STORYMIRROR

horror storytale

Horror Thriller

3  

horror storytale

Horror Thriller

আগুন্তুকের প্রতিশোধ

আগুন্তুকের প্রতিশোধ

10 mins
356

সন্ধ্যে নেমে আসছে পাহাড়ের কোলে | খাদের ধার দিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে চলেছে এক যুবক | ভয় নেই ওর ? নেই কি প্রাণের মায়াও ? ওই সুগভীর খাদে একবার পড়ে গেলে দেহটাও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে ! সামনেই একটা বাঁক, বাঁক পেরিয়ে মিলিয়ে গেল ওই যুবক ! হোম স্টের বারান্দা থেকে দেখছিলাম যুবককে | শহুরে জীবনযাত্রায় ক্লান্তি ঘিরে ধরলেই মুক্তির খোঁজে পাহাড়ে চলে আসি | আমি সুনন্দন মুখার্জি, একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জেনারেল ম্যানেজার পোস্টে আছি | পেশাগত চাপে জর্জরিত, সকালে অফিস টার্গেট পূরণের চাপ, রাতে পার্টিশেষে নেশাতুর ঘুম....এই আমার জীবনযাপন | বিয়ে করি নি এখনো, করার খুব একটা ইচ্ছেও নেই | মাঝে মাঝে পাহাড়ের বুকে একলা কাটানো এই বোহেমিয়ান জীবনটাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি | ইচ্ছে আছে আর কয়েক বছর কাজ করে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে এই পাহাড়ের কোলেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব .....

ডিনার সেরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলাম | হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙে গেল | নিশুতি রাত....ঘরের দরজাটা খুলে বারান্দায় এলাম | আকাশ জুড়ে যেন তারাদের মেলা বসেছে | কলকাতায় এরকম পরিস্কার আকাশ বহুদিন দেখি নি | দূরে পাহাড়ের সারি মগ্ন স্তব্ধবাক...... পূর্ণিমা চাঁদের অপার্থিব আলোয় ভেসে যাচ্ছে চরাচর | কে যেন হোম স্টের সদর দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে ! এত রাতে আবার কে এলো ? আলো জ্বালতে গেলাম.... জ্বলল না ! এ আবার কি ? লোডশেডিং নাকি ? হোম স্টের মালকিন যে বলেছিল এখানে লোডশেডিং হয় না....হোম স্টের মালকিন কিছুক্ষণ আগেই ওনার নিজের বাড়িতে চলে গেছেন, ওনার বাড়িটা আমি দেখেছি, এখান থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্ব | গোটা হোম স্টেতে আমি একাই আছি, এই অফ সিজনে টুরিস্টের ভীড় নেই ! অথচ তখন বোকামি করে ওনার কাছ থেকে জেনারেটরের সুইচ কোনটা সেটাও জেনে নিইনি ! ওনাকে কি একবার ফোন করব ? কিন্তু এত রাতে সেটা কি উচিত হবে ! বাইরে কুকুরগুলো তারস্বরে চেঁচাচ্ছে | ওদের আওয়াজকে ছাপিয়ে যাচ্ছে দরজার ধাক্কা | কেউ নিশ্চয়ই খুব বিপদে পড়েছে | হঠাৎ বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল, ঝলসে উঠল বিদ্যুৎ, বজ্রপাতের তীব্র শব্দে কেঁপে উঠল ছোট্ট হোম-স্টেটা ! দরজায় ধাক্কা বেড়েই চলেছে, এই হিমশীতল রাত নিকষ অন্ধকারে একটা টর্চ হাতে সিঁড়ি বেয়ে আমি নীচে নামতে লাগলাম | আমার কৌতুহলী মন বারবার প্রশ্ন করছে, কে ? কে এই নিঝুম রাতের আগুন্তুক ?


দরজা খুলে টর্চ জ্বেলে দেখি দুজন মানুষ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, চেহারা দেখে স্বামী-স্ত্রী বলেই মনে হল | ব্যাটারিটা মনে হচ্ছে খুবই কমে গেছে, যে কোনো মুহুর্তে আমার হাতে ধরা টর্চটা নিভে যাবে ! ঘোলাটে আলোয় ছেলেটাকে চিনতে পারলাম | সন্ধ্যেবেলার সেই খাদের ধার দিয়ে হাঁটা যুবক | যুবকটি বলল, দেখুন স্যার আমরা বড় বিপদে পড়েছি | যদি আজ রাতের মতো আমাদের একটু আশ্রয় দেন | সন্ধ্যে থেকে হোম স্টেগুলোতে পাগলের মতো ঘুরছি | মিসেস সারাক্ষণ গাড়িতেই বসেছিল | সন্ধ্যে হতেই গাড়ির ড্রাইভার পাহাড়ী রাস্তার দোহাই দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল ! আমি এরকম হঠাৎ করে আসতে চাই নি জানেন | ও এমন করে জোর করল ! আসলে ওর হঠাৎ করে রুমটেক মনাস্ট্রি দেখার ইচ্ছে হল.... আমিও আর না করতে পারলাম না | অনিশ্চিতের ভরসায় বেরিয়ে পড়লাম | বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে, যদি দয়া করে একটু '....... আসুন, আসুন ভেতরে আসুন | আমার পাশের রুমটা ফাঁকাই আছে | কাল হোম স্টের মালকিন এলে নিশ্চয়ই একটা কিছু ব্যবস্থা করা যাবে | ছেলেটা বলল আমরা আপাতত বসার ঘরের সোফায় বসছি | জামাকাপড় একটু শুকোলে না হয়....আমি সদর দরজায় তালা দিয়ে ওপরের বারান্দায় এসে বসলাম | আজকের রাতটা যেন অস্বাভাবিক ঠান্ডা, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে | এই নিঝুম রাতে দূরের কোনো মনাস্ট্রি থেকে গমগমে গলায় ভেসে আসছে ' বুদ্ধং শরণাং গচ্ছামি ! '  

তন্ময় হয়ে শুনছিলাম, হঠাৎই শরীরে কাঁপুনির আভাস, আমার ভীষণ ভয় লাগছে .... মৃত্যুর তীব্র শীতলতা যেন আমায় একটু একটু করে গ্রাস করছে | এই রাত হয়ত কোনদিন শেষ হবে না | অশুভ ছায়া ক্রমশঃই দীর্ঘ হচ্ছে | রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভেসে এলো এক অমানুষিক চিৎকার ! আমি দৌড়ে নীচে নামতে লাগলাম | সিঁড়ির শেষ ধাপে এসে পৌঁছতেই ঘোলাটে টর্চের আলোটা দপ দপ করতে করতে নিভে গেল | বসার ঘরটা লন্ডভন্ড, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারদিক..... কার্পেটে লুটিয়ে পড়ে আছে আজকে রাতের অতিথি মেয়েটা .... কাছে গিয়ে দেখি পেটে একটা ছুরি ঢোকানো, মেয়েটার নিঃশ্বাস পড়ছে না, পেট থেকে বেরিয়ে আসছে রক্তের স্রোত ! রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘরের মেঝে ! কিন্তু ওর পেটে কে ছুরি মারল ? আমার পা রক্তে মাখামাখি, কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি | আমার ভীষণ ভয় লাগছে ! ওই ছেলেটা কোথয় গেল ? এখন কি হবে ? আমি কেন না জেনেশুনে ওদের আশ্রয় দিতে গেলাম ? আতঙ্কে আমারর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল ! পুলিশ কেসে ফেঁসে যাব না তো ! কি হবে এবার ? মেয়েটাকে ছুরি মেরে ছেলেটা পালিয়ে টালিয়ে যায় নি তো !


অন্ধকারে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম | তীব্র ভয়, আতঙ্কে আমার সর্বাঙ্গ যেন অবশ হয়ে আসছে | সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম, দু-এক জায়গায় চোট পেলাম | ব্যথার তোয়াক্কা না করে হাঁচোড় পাঁচোড় করে উঠতে লাগলাম | বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে যাচ্ছে | কোথায় গেল ছেলেটা ? হাতড়ে হাতড়ে বারান্দায় গেলাম, ওখানেই তো সদরের চাবিটা ফেলে এসেছি .... একি ! ওই তো সেই যুবক ! আবার সেই বিপজ্জনক বাঁক ধরে হেঁটে চলেছে..... ছেলেটা ইচ্ছে করে খাদে লাফিয়ে পড়ল ! আমি চাবিটা নিয়ে দৌড়ে নীচে নামতে লাগলাম | পা বেঁধে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়লাম | কোমরে বেশ লেগেছে, বুড়ো আঙুলের নখটা বোধহয়... এখন ওসব ভাবার সময় নয়, তালা খুলে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম .... সম্ভব নয় তবুও যদি ছেলেটা বেঁচে থাকে ! কুকুরগুলো ভয়াবহ চিৎকার করছে , অন্ধকারে ওদের চোখ জ্বলছে.... দাঁতগুলো ঝিকিয়ে উঠছে, বাইরে বেরোলেই ওরা যেন আমায় ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে | প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়ায় দাঁতে দাঁত লেগে ঠকঠক শব্দ হচ্ছে | সামনের ভয়ঙ্কর খাদ আমায় ডাকছে..... বলছে আয় আয় | সমস্ত শরীরে জাল বুনছে মৃত্যুর শীতলতা | হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলক, তীব্র আলোয় এক মুহুর্তের জন্য যা দেখলাম সে দৃশ্য দেখে ভয়ে, আতঙ্কে আমার সর্বশরীর শিউরে উঠল | ড্রইংরুমের কার্পেট কোন দেহ পড়ে নেই, মেঝে কোনো রক্ত টক্ত নেই | সবকিছুই আগের মতো সুন্দরভাবে সাজানো আছে | আমার মাথা ঘুরছে, দুচোখে অন্ধকার নেমে আসছে, এক অজানা আতঙ্কে অবসন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম | 


পরের দিন ভোরে হোম স্টের মালকিন এসে আমার চোখে-মুখে জলের ছিটে দিতেই আমার চেতনা ফিরে এল | আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনি ? আপনি কখন এলেন ? হোম স্টের মালকিন রোজি বলল, আমি সকালে এসে দেখি সদর দরজা খোলা, বাবুজি উপুড় হয়ে পড়ে আছেন আর হাতে ধরা টর্চটা তখনও জ্বলছে | আমি বললাম, এ হতেই পারে না | কাল রাতেই তো ওটার ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে | রোজি মিষ্টি করে হেসে বলল, আপনি একবার জ্বালিয়ে দেখুন না বাবুজি | সুইচ টিপে দেখলাম দিব্যি জ্বলছে | এই সূর্যের আলোতেও বুকের ভেতর এক তীব্র ভয়ের অস্বিত্ব টের পেলাম | পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন একটা বরফের স্রোত নেমে গেল ! গরম চা খেতে খেতে কাল রাতে যা দেখেছি রোজিকে তার সবটাই খুলে বললাম | ঘটনাটা শুনতে শুনতে সে শিউরে উঠতে লাগল | বলল বাবুজি, কাল আপনি খুব জোর বেঁচে গেছেন | এবাড়িতে বহু বছর আগে এরকম এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে | আমার জোরাজুরিতে সে যা বলল, সে কাহিনী যেমনই ভয়ঙ্কর তেমন মর্মন্তুদ |


তখন এ বাড়ির মালিক ছিল সাহেব থাপা | একদিন গভীর রাতে সাহেব ঘুমোচ্ছিল, হঠাৎই ওর দরজায় জোরে জোরে ঘা পড়তে থাকে | একটা যুবক, বেশ সুন্দরপানা একটা মেয়েকে নিয়ে‌ সাহেবের কাছে আশ্রয় চায় | সাহেবের কাছে মেয়েটিকে ওর স্ত্রী বলে পরিচয় দেয় | বাইরে তীব্র বৃষ্টি, ওই ঠান্ডায় ভিজে চুপচুপে দুটি কমবয়সী ছেলেমেয়েকে দেখে সাহেব আর আপত্তি করতে পারে নি | ওরা দু-তিনদিন সাহেবের ওখানেই থাকে | ভাড়া গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় | শনিবার সকালে ছেলেটা সাহেব থাপাকে জানায় রবিবার ওরা এখান থেকে চলে যাবে | শনিবার রাতেই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দূর্ঘটনা | সাহেব উপরে ঘুমোচ্ছিল হঠাৎই এক মেয়েলি কণ্ঠের তীব্র আর্তনাদে সাহেবের ঘুম ভেঙে যায় | নীচে নেমে সাহেব দেখে মেয়েটা মেঝেতে পড়ে আছে, রক্তে চারপাশ ভেসে যাচ্ছে ! সদর দরজা হাট করে খোলা ছেলেটা কোত্থাও নেই | ছেলেটাকে খুঁজতে যাবে বলে সাহেব বেরোতে যাবে কিন্তু একটা দৃশ্য দেখে ও স্তম্ভিত হয়ে দরজার সামনেই পড়ে যায় | পুলিশি জেরায় সাহেব বলেছিল, ওর চোখের সামনে নাকি ছেলেটা দৌড়ে গিয়ে খাদে ঝাঁপ দেয়, প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা ছেলেটা ওই বিপজ্জনক খাদের ধার দিয়ে হাঁটত | পুলিশ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানতে পারে মেয়েটা পাঁচমাসের প্রেগন্যান্ট ছিল | স্থানীয় পুলিশ ওদের পরিচয় জানার জন্য বিস্তর খানা তল্লাশি চালায় | পুলিশ বারবার সাহেবকে জেরা করতে থাকে | ওদের লাগেজ থেকে কোনো আইডেন্টিফিকেশন কার্ড পাওয়া যায় নি | পুলিশ কাগজে ওদের ছবি দিয়ে সনাক্তকরণের শেষ চেষ্টা করছিল | কিন্তু কেউ দেহ সনাক্ত করতে আসে নি | বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে বডি দুটো চালান হয়ে যায় | শান্ত পাহাড়ি এলাকায় এই ঘটনা বেশ কয়েকটা দিন একটা তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে | ধীরে ধীরে উত্তেজনা থিতিয়ে যায় | ওরা যে কোথা থেকে এসেছিল তা জানা যায় নি |


গল্প শেষ করে একটু থামল হোম স্টের মালকিন রোজি | বলল, বাবুজি আপনি এবার রেস্ট নিন | আমি ভাবছি আজই এখান থেকে কলকাতা পালাব কিনা ! চোখের সামনে যা ঘটল তার তো কোনো বুদ্ধিগ্রাহ্য ব্যাখা নেই ! রোজি আমাকে অভয় দিয়ে বলল, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, আজ রাতে আমি এখানেই থাকব | আপনার কোন ভয় নেই | পাহাড় ঘিরে সন্ধ্যার অন্ধকার নামতেই আমার কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগল | আমার এখান থেকে পালাতে ইচ্ছে করছে | পালিয়েই যাই, নইলে বোধহয় মরে যাব ..... তারপর ভাবলাম তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ি, একঘুমে রাত কাবার করে দেবো | হঠাৎ হোম স্টের সমস্ত আলো নিভে গেল, আবার লোডশেডিং | আমি জেনারেটরের সুইচ অন করতে যাচ্ছিলাম রোজি এসে জানাল, জেনারেটর কাজ করছে না | ডাইনিং টেবিলে একটা মোম জ্বলছে, খেতে বসেছি, প্লেটে সুস্বাদু চিকেন মোমো, চিকেন পকোড়া আর থুপকা, সব রোজি বানিয়েছে | উল্টোদিকের চেয়ারে বসা রোজির মুখ ওড়নায় ঢাকা, | আলো আঁধারিতে কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ, নিস্তব্ধতা ভেঙে রোজি বলে উঠল, আসল গল্পটা পুলিশ না জানলেও আমি জানি ! কি করে ? এবার আমার অবাক হবার পালা ! আরে আমি তো ওখানেই ছিলাম ! ওখানে ছিলে মানে ? মানে কিছু না বাবুজি ! আপনি বরং গল্পটা শুনুন ! ছেলেটা ছিল শতদ্রু, আর স্ত্রী বলে পরিচয় দেওয়া মেয়েটা ছিল শতদ্রুর প্রাইভেট সেক্রেটারি, সরিতা | একসঙ্গে কাজ করতে করতে ওদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, দুবাড়ির মধ্যে বিয়ের ডেট নিয়ে কথাবার্তাও চলছিল | কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে শারীরিক সম্পর্কের ফলে সরিতা প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে | শতদ্রু ওকে অ্যাবরেশন করতে বলে, সরিতা কিছুতেই রাজি হয় না | ওদের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে, শতদ্রু শেষপর্যন্ত বাচ্চাটাকে মেনে নিতে রাজি হয়ে যায় | সরিতার পেটের ভিতর বাচ্চার কেমন অবস্থায় রয়েছে সেটা জানার জন্য ডাক্তার ওকে বেশ কিছু টেস্ট করতে বলে | টেস্টের রিপোর্ট এলে জানা যায়, ওর শরীরে বেড়ে ওঠা ভ্রুণটি পূর্ণাঙ্গ নয়, অপুষ্ট বাচ্চাটিকে জন্ম না দেওয়াই ভালো বলে ডাক্তার মতপ্রকাশ করেন | শতদ্রু এবার দৃঢ়ভাবে সরিতাকে জানায় সারা জীবনের জন্য একটা অপুষ্ট বাচ্চার ভারবহন করা তার পক্ষে সম্ভব নয় | এর থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হল অ্যাবরেশন | সরিতা কিছুতেই বাচ্চাটাকে নষ্ট করতে রাজি হচ্ছিল না, এদিকে শতদ্রু সমস্যার দ্রুত সমাধান চাইছিল | পারিবারিক অশান্তির হাত এড়াতে ওরা সিকিম চলে আসে | সেদিন রাতে অনাগত সন্তানকে নিয়ে ওদের দুজনের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হয় | কি করবে বুঝতে পারছিল না শতদ্রু ! একদিকে ও নিজের ভালোবাসার মেয়েটিকে হারাতে চাইছিল না, অন্যদিকে সারাজীবনের জন্য ওই অপুষ্ট সন্তানের দায়িত্ব নিতে ওর মন সায় দিচ্ছিল না | কিন্তু সরিতা যেন ঠিকই করে নিয়েছিল ও কিছুতেই অ্যাবরেশন করাবে না, ওর সন্তানকে ও পৃথিবীর আলো দেখাবেই | শতদ্রুকে ডাক্তার জানিয়েছিল অ্যাবরেশন করাতে বেশি দেরি হলে সরিতার প্রাণ সংশয় হতে পারে | সেদিন প্রচন্ড ঝগড়ার পর ভীষণ রেগে গিয়ে শতদ্রু ডাইনিং টেবিলে রাখা কিচেন নাইফটা তুলে সোজা সরিতার পেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় | রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ তীব্র মেয়েলি আর্তনাদে কেঁপে ওঠে পাহাড়ের পথ.....সে আর্ত চিৎকার সহ্য করতে পারে নি শতদ্রু | দরজা খুলে এক দৌড়ে সামনের ভয়ঙ্কর খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে ....

গল্প শুনতে শুনতে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছিল | ভয়ে ভয়ে রোজিকে জিজ্ঞেস করলাম, পুলিশ যা জানতে পারে নি সেটা তুমি কি করে জানলে ? নিজের অজান্তেই আমার চোখটা চলে গেল ডাইনিংয়ের একপাশে রাখা সোফার দিকে, মোমবাতির মৃদু আলোয় দেখলাম সোফার উপর রোজি বসে রয়েছে | ওর চোখদুটো কেমন বিভৎসভাবে বেরিয়ে এসেছে, যেন কিছু দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছে | কে তুমি ? আমার নিজের কন্ঠস্বর যেন নিজের কাছেই কেমন অচেনা ঠেকল | মেয়েটা আলতো করে মুখের ওড়না সরিয়ে বলল, দেখো তো চিনতে পারো কিনা ? তুমি সরিতা ! তুমি, তুমি তো কবেই মরে গেছ ! এ আমি কি বলছি ? সরিতা কে ? এই নামটা আমি কি করে জানলাম ?.... তুমিও তো মরেই গেছিলে আবার জন্মালে কেন শতদ্রু ? বাধ্য হয়েই তো তোমাকে এখানে ডেকে আনতে হল ! অনেকদিন হলো, আর যে তোমায় ছাড়া থাকতে পারছি না ! সরিতার গলায় তীব্র হাহাকার ! না না ! এ হয় না সরিতা ! জীবিতের সঙ্গে মৃতের মিল হতে পারে না ! প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও ! আমায় ছেড়ে দাও সরিতা ! আমি আর্তনাদ করে উঠলাম | তা আর হয় না শতদ্রু | আমি তোমাকে ছাড়া যে থাকতে পারছি না ...... এসো কাছে এসো ! আমি দেখলাম সরিতার কঙ্কাল আমার দিকে দুহাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে |আমি এক ঝটকায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম | সদর দরজা খোলা, সরিতার কাছ থেকে আমায় পালাতেই হবে ! সরিতার কঙ্কাল দুহাত বাড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে..... আমি আর ভয় করি না, ওর আত্মা এই ঘরের বাইরে বেরোতে পারবে না ! ওই তো সামনেই খাদ, খাদ আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে ! ওই খাদ বড় সুন্দর, বড় বিপদজনক ! ওর সৌন্দর্যে বিলীন হতে ও আমায় ডাকছে....এ ডাক এড়ানোর সাধ্য কি ! ধীরে ধীরে মোহাবিষ্টের মতো এগিয়ে গেলাম খাদের দিকে ..... তারপর ....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror