Krishna Banerjee

Romance Classics Others

3  

Krishna Banerjee

Romance Classics Others

আর কত নিচে ?

আর কত নিচে ?

5 mins
22



                  ভদ্র লোকের কথা বুঝে ওঠবার আগেই তিনি প্রসঙ্গ বদলে বললেন ‘ কি নেবেন ঠান্ডা না গরম ? ‘ আমি বললাম না ওসবের আবার কি দরকার ,কেনো ডেকেছেন বলুন ? আবার ভদ্র লোক একটু হেঁসে বললেন আরেবাবা বলবার জন্যইতো ডেকেছি তোমার এতো তাড়া কিসের ? আমার বাড়িতে এসেছো খালিমুখে চলে যাবে সেটাকী ভালোদেখায় ? কিছু একটা নিতেই হবে তোমাকে । কিছু না ভেবেই বোলে দিলাম ঠিকআছে তাহলে এক কাপ চা …..! ভদ্র লোক একটু হেঁসে ডাক দিলেন রমসিং ইধার আও ……। একটা দশাসই চেহারার কুচকুচে কালো বিহারী লোক আসে উপস্থিত হলো আমাদের সামনে , কালো সুঠাম দেহের মধ্যে পরিষ্কার বলতে ওই দাঁত গুলো , যেনো সেতপাথর দিয়ে বাঁধানো রয়েছে । মুখের উপর এই মোটা গোঁফ , তাকে গুটিয়ে আবার উপর দিকে তুলেছে এই রাম সিং । সে হেঁসে বলল বলিয়ে বাবু ? রাম সিং কে ডাকতে বুঝতে পারলাম লোকটির গলার একটা আলাদা ওজন আছে , তার চাইতেও বড় বিষয় কোথায় কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা তিনি বেশ বোঝেন , আর বুঝবেই নাবা কেনো ……….এমনি এমনি কি অমন ব্যাবসাদার হয়ে ওঠা যায় । একজন ভালো ব্যাবসাদারকে চোখ , নাক , কান খুলে ব্যাবসা করতে হয় । কার সাথে কিভাবে কথা বলা উচিৎ সেটা লোকটি ভালোই জানেন । রাম সিং কে বললেন এক কাপ চায়ে লেকে আও। রাম সিং ঘাড় নেড়ে সেখান থেকে চলে গেলো । আমি আবার বললাম স্যার আমাকে যদি বলেন আমাকে এখানে কেনো ডেকেছেন তাহলে …..……..! লোকটি আবার একটু মজা করেই বললেন কেনো টেনশন হচ্ছে ? আমি বললাম না মানে ………….. তার পর কিছু বলি তার আগেই রাম সিং প্লেটে চা - আর এক কারি নানান ধরনের বিস্কিট সাজিয়ে নিয়ে হাজির হলো । লোকটি তাকে ইশারাতেই বুঝিয়ে দিলেন ওটা আমার সামনের টেবিলে রাখতে । রামসিং প্লেটটা আমার সামনে রেখে মাথা নিচু করে চলে গেলো । 

                         আমি বলতে যাচ্ছিলাম এতগুলো বিস্কিট আমি খাবোনা কিন্তু লোকটি আমাকে কিছু বলতে নাদিয়েই বলতে শুরু করলেন , জানেন রাম সিং

কতদূর পড়াশুনা করেছে ? আমি বললাম আমি কি করে জানবো বলুন ? এবার লোকটি বলল সেটাতো ঠিক , তোমাকে এই প্রশ্ন করা আমার ভুল হয়েছে বটে কিন্তু আমি জেনেশুনেই প্রশ্নটা তোমাকে করেছি যাতে আমি তোমাকে জানাতে পারি ওর পুঁথিগত বিদ্যা ঠিক কতখানি ? এবার ওনার কথাগুল আমাকে বিরক্ত করছে , আমিযে একটু বিরক্ত হচ্ছি সেটাও লোকটা বুঝতে পড়লেন । সরাসরি কিছু না বলে তিনি বললেন যাদের মধ্যে সহ্য শক্তি নেই তারাকিন্তু বেশিদূর দৌড়াতে পারেনা। আমি তোমার সাথে যেটুকু আলোচনা করছি সবটাই তোমার কাজে লাগবে , একটা কথা মনে রেখ তোমার থেকে আমার সময়ের মূল্য অনেক বেশি কারণ প্রতি মিনিটে আমার ইনকাম কয়েক লক্ষ্য টাকা । কথাগুলো আমার একটু খারাপ লাগলেও উপলব্ধি করলাম আজ লোকটি কেনো এই পজিশনে ? একটু ইতস্তত করে বললাম , না না তেমন কিছু না আপনি বলুন ………। এবার লোকটি বলল স্কুল কি জিনিস সেটাই জানেনা রাম সিং । তোমার ধারনা আছে ও কত টাকা স্যালারি পেতে পারে ? আমি ঘাড় নেড়ে বললাম না । তিনি বললেন ওর মাসিক বেতন 25 হাজার টাকা । তোমার মনে হচ্ছে এই কাজের জন্যে আমি ওকে এতগুলো টাকা স্যালারি দেই ? হ্যাঁ দেই …..আমি ওর সততাকে দেই এই স্যালারি । ওই মানুষটা আমার জন্য নিজের প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারে । ও আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমাকে দুষ্কৃতী দের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের দেহে দুটো বুলেট নিয়ে নিয়েছিল, আমি খরচ করে ওকে বাঁচিয়ে এনেছি বটে কিন্তু ওর কাছে আমি সারা জীবনের জন্যে ঋণী হয়ে গিয়েছি ।

