মা
মা
আকাশচুম্বী থেকে মেঠো পথ ছাড়ানো পথ,
বরফের চাদর ঢেকে চারপাশ, সোনা রোদ্দুরে
পাহাড় উঠল ঝলমলিয়ে। গভীর নদীর মতো
তুমি বয়ে কূলকুল।
শত কাজের ভিড়ে, দিন রাতের দৌড়োদৌড়ি,
কখন যে পড়ন্ত বিকেল পশ্চিমের আকাশে ঢলে।
আমার মুখের হাসি খানা ধ্রুব করে তোমার
সূর্য মনের মধ্যে সেই জ্বলজ্বল।
ভাবনার দাবানল তখন মনে, দু পা এগিয়ে যাবার
সাহস নেই। এক বিন্দু মেঘ ও নেই আমার আকাশে।
সেই আকাশে তুমি আষাঢ় কালো মেঘে। ভিজে সপসপে
আমি। দেখি আমার স্বপ্নগুলো রামধনু হয়ে আশায়।
সবুজ ধানের চাষ মাঠের পর মাঠ। মাছরাঙা ডুব দেয়
ঐ টুপ টুপ। ঘরের দাওয়ায় শালিখের কিচিরমিচির।
কার্তিকের হিমেল হাওয়ায় বারান্দার টবের পাতায় শিশির।
তুমি শিখিয়েছ মানুষ হবার সহজ পাঠ।
কাঁটা পথে সামলে, মসৃণ পথ মানেই বেসামাল নয়।
স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রয়াস থাকবে। হাতের মুঠোতে এলে তাকে আগলে
থেকো। বলেছিলে মন মুক্ত উঠোন জেনো। কিছু হাত থেকো শক্ত
করে ধরে। সেই পাহাড়ি পথে নামবার সময় আমি এখনও
তোমার হাত ধরে থাকতে চাই মা। ঘামে ভিজে স্কুল থেকে ফিরে
তোমাকে সব কথা বলতে চাই। বইয়ের ফাঁকে চিঠিটা তোমার হাতে
পড়লে খুব বকা খেতে চাই, তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে কত আদর।
ট্রেন টা বাসী বিয়ের দিন যখন দুয়ার ছাড়ল, হু হু মনের মাঝে
তোমার স্তব্ধ পায়ে এক কোণে অঝোর দৃষ্টি।
আর আমি ছোট্ট হাতগুলো
ধরে এখন যখন পথ হাঁটি, আমার মধ্যে একাকার তুমি।
চিরন্তন সেই নদী বয়ে চলেছে আমার মধ্যেও তুমি হয়ে।
