স্মরণীয় মুহূর্ত
স্মরণীয় মুহূর্ত


দিন বদলায়, সময়টা চলে অবিরাম ধারায়,
মানুষের জীবন তো আসলে মুহূর্তদের সমষ্টি,
মুহূর্ত আসে, মুহূর্ত ফুরোয়, রেখে যায় অস্তিত্ব;
বিস্মরণীর ছাঁকনিতে ছেঁকে স্মরণীয় নির্যাসটুকু
মনের মণিকোঠায় তুলে রাখি গভীর যত্ন করে।
চলার পথে এরকমই এক মুহূর্ত অসম্ভব দামী,
বুঝিনি, আপন অস্তিত্ব জানান দেবে চিরকাল;
স্টেশনে পৌঁছে প্ল্যাটফর্মে থমকে দাঁড়ালো ট্রেন,
নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে টোটোয় ওঠা,
অরুণ আলোকে উদাসী দৃষ্টি তখন দূর-বহুদূরে,
প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে আনমনা ছিল মন,
দু'পাশে অনন্ত সবুজের মাঝে পিচঢালা রাস্তায়
টোটোর গতিতে ছুটে চলা সেই যাত্রাপথ ধরে
খেয়াল করিনি মুখোমুখি বসে থাকা মানুষটাকে,
প্রভাতী শুভেচ্ছা জ্ঞাপনটুকুও সেদিন হয়নি তাই,
সম্বিত ফিরল তাঁর কণ্ঠস্বরে, তাঁর কথার সূত্র ধরে,
রেলের বাইরে তাঁর সেই বৃহৎ জগতের কথা শুনে
ছন্নছাড়া মন জুড়ে হঠাৎ উঠল প্রবল আলোড়ন!
কোথায় যেন ঠিক এই মুহুর্তটারই অপেক্ষা ছিল,
নির্ভয়ে প্রশ্ন করলাম, "আপনি লেখালেখি করেন?"
উত্তরটা এল, "হ্যাঁ, তবে এটা খুব বেশিদিন ধরে নয়।"
দিনসংখ্যা বিচার্য নয়, মনকে জীবিত রাখাই আসল,
দীর্ঘতা দিয়ে কী আর গভীরতা পরিমাপ করা যায়!
যান্ত্রিক পরিবেশে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েও
আবেগগুলোকে বাঁচিয়ে এভাবে অযান্ত্রিক থাকা যায়!
এবার প্রশ্নটা অভাবনীয় ভাবেই ধেয়ে এল এই দিকে,
"চাকরির বাইরে আছে কী অন্য কোনও অভ্যেস?"
উত্তর দিলাম, "হ্যাঁ, ওই একটু আধটু লেখালেখি...."
অযাচিত ভাবেই আমার জীবনপথে আশ্চর্য বাঁক।
আঁধার যাপনে অভ্যস্ত জীবনে হঠাৎ আসা আলো।
আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে নিয়ে চললেন তিনি,
অনুপ্রেরণায় ঋদ্ধ করে যেন নিশ্চিন্ত ভরসাস্থল;
সুধা সঞ্জীবনী হয়ে রইবে চিরঅক্ষয় এই মুহুর্তটাই,
ক্ষণিকের মুহূর্তরা এভাবেই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পায়,
এটাই সত্যি, বাকিটা তো বুদবুদের মতো ভেসে যাওয়া....