Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Banabithi Patra

Drama

3  

Banabithi Patra

Drama

ভোট বাজারে ব্যাঙ বাবাজী

ভোট বাজারে ব্যাঙ বাবাজী

4 mins
1.6K


-সক্কাল সক্কাল বাড়ির সামনে টোটো দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। আমাদের ছেলেমেয়েদের সব লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। টুক করে যাবেন আর আমাদের দাদারটা টিপে দিয়ে চলে আসবেন। বৌদি চটপট সাজুগুজু করে রেডি হয়ে নিন। মাসিমা আপনি ঠিকঠাক দেখতে না পেলে বলবেন, সাথে আমাদের ছেলে ঢুকিয়ে দেব। আপনারটা সেই ঠিকঠাক টিপে দেবে। দাদা সব ব্যাওস্তা করে রেকেচে, ঐ পিজাইডিংও কোন ক্যাঁচাল করার সাহস পাবে না।

সকাল সকালই ভোটটা দিতে যাবে ভেবেছিল দীপ্তি, কিন্তু শেফালী তো এখনও কাজ করতেই এলো না। বাসি ঘরদোর ফেলে কি বেরনো যায়। কর্তাটি তো সেই মর্নিংওয়াকে বেরিয়েছেন, একেবারে ভোট দিয়ে, বাজার সেরে ফিরবেন বলে গেছেন। উঠোনটা ঝাঁট দিতে দিতে কোন রকমে হাসি চেপে ন্যাটা কার্তিকের কথাগুলো শুনছিল দীপ্তি। ন্যাটা কার্তিক এখন স্থানীয় নেতার ডানহাত। সকালবেলা ভোটারদের ভোট কেন্দ্র নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আজ ওদের ওপর। এদের বেশি পাত্তা না দিলেও এদের চটানোও যায়না। দীপ্তি মুখে ভদ্রতার হাসি ফুটিয়ে বলে,

-টোটো লাগবে না ভাই। কাজকর্ম একটু সামলে নিয়ে আমরা নিজেরাই চলে যাব।

-কোন্নো তাড়া নেই বৌদি, নিজেদের রিজাব টোটো মনে করবেন। কাজ সেরে নিন আপনি।

ন্যাটা কার্তিক চলেই যাচ্ছিল, কি ভেবে যেন থামলো আবার।

-শেপালির কাজে আসেনি বুজি!

মুখ তুলে একবার কার্তিককে দেখে দীপ্তি। কার বাড়িতে কে কাজ করে সে খবরও রাখে এরা!

শেফালীর কাজে না আসার রাগটা গিয়ে পড়ে ঐ কার্তিকদের ওপর। মনে মনে বেশ দু-চারটে গালাগাল দেয় কার্তিক আর ওদের দলের লোকদের। এরাই শেফালীর বরের মাথাটা খেয়েছে।


দুটো ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশ সংসার করছিল শেফালীরা। নিজের না হোক, মালিকের ভ্যান চালিয়েও রোজগারপাতি যা হোক তো করছিল। ভোটে জিতলে টোটো কিনে দেওয়ার টোপ দিয়ে ছেলেটাকে সারাদিন নিজেদের ভোটের প্রচারে লাগাচ্ছে। টাকাপয়সার তো ব্যাপার নেই, ফ্রিতে মদ খাওয়াচ্ছে পার্টি।

আর সেই অকালকুষ্মাণ্ডু অজন্তকুমার মাঝরাতে বাড়ি ফিরে বৌকে পেটাচ্ছে। সারারাত মারধোর খেয়ে সকালে কাজে আসতে দেরি করছে, কোনকোন দিন কাজে ডুবও মেরে দিচ্ছে। আর যেদিন স্বামীদেবতা মদ গিলে বাড়ি ফিরছেন না, সেদিন দিনের আলো ফুটতেই শেফালিদেবী যাচ্ছেন বরকে খুঁজতে। কোনদিন রাস্তা থেকে, কোনদিন পুকুরপাড় থেকে তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে বেহুঁশ স্বামীকে। দেড়-দুমাস ধরে চলছে শেফালীর কাজের টালবাহানা। ভোটটা মিটলে বাঁচে দীপ্তি।

শেফালীর বরের অজন্ত নামটা মনে পড়তেই বিরক্তির মধ্যেও হাসি পায় দীপ্তির। টিভিতে অজন্তা হাওয়াই চটির অ্যাড করা মেয়েটার মতো একটা মেয়ে হবে শখ ছিল শেফালীর শাশুড়ির। কিন্তু যখন মেয়ে না হয়ে ছেলে হলো তখন আর কি করে বাধ্য হয়ে নাম রাখলো অজন্ত। নামের আশ্চর্য ব্যাখ্যা! বিজয় বরঞ্চ নামের ভালো ব্যাখ্যা করেছে। অজন্তকুমার কখনও স্থলে থাকে কখনও নেশা করে জলপথের যাত্রী। ওর মা অনেক দূরদর্শী ছিলেন বলে ছেলের এমন নাম রেখেছেন। অজন্ত মানে যে ব্যাঙ সেটা দীপ্তি সেই প্রথম জেনেছিল।

ঘরের কাজকর্ম সেরে, ন্যাটা কার্তিকের টোটো এড়িয়ে ভোটকেন্দ্রের দিকে রওনা হতে বেশ বেলাই হয়ে গেল। ভোট দিয়ে তেনার এখনও ফেরার নাম নেই। মেয়েটাকে যে বাড়িতে রেখে যাবে সে উপায়ও নেই। অগত্যা সাতবছরের ঝিল্লিও মা-ঠাকুরমার সাথে চলেছে ভোটকেন্দ্রের দিকে। চারদিকে নানা পার্টির রঙবেরঙের পতাকা। একটু দূরে দূরে বিভিন্ন পার্টির ক্যাম্প। ঝিল্লি বেশ মেলা মেলা মনে হচ্ছে। মায়ের হাত ধরে লাফিয়ে চলতে চলতে,

মাঝে মাঝেই থেমে যাচ্ছে। দীপ্তি আবার টান মারছে মেয়ের হাত ধরে। এইজন্য মেয়েটাকে বাড়িতে রেখে আসতে চেয়েছিল। বাড়িতে এখনও কত কাজ পড়ে আছে। শেফালী আজ আর বোধহয় কাজে আসবে না। ঝিল্লি

আবার দাঁড়িয়ে পড়ে।


-ওমা ঐ দেখো কারমিট দ্য ফ্রগ।

-উফ্ সারাদিন কার্টুন দেখে দেখে তোর মাথাটা গেছে।

মেয়েকে ধমক দেয় দীপ্তি।

কিন্তু ঝিল্লি অনড়।

-ওমা ঐ দেখো শেফালী পিসি বকছে কারমিটকে।

শেফালীর নাম শুনে থামে দীপ্তি।

-আরে কারমিট জিনিসটা কি?

-উফ্ মা তুমি কারমিট দ্য ফ্রগকেও চেনো না!

মায়ের নির্বুদ্ধিতায় এবার বিরক্ত ঝিল্লি।

ঝিল্লির দৃষ্টিপথ ধরে তাকায় দীপ্তি।

আরে অজন্তকুমারের ও কি দশা। মদ খেয়ে আজ তো পুরো বেসামাল! সবুজ জামায় চিৎপাত হয়ে রাস্তার ধারের চায়ের দোকানের বেঞ্চে শুয়ে আছে। ঝিল্লি তো কিছু ভুল বলেনি। কি ফ্রগ ট্রগ বলছে, খুব একটা ভুল তো বলেনি। আজ তো অজন্তকুমারকে ব্যাঙের মতোই লাগছে। বায়োলজি প্র্যাকটিক্যাল ল্যাবের ডিসেক্টিং ট্রের ব্যাঙগুলোকে মনে পড়ল। ছেলেমেয়েদের শিক্ষালাভের উদ্দ্যেশে যুগে যুগে যেমন নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে, পার্টির জন্য যেন তেমনি অজন্তকুমার যেন নিজেকে উৎসর্গ করেছে।

শেফালী তো লাফালাফি করছে আর পার্টির লোকজনদের উচ্ছন্ন করছে। ওকে এখন কাজে যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করার সাহস নেই দীপ্তির।

-ওমা শেফালী পিসিকে তো আজ মিস পিগির মতো লাগছে।

রাগটা মেয়ের ওপর এসে পড়ে দীপ্তির।

-মিস পিগি আবার কে!

-তুমি মিস পিগিকেও চেনো না!

-আরে বৌদি এসপ খিল্লি শুনতে গিয়ে ওদিকে যে গড়িয়ে যাচ্ছে।

ঝিল্লি কথা শেষের আগেই বলে ওঠে ন্যাটা কার্তিকের দলের দুটো ছেলে বাইক নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ঝিল্লির কথা আর শোনা হয় না। গড়িয়ে যাচ্ছে শুনে দীপ্তির তো ভিরমি খাওয়ার অবস্থা। হাঁ করে ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে বুঝতে পারে বেলা গড়িয়ে যাওয়ার কথা বলছে।

আর দেরি না করে মেয়ের হাত ধরে হাঁটতে যাবে, তখনি আবার পিছুডাক।

বাইকের পিছনে বসা ছেলেটা বলে,

-মনে আছে তো বৌদি? আমাদের দাদারটা টিপবেন কিন্তু।

-ও মা, ওদের দাদার কি টিপতে বলে গেলো গো?

মেয়ের কথার কি উত্তর দেবে বুঝতে পারেনা দীপ্তি। মেয়ের হাত ধরে জোরে টান মারে।

-দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললেই হবে! ফিরে গিয়ে পড়তে বসতে হবে না! কাল ক্লাসে ইংলিশ স্পেলিং টেষ্টের কথাটা মনে আছে তো !




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama