তিন্নি
তিন্নি
তিন্নির কথা মনে পড়ে
আমার আজও, তিন্নির কথা মনে পড়ে বড় ।
স্বচ্ছ নীল আকাশ, সবুজের সাথে
তিন্নি থাকত, আমাদের সামনের বাড়িতে
তিন্নি তখন ছোট
আমি কলেজে পড়ি
আমি তখন সাঁতরে, পুকুর পাড় করি
জানলার শিক্ ধরা তিন্নি
আধো গলায় চিৎকার করে বলতো,
'দুব সাতার' 'দুব সাতার'
আমি ডুবি ভাসি আবার ডুবি
বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে তিন্নিকে নিয়ে বড়মাঠে
সাইকেলে এক চক্কর দিতে হত আমাকে,
মনে পড়ে
মনে পড়ে, একবার জামরুল গাছের ডগায়
একটা লাল রঙের ঘুড়ি আটকে ছিল
হাত পা কাঁপতে কাঁপতে
পেড়ে এনে দিয়েছিলাম ওর হাতে ।
এমনই
এমনই আরও কত টুকরো সজীব স্মৃতি
আজও, আজও আমার একাকীত্বের সাথী ।
এরপর
অনেক বছর আমার চাকরি সূত্রে দেশ ভ্রমণ
ছিল না কোন যোগাযোগই আর
যখন ফিরে এলাম
তিন্নি তখন শ্বশুর বাড়ি, তিন্নি সংসার ।
কিন্তু
কিন্তু আমি তিন্নিকেই খুঁজতাম
আমার অবচেতন মন তাকেই খুঁজে বেড়াতো
যদি পাই
যদি পেয়ে যাই, তার দেখা একটিবার ।
এভাবেই চলছিলো
এভাবেই চললো আরও বেশ কিছুদিন
তারপর
হঠাৎই একদিন
তিন্নির সাথে দেখা, রেলস্টেশনে
আমি চিনতে পারি নি প্রথমে
পেছন দিক থেকে
হাতটা চেপে ধরেছিল, 'চিনতে পারছো?'
'চিনতে পারছো আমাকে ?'
তিন্নি সেদিন নীল পাড়, হলুদ শাড়ি
তিন্নি
তিন্নি আমাদের ঠিক সামনের বাড়ি
সোনালী রোদ কচি পাতায়
বৃষ্টির ফোঁটার মতো ওর মুখ উজ্জ্বল, রাঙা
আমি স্থির দীঘি-জল, পাখি মাছরাঙা ।
একসাথে
ফিরতে ফিরতে, হাঁটতে হাঁটতে
চলতে চলতে
কত গল্প, কত পুরনো স্মৃতিকথা
কিন্তু মনের মধ্যে কেন যেন,
কেন জানি, এক অজানা শূন্যতা
তিন্নি
যে তিন্নি আমার সুখস্মৃতি
যে তিন্নি থাকত আমাদের সামনের বাড়িতে
সে তিন্নি আজ, এতদিন পর
আমার পাশে, আমার সাথে
তবে কেন এই শূন্যতা ?
এমন কি কারও হয়?
কেন মনে হচ্ছে বারেবার,
এ তিন্নি ঠিকই
তবে আমার তিন্নি নয় ।
তিন্নির কথা মনে পড়ে
আমার আজও, তিন্নির কথা মনে পড়ে বড় ।