়ের মাথায় ঢুকছে না হলোটা কি ? মাসীও কিছুই বলতে পারছে না । মায়ের মাথায় হঠাৎ চিন্তা এলো রেফ্রিজারেটর টা খুলে দেখিতো কটা ডিম আছে , ব্যাস ভাবনা মিলে গেলো । একটা ডিম কম । সে তো হলো কিন্তু ডিম টা কে খেলো ? মাসী খায় নি , বিহু খায় নি তবে ? মা তখন বিহু কে গিয়েই চেপে ধরলো কারণ , মাঝে মাঝেই মা বাড়ি ফিরে দেখতো ঝুড়িতে আলু কম, পরে আবিষ্কার হলো , রোজ একটা গরু আসে আর বিহু বারান্দার গ্রীলের ফাঁকে হাত গলিয়ে গরু কে আলু খাওয়ায় । মা যেই জিজ্ঞেস করলো বিহু তুমি ডিম নিয়ে খেলেছ নাকি অন্য কিছু করেছো ? মা অবাক হয়ে গেলো শিশু মনের ভাবনা শুনে । মা যে কাল বলেছিল মুরগি ডিমের ওপর বসে তাপ দেয় আর তাতেই ডিম ফুঁটে মুরগির বাচ্চা হয় , তাই সে একটা ডিম নিয়ে তার ওপর বসে তাপ দিতে গিয়েছিল আর তাতেই ডিম টা ফেঁটে গিয়েছে ।
মা তো হতবাক , একটা লম্বা অবাক হাওয়া । সম্বিত ফিরে মা বুঝলো পুরো বিষয় টা হলো বিহু চেয়ারের ওপর বসে ডিমে তা দিতে গিয়ে ডিম ফেঁটে চেয়ারের নিচ গোলে পড়েছে । বিহু ভয়ে মাসী কে কিছু বলে নি আর মাসীও বয়স্ক মানুষ
কিছুই টের না পেয়ে, তিনি সেই ডিম সমেত সারা ঘর লেপে বাড়িময় আঁশটে গন্ধে ভরিয়েছেন ।
সে আঁশটে গন্ধ কখন যেন অঙ্কুর ভেদ করে চারা হয়ে সোঁদা মাটির গন্ধের সাথে মিলে মিশে এক অন্য গন্ধের আবাহন জানিয়ে দিয়ে যায় মায়ের ঘ্রানান্দ্রিয়ে।