অর্জুন
অর্জুন
হে মহাবীর, সুত কুন্তীর, নররূপে এলে ধরা।
তব গুনগানে, তব দশনামে চারিদিক হল ভরা।
হায়রে নিয়তি, কেন বা করিলি অকালে পিতৃহারা ?
বনেতে একাকী, অনাহার রাতি, কাটে কৈশোর সারা।
বুক বাঁধলে আশায়, প্রাসাদে পাবে ভ্রাতৃস্নেহ!
দুর্মতি যত কুরূভাই শত, আপন ভাবে না কেহ।
কিন্তু প্রতিভা যায় না যে ঢাকা, সব্যসাচী হে জয়
গুরু দ্রোণ প্রেমে শ্রেষ্ঠ হলে, ডাকে সবে কয়ে বিজয়।
যুবরাজ হন, তব অগ্রজ, প্রজা মাতে দিন রাতি,
সহে না যে আর, মামা ভাগ্নার, পান্ডব উন্নতি।
হেন ভাবি মনে দুষ্ট বানায় জতুগৃহ অনুপম,
পান্ডবগণ মরিছে ভাবি, মূঢ় করে মনে ভ্রম!
নিজ গুনে তুমি, মাছ আঁখি মণি, বিদ্ধ করলে তিরে,
পাঞ্চাল সুতা, কৃষ্ণার হাতে হাত ধরে এলে ফিরে।
হায়রে বিধাতা,না দেখেই মাতা,'লও সবে বাঁটি,' বলে!
ত্যাজি নিজ মান,জয়তু শ্রীমান,মায়ের কথা রাখিলে।
ইন্দ্রপুরী আনো খান্ডবে নিজ গুনে , বাহুবলে
তাহাকেও ত্যাজি বামুনের তরে বনবাস স্বীকারিলে!
রাজসুয় করে ধর্মসুত, তব বিক্রম গুনে,
জুয়ায় হেরে সবই রে যায়, কারও কথা নাহি শুনে।
কৃষ্ণারে টানে, সভায় আনে, দুঃশাসন নরাধম।
আকুল নয়নে কাঁদে সে একাকী,লাজ রাখে তার যম।
অজ্ঞাতবাসে যাও সবে মিলি বারো বছরের শেষে।
কুরুরাজপুত, আজ নেচে ফেরে বৃহন্নলা বেশে!
সহ্য করেও কত কুকথা, গেলে বিরাটের রণে।
তব বিক্রমে কুরুসেনা ভাবে, সমর করে শমনে।
যুদ্ধের বেজে ওঠে দামামা, ঘুম আসে কার নেত্রে?
কত মহারথী,বাহিনী, পদাতি চলে সব কুরুক্ষেত্রে।
এত অপমান সয়েও তুমি ডাকলে তাদের " ভাই!
ভাইয়ের রক্তে রাঙানো হাতে স্বর্গসুখ ও ছাই "।
স্মিত হাসি চক্রপাণি, শোনায় গীতাবানী, দুর করে যত তব দুখ।
হেরি নর-নারায়নে, মগ্ন গূঢ় আলোচনে, গুনীজনে পায় সর্বসুখ।
পেয়ে তুমি পুনঃ বল, করিলে কর সবল, গান্ডীব নিলে তুলি হাতে।
ধন্য ধনঞ্জয়, ধর্মের হলো জয়, ফল দিলে সবে হাতে নাতে।
তব পদস্পর্শে ধন্য এই চরাচর।
যে তোমারে ধরে, ধন্য সে জঠর।
হিমালয়, গঙ্গানদী আছে যতদিন,
ততদিনই অর্জুন, হে চিরনবীন।