Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sanghamitra Roychowdhury

Drama

4  

Sanghamitra Roychowdhury

Drama

পিকুর প্রশ্নের জবাবে

পিকুর প্রশ্নের জবাবে

4 mins
1.1K


পিকু সবে পাঁচ পেরিয়ে ছয়ে পড়েছে, শহরের নামী কনভেন্ট স্কুলে ক্লাস ওয়ানে উঠেছে, লেখাপড়া সে ভালোবেসে করে আর খুব সুন্দর পেন্সিল স্কেচ করে এই বয়সেই...... গুণটি তার সহজাত। খেলতেও খুব ভালোবাসে, তবে ছুটোছুটি করে নয়। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে আর প্রতিটি বিষয়েই কোনো না কোনো প্রশ্ন করে আর যতক্ষণ পর্যন্ত না উত্তরটি পিকুর নিজের কাছে যুক্তিগ্রাহ্য মনে হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তার এই প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতেই থাকে।


পিকুর মা ধীময়ী একটি বেসরকারি বাচ্চাদের স্কুলে পড়ায়, পিকুর আর পিকুর মায়ের স্কুলের সময়টা এক হওয়ার ফলে পিকু মায়ের সঙ্গ ভালো মতোই পায়। ধীময়ীর নিজের খুব বই পড়ার নেশা আর মেয়ের মধ্যেও ধীময়ী এই অভ্যাসের বীজ বপন করে দিয়েছে....... সময় পেলেই পিকু দোতলার গ্রীল ঘেরা বারান্দায় একাএকা চুপটি করে বসে গল্পের বই পড়ে।

পিকুর বাবা চঞ্চল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির পদস্থ কর্মী, সকালে সাড়ে আটটায় বাড়ী থেকে বেরোয় কোম্পানির গাড়িতে, ফেরার সময়ের কোনো ঠিক নেই, বেশীর ভাগ দিনই রাত দশটা পার করে ফেরে।


চঞ্চল নিজের অফিস, নিজের কাজ-মিটিঙ, অফিস ট্যুর এইসব নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে পিকু বাবার কাছে বিশেষ ঘেঁষে না। পিকুর সাথে বাবার দেখা হয় ব্রেকফাস্ট টেবিলে আর রবিবার দুপুরে খাওয়ার সময় যদি চঞ্চলের কোনো অফিস ট্যুর না থাকে তবেই।

পিকুর দাদান অবনীশবাবু রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ অফিসার, ওনার শখ.......বাগান করা, বেড়ানো, উচ্চাঙ্গসংগীত শোনা আর মাঝেমধ্যে ছিপ নিয়ে টিকিট কেটে মাছ ধরতে যাওয়া। পুত্রবধূ ধীময়ীকে পছন্দ করেছিলেন ওর গাওয়া অপূর্ব উচ্চাঙ্গসংগীত শুনেই। অবনীশবাবু অত্যন্ত স্বল্পবাক, তাই পিকু কোনো প্রশ্ন নিয়ে দাদানের কাছে যায় না, কারণ দাদানের সংক্ষিপ্ত উত্তর পিকুর একদম পছন্দ হয় না।


মলিনা দেবী পিকুর ঠাম্মি, সারাদিন রান্নাঘর আর ঠাকুরঘর নিয়েই ব্যস্ত, কারোর কোনো সাতেপাঁচে থাকেন না। পুত্রবধূ ধীময়ীর সাথে আলোচনা করে তবেই আজকাল খুঁটিনাটি সাংসারিক সিদ্ধান্ত নেন। তবে পিকুকে অত্যন্ত ভালোবাসেন এবং একমাত্র নাতনির জন্য মাঝেমধ্যেই টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে আনেন বাইরে বেরোলেই। পিকু ঠাম্মির কাছে আচার, চিনির পরোটা, বাদাম পকোড়া, তরমুজের শরবত ইত্যাদি খাবার আবদার করলেও, প্রশ্ন নিয়ে কখনো নয়, কারণ প্রশ্ন করলেই ঠাম্মি বলেন, "আমি কি অতশত জানি সোনা?"


সুতরাং পিকুর সব প্রশ্ন মায়ের কাছেই, আর সব প্রশ্নের উত্তরই ধীময়ীও পিকুর বোঝার মতো করেই দেয়। অনেক বছর আগে একবার ধীময়ী "সানন্দা" ম্যাগাজিনে পড়েছিলো যে বাচ্চাদের মনে অনেক রকম প্রশ্ন জাগে আর সেই প্রশ্নের উত্তর বাচ্চাদের বোঝার মতো করেই দিতে হয়। বড়রা বাচ্চাদের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলে বাচ্চাদের কৌতূহল আরও উদগ্র হয়ে ওঠে এবং বাচ্চারা যেণতেণ প্রকারেণ সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুল কিছু উত্তর পেয়ে ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়ে। তাই প্রতি মায়ের কর্তব্য সন্তানের প্রশ্নের যথাযথ বোধগম্য সঠিক উত্তর দিয়ে সন্তানের মনের কৌতূহলের নিরসন করা। বাচ্চাদের মনে এই বিশ্বাস তৈরি হওয়া জরুরী "আমার মা সব জানে" এবং এতে করে সব প্রশ্ন নিয়ে সহজ সরল ভাবে নির্দ্বিধায় মায়ের কাছেই আসবে, এতে করে সন্তানের বিপথে বা নিষিদ্ধ পথে যাবার সম্ভাবনা রোধ হবে। ধীময়ী ওর ক্লাসমেট মনস্তাত্ত্বিক নীপবীথি মিত্রের সাথে আলোচনাও করেছে এই বিষয়ে......... পিকুর সব কৌতূহলের নিরসন করতে ধীময়ী সৎভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করে।


পিকু বাবলির সাথে খেলতেও খুব ভালোবাসে, বাবলি পিকুর থেকে বছর দুয়েকের বড়, ক্লাস টুতে পড়ে। বাবলির বাবা ব্যাঙ্কে উঁচু পদে চাকরি করে, বদলির চাকরি, আপাতত এই শহরেই পোস্টিং, তবে আগে বাবলির বাবা অনেকবার অনেক দূর শহরেও বদলি হয়েছে, বৃদ্ধা মা আর পরিবারকে এখানে এই পিকুদের বাড়ীর একতলায় ভাড়া রেখেই। বাবলিরা পিকুদের একতলার বহু পুরনো ভাড়াটে, যদিও বাবলি অন্য স্কুলে পড়ে তবুও দুজনে একসাথে খেলাধুলা করেই বেড়ে উঠছে।


আজ রবিবার, চঞ্চল বাড়ীতে, দুপুরে সবাই একসাথে খাবার টেবিলে, পিকুকে ধীময়ী ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছে, টুকটাক হালকা কথাবার্তা গল্পগাছা চলছে.............................এমন সময়,হঠাৎ পিকুর প্রশ্ন,


"কাউকে আদর কেন করতে হয়?"

পিকুর মা, "কাউকে ভালোবাসলে আদর করতে হয়," বলে পিকুর চুলগুলো ঘেঁটে দিলো।

আবার পিকু, "তাহলে যে যাকে আদর করে সেই তাকে ভালোবাসে?" পিকুর মা, "হ্যাঁরে বাবা।"


বড়বড় চোখ মেলে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পিকুর গলা, "তাহলে বাবা তোমাকে ভালোবাসে না?" পিকুর মা, "বাসে তো!" পিকু আর পিকুর মায়ের আলাপচারিতায় খাবার টেবিলে নিঃস্তব্ধতা....... পিকুর প্রশ্ন, "তাহলে বাবা বাবলিদিদির মাকেও ভালোবাসে? বাবা তো কাল বাবলিদিদির মাকে আদর করছিলো!"


সকলের কানে যেন কেউ গলানো গরম লোহা ঢেলে দিলো! কিন্তু পিকুর মা ধীময়ীর শান্ত ধীর স্থির দৃপ্ত নিরুত্তাপ উত্তর,


"জানি তো, বাবলিদিদির বাবা একতলার ঠাম্মুকে পিসিমণির বাড়ীতে রাখতে গেছে তো, তাই বাবলিদিদির মায়ের জ্বর মাথাব্যথা এইসবে বাবা একটু আদর করে দিয়েছে, নাহলে তো বাবলিদিদির মায়ের আরো বেশি শরীর খারাপ হবে, তখন তো বাবলিদিদি কেঁদে ফেলবে একাএকা আর তোমার সাথে খেলতেও পারবে না, তাই তো আমি বাবাকে পাঠালাম ওদের ঘরে, দাদান-ঠাম্মির আমার সবার কাজ ছিলো, তোমার আর বাবলির খেলা ছিলো, শুধু বাবা একাই ফ্রী ছিলো ট্যুর থেকে ফিরে তাই বাবাকে পাঠিয়ে দিলাম বাবলিদিদির মাকে আদর করে দিয়ে আসতে।"

খাবার টেবিলের নৈঃশব্দ্য ভেঙে আবার পিকুর গলা, "ভালুকছানাকে বাড়ীতে পোষা যায়?" পিকুর মায়ের উত্তরটা পিকুর বাবার কানে আর কিছু ঢুকছে না, তাড়াতাড়ি খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যেন পালিয়ে বাঁচলো।

পিকু ছোট্ট দুহাত মাথার উপর তুলে নেচে নেচে চেঁচিয়ে চলেছে, "এএএ.... আমার মা সব জানে.......এএএ আমার মা সব জানে........

এএএএএএ.......আমার মা সব জানে......এএএএ"

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama