কোজাগরী পূর্ণিমা
কোজাগরী পূর্ণিমা
গোধূলির আলোর রেশটুকু
এখনও রয়ে গেছে দিগন্তের প্রান্ত সীমায়।
ধীরে নেমে আসে হেমন্তের সন্ধ্যা।
ঘনায়মান অন্ধকারে ব্যপ্ত চরাচর ।
সহসা পুবের আকাশ উদ্ভাসিত করে
উদিত হল এক সুবর্ণ গোলক।
কোজাগরী পূর্নিমা আজ।
দূরাগত শঙ্খের ধ্বনি আলোড়ন তোলে
ছাতিমের গন্ধবাহী সন্ধ্যা র বাতাসে।
চন্দ্র কিরণে ধুয়ে যাওয়া অঙ্গন মাঝে
নিপুণ হাতে আঁকা মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ।
ঘরে ঘরে জ্বলে দীপ, গৃহ দ্বারে
রঙিন আলপনায় ঝলমল করে শ্রী।
ধূপ, ধুনো, পুস্প, চন্দনের মিশ্র গন্ধে
বাতাস ভারী। ফল, মিষ্টি, অন্ন
ব্যাঞ্জনের সাজানো ডালা,
ঘরে ঘরে চলছে আজ কোজাগরীর আরাধনা।
ধীরে নেমে আসে রাত।
থেমে যায় শঙ্খ উলুধ্বনি,
হৈমন্তী বাতাসের স্পর্শে
একে একে নিভে যায় সব কটি দীপ।
পরিশ্রান্ত গ্রামখানি
নিঃসাড়ে ঘুমায় চাঁদ জাগা রাতে।
অর্ধরাতে নেমে আসে কোজাগরী,
ঘুমন্ত গ্রামের সীমানায়।
দুটি চোখে জ্বলন্ত অঙ্গার,
পেটে তার খিদের আগুন,
ডাক দেয় সুতীক্ষ্ণ স্বরে - কো জাগরী?
কেউ আছো নাকি জেগে?
ক্লান্ত আমি, ক্ষুধায় পীড়িত, সাড়া দাও কেউ।
সাড়া নেই কারো। অতন্দ্র চন্দ্রালোকে,
সঞ্চালিত শ্বেতশুভ্র ডানায়
উড়ে যায় কোজাগরী।
হেমন্তের গর্ভিনী ক্ষেতের ওপর,
নিস্তরঙ্গ দিঘির জলে ফেলে যায় ছায়া খানি তার।
হতাশায় মথিত কন্ঠে
রেখে যায় কান্নার সুর- কেউ নেই,
কেউ নেই জেগে।
রাত শেষে আসে ভোর,
হিমেল হাওয়ার স্পর্শে জেগে ওঠে গ্রাম খানি,
পশ্চিমের আকাশের একটি কোণায়
তখনো জেগে আছে কোজাগরী পূর্নিমার চাঁদ
ঘুম ঘুম চোখে। কিছু যেন বলে যেতে চায়,
অব্যক্ত ভাষায়, তোমাদের ডাকে
কাল এসেছিল সে। সাড়া না পেয়ে,
ডেকে ডেকে ফিরে গেল কেঁদে।
প্রসাদ হতে তার হলে যে বঞ্চিত তোমরা সবাই।
এ দুর্ভাগ্য নিয়ে এলে সেধে।
সে ভাষা বোঝে না কেউ।
মৃদু হেসে ডুবে যায় কোজাগরী চাঁদ ।