তোমার বাড়ি আমার বাড়ি
তোমার বাড়ি আমার বাড়ি


আই.টিতে কাজ করতে হলে যে সব সখ , ইচ্ছের বিসর্জন দিতে হয় , একথা মোটেও সত্যি নয় । এই তো অজিতকে দেখুন না অত বড় একটা কর্পোরেটে কাজ করেও " তুর্কী " বলে একটা নামি ব্যান্ড আছে ওর আর ওর পাঁচ বন্ধুর । সৌভিক , শুভ , রুমকি , তাতান আর পলি অজিতের সাথে মিলে এই ব্যান্ড গঠনে সাহায্য করেছিলো । লিড ভোকাল অজিত আর শুভ । লিরিকস লেখে তাতান । গীটারটা নিজেই বাজিয়ে নেয় অজিত । ওদিকে কিবোর্ডে সৌভিক আর শুভ মাঝেমধ্যে ড্রামসে সঙ্গত করে । সব গানে ড্রামস নেয় না । সুর দেয় অজিত নিজে বা পলি । পলি বাঁশিতে সঙ্গত দেয় । কলেজের থার্ড ইয়ারে এই ব্যান্ডের পথচলা শুরু । আজ চারবছর রয়েছে এই অফিসে ।
দিব্যি কেটে যাচ্ছিলো অজিতের । বাকি বন্ধুরা সবাই আই.টিতে নেই । কেউ এম.টেক তো কেউ পি.এস.ইউ । কেবল শুভ আছে আই.টি তে তাও অন্য কোম্পানি , আলাদা অফিস ।
গতবছর ফেব্রুয়ারী মাসে রূপকথা বলে এক মেয়ে একই প্রোজেক্টে জয়েন করে অজিতের সাথে । ফ্রেশারদের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকেই , ও বোঝানো যায় না । অজিতের প্রথম দেখাতেই মনে ধরেছিলো রূপকথাকে ।
" কি রে কেমন লাগছে প্রোজেক্ট ? " পাক্কা একটি মাস পর সরাসরি কথা বলেছিলো অজিত ।
" মোবাইল টেস্টিং গো , বড়ো বোরিং কাজ । " ঠোঁটে হাসি রেখে বললো ।
" এ.পি.আই বলে নিলো যে তোদের ? "
" কি বললো যে কাজ নেই এখন এ.পি.আই য়ে । "
" ও বাবা । তার মানে আমাদেরও আর বেশীদিন নেই এই এ.পি.আই য়ে হুমম ... "
ওই শুরু কথার । তারপর সকাল বিকেল হয় রূপকথা আসতো অজিতের ডেস্কে নয় অজিত যেত । লাঞ্চ থেকে নিয়ে চা নানান কথার দ্বারা একে অপরকে চিনতে লাগলো ।
" তুমি গান করো ? " একদিন উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো রূপকথা ।
" ওই আরকি । "
" তুর্কী ব্যান্ড এর ভীষণ ভক্ত আমার ভাই টোটন । আমি সেদিন " আরও কিছু কথা " গানটা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম অজিত দা । তোমাদের স্টুডিও নিজস্ব ? "
" হ্যাঁ , বাবাই চিৎপুরে একটা খালিঘর কিনে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন । "
" বাহ , দারুণ । "
" তুইও দেখলাম নাচের সঙ্গে যুক্ত ? কবে থেকে শিখিস ? "
" সে স্কুলেই পড়াকালীন । এখন অভ্যাস নেই । আমার নীলাঙ্গনের কোনো অনুষ্ঠান হলে একটু সুযোগ হয় আরকি ! "
" নীলাঙ্গন ? "
" ও তোমাদের বলা হয়নি , আমি একটা এ.জি.ওর সাথে আছি । তারই নাম । ওদের কাছে প্রতি উইকেন্ডেই যাই । "
" বাহ খুব সুন্দর । "
এইভাবে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়লো । ক্রমে অজিত রূপকথার জন্য কিছু গান তৈরী করতে লাগলো । ওফ একটা গান শুনে তো রূপকথা বুঝেই গেছিলো এ তার সাজগোজ নিয়ে লেখা । রূপকথা যে আনন্দে কোথায় না কোথায় শেয়ার করেছিলো কে জানে !
আরেক ফেব্রুয়ারী চলে এলো দেখতে দেখতে । ইতিমধ্যে অজিত অনেকবার অনেকরকমে তার অনুভূতি জানিয়েছে রূপকথাকে কিন্তু পরিষ্কার তিনটি শব্দ এখনও বলেনি । কারণ ওদিক থেকে কিছু সিগন্যাল পেতে প্রবলেম হচ্ছিলো । অন্তরঙ্গতা বাড়ালো অজিত । জানতে পারলো রূপকথার এক অপূর্ণ ইচ্ছের কথা । নীলাঙ্গনের একটি স্থায়ী ঠিকানা তৈরী এখনও করে উঠতে পারেনি ওরা । নানা জায়গায় ঘরভাড়া করে কোনোভাবে চলছে ওদের এন.জি.ও ।
এদিকে রূপকথার নাচের সুবাদে কয়েকজন চলচ্চিত্র জগতের গুণী কীর্তিমানদের সাথে পরিচয় হয়েছিলো । অজিতের গুণ শুধু ইউটিউবে আর মাচার শোয়ে আটকে থাকবে চায়নি রূপকথা । দুজনকেই একে অপরের একেকটা আক্ষেপ ভাবিয়ে তুলেছিলো ।
এলো শেষে এইবছরের ভ্যালেন্টাইনস ডে । এক সপ্তাহ ধরে নানা ডে চললেও অজিত সেবিষয়ে কেমন উদাসীন হয়ে পড়েছিলো । এই কদিন তাকে কীরকম দুঃখী , চিন্তিত দেখাচ্ছিলো । রূপকথা জানতে চাইলেও এড়িয়ে যাচ্ছিলো ।
শেষে ১৪ই ফেব্রুয়ারী ওরা প্ল্যান করলো সিসি টু যাবে । ডেটিং টাইপ । কি যেন সারপ্রাইজ ওরা রেডি করে রেখেছিলো পরস্পরের জন্য ।
" কি রে আজ এতো তাড়াতাড়ি ? " বলে উঠলো সুতপা দি অজিতকে ।
" হ্যাঁ গো একটা জায়গায় যাবো তাই একটু তাড়াতাড়ি বেরোচ্ছি । "
" ওহো রূপকথার সাথে ... যা যা ডেটিং সার্থক হোক । ফটো দিবি । "
প্রাণ খুলে হাসতে গিয়েও পারলো না অজিত । ৫.৩০ হতেই রূপকথা তাড়া লাগালো ।
" চ চ । আসছি গো সুতপা দি , পীযুষ দা । "
সিটি সেন্টারে গিয়ে একটা সুবিধেমতো জায়গা বেছে নিলো ওরা । আজ সবদিকই ভীড়ে ভীড় ।
" বলো এবার তোমার সারপ্রাইজ অজিত দা । "
" সে হবে ক্ষণ , তুই বল । তোরটা বেশী সারপ্রাইজিং হবে । "
" না তার কোনো মানে নেই । আচ্ছা আমি বলছি দেন । এই এই যে ... " একটা খাম বের করলো রূপকথা ব্যাগ থেকে ।
" কী ওটা ? "
" পড়েই দেখো । "
পড়েই লাফিয়ে উঠলো অজিত । " রূপকথা এ তুই কি করেছিস রে ? এ তো এস.ভি.এফের কন্ট্রাক্ট , নেক্সট ফিল্মের জন্য , কিন্তু ... "
" কোনো কিন্তু নয় । তুমি কালই যাবে । এবার বলো তোমারটা । "
" আমারটাও একটা কাগজই । তোর নীলাঙ্গনের নতুন ঠিকানার দলিল । "
কেঁদে ফেললো রূপকথা । ওতে নীলাঙ্গনের প্রধানের নাম লেখা । " এই সারপ্রাইজ যে আমি কোনোদিনও ভুলবো না অজিত দা । আমি তোমায় ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চাই অজিত দা । "
দুজনে একে অপরকে আলিঙ্গন করলো । ভালোবাসা স্বীকার করলো তার দুই অভিযাত্রীকে ।
ঠিক পরদিন রূপকথা ওই দলিল নিয়ে চললো অজিতের বলা ঠিকানায় । সাথে নীলাঙ্গন প্রধান অম্লান । বাড়ির সামনে এসে অবাক । অজিতের ফোনে বহুবার এই জায়গার ছবি দেখেছে । ভিতরে গিয়ে চমকে উঠলো । এ তো অজিতের স্টুডিও । ফটোয় বহুবার দেখেছে ।
" হ্যালো , অজিত , তুমি এ কি করেছো ? এভাবে তুমি নিজের ব্যান্ড শেষ করতে পারো না । তুমি কেন এমন করলে ? বলো বলো বলো । "
" ধুর পাগলী , ব্যান্ড শেষ কেন হবে । এখন আপাতত বন্ধ । তোর মুখে হাসির জন্য যে কী করতে পারি তার কোনো ধারণাই নেই তোর । "
ফোন ধরে আবেগে কাঁদতে লাগলো উভয় মিলে ।