STORYMIRROR

Punam Jha

Abstract

4  

Punam Jha

Abstract

উমা

উমা

4 mins
280

চৌধুরী বাড়িতে পুজোর প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে । বনেদী বাড়ির পুজো বলে কথা । আর সবে তো ৩০ দিন বাকি পুজোর । সময়ে সব প্রস্তুতি সারতে হবে যে । যোগমায়া দেবী উচ্চস্বরে ডাকলেন উমাকে । "এই উমা কথায় আছিস ? শিগগির আয় । কত কাজ বাকি ।" উমা তাদের ঘরের কাজের মেয়ে । ছোটবেলায় মা বাবা হারানোর পরে, নরেন বাবু নিয়ে আসেন ছোট্ট উমাকে, তাদের বাড়িতে। তখন থেকেই সে এই বাড়িতে কাজ করে। উমা ছুটি এলো যোগমায়া দেবীর কাছে। 

যোগমায়া দেবী - "কিরে এতক্ষন থেকে ডাকছি যে, কোথায় ছিলি ? এসব কাজ কে করবে ? জানিস না, আর কয়েকদিন বাকি পুজোর । কাজ গুলো কর তাড়াতাড়ি ?" 

চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো উমা । যোগমায়া দেবী তাকে দেখে বললেন,"অমন হা করে দাড়িয়ে আছিস কেন ? কাজ গুলো কে করবে শুনি ? শোন তোকে বসে খাওয়াতে পারবো না আমি, যদি কাজ করবি না, তবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা ।"সব শুনে উমা মাটির দিকে তাকিয়ে কাদতে লাগলো । আর কতদিন এভাবে লাঞ্ছনা ও অপমান সহ্য করবে সে। ছোট থেকেই এই বাড়ির সকলের জন্য অনেক কাজ করছে, দিন রাত । কিন্তু তার পরেও এত ভৎসনা কেন ? মা দুর্গা কি তাকে আসব থেকে মুক্তি দেবে না ? নাকি সে সারাটা জীবন মুখ বুঝে নিজের অপমান সহ্য করবে ? 

এসব ভাবতে ভাবত উমা কাজ করতে থাকে । বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, কিন্তু এখনো তার কপালে একটু খাওয়ার জুটলো না। সে যোগমায়া দেবীর ঘরে গিয়ে বললো, "মা একটু খেতে দেবে, সকল থেকে না খেয়েই আছি, খুব খিদে পেয়েছে ।" এ কথা শুনে যোগমায়া দেবী ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন,"এক বেলা না খেলে মরে যাবি না । কাজগুলো সব শেষ কর, তবেই রাতে খাওয়ার পাবি। হত্তচারা মেয়ে একটা, যা বেরিয়ে যা আমার ঘর থেকে !" উমা কাদতে কাদতে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। সে সিদ্ধান্ত নিলো, সে আর এ বাড়িতে থাকবে না। খালি হাতেই বেরিয়ে পড়লো সে। দীর্ঘ বছর কেটে গেলেও, আর কখনো উমাকে দেখা যায় না। 

১০ বছর গড়িয়ে গেছে । আবারো পুজোর আমেজ। যোগমায়া দেবী বসে আছেন তার বিছানার ওপর । বৃদ্ধাশ্রমের এক জীর্ণ ঘরে তার ঠাই । তার ছেলে ও মেয়ে বাইরে থাকায়, বৃদ্ধাশ্রম হয়ে উঠেছে তার একমাত্র সম্বল । যোগমায়া দেবী ক্যান্সার রোগী। ডক্টর জানিয়েছেন, বেশি সময় নেই তার কাছে। তাই এভাবেই কেটে যাচ্ছে তার জীবন। 

হঠাৎ বিষম খেয়ে কাশতে থাকেন যোগমায়া দেবী। টেবিলের ওপর জলের জগটায়ে একটুও জল নেই। উঠে জল নেওয়ার মতো শক্তিও নেই তার। ঠিক তখনই এক ভদ্র মহিলা তাকে এক গ্লাস জল এনে দেন। জলটা খেয়ে যোগমায়া দেবী দু হাত তুলে আশীর্বাদ করেন তাকে । "ভগবান তোমার মঙ্গল করুক মা, দীর্ঘজীবি হও।"মহিলা কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে বললেন," মা চিনতে পেরেছো আমায় ?"এ কথা শুনে, থমকে গেলেন যোগমায়া দেবী।"কে... উমা তুই !?"ছলো ছলো চোখে উমা চেয়ে থাকল যোগমায়া দেবীর দিকে। বলে উঠলো,"এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার মা? তুমি এখানে কেন ? রাণা দা, সুরভী দি কোথায় ?"যোগমায়া দেবী চেয়ে থাকলেন উমার দিকে। তিনি বুঝে উঠতে পারলেন না, যেই মানুষটাকে তিনি সারাজীবন ঘৃণা করে গেলেন, নানান ধরনের কটু কথা শোনালেন, সেই মানুষটি তার দুর্দশা দেখে কি করে এভাবে কাদতে পারে । লজ্জা ও আত্মগ্লানি কমশই যেন গ্রাস করতে থাকে তাকে। নিজেকে আর না সামলাতে পেরে, কেঁদে উঠলেন যোগমায়া দেবী। হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলেন উমার কাছে ।"মা আমায় ক্ষমা করে দে। তোকে আমি কতই না কষ্ট দিয়েছি। মায়ের পুজো করেছি কিন্তু নিজের ঘরের মাকে কষ্ট দিয়েছি। আমি ছেলে মেয়ে আজ আমায় বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রেখে চলে গেছে। ক্যান্সারে ভুগছি আমি। এসব যেন আমার কর্মের শাস্তি পাচ্ছি আমি। মা দুর্গা আমার দুষ্কর্মের শাস্তি দিচ্ছেন । আমায় ক্ষমা করে দে মা, আমায় ক্ষমা করে দে..."এই বলে যোগমায়া দেবী কেঁদে জড়িয়ে ধরলেন উমাকে। উমা কাদতে কাদতে বলে উঠলো,"না মা, আমার কাছে ক্ষমা চেওনা, মা। আমি তো তোমার মেয়ে। মা কি কখনো মেয়ের কাছে ক্ষমা চায় ? সেটা তো সভা দেয় না মা। তুমি ক্ষমা চাইলে মা দুর্গার কাছে ক্ষমা চাও। মা ঠিক তোমার সব কষ্ট দুর করবেন।"এই বলে উমা জড়িয়ে ধরলো যোগমায়া দেবীকে। 

বাইরে, পুজো মণ্ডপে ধাক বেজে উঠলো।"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।..ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।" 

যোগমায়া দেবী, উমার মধ্যে মায়ের মাতৃ রূপ দেখতে পেলেন। এমন এক শান্তি রূপ, যে সমস্ত ক্রোধ, মোহ, লোভের ওপরে। "মা মঙ্গলময়ী, মা তুমি ভালো থেকো।"এই বলে যোগমায়া দেবী উমাকে জড়িয়ে ধরেন।


Rate this content
Log in

More bengali story from Punam Jha

Similar bengali story from Abstract