The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sonamani Khanra

Abstract Inspirational

3  

Sonamani Khanra

Abstract Inspirational

আলোর ঠিকানা

আলোর ঠিকানা

6 mins
278


শারদ সংখ্যা

***********


"আজ পলাশের রঙিন বাহার

     কাল সে পদতলে

খোঁপায় বেড়ি জুঁইয়ের মালা

যৌবন অনলে"।

জীবনের রূপ-রঙ-স্বাদ-গন্ধ সবটা যখন আতরের সুবাসে মাতোয়ারা হয়,আর অন্যের ক্ষুদা নিবৃত্তিতে ইচ্ছা অনিচ্ছার কেন্দ্রবিন্দুকে টুকরো টুকরো করে অনায়াসে হারিয়ে যেতে বসে; সে সকল হৃদয়কে ভালোবাসে কয়জন!?


"লাগা চুনরি মে দাগ

ছুপায়ু ক্যাইসে--------"

- জবা'র দুই গাল বেয়ে চিবুকে মিশে অন্তর ভিজিয়ে গেল ওই গানের ভাষা।

বেবি টা প্রতিদিন সকালে F M চালিয়ে রাতের সাজ মুছে ফেলে , আর হয়তো খুশি থাকার কিংবা রাখার চেষ্টা করে সবাইকে।

আজ সোমবার এই আলয়ের নিয়মানুযায়ী রাধার রান্নার দিন, সহযোগিতায় জবা। ফুলবতী কক্ষের দিকে মুখটা বাড়িয়ে রাধা বলে উঠল - কী রে জবা আজও কাঁদছিস। তাড়াতাড়ি আয় লক্ষীবাই এর টিফিন খাওয়ায় সময় হয়ে গেল, আর ঠিক সময়ে না পেলে কি হয় -------------!

লক্ষীবাই ! এই পাল্কিগড় শহরে প্রায় পঁচিশ বছর ধরে রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বাবা মা , অভাব ছিল সংসারের কানায় কানায় টলটলে, তার ওপর বাবা ক্যানসার এর পেসেন্ট, মায়ের সিঁথি রাঙা রাখতে দেহ বলিদান। যদিও বাবাকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। তবে নোংরা পথে একবার পা বাড়ালে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, সমাজ ওদের মানবে না । অপমান চলার পথের সঙ্গী হবে। বাই পোষ্টে টাকা পাঠাতো প্রতি মাসে; এখন মা'ও গত হয়েছে। সব দিক ভেবেই এই শহরে রয়ে গেছে অনেক গুলো বছর। অভাবের গলা টিপে বিসর্জন দিয়ে আজ টাকার পাহাড়ে দিনযাপন। কষ্টের ঘর্ম বিন্দুরা জমাট বেঁধে গড়ে উঠেছে এক জৌলুস পূর্ণ পতিতালয়। যার নাম 'বাহারীপলাশ'। পনেরোটা কক্ষ, প্রতিটি কক্ষের আলাদা আলাদা নাম, যেমন- মধুবালা, পদ্মকুঠী, রাইবতী, ফুলবতী, দীঘিচরা, কুলত্যাগী---- ইত্যাদি। পদ্মকুঠী ছিল সব থেকে বড় এবং বড্ড বেশি সাজানো গোছানো,  মেয়ের সংখ্যা প্রায় গোটা কুড়ি। খাওয়া পরার অভাব নেই কারোরই।

ঘড়ির কাঁটা ধরে বাহারীপলাশে'র সমস্ত সদস্যদের খাওয়ায় কাজ মিটিয়ে ফেলতে হয়। লক্ষীবাই এর পেটে বেশি বিদ্যা না ধরলেও, সময় জ্ঞান প্রচুর।

বৃষ্টি এসেছে রে ------ চিৎকার করতে করতে জুঁই ছাদে উঠে গেলো, পিছু পিছু বেবি। এদিকে রান্না র ঘর থেকে ডালের গন্ধ পুরো মহল ছড়িয়ে। সাধারণ রান্নাকে অসাধারণ করে তুলতে রাধা বড়ই পারদর্শী। মেয়েটার হাতে জাদু আছে, সংসারী হলে হয়তো রান্নার গুনে ভালোবাসা ও সম্মান পেত পরিবারের থেকে । আপন মনে গান গাইতে গাইতে রাধা বলে উঠল- হ্যাঁ রে জবা , শুনেছি তুই বি.এ পাশ করেছিস । এতো সুন্দরী, পড়াশোনা আছে- তাহলে এখানে এলি কি করে?

সে যে অনেক বড় কাহিনী গো? মা মরেছে সেই ছোটবেলায়, বাপের জোরে পড়াশোনা, কিন্তু বাপটাও মারা গেল, সৎ মায়ের বোঝা হলাম কিনা! ভাইটাকে ভালো কলেজে পড়াবে, আশি হাজার টাকা লাগবে , এক ভোর রাতে আমার হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় এখানে ফেলে গেল মামা(সৎ মায়ের ভাই)। পরে শুনলাম লক্ষীবাই এর কাছে - সে আমাকে কিনে নিয়েছে আশি হাজার টাকা দিয়ে। জবা রে-----কপাল আমাদের বড় খাসা! তা না হলে এমন জীবনে ------!!

দিন কয়েক পরের কথা। টানা কয়েকদিন বৃষ্টির পর সেদিনটা সকাল সকাল সূর্যের মুখ দর্শন। যেন বাহারীপলাশে'র আঁধার ঘন হৃদয়টাতে আলোর স্বর্ণালী ধারা সিঞ্চন। শুধু পদ্মকুঠী নয় , প্রতিটি কক্ষ ফুলে ফুলে ঢলে পড়েছে একে অপরের ঈর্ষণীয় সাজ বাহারে। সেদিন লক্ষীবাই বড় খুশিতে; কারণ জিজ্ঞাসা করবার স্পর্ধা আছে কার! সবাই মাঝে মাঝে জটলা করছে আর ফুসফাস করে চলেছে। কেউ রয়েছে খুশিতে আবার কেউ একরাশ ভয়, বেদনা বুকে বয়ে; কোনোটাই প্রকাশ করার জো নেই।

প্রতিদিনের মতো -সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কৃত্রিম সাজ দিয়ে ,আমিত্ব'টাকে আচ্ছাদন করার প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ বড় তাড়া দিচ্ছে লক্ষীবাই। প্রায় বার দুয়েক ঘোরাঘুরি হয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর পান চিবোতে চিবোতে এসে উপস্থিত লক্ষীবাই-

"কি রে তোদের হল? বাবুর আসার সময় হয়ে গেলো রে। আর জবা আজ একটু বেশি করে সেজে থাকিস, মুখে যেন হাসি থাকে"।

প্রভার উদাসীনতা ও লাঞ্ছনা ভরা গলার স্বর বলে উঠল- বাবুরা চলে এসেছে?

আজ একজন বাবু আসবেন,মস্ত টাকাওয়ালা, অনেক দিয়ে পাঠিয়েছেন, বুকিং করেছে যে, আর বলে পাঠিয়েছেন- আজ যেন অন্য কেউ না আসে ------- বলতে বলতে লক্ষীবাই চলে গেল।

নির্লজ্জ বেবি বলে উঠল- "মরদ'টার এত্তো ক্ষমতা---- হাহাহাহা।"

সন্ধ্যা আটটা নাগাদ এক ঝলক কুসুম বৃষ্টি এলো যেন রাজাধিরাজ আসবার আগে প্রকৃতির পুষ্প বর্ষন । তার ঠিক পরেই দুটো লাল রঙের ঝাঁ চকচকে গাড়ি এসে দাঁড়াল, গাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথে ছোট্ট ছোট্ট বৃষ্টির কণারা একত্রিত হয়ে পাদুকা ধুইয়ে দিল। অভ্যর্থনা ওখানেই শুরু হয়ে গেল। ওমা সে কি অপূর্ব সাজ! যেন রাজ পুত্র চোখের সামনে।

তিনার নাম অনিরুদ্ধ নাগ। অনিরুদ্ধ বাবু সোজা চলে গেলেন পদ্মকুঠীতে। সাথে আরো দুজন। ওনারাও দেখতে মোটামুটি ভালো হলেও অনিরুদ্ধ বাবুর মতো সুদর্শন পুরুষ বলা চলে না। ওনারা ভেতরে যাওয়ার পর পদ্মকুঠী'র দরজা সজোরে লেগে গেল, কিছুক্ষণ বাদে রামলালের ( ঘর দোর পরিষ্কার রাখে) হাত দিয়ে সবার জন্য পান পাঠালো অনিরুদ্ধ বাবু । তারপর ! তারপর আধো ঘুমে কানে এলো- 

"জাগো--- তুমি জা-আ-গো----"

 বুকে হৃদস্পন্দন বেড়ে উঠল, ধড়ফড় করে উঠে বসলাম, একি ! কোথায় আছি! আমার পাশে ওরাও! আমরা সবাই কোথায়! বড় আয়নার সামনে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম- খোঁপায় বাঁধা জুঁইটার এখনো টাটকা, কোন পুরুষের শক্ত হাতে দলিত হয়নি একটিও পাঁপড়ি! চোখের কাজল , লাল টকটকে ঠোঁট, কপালের কুমকুম সবটা রাতের শেষে এখনও জীবিত! খুলেনি এখনও কোমর বন্ধনী! এক ছুট্টে বাইরে এলাম - কতো ফুলের গাছ, কি সুন্দর সাজানো গোছানো! কি মিষ্টি হাওয়া বইছে! ওমা আমার পছন্দের নয়নতারা ফুল ও রয়েছে এখানে! মনে হল- যেন মরবার আগে মাথা তুললো আমার অনুভূতিগুলো । এক নিমিষে হারিয়ে গেলাম সেই ছোট্ট বেলার বকুলগঞ্জে।

বকুলগঞ্জ ছোট্ট একটা গ্রাম। যেখানে ভোর হয় মুরগির ডাকে, সন্ধ্যা নামে গরু ছাগলের বাড়ি ফেরার সাথে সাথে। সেখানে কোকিলের মধুরধ্বনি কিংবা ধূলোয় ধূসরিত গোধূলি বেলার অপরূপ দৃশ্য - দেখবার ও বিশ্লেষিত করবার মানুষ নেই বললেই চলে। কিন্তু উঠোন জুড়ে নানান ফুলের মেলা , মাটির দেওয়ালে আলপনায় ভরিয়ে তোলা, ঘর বার যথাসাধ্য পরিচ্ছন্ন রাখা, আর দিঘীর পাড়ে মেয়ে বউদের হাসি ঠাট্টা এসব সাদৃশ্য বড় খাসা লাগতো। সব যে কোথায় হারিয়ে-----

ধ্যান ভাঙলো অনিরুদ্ধ বাবুর গলার স্বরে- অনুরাধা !

চমকে উঠলাম আমি,

উনি বললেন- ঠিক বললাম তো?

বাবু আমরা কোথায় আছি? এখানে কি আপনি এনেছেন? কেনো এনেছেন?

এবার থামো , এবার থামো(একগাল হাসি)

সবাই উঠেছে? সবাইকে তোলো , ওই ওখানে তিনটে বাথরুম, সবাই ফ্রেস হয়ে নিচে এসো , সব বলব।

সবাই স্নান সেরে নিচে নেমেই দেখি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, পরিবেশনায় দুজন রয়েছে, আর চেয়ারে বসে রয়েছেন অনিরুদ্ধ বাবু, প্রশ্ন করার আগেই উত্তর এলো - আমি তোমাদের কিনে নিয়েছি, আজ থেকে আমি তোমাদের মালিক। হাতের খাওয়ার হাতে রয়ে গেলো, কিন্তু কান্না আসেনি বিন্দুমাত্র। জীবন যে গতিপথ পাল্টাতে ভুলেছে ,তা আগেই জেনেছি । এই বিতৃষ্ণা ভরা জীবনে একই ভাবে নির্যাতিত হয়ে যেতে হবে আজীবন - এ বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো। 

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হল । সবার ডাক পড়ল বসার ঘরে, উনি প্রশ্ন করলেন-

কেউ কিছু হাতের কাজ জানো?

আমরা মৌনতা'কে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে জানি, কিন্তু এই প্রশ্ন সবার কাছে 'আকাশ ভেঙে পড়া 'র বোধ হল। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে রইল। সবার প্রতিক্রিয়া দেখে উনি বললেন-

আমি তোমাদের ছন্দে ফেরাতে চাই, সবাইকে স্বনির্ভর করতে চাই। কাল থেকে তোমাদের ক্লাস শুরু । বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ শেখানো হবে। তোমরা আগ্রহী তো? সেই ছোট্ট বেলাকার মতো আনন্দ-ভয় একসাথে মিশিয়ে সবার বলতে ইচ্ছে করল, সবাই বলে উঠল - হ্যাঁ -------

পূর্নিমার রাত চাঁদের আলো জানালার বেড়াজাল ভুলে বিছানায় লুটোপুটি। জোৎস্নার আলো যেন নিজ পবিত্রতা দিয়ে স্নান করিয়ে দিচ্ছে। ঘুম আসছে না কারোরই। অনিরুদ্ধ বাবুর প্রতিটি কথা কানে ভাসছে। সত্যিই কি জীবন আমাদের এমন দিন উপহার দেবে! সত্যিই কি এই 'পতিতা' তকমা মুছে যাবে! এসব কথা মনের মাঝে উচাটন সৃষ্টি করেছে। সারা শরীর মন নতুন দিনটার অপেক্ষায়।

তারপর! তারপর কেটে গেল বেশ কয়েকটা বছর । পাল্টে গেল মনের রঙ-স্বাদ-গন্ধ। এখন সবাই হৃদয় ভরে শিক্ষিত। দেহ জুড়ে স্নিগ্ধতা। প্রত্যেকে হয়ে উঠেছে স্বনির্ভর। জীবনকে ভালোবাসতে, জীবনের মানে বদলে ফেলতে শিখেছে সবাই। জানিনা সেদিন বদ্ধ ঘরের ভেতর কি হয়েছিল। জানিনা উনি কতটাকা দিয়ে সবাইকে কিনে ছিলেন, কত টাকার বিনিময়ে এমন ভগবানের চরণে ঠাঁই মিললো! শুধু জানি আলোর ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে সবাই। 

সমাজ যাদের দূর হতে দেখে, প্রান ভরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, তাদেরও যে হৃদয় আছে তা ভাবে কতজন! অনিরুদ্ধ বাবুর মতো মানুষের যে জুড়ি মেলা ভার । শোনা যায় ঈশ্বর জাতের বিচার করে না, কোন ভেদাভেদ বোঝে না; সবার হৃদয়ে বসবাস করেন। রোগাক্রান্ত হৃদয়কে স্রোতে ফিরিয়ে দেন।

জীবন যখন স্রোতে ফেরে , তখন তুমি থমকে যাবে কেমন করে। নিজের ওপর ভরসা রেখে এগিয়ে যেতে হবে দূর হতে দূরে, ছড়িয়ে পড়তে হবে নিপুণতার সঙ্গে, নামে পরিচিত নয়, কর্ম'টাকে পরিচিতির কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে। আর সমাজ! 'সমাজ' যে বড়ই কঠিন শব্দ। একটা সময় ঠিক তুমি গ্রাহ্য হবেই হবে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract