সুন্দরবনের সেই ওয়াচ-টাওয়ার (১)
সুন্দরবনের সেই ওয়াচ-টাওয়ার (১)
সময়টা ১৯৭৯ সাল ককয়েকজন লোক সুন্দরবনে গিয়েছে মধু সংগ্রহ করার জন্য, তারা এই মধু সংগ্রহ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। প্রত্যেক দিনের মত সেই দিনও তারা মধু সংগ্রহ করতে থাকে, হঠাৎই তারা বুঝতে পারে তাদের আশে পাশে কয়েকটি বাঘ ঘোরাঘুরি করছে।
সুমন হাওলাদার : ওরে পালারে বাঘ তো মনে হচ্ছে অনেকগুলো।
আলী আকবর : হ্যাঁ! জীবনে কোনদিন এতগুলো বাঘকে একসাথে দেখিনি।
তারপর তারা কোনরকম ভাবে নৌকায় উঠে পড়ে, বন থেকে বের হওয়ার রাস্তাটা ছোট, যদি তারা সেই রাস্তা দিয়ে যায় তাহলে বাঘের আক্রমণ করতে সুবিধা হবে, তাই তারা উল্টো রাস্তা দিয়ে বনের আরো ভিতরে ঢুকতে থাকে।
১ বছর পর!!!
আকাশ অন্যের খেতে ছোট-খাটো কৃষি কাজ করতো সংসারের খরচ ও তার বাবার ঋণ পরিশোধ করার জন্য, আসলে আকাশের বাবা ও সেই মধু সংগ্রহকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন, তারা গরীব হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় সংসার চালানোর জন্য আকাশের বাবা মানুষের থেকে ঋণ নিতেন। ১৯৭৯ সালে তার বাবা একবার মধু সংগ্রহ করতে যায় কিন্তু তারপর আর কোনদিন ও তার বাবাকে পাওয়া যায়নি। গ্রামের সবাই মনে করে সেই দিন তারা বাঘের খাদ্যে পরিণত হয়েছিল, কারণ কয়েক মাস পরেই "আলী আকবর" নামের একজন লোকের লাশ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নদীতে ভেসে এসেছিল। এর জন্যই সবাই মনে করে তারা সবাই সেখানে বাঘের শিকার হয়েছে।
আকাশ এই ছোট্ট একটি কৃষিকাজ করে কোনভাবেই তাদের সংসার ও তার বাবার ঋণ পরিশোধ করতে পারছিল না। রাতে আকাশ বাসায় গিয়ে তার মাকে বলে,
আকাশ : আম্মা জান আমি আর পারতেছিনা! আমি আব্বার মত সেই মধু সংগ্রহ করার কাজ করতে চাই। তাইলে হয়তো আরও কিছু টাকা কামাইতে পারুম।
আকাশের মা : ভয়ে চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে!
আসলে সেই দিন যেই লোকটির লাশ ভেসে এসেছিল, সবাই মনে করে তাকে বাঘে খেয়েছে। কিন্তু তার শরীরের অবস্থা এতটাই বাজে ছিল যেটা দেখে আকাশের মা মনে করছিলো যে এটা কখনোই বাঘের কাজ হতে পারে না।
আকাশের মা : আমি তোর বাপরে হারাইছি এইবার কি তুই চাস আমি তোরেও হারাই?
আকাশ : আম্মাজান ওইখানে গিয়া যদি আমি বাঘের শিকার হই তাইলেও আমি শান্তি মত মরতে পারুম, কিন্তু এইখানে তো সংসার খরচ আর আব্বাজানের ঋণ পরিশোধ করতেই তো আমি কুইত্যা কুইত্যা মইরা যাইতাছি।
আকাশের মা : (মনে মনে - আসলেই তো আমার পোলাডা কত্তখানি কষ্ট করতাছে) আচ্ছা! কিন্তু বাপ তুই একটু সাবধানে কাজ করিছ!
আকাশ : আচ্ছা আম্মা তুমি চিন্তা কইরোনা, আমি সজিব, রাতুল, নাবিল, অগো লগে যামু।
আমাশের মা : আচ্ছা ঠিক আছে (মনে মনে - আল্লাহ তুমি আমার পোলাডারে হেফাজত কইরো)
এরপরের দিন আকাশ সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, তারা মোট চারজন আকাশ, সজিব, রাতুল, নাবিল, ট্রলারে করে নদী পার হতে থাকে, আজকে আকাশের অবস্থা একটু বে-দিক লাগছিল।
এরপর তারা সেই জায়গায় পৌঁছে যায়, আসলে এই যায়গাটায় ই আকাশ এর বাবা এবং তার সাথিরা এসে নিখোঁজ হয়েছিলেন। কিন্তু আকাশ এবং ওর সাথিরা এই কথাটা জানেনা। তারা তাদের মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করে দেয় কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় ঝড়ের বাতাস। এটা দেখে সবাই একটু ভয় পেয়ে যায় কারণ তারা যেই রাস্তা দিয়ে এসেছে সেটা অনেকক্ষণের রাস্তা (নদী পথ)
রাতুল : ভাই চল জাইগা নাইলে আমগো আজকে এখানেই দাফন হইয়া থাকতে হইবো।
আকাশ : এতটুকুতেই ভয় পায়া গেলি? জীবনে তো মনে হয় না কিছু করতে পারবি।
নাবিল : আকাশ ভাইব্বাচিন্তা কথা কইছ রাতুল কিন্তু খারাপ কয়নাই আমরা কিন্তু এখন জঙ্গলের কোন জায়গায় আছি তা আমরা নিজেরাও জানিনা।
আকাশ : আচ্ছা! বুঝতে পারছি তোরা সব ভীতুর ডিম! চল তাইলে যাইগা।
তারা যখন ট্রলারের কাছে যায় তখন দেখে যে ঝরের কারণে নদীর অবস্থা ও অনেক খারাপ। এইবার আকাশ সবাইকে বলে যে আমরা যদি এভাবে ঘোরাঘুরি করতে থাকি তাহলে ঝড়ের কারণে আমাদের ক্ষতি হতে পারে, বরং আমরা জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে কোন একটা সেফ জায়গা খুঁজি, কারণ! দেখে মনে হচ্ছে না যে এই ঝর কিছুক্ষণের মধ্যে থামবে। সবাই তার কথায় রাজি হয়। তারা একটা সেফ জায়গা খুঁজতে খুঁজতে আবারও সেই মধু সংগ্রহ করার স্থানে চলে আসে, ইতিমধ্যেই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। বাতাসের কারণে নিমিশেই জায়গাটা প্রচুর ঠান্ডা হয়ে গেল, আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, কিন্তু এখনো এক ফোঁটাও বৃষ্টি পড়েনি, যেন বৃষ্টি তাদেরকে কোন একটা জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য সুযোগ দিচ্ছে।
এমন সময় নাবিল চিৎকার করে বলে! দেখ দেখ ওইখানে একটা বাড়ির মত কিছু দেখা যাচ্ছে, সবাই দেখতে পায় ঝোপঝাড় এর মধ্য দিয়ে দূরে একটা টাওয়ার দেখা যাচ্ছে! আকাশ বলে বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে সবাই চল ওই বাড়িতে গিয়ে আস্রয় চাই,
এরপর সবাই তাড়াহুড়া করে গিয়ে সেই টাওয়ার এর সামনে দাঁড়ায়।
সজিব : এতো গহীন জঙ্গলের মধ্যে কারা থাকে?
আকাশ : আমার তো মনে হয় না কেউ থাকে!
(দরজা ধাক্কা দেয় রুবেল)
রুবেল : আরে মনে হচ্ছে এই দরজা তালা মারা!
সাইড এ সবাই দেখতে পায় চাবি ঢোকানোর যায়গা। সবাই তখন নিরাশ হয়ে যায় ও বলে এত কষ্ট করে খোঁচাখুঁজি করার পর একটা বাড়ি পেলাম তাও এটা নাকি তালা মারা। তখন রুবেল একটি গাছ দেখতে পায় যেখানে আগেরকালের বাংলা ভাষায় কিছু লেখা এবং গাছটির মাঝখানে একটি ফুটা, কৌতূহল বসে রুবেল সেই গাছটির কাছে যায় এবং সেই ফুটায় উঁকি দিয়ে দেখে সেখানে অনেক বড় সাইজের একটি চাবি রাখা, চাবিটির গায়ে জং ধরে গেছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি কয়েকশো বছর আগের। সে মনে করে এটিই হয়তো এই টাওয়ারের চাবি, সে ওই চাবিটিকে নিয়ে এসে দরজাটি খোলার চেষ্টা করে কিন্তু দেখা যায় সেটি আসলে এই দরজার চাবি ছিল না। এবং তখনই ভয়ঙ্কর রকমের বৃষ্টিপাত শুরু হয়, আশেপাশের বড় বড় গাছগুলি এর কারনে ভেঙে যাওয়া শুরু করে।
Next Part ~

