Sucharita Das

Romance Classics

4  

Sucharita Das

Romance Classics

সুবর্ণজয়ন্তী

সুবর্ণজয়ন্তী

3 mins
170


চৌধুরী বাড়িতে আজ সকাল থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। আজ যে বিয়ে এবাড়িতে।একান্নবর্তী পরিবারের দুই সবথেকে প্রাক্তন সদস্যের আজ বিয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলো, বলা ভালো সুখে দুঃখে পঞ্চাশ বসন্ত অতিক্রান্ত হল। আর তাই বাড়ির খুদে সদস্যরা দাদুন, ঠামির এই সুন্দর দিনটিকে তাদের নিজেদের মতো করে পালন করে, দুজন বয়স্ক মানুষকে একটা সুন্দর মূহুর্ত উপহার দিতে চাইছে। এঁরা দুজন তো এই চৌধুরী বাড়িকে নিজেদের সবটুকু দিয়ে আগলে রেখেছিল এতদিন। আর তাই এই সুন্দর মূহুর্ত বাড়ির নবীনদের পক্ষ থেকে এই দুই প্রাক্তনকে বিনম্র উপহার।


"দাদুন, ঠামি চলো গায়ে হলুদের সময় হয়ে গেল তো।" রিয়া হাত ধরে দুজনকে নিয়ে নীচে গেল। মৃন্ময়ী দেবীর পরনে সাদার উপর হালকা হলুদের কাজ করা জামদানি শাড়ি। আর মনোতোষ বাবু মানে এই বাড়ির কর্তার পরনে সাদা ধুতি, পাঞ্জাবি। বিয়ের সমস্ত কেনাকাটা নাতি নাতনিরা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই করে রেখেছিল। আইবুড়ো ভাত থেকে ফুলশয্যা ,সবকিছুর নিখুঁত পরিকল্পনা তারা আগেই করে রেখেছে। দু'জনকে বেশ একপ্রস্থ হলুদ মাখিয়ে, ছেলে,বউ নাতি, নাতনিরাও নিজেদের মধ্যে হলুদ মাখিয়ে খেললো। সন্ধ্যেবেলা ঠাকুমাকে সাজালো বড় নাতনি জিনিয়া। বিয়ের জন্য লাল বেনারসীর কোনো বিকল্প হয় না। চেরী রেড কালারের বেনারসী আর গোল্ডেন ব্লাউজ মৃন্ময়ী দেবীর ফর্সা রঙে বেশ মানিয়েছে। বড় ছেলের বিয়ের পর থেকেই মৃন্ময়ী দেবী রঙীন শাড়ি পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। সাদা,ঘিয়ে এইসব রঙেরই শাড়ি পড়তেন। আজ বহুদিন পর নাতি নাতনিদের আবদারে নিজেকে রঙীন শাড়িতে সাজালেন। তার সঙ্গে সাবেকি সোনার গয়নায় বেশ মানিয়েছে ঠামিকে। জিনিয়া ঠামির গাল ধরে আদর করে বললো,"আমার বিউটি কুইন"। মৃন্ময়ী দেবী সেই প্রথম দিনের মতই লজ্জা পেয়ে গেলেন। আর এদিকে দাদুনকে নাতিরা পরিয়েছে সুন্দর কাজ করা গরদের পাঞ্জাবি আর ধুতি। 




দুজনকেই নিয়ে নাতি নাতনিরা নেমে এলো চৌধুরী বাড়ির বিরাট হলঘরে। যাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল দাদু ঠামির বিয়েতে, সব অতিথি অভ্যাগতরাও এসে গেছে। এবার মালাবদল পর্ব। যদিও রজনীগন্ধার ই চল বিয়েতে , কিন্তু নাতি নাতনিরা জানে তাদের ঠামি জুঁই ফুল কতো ভালোবাসে। আর তাই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় ঠামির ভালোবাসার জুঁই ফুলের গোড়ে মালা দিয়েই হবে দাদুন ঠামির মালাবদল পর্ব। একে অপরকে মালা পরিয়ে দিলো দুজনে। প্রচুর ফটোশুট হলো নাতি নাতনিদের।এরপর সবাই একে একে এগিয়ে এসে তাদের ভালোবাসার উপহার তুলে দিলেন এই প্রাক্তন দম্পতির হাতে। চৌধুরী বাড়ির বিরাট বাগানে সুসজ্জিত মন্ডপে রাজকীয় খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল নাতি নাতনিরা। সবাই ভীষণ খুশি আপ্যায়নে। অতিথিরা চলে যাবার পর নাতি নাতনিরা ব্যস্ত হয়ে পড়লো দাদুন ,ঠামির ফুলশয্যা নিয়ে। সে ব্যবস্থাও তারা খুব সুন্দর করে, করে রেখেছিল। জুঁই আর লাল গোলাপের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছিল ফুলশয্যার খাট। দাদুন ,ঠামিকে ফুলশয্যার ঘরে নাতি নাতনিরা পৌঁছে দিয়ে গেল। এবার তাদের ছুটি। অনেক ঠাট্টা, ইয়ার্কি করে অবশেষে তারা যে যার ঘরে গেল। যাবার আগে ঘরের দরজা বন্ধ করতে ভোলেনি কিন্তু তারা। 




 মৃন্ময়ী দেবী বেনারসীটা পাল্টে আলনা অন্য শাড়ি পরবেন বলে হাতে নিলেন। হঠাৎই মনোতোষ বাবু বললেন, "থাক না গিন্নি ,আর একটু পরে থাকো না এই লাল শাড়িটা। আর কোনোদিন দেখতে পাব কিনা তোমাকে এই রূপে। কত বছর পর এই রূপে তোমাকে আবার দেখলাম বলোতো। জীবনের পঞ্চাশটা বসন্ত দুজনে একসাথে কাটিয়ে দিলাম। কতো স্মৃতি, কতো ঘটনা। মনে আছে গিন্নি, দুধে আলতায় পা রাঙিয়ে ফাগুনের রঙীন হাওয়ার স্পর্শ নিয়ে তুমি আমার জীবনে এসেছিলে। আর বিয়ের পর সেই বার কাকিমার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ,তোমার খোঁপায় আমি লাল পলাশ লাগিয়ে দিয়েছিলাম। আর বিয়ের পরে পরে তুমি জুঁই ফুল ভালোবাসতে বলে , অফিস থেকে ফেরবার সময় তোমার জন্য কতো জুঁইয়ের মালা আনতাম আমি। সেই মালা মাথায় লাগিয়ে তুমি যখন আমার কাছে আসতে , কি সুন্দর গন্ধ বেরোতো তোমার শরীর থেকে।" মৃন্ময়ী দেবী এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন। এবার বললেন, "সব মনে আছে গো আমার। তোমার আমার ভালোবাসার সেই সম্পদরাই তো আজ আবার নতুন করে আমাদের উপলব্ধি করালো, যে ভালোবাসা কখনও মরে না, নতুন রূপে, নতুন নতুন উপলব্ধিতে তারা নতুন করে ফিরে আসে। এভাবেই বেঁচে থাকুক ভালোবাসা , তোমার, আমার, সকলের ভালোবাসা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance