Sagnik Bandyopadhyay

Inspirational

3  

Sagnik Bandyopadhyay

Inspirational

আন্দোলন

আন্দোলন

3 mins
585


চারিদিক থেকে ধ্বনি উঠছে,"বিদেশি দ্রব্য বয়কট করুন! স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার করুন!" রাস্তায় রাস্তায় পিকেটিং চলছে। পিয়ালী স্কুল থেকে ফেরার পথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। সে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তার কাছে অবাক লাগলো এইসব। সে বাড়ি ফিরে মাকে জিজ্ঞেস করল," সবাই রাস্তায় জিনিসপত্র পোড়াচ্ছে কেন?" বললেন," ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এটি একটি আন্দোলনের পন্থা।" তখন পিয়ালী বলল, " মা তাহলে আমাদেরও তো যাওয়া উচিত এই আন্দোলনে।" "একেবারে না"- ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে তার মা বলে উঠলেন। সংসারে তারা দুজন মানুষ মা ও মেয়ে। পিয়ালীর বাবা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ফলে সংসার চালানোর কেউ নেই। পিয়ালীর মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে কোনোক্রমে দুজনের পেট চালান। মেয়ের মুখে আন্দোলনে যোগদানের কথা শুনে আঁতকে ওঠেন। এদিকে বয়কট আন্দোলন সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। দিকে দিকে স্কুল, কলেজের ছাত্ররা আন্দোলনে যোগদান করে তা সর্বাত্মক করে তোলে। পিয়ালীও মনে মনে চায় সেই আন্দোলনে যোগদান করে তার বাবার মতো দেশসেবক হয়ে উঠতে। সে ছোট বটে, তার কাছে বয়কট কি তা জানা ছিল না ঠিকই; কিন্তু সে ভারত মায়ের শৃঙ্খল মোচনের জন্য উদগ্রীব ছিল। পিয়ালী পড়াশোনায় খুব ভালো মেয়ে। প্রতিদিন সে আন্দোলনের খবর শুনে কিন্তু যোগদানের কোন উপায় নেই তার। কারণ, মায়ের কড়া নির্দেশ। এইভাবে সে আরও বড়ো হয়। যখন সে দশম শ্রেণীর ছাত্রী, তখন মনস্থির করে ফেলে সে বাবার পথই অনুসরণ করবে। পিয়ালী তার মাকে বলে, " আজ আমরা এখনো বেঁচে আছি এই দেশের জন্য। যদি দেশ চিরকাল পরাধীনই থেকে যায়, তাহলে আগামী প্রজন্ম বিশেষত মেয়েদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। সেদিন দেখি ইংরেজ পুলিশ এসে আমারই বয়সী একটি মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল। আর যদি ওই মেয়েটির জায়গায় আমি থাকতাম? তাহলে পারতে তুমি চুপ করে বসে থাকতে? সময় চলে যাচ্ছে মা, আমাদের ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তেই হবে।" শুনে মা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন," এর ফলে যদি তোর কিছু ক্ষতি হয়ে যায়? তাহলে আমি বাঁচবো কি করে?" "মা তুমি আমার একার প্রাণের কথা চিন্তা করছ? কিন্তু হাজার হাজার মেয়েদের জীবন যে নরক হয়ে উঠছে আর আগামী দিনে আরও হয়ে উঠবে; তাদের কথা ভাবো! দেশের কথা ভাবো! আমি বাবার মুখে শুনেছিলাম জীবনের থেকে জন্মভূমি আগে।" শুনে মা বললেন," সত্যিই তুই তোর বাবার যোগ্য মেয়ে হয়ে উঠেছিস। যা মা! ভারতমায়ের শৃঙ্খলমোচনের এই মহান কাজে আত্মনিয়োগ কর।" এই শুনে পিয়ালীর মধ্যে এক অসাধারণ আনন্দের সৃষ্টি হলো। সে পরদিন স্কুলে গিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী স্লোগান দিল। শুনে সবাই হতবাক! মাস্টারমশাই এসে বলেন," পিয়ালী চুপ কর!" পিয়ালীর কানে কোনো কথাই যায় না। সেই স্লোগান শুনে আরও ছাত্রীরা এসে তার সাথে যোগ দেয়। স্কুল যেন হয়ে উঠল প্রকৃত প্রতিবাদের আঁতুড়ঘর। পিয়ালী সব ছাত্রীদেরকে ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাকে। দুর্গাপুজোর মরশুম, সেদিন ছিল বিজয়া দশমী। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সে ভোরবেলা উঠে যোগ ব্যায়াম করে,তারপর স্নান সেরে দুর্গা মন্ডপে গিয়ে পুজো দিয়ে আসে। পিয়ালী অনেক আগেই ঠিক করেছিল দশমীর দিন একটা বড়ো মিছিল বের করবে। চারিদিকে আন্দোলন চলছে। সেই মতো সে গেল স্কুলের দিকে, মিছিলে যোগদানের জন্যে লোক জড়ো হতে শুরু করে। সময়মতো মিছিল বেরোলো। তার মাকে পিয়ালী বলে গেল,"মিছিল শেষ করেই বাড়ি ফিরে দশমী করতে যাব।" হায়! সে জানতো না তার এই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এই মিছিলই তার শেষযাত্রার মিছিলে পরিণত হবে। মিছিল স্লোগান দিতে দিতে এগোয়। চারমাথার মোড়ের কাছে মিছিল আসতেই হঠাৎ গুলির শব্দ। অনেকে ভয় পেয়ে সরে গেলেও পিয়ালী অবিচলভাবে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর ব্রিটিশ পুলিশের বিশাল বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে লাগাতার গুলি করতে থাকে। প্রথম গুলিটি এসে লাগলো পিয়ালীর পায়ে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে পা তাও সে এগিয়ে যায়। এরপর কয়েকটা গুলি এসে তার বুক বিদীর্ণ করে দিয়ে গেল। মাটিতে লুটিয়ে পরল তার দেহ। সে চিৎকার করে বলে উঠলো," বন্দেমাতরম! ভারতমাতা কি জয়!" পিয়ালীর মায়ের সাথে গিয়ে বিজয়া করা আর হলো না। একদিকে মা দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন, অন্যদিকে আরেক দুর্গার বিসর্জন হয়ে গেল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational