STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract

4  

Manab Mondal

Abstract

হাইফেন সময়

হাইফেন সময়

2 mins
323

ছোট্ট ছেলেটার নিশ্চিত ধুলো কাঁদা মেখে খেলা করা দৃশ্যটা দেখে বুবাই এর নিজের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো। রূপকথার গল্পের মতো ছিলো তার ছেলে বেলা সেই অবুঝ চিন্তা ভাবনাহীন ছেলেবেলা অন্যদের থেকে বেশি সুন্দর ছিলো বুবাই এর। কারণ ওর ছেলেবেলার গল্পে একটা রাজকন্যা ছিলো।সেই রাজ কন্যা হলো রিমি। 

রিমি কিন্তু বদলে গিয়েছে সময়ের সাথে সাথে। কলেজ গিয়ে দূরত্বটা যেনো আরো বেড়ে গেলো। আসলে শৈশব যদি হলো ভোর বেলা , মিষ্টি রোদ মেখে ফুল রঙ দেখে, পাখির কলতান শুনে ভালো লাগা মুহূর্ত। কিন্তু যৌবন মানে প্রখর রৌদ্রে পুড়ে জীবনে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। তাই রিমি যখন কলেজে পড়াশোনা পাশাপাশি কবিতা পাঠ, সাহিত্য চর্চা , রাজনীতি নিয়ে ব্যাস্ত তখন পাড়ায় আড্ডাতে বুবাই থাকে না। কলেজ শেষ করেই কাজ করে একটা উন্নতর জীবন খুঁজতে সে ব্যস্ত ।

বাবুই বামপন্থী, অথচ বড়োলোকের পার্টীতে নাম লেখালো রিমি। দূরত্ব বাড়তে তারমধ্যে হাজির হলো ওদের কলেজের কমবয়সী অধ্যাপক চন্দনবাবু। আবার কংগ্রেস দলের যুব সভাপতি। তবে রিমির সাহিত্য চর্চার বিষয়ে আগ্রহ তার বেশি। ওনার সৌজন্যে কলেজের ছাত্র ইউনিয়ানের সভানেত্রী হয়ে গেলো রিমি।আরো বেশি কাছাকাছি হলো ওরা। বই বিনিময়ের সাথে সাথে হৃদয় বিনিময় হলো বোধহয়।

তারপর একদিন একটা খুশির খবর জানতে চন্দনদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো রিমি। অনেকটা দেরি করে ফেলেছিলো রিমি ওর বাড়িতে যেতে। চন্দনের একটা মিষ্টি মেয়ে আছে ওর বৌটাও খুব মিষ্টি কিন্তু রিমির জীবন টাতো তিতকুটে হয়ে গেলো।


একদিন খুব ভালো বন্ধুকে রিমি কিন্তু কোন দিনই স্বামী হিসেবে মানতে পারলো না। আসলে ও বুবাইএর মধ্যে শুধুমাত্র কর্তব্য পালন করা দেখেছে। ভালোবাসা খুঁজে পেতে দেয়নি , আসলে ওতো ব্যস্ত হয়ে গেছিলো ভীষণ ভাবে গুবলুকে মানুষ করতে। গুবলু কতো তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে গেলো। কিন্তু সে অন্তত তার মাকে তো নিজের কাছে রাখতে পারতো। ওয়াইট কলারের চাকুরী। ফ্লাট কিনে ও মুম্বাই মতো দামি শহরে স্থায়ী ঠিকানা বানিয়ে নিলো।

গুবলু বুবাই এর নিজের ছেলে হলে এতোটা স্বার্থপর হয়তো হতো না। কিন্তু সেইদিন রিমির সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ওরা দ্বিতীয় সন্তান নেয়নি। ভালোই হলো বুবাই কোলকাতার বাড়িটা ভাড়া দিয়ে বেড়িয়ে পরলো তীর্থ ভ্রমণে। বুড়ো বয়সে এসে ভালোবাসার স্বাদ পেলো একটু বুবাই। সব মানে না বুঝলেও রিমি ওর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে মাঝে মাঝে এখন। কিন্তু সে সুখবা বুবাই এর জন্য কতক্ষনের। 

কাল সন্ধ্যায় অহংকারী মেয়েটা কয়েকটা মুহূর্তে পরিনত হলো এক হাড়ি ছাইয়ে। বুবাই বুড়ো বয়সে তার জীবনের প্রথম কবিতাটা লিখলো।

" জীবন মৃত্যুর মাঝে হাইফেন সময়

তবু করে যেতে হয় কত অভিনয়।"

বুড়ো বুবাই বুঝতে পাড়লো। ছেলেবেলা আর বুড়োবেলাটাই বোধহয় মানুষ গুলোকে তেমন অভিনয় করতে হয়না, অন্যকে খুশি করতে।


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Abstract