Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Sucharita Das

Inspirational Others

4  

Sucharita Das

Inspirational Others

আমি সেই মেয়ে

আমি সেই মেয়ে

6 mins
287


ঠাকুমা বলতো, কোথা থেকে উড়ে এসে নাকি জুড়ে বসেছে ও এ বাড়িতে। ঐশী , দুই দিদির আদরের ছোট বোন। দুই দিদির আদরের হলেও, ঘরের বাকি সদস্যদের কাছে কিন্তু ও অনাকাঙ্ক্ষিত। মা,বাবা, ঠাকুমা সবাই চেয়েছিল দুই বোনের পর এবার নিশ্চয়ই ওর মায়ের কোল আলো করে একটা ছেলে আসবে। কিন্তু মা, বাবা, ঠাকুমার সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে মায়ের কোল আলো করে , দুর্গা ঠাকুরের মতো রূপ নিয়ে এসেছিল ঐশী। নামটা অবশ্য বড়দিই পছন্দ করে রেখেছিল ওর ওই দুর্গা ঠাকুরের মতো রূপ দেখেই। বড়দি আর মেজদির খুব আদরের ও। একটু বড়ো হয়ে ঐশী শুনেছে ওর দুই দিদির কাছে, ও হবার পর নাকি ওর মা খুব কান্নাকাটি করেছিল , শুধুমাত্র ও ছেলে হয়ে জন্মায়নি বলে। মা নাকি ওকে কোলেও নেয়নি দুদিন। একটা চাপা অভিমান কেমন যেন ওই বয়স থেকেই ঐশীকে ঘিরে রেখেছিল। শুধুমাত্র ছেলে হয়ে জন্মায়নি বলে এত হেনস্থা? ও দেখিয়ে দেবে সবাইকে যে মেয়ে হয়েও ও কোনো ছেলের থেকে কম না।ওর দিদিরা ওর থেকে বয়সে পাঁচ,ছ বছরের বড়ো। ছোটবেলায় একবার ঠাকুমার শরীর বেজায় খারাপ হলো । দুপুরে বাড়িতে সব মেয়েরাই আছে। বাবাও অফিসে। ঠাকুমা পেট ব্যাথায় ছটফট করছে আর মুখে বলছে,"এইজন্যেই ঘরে একটা ছেলের দরকার । ঐশীর জায়গায় আজ আমার একটা নাতি হলে, সে কখন ডাক্তার নিয়ে চলে আসতো। ঐশী তখন বারো বছরের। কথাটা শোনামাত্র একটুও অপেক্ষা না করে পাড়ার মোড়ের ওষুধের দোকানে যে ডাক্তারবাবু বসেন তাকে নিয়ে আসতে চলে গিয়েছিল। সে যাত্রায় ঠাকুমা সুস্থ হয়ে উঠেছিল শুধুমাত্র ঐশীর জন্যই। কিন্তু তারপর আবার যেই কে সেই অবস্থা। নাতির জন্য হা হুতাশ। বংশরক্ষার আর কেউ রইলো না। এই মেয়েগুলো তো সব পরের ঘরের জন্য। ঠাকুমার কথায়, "খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করো, তারপর পরের বাড়িতে পাঠিয়ে দাও।" এসব কথা ঐশী ছোটবেলা থেকে শুনেই বড়ো হয়েছে। ঠাকুমার কথায়, একটা ছেলে না হলে নাকি মা বাপের জীবন সার্থক হয়না। বুড়ো বয়সের সম্বল তো ওই নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেলেই। " 


কদিন ধরে ঐশী দেখছে ওর মায়ের শরীর খুব একটা ভালো নেই। কেমন যেন ঝিমিয়ে থাকে ওর মা। মাঝে মাঝে আবার বমিও করছে। ঐশী তখন‌ সবে ঋতুমতী হয়েছে। দিদিরাই সব বুঝিয়ে দিয়েছিলো ওকে ,কেমন করে কি করতে হবে। রাত্রি বেলা বড় দিদিকে জিজ্ঞেস করলো ঐশী,"এই দিদি মায়ের কি হয়েছে রে? শরীর খারাপ তো বাবা ডাক্তার দেখাচ্ছে না কেন। এভাবে ঘরে রেখে দিলে তো আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে মা।" ওর কথা শুনে ওর বড়দি বললো," আমাদের আবার ভাই হবে রে। সেজন্যই মায়ের শরীর খারাপ।" বারো বছরের ঐশীর সেদিন কেমন যেন একটা অজানা রাগ জন্মেছিল মা, বাবার ওপর। একটা অজানা ক্ষোভে আর চাপা অভিমানে ভেতরে ভেতরে গুমরে মরছিল । এরপর থেকেই ঐশী কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল।এসব খবর তো আর চাপা থাকে না। স্কুলে বন্ধুরা সবাই হাসাহাসি করতো ওর এই বয়সে ওর ভাই হবে জেনে। পাড়াতেও একই অবস্থা। এসব দেখেশুনে ঐশী কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল সবার থেকে। একটা প্রাণবন্ত, প্রাণোচ্ছ্বল মেয়ে কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। সবার সামনে যেতে ভয় পেত, কেউ যদি হাসাহাসি করে ওর ভাই হওয়া নিয়ে।ওর দুই দিদিকেও সবাই বলতো। কিন্তু ওরা চুপ করে সহ্য করে নিতো। ঐশী ভাবতো, "কি করে সহ্য করে দিদিরা এতো ব্যঙ্গোক্তি।" আশ্চর্যের বিষয় ঐশীর দিনের পর দিন এই পরিবর্তন কিন্তু ওর বাবা,মা দেখেও না দেখার ভান করে। ওরা মশগুল নিজেদের অনাগত ছেলের আসার খুশি তে। ঐশী দিনের পর দিন চোখের সামনে দেখতো মাকে ওর বাবা বলছে,"ভালো করে খাওয়া দাওয়া করো, নইলে আমার ছেলে সুস্থ, সুন্দর হবে কি করে।" আচ্ছা এবারও যদি ওর মায়ের আবার মেয়ে হয়, তাহলে কি আবারও ওর মা,বাবা ছেলে র জন্যই হা হুতাশ করবে?কে জানে হয়তো।



দেখতে দেখতে ঐশীর মায়ের ডেলিভারি ডেট এসে গেল। ওর বাবা অফিসে ছুটি নিয়ে মাকে নার্সিং হোমে নিয়ে গেল। সন্ধ্যবেলা খবর এলো ওর মায়ের নাকি রাজপুত্রের মতো ছেলে হয়েছে। ঠাকুমার সে কি আনন্দ। খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে বড়দিকে বললো,"বসে আছিস কি পোড়ারমুখী ,যা ঠাকুরঘরে গিয়ে শাঁখটা বাজা। আমার ঘরে আজ এতদিন পর গোপাল এসেছে। আমার জীবন সার্থক হলো , এবার আমি নিশ্চিন্তে স্বর্গে যেতে পারবো।" আটদিন পর মা ওদের ভাইকে নিয়ে ঘরে ফিরলো। ঐশী দেখলো, ঘরে যেন সাজো সাজো রব পড়ে গেছে। বাবা বড়দিকে একবার ছেলের ঘর ঠিকঠাক পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইছে, কখনও বা মা ছেলের জন্য কেনা নতুন জামা গুলো পরিষ্কার করে ধোয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইছে। অথচ একবারের জন্যও ওর মা এটা জানতে চাইছেনা যে ওর মায়ের আরও তিনটে সন্তান এতদিন ওর মা'কে ছেড়ে ছিলো, ওদেরও কোনো কষ্ট হয়েছে কিনা। এতটা অবহেলা মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে? 



এরপর ঐশী প্রতিটা মুহুর্তে দেখেছে আর উপভোগ করেছে, মা, বাবার আর ঠাকুমার প্রত্যেক পদে পদে ভাইকে অহেতুক প্রশ্রয় দেওয়া।ওর প্রত্যেকটা অন্যায়কে দেখেও না দেখার ভান করা। ভাইও মনে হয় এটা বুঝে গিয়েছিল ধীরে ধীরে, এ বাড়িতে ওর জায়গাটা কোথায়, আর ওর তিন দিদির জায়গাটা কোথায়। কয়েক বছর পরেই বড়দি আর মেজদির বিয়ে একপ্রকার জোর করেই দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঠাকুমার কথায়,পরের ঘরে যখন পাঠাতেই হবে, তখন তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেওয়াই ভালো। কি হবে আর মায়া বাড়িয়ে? যদিও এই কথাটায় ঐশীর যথেষ্ট আপত্তি আছে। কারণ ও মনে করে এ বাড়িতে ওদের তিন বোনকে মায়ার বাঁধনে কেউই জড়ায়নি। ওরা তিন বোনই অনাহুত অতিথি এ বাড়িতে। বড়দি আর মেজদির বিয়ের পর ঐশী কেমন যেন একা হয়ে গিয়েছিল এ বাড়িতে। সারাক্ষণ পড়াশোনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতো ও।ততদিনে ওর গ্ৰাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল। বাবা কে একদিন বলেছিল খেতে বসে, ও ইউ পি এস সি পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করতে বাইরে যেতে চায় এরপর। কিছু টাকার দরকার তার জন্য। বাবা সরাসরি না বলে দিয়েছিল ঐশীকে এই বলে যে, বড়দি আর মেজদির বিয়েতে খরচ হয়েছে।আর ভাইয়ের ভবিষ্যতের জন্য বাকি পয়সা রাখতে হবে। তাছাড়া এক দু বছর পর ঐশীরও তো বিয়ে দিতে হবে। আর তাই এখন কিছুই দিতে পারবে না। বাবা যখন ঐশীকে ওর ভবিষ্যতের জন্য খরচ করতে পারবেনা বলছিলো, ঐশী লক্ষ্য করেছিল ওর ভাইয়ের ওকে উদ্দেশ্য করে বাঁকা হাসি। সেদিন কেমন যেন বিদ্রুপের দৃষ্টিতে ভাই ওকে দেখেছিল। ঠাকুমা আর মা বললো, "বড়ো হয়েছিস একটু বুঝতে চেষ্টা কর।" ঐশী অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো, "এতো বোঝা আমি তোমাদের জীবনে। আমার ভবিষ্যত মানে তোমরা শুধুই বিয়ের কথা ভেবে রেখেছো।" না এরপর ঐশী আর একবারের জন্যও ওর বাবাকে বলেনি টাকার কথা। 




সেই বার বড়দি এসে কদিন ছিলো। চিরকালই বড়দির বড়ো আদরের ঐশী। ছেলে হয়ে জন্মায়নি বলে মা, বাবার আদর না পেলেও, বড়দি তাকে ছায়ার মতো আগলে রাখতো ছোটবেলায়। রাত্রি বেলা বড়দিকে বলেছিল নিজের মনের কষ্টটা। বলতে বলতে ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরে পড়ে। বড়দি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে, " কত টাকা লাগবে তোর আমি দেব। বলেই বড়দি নিজের হাতের দুটো সোনার মোটা বালা জোড়া ওকে খুলে দিয়ে বলে, "কাউকে বলবার দরকার নেই। এই দুটো দিয়ে অনেক টাকা পাবি। তোর যা ইচ্ছা পড়াশোনা করিস তুই। আমরা দুই বোন তো পারিনি নিজেদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে। তুই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, একটা ভালো চাকরি করে, আমাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করিস।" ঐশী আনন্দ আর দুঃখের মিলিত অনুভূতিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বড়দিকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে ও। না এরপর আর ঐশী বাড়িতে থাকেনি। বাইরে চলে গিয়েছিল তার ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করবার উদ্দেশ্যে। মা, বাবা, ঠাকুমা র কোনো রকমের বারণ ও শোনেনি। ও জানতো এখানে থাকলে ওর ভবিতব্যও ওই বিয়েই হবে। 



 চার ,পাঁচ বছরের অদম্য প্রচেষ্টায় ঐশী আজ সফল। আই পি এস অফিসার হিসাবে ঐশী জয়েন করলো। এই ক বছরে ঘরের সঙ্গে ওর যোগাযোগ শুধুমাত্র ফোনেই হতো। বড়দি অনেকবার গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করে এসেছিল। ওর জীবনে ওর বড়দির অবদান ওর মা, বাবার থেকেও হাজার গুণ বেশি। চাকরি পাবার পর ঐশী বড়দির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলেছিল,"তোর জন্য আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি বড়দি। তুই আমার জীবনে বাবা, মা দুজনের থেকে অনেক বেশি কিছু। তুই আমার ওপর ভরসা করেছিস।" আজ অনেকদিন পর ঐশী নিজের বাড়িতে যাবে। সঙ্গে বড়দি আর মেজদিও। বাবা, মা আর ঠাকুমাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে ওরা কিছুই জানায়নি বাড়িতে। বাড়িতে পৌঁছে ওরা দেখলো বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মা আর ঠাকুমাও ভীষণ চিন্তিত। ওদের দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। ঐশী সকলকে প্রণাম করলো। বাবা সব শুনে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "জীবনে ছেলে ছেলে করে অনেক ভুল করেছি। তাকে প্রতিষ্ঠিত করবার আশায় তোর জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার ইচ্ছা কে মর্যাদা দিইনি। অথচ দেখ্, তুই আজ আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলি সবকিছু। তোর ভাই সবরকম সুযোগ সুবিধা পেয়েও সেটার অপব্যবহার করলো। বন্ধুবান্ধব, বাইরের জৌলুসতায় নিজের জীবন ধ্বংস করে দিলো। আজ ঐশী এতটুকুও আবেগে বিগলিত হলো না বাবার কথায়। বরং ছোটবেলা থেকে যে অভিমানের পাহাড় ওর মনে জমেছিল, তার যোগ্য জবাব দিয়ে বললো ,"দেখলে তো বাবা সময় আর সুযোগ পেলে ,আমরা মেয়েরাও সবকিছু করতে পারি। কিন্তু দুঃখ একটাই তোমাদের মতো বাবা, মায়েরা সেটা বোঝে অনেক দেরিতে।"


   


Rate this content
Log in

More bengali story from Sucharita Das

Similar bengali story from Inspirational