অঙ্গার-লিপি
অঙ্গার-লিপি


কিছুদিন ধরেই পরিশ্রান্ত চোখ দু'টো নিয়ে বকুল আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। চোখ দু'টোর চারপাশে কালি পড়েছে পুরু করে। কখনো সেটা সরু রিংএর মতো কখনো পুরু বালার মতো দেখায়।
মাথাটা আয়নার খুব কাছে নিয়ে গিয়ে আবিষ্কার করলো, চোখের চারপাশের কালো ছোপগুলো আসলে ছোপ নয়, ছায়া। মাথাটা এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে, বারে বারে দেখে চেনা চেনা মনে হলেও কিছুতেই মনে করতে পারে না, ওটা কিসের ছায়া?
করোনার জন্য হোস্টেলে ছুটি পরতেই বকুলের মেয়ে হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে এল। সেদিন বকুলের মেয়ে চুল আচড়াছিল ডাইনিংএর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। বকুল আয়নার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। মেয়ের চোখের চারপাশেও ছায়াটা!
কোয়ারেন্টাইনের মধ্যেই যেদিন দিল্লীর নির্ভয়া কান্ডের দোষীদের ফ
াঁসি হয়ে গেল সেদিন বকুল দেখেছিল ওর মেয়ের ছায়াহীন চোখদুটো ফেবুতে, ইনস্ট্রাগামে, হোয়াটস এপে বাইট লিখে চলেছে। বকুল প্রথমে বুঝতে পারলো না, মেয়েটা কোন ভাষায় লিখছে। কি মনে হতে মোবাইল সমেত মেয়েকে আয়নাটার সামনে নিয়ে যেতেই বুঝতে পারলো, এটা অঙ্গার-লিপি। বকুল এবার পড়তে পারলো, খবরের কাগজে, টিভিতে, ফেবুতে দেখা প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি, উন্না, নির্ভয়ার চোখের লেখাগুলো।
ওরা লম্বা লম্বা আঁশওলা সরীসৃপটার আক্রমণের কথা লিখে যেতে চেয়েছিল চোখের ছায়ায়, অঙ্গার-লিপিতে। বকুল আয়নাটা দেওয়াল থেকে খুলে বুকে জড়িয়ে ধরলো। বকুলের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে জলের ফোঁটা। বকুল সেই জল ধরে রাখছে। এবার অঙ্গার-লিপিতে সে লিখতে শুরু করবে আয়নার গল্প, অশ্রুবিন্দু দিয়ে।