Sagnik Bandyopadhyay

Inspirational

3  

Sagnik Bandyopadhyay

Inspirational

আমার চোখে ভগিনী

আমার চোখে ভগিনী

3 mins
640


আমার এখন অনেক বয়স হলো। তাও নয় নয় করে দেড়শ বছরের বেশি। এখন আমার চাহিদা ফুরিয়েছে। এখন আমার গায়ে আর আগের মতো জোর নেই, গায়ের চামড়া খসে খসে পড়ছে। সারা শরীর কেবল সবুজ হয়ে উঠেছে। এ যেন কর্কট রোগের সমান। এক সময় আমি ছিলাম এই বোস পাড়া লেনের এক সুপরিচিত বাড়ি। যদিও আমার পরিচিতি বেড়েছিল ১৮৯৮ সালে এক তেজস্বিনী আইরিশ মহিলার ভারত আগমনের পরে।

হ্যাঁ তোমরা ঠিক ধরেছো তিনি আর কেউ নন স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা। স্বামীজীর গুরু ভাইরা যখন আমার কাছে ভগিনীকে রাখবে বলে ঠিক করলেন; তখন আমার আনন্দের সীমা ছিল না। যখন ভগিনী আমার বক্ষে প্রথম পদার্পণ করলেন, ঠিক তখন আমার সারা শরীর দিয়ে যেন তড়িৎ প্রবাহ বয়ে গেল। আমার সারা শরীর যেন তাঁর স্পর্শে ধন্য হয়ে উঠলো। কিন্তু তারপর আমার মনে একটা ভয় হলো এই ভেবে যে, ভগিনী আয়ারল্যান্ডের মানুষ কিভাবে আমার কাছে এই বীভৎস গরমে থাকবেন? কিন্তু আমি অবাক হলাম। দেখলাম উনি এই গরমকে ভারতমায়ের আশীর্বাদ মনে করে আমার সাথে সানন্দে থেকে গেলেন। আমি দেখেছি ভগিনী দিনের পর দিন কত কষ্ট করে আমার কাছে থেকে ভারতের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য ভেবেছেন। তিনি প্রতিদিন ভোর বেলা উঠে আমার পরিচর্যা করতেন; যাতে আমি যেন ভালো থাকি।

তারপর বেরিয়ে যেতেন,অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়ি থেকে মেয়েদেরকে নিয়ে এসে লেখাপড়া শেখাবেন বলে। কতদিন এরকম হয়েছে কাউকে আনতে পারেননি; ফিরে এসেছেন শূন্য হাতে। আমি তখন অনুমান করতে পারলাম উনি বিদেশিনী বলে ওনার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে অনেকে। কিন্তু উনি তাদের ওপর একটুও রাগ করেননি। ভগিনী দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা করতে করতে বেশ কয়েকজন মেয়েদের পড়াশোনা শেখানোর জন্য আমার এখানে নিয়ে আসেন। তিনি যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি সানন্দে সেই সব মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখানোর পাশাপাশি তাদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের শিক্ষাও দিতেন। তিনি কিন্তু বিদেশি ভাবধারায় শিক্ষা দেননি। ভারতীয় আদর্শ ও সংস্কৃতিকে পাথেয় করে সেই সব মেয়েদের আদর্শ নারী হওয়ার শিক্ষা দিতেন।

একদিন উনি ছাত্রীদের প্রশ্ন করলেন, আমাদের দেশের রাণী কে? কয়েকজন উত্তর দিলেন, রানী ভিক্টোরিয়া। কারণ, ভারত তখন ব্রিটিশ অধিকৃত। উনি খুব দুঃখ পেলেন উত্তর শুনে। উনি বললেন, ভিক্টোরিয়া আমাদের রানী নন। আমাদের রানী হলেন সীতামাতা। আমি প্রথমে অবাক হয়ে গেলাম যখন উনি বললেন আমাদের রানী ভিক্টোরিয়া নন। তারপর তাঁর উত্তর শুনে আমার গর্ব অনুভব হলো। আমি ভাবলাম আমাদের ভারতীয়রা কতটা আত্মবিস্মৃত জাতি। আমরা আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি সব ভুলে যাচ্ছি। কিন্তু এই তথাকথিত বিদেশিনী বলে তাঁকে ভারতীয়দের কাছে অনেক সময় বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। সেই বিদেশিনী নারীই ছিলেন ভারতবর্ষের মূর্ত প্রতীক। আমি পূণ্যবান। কারণ, আমাকে এই মহীয়সী নারী তাঁর বসবাসের উপযুক্ত মনে করেছিলেন। আমার এখানে স্বামীজি, মা সারদা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ তৎকালীন বহু বিশিষ্টজনের পদধূলি পড়েছে।

কিন্তু ১৩ ই অক্টোবর, ১৯১১ সালের দিনটি ছিল আমার সবচেয়ে দুঃখের দিন। আমি যখন শুনলাম ভগিনী ইহলোক ত্যাগ করেছেন, তখন আমার মনে হলো যেন সবকিছু শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তারপর আমার মধ্যে কোথা থেকে এক শক্তি সঞ্চারিত হলো। ঠিক তখন আমার মনে হল, আমি তো ভুল ভাবছি; ভগিনী তো মহামানবী তাঁর তো মৃত্যু নেই।।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational