আমার অনুপ্রেরণা - আমার ব্যর্থতা
আমার অনুপ্রেরণা - আমার ব্যর্থতা
অনুপ্রেরণা - উচ্চারণ করতে সহজ হলেও শব্দটা প্রচন্ড রকমের অর্থবহ। যেকোনো কঠিন পথে এগিয়ে চলতে এই একটা শব্দ হয়তো প্রভাব ফেলে সবথেকে বেশি। নিজের চেষ্টা, ভাগ্য আর সাফল্য বা নিদেনপক্ষে মানসিক শান্তি - সমস্ত কিছুর মূলেই থাকে অনুপ্রেরণা। আর কথাটা একদম ঠিক যে মানুষ এগিয়ে চলার পথে অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে পারে বিভিন্ন রূপ থেকে। আর একজন অতি সাধারন মানুষ হিসেবে আমিও তার ব্যতিক্রম নই।
শুনতে হয়ত অবাক লাগতে পারে তবু এটাই সত্যি যে আমার অনুপ্রেরণা আমার ব্যর্থতা। ছোটবেলা থেকে মা বাবার দেওয়া শিক্ষা আর সেই শিক্ষাকে পাথেয় করে এগিয়ে চলার রাস্তায় দৈনন্দিন বা পর্বভিত্তিক সঞ্চিত অভিজ্ঞতাগুলো যখন বর্তমান সমাজব্যবস্থার হাতে বা বর্তমান লোক ও লৌকিক মানসিকতার দেওয়া আঘাতে বারবার চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে, তখন নিজেকে ভালো রাখার জন্য মন হাতড়ে বেরিয়েছে বিভিন্ন রকমের মাধ্যম। যদি এখন আঘাত-গুলোকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে যাই তবে তা মূর্খের কাজ হবে। তবে সব থেকে বেশি যা মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে বাজে গুলো না বললেই নয় সেগুলোর মধ্যে খুব কাছের মানুষের অবহেলা বা ভালো করেও শুধুমাত্র অবস্থা বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে সকলের কাছে খারাপ হয়ে যাওয়ার ঘটনা অন্যতম। বিভিন্ন কারণে ভালোবাসার মানুষগুলোর থেকে দূরে সরে আসাও রয়েছে তার মধ্যে। তাই মন বারংবার খুঁজে নিতে চেয়েছে এমন একটা মাধ্যম যেখানে নিজেকে নিজের কাছে শান্ত রাখা যায়। সেই মাধ্যমগুলোর মধ্যে যেমন উন্নত সভ্যতার ছাপ রয়েছে তেমনই রয়েছে মানুষের আদিম চিন্তাধারার কিছু প্রতিফলনও।
প্রাথমিকভাবে চেষ্টা ছিল যাতে আধুনিক বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম কে ব্যবহার করে যেমন কম্পিউটার, মোবাইল - এগুলোর মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা যায়। কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার হয়ে যায় কয়েকদিনের মধ্যেই যে মনের মধ্যে চলা উথাল-পাথাল কখনোই মোবাইল বা কম্পিউটার বা পার্থিব কোন সুখ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তখনই মাথায় চিন্তা আসে মনের মধ্যে চলা সেই ঝড়গুলোকে যদি ভাষার আকারে প্রকাশ করা যায়। চিন্তাধারা ছিল যে, ভাষা বা ছন্দ যেমনই হোক সেগুলো নিজের সীমানার মধ্যেই লক্ষণরেখা দিয়ে বন্দী করে রাখার। কিন্তু ঐ যে আমিও মানুষ! মানবিক প্রবৃত্তি তো একটা থেকেই যায়! তাই নিজের সামান্যতম ইচ্ছাতেই সেই ভাষাগুলো বা ছন্দগুলো কয়েকজন অতি পরিচিত বা বলা যেতে পারে অতি বিশ্বস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিই। বলতে পারেন ইচ্ছাকৃতভাবেই একটুু সান্ত্বনা পেতে চেয়েছিলাম আর কি!
ছোটবেলায় মা-বাবা যখন আমার সাফল্যে আমাকে বাহবা দিত আর হেরে গেলে হাল না ছাড়ার কথা বলতো, বড় হয়ে ওঠার পর থেকে সেই স্বাদ পাইনি দীর্ঘদিন কারণ বিভিন্ন কারণেই হয়তো মা-বাবাকে আর মনের কথাটা বলে উঠতে পারিনি। তাই প্রথমবার যখন কেউ আমার লেখাটাকে ভালো বলে, আমার ব্যর্থতাগুলোর ভাষায় প্রকাশকে তুলনা করে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ কোন সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে তখনই মনে হতে থাকে যে আমার মত চিন্তাধারা হয়তো কম হলেও আরও কিছু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। ভালো লাগতে শুরু করে তাদের ভালো-বলা গুলোকে। আর কাকতালীয়ভাবে হলেও আমার জীবন আরো ব্যর্থতার মধ্যে জড়িয়ে পড়তে থাকে। জীবনে পার্থিব সুুখই যে সব কিছুু নয় - মানসিক শান্তিতেই লুকিয়ে থাকে জীবনের আসল জয়গান, সেই সত্যিটা প্রতি পদে পদে আমাার কাছে উন্মোচিত হতে থাকে। তাই ভাগ্য-বলে খুঁজে পাওয়া কতিপয় ভালো মানুষের প্রদান করা আশ্বাস আর আমার ব্যর্থতার কানায় কানায় ভরা ঝুলিগুলোকে অক্ষরের আকারে প্রকাশ করতে থাকি। কপাল জোরে জুটে যায় গোটাকয়েক সম্মান। আর তাই সাহসের ডানায় জোর আসে একটু বেশি। আর তাই সেই ডানায় ভর করেই আমি এগিয়ে চলতে থাকি ধীরে ধীরে। হয়তোবা সেই সাহসেই আজ এই লেখাগুলো কে লিখে ফেললাম আরো একবার।
অনুপ্রেরণা - যেকোনো ব্যক্তি বা যেকোনো আকারে আসতে পারে। শুধুু সেগুলো কে চিনে নিয়ে বিশ্বাস করে সঠিকভাবে এগিয়ে চলতে হয়। তবেই পাওয়া যায় মানসিক শান্তি - যেখানে সামাজিক জয়় বা সামাজিক হার কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।