STORYMIRROR

SaRangi Films

Horror

4  

SaRangi Films

Horror

স্টেশন কিশানগঞ্জ

স্টেশন কিশানগঞ্জ

7 mins
116

বৃষ্টির সন্ধ্যেতে ঝটপট গাড়ি টা স্ট্যান্ড করে যেইনা বাড়িতে ঢুকলাম, ওমনি গিন্নির বকবকানি শুরু

মালিনী:- আজ এত দেরি হলো যে তোমার, কত বার তোমায় বলেছি বর্ষাতি টা সঙ্গে নিয়ে রাখো, কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমি তো এমনি আর বলিনা। আমার কোনো কথাই শোনো কখনও। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম, মেয়েটাকে তো একটু সময় দিতে পারো।

অভিরুপ:- আহা, অফিসের কাজ শেষ না হলে, আসবো কি করে বলো?

তা আমার মিষ্টি মা কোথায়?

মালিনী:- তোমার অপেক্ষায় ছিল, ঘুমিয়ে পড়েছে।

অভিরুপ:- মালিনীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও এখনো আমার ওপর অভিমান করে রয়েছে, তাই আর দেরি না করে বলেই ফেললাম।

অভিরুপ:- আগামী 5 দিন কি তোমার বিশেষ কিছু কাজ রয়েছে?

মালিনী:- কেনো বলোতো?

  অভিরুপ:- ওই যে সব সময় আমায় বলো না, আমি নাকি তোমাদের সময় দেই না, তাই ভাবলাম আফিস থেকে ছুটি টা নিয়েই নিই। 

আর এই ছুটি তে আমরা যাবো দার্জিলিং।

মালিনী:- ও মা সত্যি তাই?

অভিরুপ:- হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি তাই। এই দেখো পরশু সোমবারের টিকিট করেছি। সন্ধ্যের ট্রেন। হাতে সময় আর একটা দিন মাত্র। সব কিছু গুছিয়ে নিও ঠিক করে।

আর মিলি কে আমরা কাল সকালেই জনাব।

মালিনী:- এত দিন পর আমরা কোথাও যাচ্ছি। মিলি টা খুব খুশি হবে। 

যাই হোক রাতের খাবার শেষ করে আমরা শুয়ে পড়লাম। 

এখন মিলির বয়েস 5 বছর। আমি, আমার স্ত্রী মালিনী ও আমার ছোট্ট মেয়ে মিলি, এই 3 জনের ছোট্টো একটা পরিবার বেশ খুশিতেই জীবন কাটাচ্ছি আমরা কলকাতা শহরে। মিলি কে নিয়ে আমার অনেক চিন্তা হয়, ওকে ঠিক কিভাবে একজন ভালো মানুষ করে তুলবো তাই নিয়ে ভাবতে ভাবতে চোখ বুঝলাম। 

সন্ধ্যে বেলা সঠিক সময়েই আমরা 3 জনে শিয়ালদা স্টেশন এ পৌছালাম। ট্রেন আসতে এখনো মিনিট দশেক সময় রয়েছে। এর মধ্যেই হঠাৎ মিলি বলে উঠলো,

মিলি:- বাবা ও বাবা আমাকে ওই দোকান থেকে একটা চকলেট কিনে দাওনা গো।

(মালিনী মিলি কে বারণ করলো।)

মালিনী:- না মিলি চকলেট নয়, অন্য কিছু নাও, বলেছিনা চকলেট খাওয়া ভালো নয়।

মিলি:- না, আমি ওই চকলেট টাই খাবো বাবা।

অভিরূপ:- আহা এরম বলছ কেনো, আমার ছোট্টো আদরের মেয়ে বলে কথা, চল আমি কিনে দিচ্ছি তোকে।

মালিনী:- তোমরা বাবা মেয়ে মিলে কি আমার একটা কোথাও শুনবেনা ঠিক করেছো?

আভিরূপ:- রাগ করোনা মাত্র 1টা চকলেট ই খাবে ও।

কিছুক্ষণে ট্রেন পৌঁছালো, আমরা যে যার সিট এ বসলাম, ট্রেন বাঁশী বাজিয়েই ছুটতে শুরু করলো। আমাদের স্টপিজ নিউ জলপাইগুরি, যা পৌঁছাবে ভোর 5:30 টা নাগাদ। তার পর ওখান থেকে আবার দার্জিলিং যাওয়ার গাড়ি।  মিলি ও মালিনীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওরা খুব খুশি। তাই আমিও খুশি মনে একটা গল্পের বই পড়তে শুরু করলাম। রাত্রি বেলা ট্রেন এর খাবার শেষ করে মালিনী ও মিলি দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছে, আমার আবার একটা বদ অভ্যাস রাত্রিতে কোথাও ট্রাভেল করলে, আমার আবার ঘুম উবে যায়। কারণ টা ঠিক এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না। অনেক কম বয়েস থেকেই নাকি আমর এই অভ্যেস টা রয়েছে। হ্যাঁ মায়ের থেকেই একবার শুনেছিলাম। তাই তো দূরপাল্লা কোথাও যাওয়ার হলে, সঙ্গে করে কিছু গল্পের বই নিয়ে নিই। গল্পের বই পড়ে অন্তত সময় টা তো ভালই কাটবে। কিন্তু কি আর করা যায়, রাত 10 টার পর যে ট্রেনের আলো গুলোও নিভিয়ে দেওয়া হয়, ঘুম আমার আসে না বলে কি ট্রেনের বাকি যাত্রীরাও ঘুমোবেনা। অগত্যা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোনার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আর আসছিলনা। একবার উঠে বসলাম কিছুক্ষণ, তারপর ওয়াশ রুম এ গিয়ে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিলাম। কিছুক্ষণ ট্রেন এর গেটের পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের রাতের দৃশ্য দেখছিলাম। হঠাৎ ই কেমন যেন চোখে ঘুম জড়িয়ে এলো, ভাবলাম এবার বিশ্রাম নিতে যাবো, হয়তো ঘুম টা এবার ধরেও যেতে পারে। এমন সময় হঠাৎ ই ট্রেন টা দাঁড়িয়ে পড়ল মাঝ রাস্তায়, তখন কটা বাজে, রাত 3:30 টে নাগাদ। আমার কামরায় সবাই তখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। চারিদিকটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন। ট্রেন টা তো স্টেশনে এসেও দাঁড়ায়নি যে, একবার নেমে দেখব। ফোনের আলো টা জেলে যে নিজের জায়গায় যাবো ভাবলাম, এদিকে পকেটে হাত দিতেই মনে হলো ফোন টা তো নিজের সিটে ছেড়ে এসছি। কি করি এবার? চারিদিক টা তো অন্ধকারে ঘিরে ফেলছে আমায়। হঠাৎ একজনের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। ভয় হলো, ট্রেনে ডাকাত পড়লনা তো? হ্যাঁ আস্তে আসতে শব্দ টা খুব স্পষ্ট হয়ে আসছে, ওই অজানা পায়ের শব্দ টা যেন আমার শরীরের সমস্ত অঙ্গ গুলোকে এক অজানা ভয়ে অস্থির করে তুলছে। আমি সামনের দিকে এগোতে গিয়েও এগোতে পারছি না, আমার পা দুটো যেন শিথিল হয়ে আসছে। এমন সময় একটি হাত আমার কাঁধে এসে পড়ল, এবং একটা কিরকম জোড়ালো গলার স্বরে আমায় প্রশ্ন করলো -

কিরে অভিরুপ এখানে দাঁড়িয়ে কেনো? সিট confirm হয়নি বুঝি? 

অভিরুপ:- হ্যাঁ হ্যাঁ confirm হবে না কেনো? আমার পুরো ফ্যামিলির ticket confirm হয়েছে। 

ও তোর আবার ফ্যামিলি ও আছে? বাঃ আমি তো জানতামই না।

অভিরুপ:- আপনার তো জানবার কথাও নয়।

ঠিক আছে চল তোকে সামনে এগিয়ে দি। 

অভিরুপ:- আমার হঠাৎ মনে হলো আমি যেনো আমার ফ্যামিলির কথা টা না বলতে চেয়েও, বলে ফেলেছি। ঠিকই তো, একটা অজানা লোকের সাথে আমি আমার ফ্যামিলির কথা কেনই বা বলতে যাবো? না এবার এর সাথে আমায় একটু ভেবে চিন্তেই কথা বলতে হয় দেখছি। একি এই অন্ধকারে লোকটা দেখতেই বা পাচ্ছে কিভাবে? হঠাৎই লোকটা বলে উঠলো।

শোন এটা হল kishanganj স্টপিজ, মানে ঠিক এটা নয়, এর মাইল খানেকের মধ্যে। এখানে প্রতি দিন ট্রেন দাঁড়ায়, দাঁড়ায় বলা টা ভুল, ট্রেন কে দাড়াতেই হবে। নইলে আমি বা আমার সঙ্গীরা এতে খুব রুষ্ট হবো। তাই ট্রেনকে তো এখানে দাঁড়াতেই হয়। 

অভিরুপ:- আমি মনে মনে ভাবছি, লোকটা পাগল নাকি, কি অবল তাবোল বকছে লোকটা, ওর আর ওর বন্ধুদের জন্যে নাকি ট্রেন কে মাঝ পথে দাঁড়াতে হয়। 

হঠাৎ করে আমার গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠলো, কিন্তু লোকটা আমার নাম জানলো কি ভাবে? 

আমি কথা টা জিজ্ঞেস করার আগেই, দেখলাম আমি আমার সিট এর কাছে এসে পড়েছি, মালিনী ও মিলি লাইট নিয়ে এদিকেই আসছিল, আমাদের দেখে বলল, একি কোথায় ছিলে তুমি? আর ইনি বা কে? 

উত্তরে লোকটি বলল:-  

নমস্কার বৌদিমনি, আমায় চিনবেন না, আমি আপনার স্বামী মানে,অভিরুপ এর বাল্যবন্ধু সন্দীপন। 

অভিরুপ:- সন্দীপন? মানে সে ছোট্টো সন্দীপন, যার সাথে আম কুরোতাম, স্কুল ছুটি করে, গাছের ডালে বসে খেলা করতাম। সেই সন্দীপন? 

সন্দীপন:- হ্যাঁ হ্যাঁ সেই আমি। তা সপরিবারে কোথায় যাওয়া হচ্ছে দার্জিলিং?

অভিরুপ:- হ্যাঁ। কিন্তু কি করে বুঝলি?

সন্দীপন:- আমি সব বুঝি, আর সব জানি, নাতো হটাত করে কি জন্যে তোর সাথে দেখা করতে আসতাম বল।

ফিরে আসার পথে আমার ঠিকানায় যাস, 2 টো দিন আমার বাড়ি হয়েও ফিরে আসিস। 

অভিরুপ:- তা আর হচ্ছে কোথায়, অফিসের থেকে 5 দিনের ছুটি নিয়েই এখানে আসা। বেশ পরে একবার না হয় তোর বাড়ি হয়ে ফিরে আসবো।

সন্দীপন:- বেশ, যা ভালো বুঝিস। এটা তোর মেয়ে বুঝি। বাঃ খুব মিষ্টি মেয়ে তো। কি নাম তোমার।

মিলি:- আমার নাম মিলি। তুমি বাপির বন্ধু বুঝি? 

সন্দীপন হ্যাঁ বলে, আমার মেয়ের গালে একটু আলতো হাত বুলিয়ে দিলো। ওমনি মিলি বললো

মিলি:- কাকু তোমার হাত টা তো বরফের মতো ঠান্ডা কেনো, তুমি কি আইসক্রিম বিক্রি করো? আমায় একটা আইসক্রিম দেবে গো?

মালিনী:- এই মিলি চুপ করো, সবসময় শুধু বাজে জিনিস খাবার অভ্যেস তোমার তাই না।

সন্দীপন:- আচ্ছা ঠিক আছে, এবার আমি আসি তাহলে।

এই বলে সন্দীপন সামনের কামরার দিকে এগিয়ে চলল। আমার মেয়ে বলল

মিলি:- মা, ও মা ওই কাকু টার গলায় ওটা কিসের দাগ গো? 

অভিরুপ:- হ্যাঁ ঠিকই তো, মালিনী যখন লাইট নিয়ে এলো, আমিও খেয়াল করেছি, কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমি দৌড়ে গেলাম সামনের কামরার দিকে, সব যাত্রীরাও ঘুমিয়ে রয়েছে। শুধু কয়েকটি রোগা গোছের লোক হেঁটে চলেছে সামনের দিকে, তাদের সাথে সন্দীপন ও, আমি একবার ডাক দিতেই, ট্রেনের কামরার সব আলো হঠাৎই জলে উঠলো, সন্দীপন ফিরে তাকালো, তখন স্পষ্ট দেখলাম ওর গলায় কাটার দাগ, গলা থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে ওর সারা শরীরে, আর তার সাথে ওই রোগা লোক গুলো, ওগুলো রোগা নয়, রক্ত মাংস বিহীনি শুধু কঙ্কাল দেহ। ওরা আমায় দেখে হাসছে খিল খিল করে। আমি আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে উঠলাম। মালিনীর ডাকা ডাকি তে আমি চোখ খুললাম। একই আমি ঘরেই রয়েছি, নিজের বিছানায়। তবে,,, তবে কি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম?

কিন্তু ছোট বেলাকার বন্ধু সন্দীপন কেই নিয়ে বা কেনো?

যাই হোক রবিবারের সকাল, বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা আর খবরের কাগজ টা নিয়ে বসলাম, 2nd পাতায় একটি দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে। পড়বনা ভাবছিলাম, কিন্তু একটা নাম চোখে পড়ায় খবর টা আমায় পড়তে হলো, নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন লাইন এ Kishanganj এর মাইল খানেক আগে গতকাল রাতে এক ব্যক্তি কাটা হয়ে মারা গেছে। মৃতের নাম সন্দীপন। চা এর কাপ টা আমার হাত থেকে পড়ে গেলো আমি চিৎকার করে উঠলাম। তার পর থেকে আজ এত বছর হয়ে গেছে এই একটা নাম যেন কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছে না, ওই নামটা আমি যেখানেই দেখি, তখন যেনো আমার ওই ভয়াভয় স্বপ্নটার কথাই মনে পড়ে যায়, আমার মাথার শিরা উপশিরায় যেনো রক্তের চাপ বেড়ে যাচ্ছে, যত দিন যাচ্ছে আ,,মি আমি যেনো নিজেকে আর সামলাতে পারছি না, আমি যেনো পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি আজও  বুঝতে পারলাম না ট্রেন টা ঠিক কি কারণে kishanganj স্টপিজ এর আগে দাঁড়ায়?

 না সেবারে আর আমাদের Darjeeling যাওয়া হয়ে ওঠেনি। 

                                  ......................সৈকত ষড়‌‌ঙ্গী 

Contact:- 9382688549

---------------------------------------_____----------------------------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror