আমার দুগ্গা পুজো
আমার দুগ্গা পুজো


অবচেতন মনের নিভৃত ক্যানভাসে মুহূর্তদের আনাগোনা,
ফিরে যাই আবার সেই উজ্জ্বল শৈশবস্মৃতির দোরগোড়ায়,
প্রবন্ধ রচনা থেকে শুরু করে কখনও টুকরো আলাপচারিতা -
প্রিয় উৎসব মানেই আনন্দে ভরপুর দুর্গাপুজোর চারটে দিন,
দেবীর বোধন থেকে ঢাকের কাঠির মন খারাপের বিসর্জন -
সবটা জুড়েই মনের গভীরে কাজ করত নিরন্তর উদ্দীপনা,
পুজো মানেই তো মা-বাবার হাত ধরে আলোয় ভেসে যাওয়া!
তখন আমার ষষ্ঠ শ্রেণী, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর সেই উন্মাদনা;
হঠাৎ খামখেয়ালিপনা, একটা অদ্ভূত ইচ্ছার তীব্র অনুরণন!
প্যান্ডেল হপিং সবাই করে, পুজোর উদ্যোগে সামিল ক'জন?
স্বীয় প্রচেষ্টায় স্বচ্ছ মন নিয়ে মায়ের আরাধনার সেই প্রকল্প,
সহযোগী হিসেবে পেলাম প্রতিবেশী এক বোন, তিন ভাইকে,
মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া অবাধ্য সাধের বাস্তবায়নে যাত্রা -
প্রথমেই মুখোমুখি হতে হল গুরুজনদের প্রবল বিরোধিতার,
কড়া আদেশ, 'ঠাকুর নিয়ে ছেলেখেলার চেষ্টা একদম নয়।'
দুর্গা ঠাকুরের প্রতিকৃতি কিনে দেওয়ার আবদারটা খারিজ,
অবশেষে সহায় হল ঘরে থাকা শেরাবালির ছোট্ট মূর্তিখানা;
"দুর্গার বদলে মা শেরাবালি! পুরোহিত কই?" মায়ের প্রশ্নবাণ,
আত্মপক্ষ অবলম্বনে মজবুত যুক্তিরা প্রস্তুত ঠোঁটের আগায়,
"ঈশ্বর তো অদ্বিতীয়, তাই মূর্তির তারতম্যে কী যায় আসে?
মনের স্বচ্ছতাটুকুই আসল সত্য, ঠাকুরমশাই নিষ্
প্রয়োজন।"
সম্মিলিত আয়োজন, হাতে হাত মিলিয়ে আমরা পাঁচজন,
পিচবোর্ড কেটে রঙতুলির সাহচর্যে প্রস্তুত মন্ডপ, আলপনা,
দিনভর নাচ-গানের রিহার্সাল, স্বরচিত শ্রুতি নাটকের মহড়া;
অনুষ্ঠানসূচির আলোড়নে চোখ থেকে উধাও রাতের ঘুম,
আগমনী গানের ক্যাসেট আর টেপ রেকর্ডারে ঢাকের বাদ্যি,
সালটা ২০০৭, এই ভাবেই জমজমাট সূচনা আমার পুজোর,
পাঁচটা দিন নিষ্ঠা সহকারে আনন্দে মেতে দেবীর আরাধনা;
যে দু'টো মানুষের বকাবকি বাড়িতে পুজোর ছিল অন্তরায়,
জোগাড় থেকে গোছানো - সেই মা-বাবাই হল শ্রেষ্ঠ সহায়;
দাবা, ক্যারাম, ক্রিকেট ম্যাচ আর তারপর পুরস্কার বিতরণী,
আড্ডায়-হাসি-গানে হইচই মাখা মুখরতায় ভরা চারটে দিন,
পরের বছর বাবার আনা সপরিবার দুর্গার ফটোফ্রেমে পুজো,
সাথে অবশ্যই আদি মূর্তি হিসেবে বিরাজমান মা শেরাবালি;
অষ্টম শ্রেণীতে নিজের সম্পাদনায় 'কল্পনা' ম্যাগাজিন প্রকাশ,
জেরক্স কপি হলেও কচি বয়সের উদ্যোগেই অপার আনন্দ;
এভাবেই পরপর আটটা বছর মনের মণিকোঠায় চিরভাস্বর,
তারপর ছন্নছাড়া আমরা পাঁচজন, পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা!
অবশেষে সহসা ধেয়ে আসা ঝড়ে থমকে গেল আমার পুজো,
শেরাবালির মূর্তিটা আজও আছে, আছে দুর্গা ঠাকুরের ফটো;
শুধু পুজোটা আর হয় না, হয় না আর আমার 'কল্পনা' প্রকাশ,
উৎসবের সেই স্বতঃস্ফূর্ত মুহূর্তগুলো মনের দেরাজে সুরক্ষিত।