                              আমার চা খাওয়া ততক্ষণে শেষ। উনি বললেন তোমার ডিটেলস আমার কাছে আছে কিন্তু আমার তোমর কাছে কিছু জানবার আছে ? আমি বললাম বলুন । তোমার নাম দেবব্রত তাইতো ? আমি বললাম হ্যাঁ। আচ্ছা দেবব্রত তোমাকে আমি তুমি বললে কোন অসুবিধা আছেকি ? আমি বললাম না না আপত্তি কিসের আপনি আমার থেকে অনেক বড় আপনি আমাকে তুমি বলতেই পারেন । লোকটি ছোট করে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে বলল , তোমার কি মনেহয় তুমি যে কাজটা করছো সেটা তোমার লেখা পড়ার সাথে মানানসই ? আমি বললাম পড়াশুনা আমি কাজের জন্যে করিনি আর বাবার কাছে শিখেছি কোন কাজ ছোট হয় না , তাই আমি যেটা করছি সেটাই আমার কাছে আমার কর্ম । লোকটি বললেন good মানুষ হিসাবে তুমি একেবারে ঠিক ঠাক আর একটা প্রশ্ন তুমি যে স্যালারি পাও তাতে তুমি খুশি । আমি কিছু বলতে পারলাম না , কারণ এই স্যালারি আমি এক্সপেট করিনি কিন্তু একটা ভালো জব না পেয়ে যেটা হতে রয়েছে সেটাকে হাত ছাড়া করাটা ঠিক নয় । লোকটা যেনো কয়েক মুহূর্তে আমাকে পড়ে নিলেন , তারপর বললেন ঠিক আছে আমি বুঝে গিয়েছি তিনদিন তোমাকে সময় দিলাম , ঠিক তিনদিন পর এই সময় এই জায়গাতে আমাদের আবার দেখা হবে তুমি ভেবে আমাকে জানাবে ঠিক কতটা স্যালারি তুমি আশাকর ? আমার অফিস যাবার সময় হয়ে গিয়েছে , আজকের মিটিং এখনেই শেষ করতে হবে । আমাদের নেক্সট মিটিং Sunday , সারাদিন আমি বাড়িতে থাকবো । অন্যান্য রবিবার আমরা বাইরে যাই কিন্তু এই রবিবার টা আমি তোমার সাথে কাটাব । ওদিন তুমি অখানেই লাঞ্চ সারবে কেমন , আজ তাহলে ওঠা যাক । আমি উঠে দাড়ালাম , ভদ্রলোক উঠে দাড়িয়ে তার হাতটা বাড়িয়ে দিতে আমিও আমার হাত বাড়িয়ে হাত মিলিয়ে ভদ্রতা জ্ঞাপন করলাম তারপর ঘরটা থেকে বেরিয়ে এলাম । 

                            বাড়ির মূল দরজা পর্যন্ত পৌঁছাবার আগে চোখ দুটোকে চারদিকে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম । সত্যি কথা বলতে এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ওনার স্ত্রী কে একটিবার দেখা , দরজার প্রায় কাছাকাছি পোঁছে গিয়েছি , মনথেকে মানেই নিলাম আজ আর ওনার সাক্ষাৎ আমার কপালে নেই । হঠাৎ দোতলার একটা জানালার সামনে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে এসে দাড়ালো সেই অপূর্ব সুন্দরী মহিলা । জানিনা উনি আমাকে দেখতে পেলেন কিনা ? ওনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েক পা হাঁটলেই মেন রাস্তা , সেখানে এসে একটা ট্যাক্সি নিয়ে নিলাম । সারাটা রাস্তা শুধু একটা কথাই আমার মাথাতে ঘুরছিল , এতো সুন্দরী একটা মহিলা কি করে এতো বয়সের একটি লোককে বিয়ে করতে পারে । বাড়িতে আসার পরেও কিছুটা সময় ভাববার পর মনে পড়ল লোকটার সেই কথাটা । টাকার অনেক ক্ষমতা , টাকা থাকলে কিনা করা যায় ? টাকা থাকলে কোনটাই অসম্ভব নয় ।

                                            …………………….


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance