Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Rinki Banik Mondal

Inspirational

3  

Rinki Banik Mondal

Inspirational

প্রকৃত বন্ধুর খোঁজ

প্রকৃত বন্ধুর খোঁজ

9 mins
180



চোখে কাজল দিতে দিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসে সায়ন্তনী।ওর পরনে আজ হলুদ রঙের একটা কুর্তি,গলায় একটা সরু চেন,দু কানে সোনার ছোট্ট ঝোলা দুল,আর ডান হাতে ঘড়ি।ভারী মিষ্টি লাগছে আজ সায়ন্তনীকে।ও তো আজ নিজের রূপেই নিজে মুগ্ধ হয়ে গেছে। মামীমা এসে সায়ন্তনীকে দেখে আজ তার বাঁকা কথায় বলেই ফেলল-


-----"কি রে তুই টিউশন যাচ্ছিস, নাকি মনের মানুষের সাথে দেখা করতে?"


মামীমার কথা শুনে এবার হো হো করে হেসে ফেলে সায়ন্তনী। না, মনের মানুষের খোঁজ সায়ন্তনী এখনো পায়নি। তবে সায়ন্তনীর বন্ধুবান্ধবের অভাব নেই। ওর এই সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ অবশ্য বাড়ির কেউই পছন্দ করে না। ওর মা, মামা, মামী, দাদু কেউই ওকে এই বিষয়ে প্রশ্রয় দেয় না। তবে ও শোনে না।

সায়ন্তনী এখন কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এরই মধ্যে ওকে বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একরকম জোর করছে। তপন বলে পাড়ার একটি ছেলের সাথে তারা প্রায় বিয়ের কথা এগিয়েও ফেলেছে। তপনের পরিবারই অবশ্য সায়ন্তনীকে দেখে পছন্দ করেছে। তপনও সায়ন্তনীকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছে। তপন রেলে চাকরী পেয়েছে। কাজেই সায়ন্তনীদের বাড়ি থেকে আপত্তির কোনো কারণ নেই। কিন্তু সায়ন্তনী তপনকে কিছুতেই বিয়ে করতে চায় না। ছেলেটার স্বভাব চরিত্র নাকি ভালো নয়। ও ওর বন্ধু বান্ধবের থেকেই তপনের সম্পর্কে খোঁজ পেয়েছে। কিন্তু বাড়িতে ওর কথা কেউ গুরুত্ব দেয় না। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বাড়ির লোক বিদায় দিতে পারলেই বাঁচে। সায়ন্তনীর মা অবশ্য মেয়েকে বুঝতে চাইলেও একটা ভয় তাকে সব সময় তাড়া করে বেড়ায়। তাই সে বাড়ির লোকেদের হ্যাঁ তেই হ্যাঁ মেলায়।


সায়ন্তনী ওর মায়ের সাথে প্রায় দশ বছর বছর ধরে মামাবাড়িতেই থাকে। সায়ন্তনীর বাবা নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সায়ন্তনীকে নিয়ে ওর মা বাপেরবাড়ি চলে আসে। সায়ন্তনীর বাবা ওদের জন্য তেমন কিছু করে রেখে যেতে পারনি। তবে শখ করে একটা জমি কিনে রেখেছিল। ভেবেছিল বাড়ি বানাবে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। সায়ন্তনীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওর মায়ের কাছে ঐ জমিটাই সম্বল। ঐটা বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দেবেন ভেবেছেন।


বাপের বাড়িতে ঐ দয়া করে সায়ন্তনীর মা একটু আশ্রয়ই পেয়েছিলেন। ভাই,ভাইয়ের স্ত্রী কিছুতেই সায়ন্তনীর মা আর সায়ন্তনীকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না। সায়ন্তনীর দাদুর ইচ্ছে থাকলেও কিছু করার উপায় ছিল না। বিয়ের পর মেয়ে বাপেরবাড়িতে ফিরে এলে মা-বাবার মনের যা অবস্হা হয় আর কি! না যায় রাখা, না যায় ফেলা।


সায়ন্তনীর দিদা নেই। দিদা চলে যাওয়ার পরই সায়ন্তনীর জন্ম হয়েছিল। তাই সায়ন্তনীর দাদু বলে সায়ন্তনীর রূপে তার গিন্নী ফিরে এসেছেন। ছেলের ঘরে কোনো বাচ্চা নেই। এত বছর হয়ে গেছে। ডাক্তার ,বদ্যি অনেক চেষ্টাই তো করলো। হয়তো আর হবেও না। তাই মেয়ের ঘরের বাচ্চাটাকেই বড্ড ভালোবাসেন তিনি। কিন্তু ছেলে আর ছেলের বৌ তা পছন্দ করেন না। অথচ তাদের ঘরে কোনো সন্তানও নেই। হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে সায়ন্তনী আর ওর মায়ের সাথে।


আজ সায়ন্তনী ঠিক করেছে রঞ্জনের সাথে সিনেমা দেখতে যাবে। যদিও বাড়িতে বলেছে টিউশন যাবে বলে। নাহলে বাড়ির লোক কিছুতেই যেতে দেবে না।

সিনেমা দেখতে যাওয়ার আজ একটা অন্য কারণও আছে সায়ন্তনীর। আসলেই সায়ন্তনী যাবে আজ বন্ধুদের কথার সত্য মিথ্যা যাচাই করতে। তপন নাকি অন্য একটা মেয়ের সাথে আজ মাল্টিপ্লেক্সে যাবে। আর ঐ মেয়েটি নাকি রঞ্জনের এক বান্ধবীর পরিচিত। তাই ও জানতে পেরেছে। সায়ন্তনী ভেবেছে আজ সে হাতে নাতে প্রমাণ নিয়েই ঘরে ঢুকবে। তারপর বাড়ির সকলকে দেখাবে। তাহলে নিশ্চয়ই বাড়ির লোক ওর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করবে না। এই সামান্য কথাটা সায়ন্তনী বাড়িতে বলেও যেতে পারতো, কিন্তু আজ ও রঞ্জনের সাথে যাচ্ছে। রঞ্জনকে যে ওর বাড়ির লোক কিছুতেই পছন্দ করে না। ওর মামা, মামীমা তো আড়ালে রঞ্জনের নামে গালিগালাজ করে। কিন্তু সায়ন্তনী এইসবে কান দেয় না। সায়ন্তনী যে রঞ্জনকেকে খুব ভালোবাসে। না না , এ ভালোবাসা সে ভালোবাসা নয়। এ হল একজন প্রকৃত বন্ধুর জন্য ভালোবাসা। তবে সায়ন্তনীর মনে ওর জন্য যদি সুপ্ত ভালোবাসা থেকেও থাকে তা যে কোনোদিনই পরিণতি পাবে না,তা সায়ন্তনীর অজানা নয়।



রঞ্জন আর সায়ন্তনী অনেকটা দেরী করেই শো তে ঢুকলো যাতে তপনরা যদি সিনেমা দেখতে গিয়েও থাকে তাহলে ওদের চোখে যাতে কোনোভাবেই না পড়ে।


সিনেমা হলে গিয়েই সত্যিটা সামনে এলো সায়ন্তনীর। ইন্টারভেলের সময় সায়ন্তনী দেখলো ওদের ঠিক দুখানা ধাপ ছেড়েই তপন আর ঐ মেয়েটা কর্ণার সিটে বসে আছে। মেয়েটা পারলে তো তপনের কোলে এসে বসে। তপনটাও কেরকম মুখোশধারী, শয়তান!

সায়ন্তনীর খুব রাগ হচ্ছিল। ও তো তখনই সিনেমা হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইছিল, কিন্তু রঞ্জন ওকে আটকায়। রঞ্জন পুরো সিনেমা না দেখে কিছুতেই উঠবে না। সায়ন্তনী তো রঞ্জনকে রাগের চোটে উঠে দাঁড়িয়ে বলেই দিলো-

-----"তুই এখানে এসেছিলি আমায় সত্যিটা দেখাবি বলে, এখন তুই বলছিস সিনেমাটা পুরো না দেখে যাবি না?"

কথাটা শুনেই রঞ্জন আবার সায়ন্তনীর হাতটা জোরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিল। সায়ন্তনী রাগে গজগজ করেই চলেছে। অথচ রঞ্জন টিকিটের দাম উঁশুল করবে পুরো সিনেমা দেখে। যা তা!

