শুভায়ন বসু

Romance Tragedy

3.9  

শুভায়ন বসু

Romance Tragedy

উত্তর

উত্তর

2 mins
12.6K


অমিত আর অদিতির প্রেমটা ছিল দামাল হাওয়ার মত, সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। ওরা ছিল যাকে বলে 'মেড ফর ইচ আদার'। কলকাতার রাস্তায় ওদের প্রেম উড়ে বেড়াত কোন বাঁধন ছাড়াই।

কিন্তু হঠাৎই তাল কাটল, আস্তে আস্তে দুরে সরে যেতে লাগল অদিতি ,আর অমিতের সঙ্গে দেখা করে না বা চিঠির উত্তর দেয় না। অনেক চেষ্টা করেছিল অমিত ওকে ফিরিয়ে আনার, কিন্তু একেবারে ঘরকুনো হয়ে গেল অদিতি। এমনকি বিচ্ছেদের কারণটাও কেউ জানতে পারেনি কোনোদিন ,অমিতও না।

অমিত পাগলের মত চেষ্টা করেছিল অদিতির সঙ্গে একবার দেখা করার। সব কাজ ছেড়ে পড়ে থাকত ,ওর বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়াত, কলেজে গিয়ে দেখা করার চেষ্টা করত। কিন্তু হলো না। বন্ধু-বান্ধবীদের মাধ্যমেও যোগাযোগ করার বা চিঠিও দিয়েছে অমিত। অদিতি হেসে সে চিঠি রেখে দিয়েছে ,কোনো উত্তর দেয় নি।

অমিত হাজার চেষ্টাতেও জানতে পারল না ,কেন চলে গেল অদিতি। কি ভুল ছিল অমিতের।

জীবনতো কখনোই একভাবে থেমে থাকেনা। কয়েক মাসের মধ্যেই শোনা গেল অদিতির বিয়ে ।কোন এক এনঅরআইকে বিয়ে করে স্টেটসে সেটেলড্ হল অদিতি। খবরটা শুনে রাগে-দুঃখে হতবাক হয়ে গেল অমিত ।সে বুঝলো অদিতি তাকে ঠকিয়েছে। তার ভালোবাসার মূল্য সে দেয়নি, পায়ে দলে দিয়েছে তার আবেগ, নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে তার হৃদয়ের সবচেয়ে দামি উপহারটাকে -অমিতের প্রেম ।অমিতের সেই শুরু অদিতিকে ঘৃণা করার।

জীবন যুদ্ধ চলতেই থাকল। অমিত তার নিজের জীবনের দিকে এবার ফিরে তাকাল। দেখল সে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে ।কেরিয়ারের লড়াই লড়তে হবে তাকেও। দাঁতে দাঁত চেপে ,চোখের জল মুছে, সেই লড়াইটাতেই এবার নামল সে।

কুড়ি বছর পরের কথা ।অমিত আজ বড় সহকারী পদে কর্মরত। তার সুখের সংসার, স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে সেও আজ প্রকৃত অর্থেই সফল ভাবে প্রতিষ্ঠিত। থাকে জামশেদপুরে। কলকাতায় আসে মাঝে মাঝে। জীবন যে যার মত এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ একদিন অমিতকে কলকাতা আসতে হয়েছিল কলেজের রিইউনিয়নে। একটা বড় শপিংমলের টপ ফ্লোরে অনুষ্ঠান ।লিফটে করে উঠছিল অমিত ।আর সেই লিফটেই দেখা হয়ে গেল অদিতির সঙ্গে, দীর্ঘ কুড়ি বছর পর। অদিতির সঙ্গে ওর বাচ্চা ছেলেও ছিল। অদিতি যেন আরো সুন্দরী হয়েছে, আরও জেল্লা। অমিতেরও একটু ভারী হয়েছে চেহারাটা, মাথায় হালকা টাক। কিন্তু আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। অবাক বিস্ময়ে অদিতি দেখছিল অমিতকে। ঘোরলাগা চোখ অমিতেরও, কিন্তু মুখে কথা সরছিল না। অদিতি জিজ্ঞেস করেছিল "কেমন আছো? চিনতে পারছো আমাকে?" অমিত উত্তর দেয়নি। নিজের ফ্লোরে নেমে যেতে যেতেও ,অদিতি উত্তরের জন্য পিছন ফিরে তাকিয়েছিল ।অমিত চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিল, মুখে কোন উত্তর নেই। লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল দুজনের দৃষ্টির মাঝখানে।

অমিত মনে মনে বলল, বিদায় অদিতি, একদিন কতশত প্রশ্ন ছিল, একদিন কত চিঠি দিয়েছিলাম ।তোমার উত্তর পাইনি ।হাজার প্রশ্ন, হাজার দুঃখ ,হাজার অভিমানের কোন জবাব সেদিন দাওনি। আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিলে ।আজ তোমার একটা প্রশ্নের উত্তর না হয় নাই পেলে।

কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে কি সারা জীবন লেগে যায়? অমিত জানতে পারল না, অদিতির এক্বেবারে নিজস্ব আলমারিতে, বিয়ের বেনারসি গুলোর ভাঁজেভাঁজে অদিতি আজও, গভীর গোপন কোন অনুভূতিতে, রেখে দিয়েছে অমিতের সব চিঠিগুলো ।উত্তর দেবে বলে। একদিন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance