STORYMIRROR

Pronab Das

Inspirational

4  

Pronab Das

Inspirational

আন্দোলন ।

আন্দোলন ।

3 mins
447

করিমপুরের কোদালিয়া গ্রাম ছবির মত সাজান। প্রকৃতি যেন তার সব কিছু এই গ্রামকে দুহাত ভরে উজাড় করে দিয়েছে। গাছ-পালা, নদীনালা , ফুল-ফলে সুসজ্জিত এই কোদালিয়া গ্রাম। গ্রামের মাঝ দিয়ে সোনাই নদী এঁকে বেঁকে চলে গেছে। স্ফটিকের মত স্বচ্ছ তার জল। ওই সোনাই নদীর পার্শবর্তী উর্বর জমিতে সারা বছরই বিভিন্ন রকমের চাষ-বাস চলে।


সনাতন মন্ডল এই গ্রামের একজন প্রান্তিক ভাগ চাষী। জমিদার সূর্যসেনের জমিদারিতে কিছু জমিতে চাষ করে আসছে কয়েক পুরুষ ধরে। গ্রামের দু এক জন স্বতন্ত্র জমির মালিকানা ছাড়া প্রায় প্রত্যেক চাষী ই ভাগ চাষী হিসেবেই চাষাবাদ করে। সূর্যসেন পিতা ধর্মসেনের ন্যায় প্রজাবৎসল ছিলেন না। চাষীদের ওপর দিন দিন তার করের বোঝা বাড়িয়েই চলেছে , সাথে উৎপণ্ন ফসলের ভাগের পরিমানও।


ইতিমধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ইংরেজ তথা নীলকর সাহেবরা তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। তারা জমিদারদের মোটা টাকা, বিলিতি সূরা ও বিলিতি দ্রব্যের বিনিময়ে ভাগচাষীদের এক প্রকার বাধ্য করাতে শুরু করল নীল চাষ করাতে। ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের সময়ে নীল একপ্রকার গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য হিসেবে পরিচিতি পায়। স ভারতবর্ষে উৎপাদিত নীল জগদ্বিখ্যাত অথচ প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল সীমিত। তাই অধিক মুনাফার লোভে ইংরেজ সাহেবরা নিলচাষে আকৃষ্ট হয়ে পড়ল খুব তারাতারি। যে জমিতে কৃষকরা দু ফসলি, তিন ফসলি ধান, গম, সবজি চাষ করত, সেখান আজ তারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে নীলের চাষ আরম্ভ করল।


সনাতনের প্রায় তের বিঘা জমির দশ বিঘায় নীল চাষ হচ্ছে। বাকি তিন বিঘাতে যে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয় তার অর্ধেকটাই জমিদারের ভাগে চলে যায়। সব দিয়ে থুয়ে নিজের পেট চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়ছে দিনে দিনে। একই অবস্থা অন্যান্য চাষীদেরও। জমিদার সূর্যসেনকে বলে কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বোঝা যাচ্ছে তিনিও এক প্রকার বিকিয়ে গিয়েছে সাহেবদের হাতে। সাহেবদের অত্যাচারও দিন দিন বেড়েই চলেছে। জমিদারের বাগান বাড়ির খুব কাছেই সূর্যসেনের আনুকূল্যে একটা সুসজ্জিত কুঠী স্থাপিত হয়েছে। প্রতি সন্ধ্যায় সাহেব তার ঘোড়ায় টানা টম টম গাড়িতে চড়ে সূর্যসেনের বাগান বাড়িতে যান ফুর্তি করতে।


সনাতন গ্রামের অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে। ইংরেদের বিরুদ্ধে একটা সংঘবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করে। কিন্তু এই নীলকর সাহেবদের সাথে মোকাবিলা করা সহজ নয় । ইতিমধ্যে সে চন্দননগরে দু-এক জন ফরাসী ধনী বণিকদের সাথে যোগাযোগ করে। সমস্থ শুনে তারা সনাতন কে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়।



এর প্রায় মাস দেড়েক পরের ঘটনা। শ্রাবণ মাস, অঝরে বৃষ্টি পড়ছে। জমিদার সূর্যসেনের বাগান বাড়িতে মজলিস বসেছে। সাহেবদের সাথে সাথে জমিদারও আকন্ঠ বিলিতি সূরা পান করে নেশায় মত্ত। সনাতন অস্ত্র সজ্জিত সঙ্গীদের নিয়ে বাগানবাড়ি ঘিরে ফেলে। প্রহরীদের কাছ থেকে দুয়েকবার বাধা আসলেও তা খড় কুটোর মত উড়ে যায় তাদের আগ্নেয়াস্ত্রের কাছে। সনাতন এগিয়ে গিয়ে এক ইংরেজ সাহেবের বুকে তার পা তুলে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকায়। বিপদ বুঝে সাহেবরা প্রাণভিক্ষার প্রথনা করে। সনাতন সূর্যসেনের তত্বাবধানে ওই সাহেবদের দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নেয় যে, পরদিন সূর্যোদযের পূবেই এই জমিদারীর এলাকা ছেড়ে তাদের চলে যেতে হবে। এবং ভবিষ্যতে কোম্পানির কোন কর্মচারী যেন এখানে আর ঘাঁটি না গারে।


করিমপুরের ওই ছোট্ট কোদালিয়া গ্রামটি দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক পূর্বেই স্বাধীনতা লাভ করেছিল। ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই না পাওয়া সেই সব আন্দোলনের বীরগাথা আজও ছোট বড় সবার মুখে মুখে ফেরে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational