আমার গল্প
আমার গল্প


স্কুলে পড়ার সময় থেকেই শিল্পীর লেখার শখ ছিল। কবিতা, গল্প নেহাতই শখের বশে লিখত সে। উৎসাহ ও প্রশংসাও পেয়েছে অনেকের কাছ থেকে।
সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তার এই শখ কখন যে তার নেশায় পরিণত হয়েছে সে বুঝতেও পারেনি। স্কুল ও কলেজের ম্যাগাজিনেও ছাপা হয়েছে তার লেখা।
কলেজ থেকে পাশ করার পর বিয়ে আর তারপরই সংসার জীবনের শুরু। দেখতে দেখতে একটি কন্যা সন্তানের মাও হলো সে। এই সময়ের মধ্যে তার লেখার শখটা যেন কোথায় চাপা পড়ে গেলো। স্বামী গৌতমের চাকরিসূত্রে বিয়ের পরই দিল্লী চলে যেতে হয়েছিল তাকে।
বছর পাঁচেক পর পারিবারিক কিছু সমস্যার জন্য গৌতম ট্রান্সফার নিয়ে সস্ত্রীক আবার কোলকাতায় ফিরে আসে।
একদিন বাপের বাড়িতে গেলে তার ঠাকুরমা তার হাতে তুলে দেন অতি সযত্নে তুলে রাখা শিল্পীর কবিতা ও গল্প লেখার খাতাটি। হঠাৎ করে শিল্পীর মনে আবার তার পুরনো শখটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে সংসার, চাকরী ও মেয়েকে বড় করে তোলার ব্যস্ততায় মেয়ে তুতাইয়ের স্কুলের দু-একটা প্রোজেক্টের একটু-আধটু লেখালেখির মধ্যেই তার শখটা সীমাবদ্ধ রয়ে যায়।
তবে মেয়ে ও স্বামীর সঙ্গে প্রতিবছরই বইমেলায় যাওয়াটা তার স্কুল ও কলেজ জীবনের মতোই চলতে থাকে। নতুন নতুন বইয়ের গন্ধ, মলাটের নতুনত্ব তার হারিয়ে যাওয়া শখটাকে আবার জাগিয়ে তুলতে থাকে। সে স্বপ্ন দেখে কোনো একবছর বইমেলাতে তার লেখা অনুভূতিগুলিও কবিতা ও গল্পের রূপ নিয়ে বইয়ের আকারে প্রকাশ পাবে।
এইভাবে বেশ কয়েকবছর কেটে যায়। তুতাই এখন ক্লাস নাইন। কিছুটা সময় এখন পায় শিল্পী। আবার লিখতে শুরু করে শিল্পী। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটি লি ম্যাগাজিনেও তার লেখা প্রকাশিত হয়।
এখন তার মেয়ে তুতাই তাকে উৎসাহ দেয় লেখাতে। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সে। বলে ‘মা তোমার লেখাগুলি যাস্ট ফাটাফাটি, আমার ফ্রেন্ডসরা তোমার লেখার ফ্যান।’
আর শিল্পী শুনে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যে এবার আর সে কিছুতেই লেখা বন্ধ করবেনা।
এই যাহ্ আপনাদের গল্প বলতে বলতে ভুলেই গিয়েছি আজকে তুতাইয়ের আবদারে তার প্রিয় আলুর পরোটা বানাতে হবে। আর তারপর কিছু লেখাও তো মেইল করতে হবে কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনের বইমেলা সংখ্যার জন্য।
আশাকরি এতক্ষণে আমার গল্পের শ্রোতারা নিশ্চয়ই আমাকে চিনতে পেরেছেন। হ্যাঁ আমিই সেই শিল্পী। এবছরও আমি পারিনি বইমেলায় আমার একক বই প্রকাশ করতে। কিন্তু আমি যতদিন না আমার স্বপ্নকে ছুঁতে পারবো ততদিন থামবোনা, সযত্নে বাঁচিয়ে রাখবো আমার স্বপ্নকে।