সায়ন্তনী ভেবেছিল ইন্টারভেলের সময় আলোর মধ্যে তপন আর ঐ মেয়েটার একটা ছবি নিয়ে নেবে। কিন্তু রঞ্জন বলে ওদের যা অবস্থা। তাই শো শেষ হলে যখন ওরা উঠবে তখন নিয়ে নিতে। সায়ন্তনী তাই রঞ্জনের কথাই মেনে নিয়ে অপেক্ষা করছে।

শো শেষ হবার পর সায়ন্তনী ঠিক সুযোগ বুঝে ঐ তপন আর মেয়েটার একটা ছবি তুলে নিয়েছে। না, না। সেই ছবিটাতে মেয়েটার মুখটা আসেনি। আসলেই এটা রঞ্জনই বারণ করেছে সায়ন্তনীকে। কারণ ঐ মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই। ঐ মেয়েটার জীবনে যেন কোনো দাগ না লাগে। দোষটা তো ঐ তপনের। সায়ন্তনী মনে মনে ভাবে সত্যিই ও ভাগ্য করে রঞ্জনকে পেয়েছে। যে সবার কথা ভাবে। কতজন পায় এরকম মানুষ!

সন্ধ্যে ছটার সিনেমা শো দেখে মাল্টিপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে এসেই মহা বিপদে পড়লো সায়ন্তনী। বাইরে তখন ঝড় বৃষ্টির তান্ডব চলছে। বিদ্যুৎ ঝলকানির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে মেঘের গর্জন। উফফ! কি করবে সে এখন! বাড়ির থেকে টিউশনের নাম করে বেরিয়ে ঢুকে পড়েছে রঞ্জনের সাথে সিনেমা দেখতে। এখন এ এক মহা বিপদ… মোবাইলের কথা মাথায় আসতেই দেখে দশখানা মিসকল…”


-----“রঞ্জন এখন কি হবে, এই বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি যাবো কি করে? ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, বাড়িতে কি বলবো এখন? মোবাইলে দশখানা মিসকল এসেছে!”

সায়ন্তনীর কথা শুনে রঞ্জনেরও খুব ভয় করছে। সায়ন্তনী ফোনের কল হিস্ট্রিটা খুলে দেখে ওর মামা ফোন করেছিল এতবার। কিন্তু ঝড় বৃষ্টিটাও যে এইসময় নামবে কে জানতো। এরই মধ্যে তপনের সাথে সায়ন্তনীদের দেখা হয়ে যায়। তপন সায়ন্তনী আর রঞ্জনদের দেখে কিছু একটা আঁচ করতেই পেরেছিল। আসলেই ব্যাপারটা দাঁড়ালো এখন, যেখানেই বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়। সব দিক দিয়ে আজ সায়ন্তনীদের বিপদ। ঐ মেয়েটাকে একটু দূড়ে দাঁড় করিয়ে এসে তপন তো সায়ন্তনী আর রঞ্জনকে ফিসফিস করে বলল-

------"কিজন্য এসেছিলে তোমরা এখানে? এখন তো একটাই শো চলছিল। আমার পিছু নিয়েছিলে নাকি? তোমার কপাল ভালো যে আমি তোমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম সায়ন্তনী। তুমি এই সঙটার সাথে এখানে কি করছ? শেষমেশ একে আবার পছন্দ হল নাকি তোমার? শোনো একটা কথা বলে রাখি, যদি বেগতিক কিছু বুঝি, খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।"

সায়ন্তনীর রাগে দাঁতগুলো কিড়মিড় করছে। তবুও চুপ করে রয়েছে কারণ রঞ্জন ওর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।

সায়ন্তনী ওর মামাকে ফোন করে বলে সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি যাচ্ছে। ওর মামা অবশ্য ফোনের ঐ পার থেকে অনেক তীক্ষ্ণ ভাষাতেই ভাগ্নীর সাথে কথা বলছে। তবে সায়ন্তনী আর বেশি কথা না বাড়িয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ও ভাবে, যা হবে বাড়ি গিয়ে দেখা যাবে। কোনটা আসল মুখ আর কোনটা মুখোশধারী শয়তান তা আজ প্রমাণ করবেই ও।

এরই মধ্যে দুটো ছেলের কুরুচিকর মন্তব্যে সায়ন্তনীর সম্বিত ফেরে। রঞ্জন ইতি মধ্যেই অটোর খোঁজ করতে এগিয়ে গেছে। সায়ন্তনীর কুর্তিটা পুরো ভিজে গেছে। ছাতা তো নেই তারমধ্যে ভেজা জামাটা আড়াল করার জন্য একটা ওড়নাও নেই। নিজেরই খারাপ লাগছে সায়ন্তনীর। কিন্তু ও নিরুপায়। তপনরাও বৃষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছে টিকিট কাটার ঐ ফাঁকা জায়গাটায়। হঠাৎ করেই দুটো লম্বা করে কালো মত ছেলে এসে সায়ন্তীর পিঠে হাত ঠেকিয়ে চলে যায়। সায়ন্তনী স্পষ্ট অনুভব করে একটা নোংরা অনুভূতি। ও সঙ্গে সঙ্গে ওদের মধ্যে একটা ছেলের কলার ধরে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দেয়। কিন্তু ঐ ছেলেগুলোর কোনো লজ্জা নেই। উল্টে ওরা সায়ন্তনীকে আরো জোরে আঘাত করতে যায়। তখনি রঞ্জন ছুটে এসে ঐ ছেলেদুটোকে আচ্ছামত ধোলাই দেয়। সাথে আরো অনেকে এগিয়ে আসে। এই বৃষ্টিতেও লোকজন বেশ জড়ো হয়ে যায়। তারপর ঐ শয়তান দুটোকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এত কিছুর মধ্যেও তপন একবারও ছুটে আসেনি সায়ন্তনীকে বাঁচাতে। ও দূরে দাঁড়িয়েই মুখ চেপে হাসছিল। তবে ঐ যে রাখে হরি মারে কে! রঞ্জনের মত একজন প্রকৃত বন্ধু যে আছে সায়ন্তনীর সাথে। সায়ন্তনীর ক্ষতি কে করবে!



মোবাইলের লাল আলোর সংকেতটা জানান দিচ্ছে তাতে আর চার্জ নেই। এরই মধ্যে বাড়ি থেকে আরো বারো-তেরোবার ফোন চলে এসেছে। সায়ন্তনী আর এখন ফোন ধরতে চায় না। একেবারে বাড়ি গিয়েই সব কথা হবে। অটোর মধ্যে বসে সায়ন্তনী রঞ্জনের ভোলা মুখটার দিকে অনেক্ষণ তাকিয়েছিল। মনে মনে শুধু ও রঞ্জনের উদ্দশ্যে বলছিল "তুই ভালো থাক্। আমি চাই শুধু তুই ভালো থাক।"


রঞ্জন সায়ন্তনীকে বাড়ির সামনে অবধি ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল। বেশিরভাগ সময়ই সায়ন্তনীর সাথে বেরোলে রঞ্জন এরকমই করে। রঞ্জনও জানে সায়ন্তনীর বাড়ির লোক ওকে পছন্দ করে না। কিন্তু সায়ন্তনী আজ জোর করেই রঞ্জনের হাতটা টেনে ওকে ওর বাড়ির দরজার সামনে এসে দাঁড় করালো।

বেল বাজানোর আগেই সায়ন্তনীর আর রঞ্জনের গলার আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলল সায়ন্তনীর মামা। পেছনে বাড়ির বাকি সদস্যরাও এক মুখ জিজ্ঞাসা চিহ্ণ দিয়ে দাঁড়িয়ে। সায়ন্তনীর বাড়ির লোক রঞ্জনকে সায়ন্তনীর সাথে দেখেই চোটে গেল। তারা তো কোনো কথা না শুনেই রঞ্জনকে যা নয় তাই বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সায়ন্তনীর মামা, সে তো রঞ্জনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে, পারলে তো ওকে ধরে দু ঘা দিয়ে দেয় আর কি! তবে আর বেশিক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি সায়ন্তনী। একটা বিকট চিৎকার করে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে নিজের কথা বলতে শুরু করেছে। তপনের ভালো মানুষের মুখোশটার আড়ালে আসল চেহারাটা প্রমাণসহ বাড়িতে পেশ করেছে ও। আর বলেছে, আজ যে তাদের মেয়ে ফিরে এসেছে তা এই রঞ্জনের জন্য। পারলে তারা ওখানকার কিছু মানুষ মানে ওখানকার দোকানদার বা থানাতে জিজ্ঞেস করতেই পারে।


সায়ন্তনীর কথা ওর মামা মামী গ্রাহ্য না করলেও সায়ন্তনীর মা আজ রঞ্জনকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে তার মেয়ের জীবনটাকে রক্ষা করার জন্য। সায়ন্তনীর দাদুও আজ তার কাঁপা দুটো হাত রঞ্জনের মাথায় রেখে ওকে প্রাণভরে আশির্বাদ করছে। সায়ন্তনীর মামা মামী অবশ্য এইসব দেখে "যত্তসব আদিখ্যেতা" বলে তাদের ঘরে চলে গেল। প্রতিদিনের মত আজও মামা-মামীর এই আচরণে সায়ন্তনীর কিছু এসে যায় না। যাদের জন্য এসে যেত তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে।


হ্যাঁ, রঞ্জনকে সায়ন্তনীদের বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ সহ্য করতে পারতো না। না না, রঞ্জনদের পয়সার কোন অভাব নেই। রঞ্জনের বাবার বিশাল ব্যবসা। রঞ্জন তার বাবার একমাত্র ছেলে। রঞ্জনের বাবা আজকালকার বাজারে পঞ্চাশ জনকে বসিয়ে খাওয়াতে পারে। কিন্তু রঞ্জনের প্রতি তারও খুব রাগ। তিনি শুধু রঞ্জনকে ভুরিভুরি টাকা দিয়েই খালাস। এমনকি ছেলের জন্য আলাদা ফ্ল্যাট কিনে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তার সাথে রঞ্জনকে থাকতে দেয় না। রঞ্জনের মা নেই। হয়তো ওর মা থাকলে রঞ্জনের কষ্টটা বুঝতো।

রঞ্জনের কষ্ট আর কেউ না বুঝুক সায়ন্তনী বোঝে। একাদশ শ্রেনী থেকে ওরা একসাথে পড়াশোনা করছে। স্কুল-কলেজে রঞ্জনের সেরকম কোনো বন্ধু নেই। তবে সায়ন্তনী সব সময় আছে ওর প্রিয় বন্ধু হয়ে।

মেয়েলী হাবভাবের জন্য রঞ্জনের বাবা সারাজীবন ধরে রঞ্জনকে নিয়ে অসম্ভব বিড়ম্বিত হয়েছেন।লোকের কাছে তার নাজেহাল অবস্থা হয়েছে,হেনস্থা হতে হয়েছে,ছেলেকে নিয়ে কটূ কথা শুনতে হয়েছে অনেকের কাছেই। তাই তো তিনি ছেলেকে এই তিন চারবছর ধরে ফ্ল্যাট কিনে আলাদা করে দিয়েছেন। সেখানে অবশ্য পড়াশোনা বাদে রঞ্জনকে সংসারের কোনো কাজই করতে হয় না। কারণ ঝি চাকর সবই আছে। টাকা পয়সার তো অভাব নেই!

রঞ্জন আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মত নয়। ওর বাহ্যিক চেহারাটা পুরুষদের মত হলেও ওর মন, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, আশা-আকাঙ্খা সবই মেয়েদের মত। ও মেয়েদের মত কথা বলতে ভালোবাসে, মেয়েদের মত হাঁটতে ভালোবাসে, মেয়েদের মত সাজতে ভালোবাসে। আত্মীয় স্বজনরাও ওকে ঠিক মেনে নিতে পারে না। পাড়া প্রতিবেশীদের কাছেও ও হাসির পাত্র।

সায়ন্তনীর কাছে রঞ্জন কোনোদিনও আলাদা নয়। রঞ্জনের তো এই বিষয়ে কোনো দোষ নেই। শুধু সায়ন্তনী ভাবে, ঈশ্বর যদি রঞ্জনকে রঞ্জনা করে পাঠাতো তাহলে হয়তো মানুষটার জীবনে এত দুঃখ থাকতো না। যাই হোক, রঞ্জন যেরকম সেরকমভাবেই সায়ন্তনী ওকে ভালোবাসে। সায়ন্তনীর কাছে এইসব কিছু এসে যায় না। কারণ সাম্য যে সবার জন্য আর সংগ্রামী জীবনের উত্তরাধিকার আমরা মানে সায়ন্তনী,রঞ্জনের মত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ,আরো সকলে। সে জীবন যে অবিভাজ্য মানুষের। তাই বলাই যায় সেই চিরন্তন সাম্যের বাণী


"সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।'"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational