সোনালী সাফল্য
সোনালী সাফল্য


"আমি গার্গী, একজন অতি সাধারণ গৃহবধূ। আমি ২০০৭-এর দাবদাহ ক্লান্ত এক খর মধ্যসকালে থমকে দাঁড়ালাম এক ছোট্ট দোকানের সামনে। গরমের ছুটিতে মেয়েকে কোচিং ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে ঐ চড়া রোদ মাথায় করে আর বাড়ী ফিরতে ইচ্ছে হয়নি। বাড়ীতে ফিরলেও আবার আধঘন্টার ব্যবধানে বেরিয়ে পড়তে হবে মেয়েকে নিতে আসার জন্য। তাই থেকেই যেতে চাইছিলাম, ন্যূনতম দূরত্বের একটু ছায়াশীতল আশ্রয়ে। তারই খোঁজে মেয়ের কোচিং স্কুলের আশেপাশের গলিতে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। ঘুরতে ঘুরতেই চোখ আটকেছিলো গলির মধ্যেকার ছোট্ট দোকানটাতে। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায়, হুগলি নদীর পূর্বপাড়ের নিরিবিলি এক ছোট শহরের এক ছোটখাটো গলিতে ততোধিক ছোট্ট একটি দোকান... "সোনালী"।
"সোনালী" এক মহিলা উদ্যোগ। এক মাঝবয়সী ভদ্রমহিলার আত্মসন্তুষ্টির জন্য গড়ে তোলা সামান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ। উদ্যোগী ভদ্রমহিলার স্বামী প্রতিষ্ঠিত ঔষধ ব্যবসায়ী। দুই ছেলেও শিক্ষান্তে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মেয়েরও উচ্চ শিক্ষাশেষে স্কুলের চাকরি ও বিবাহ। নিশ্ছিদ্র পরিপাটি সংসারের এরকম একটা সন্ধিস্থলের সময়ে পৌঁছে হঠাৎই ভদ্রমহিলার মনে হলো, জীবনে নিজের জন্য তো কিছুই করা হলো না। জীবনের উপান্তে প্রায়, কেন এমন মনে হওয়া? নিজের করে নিজের কিছু চাই, তাতে থাকবে এতোকালের অবদমিত ইচ্ছেরা, থাকবে চাওয়া পাওয়া, ভালো মন্দের হিসেবনিকেশ। সুতরাং, চাই ইচ্ছাপূরণের পথ, চাই নিজস্ব উদ্যোগ।
শুরুতেই বেজায় টানাপোড়েন, সর্বত্রই যেমন থাকে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। আলোচনা, সমালোচনা, বিরূপতা, বিরুদ্ধাচারণ সব পেরিয়ে ছোট্ট একফালি ভাড়া নেওয়া ঘরেই তৈরী হোলো "সোনালী লেডিজ টেইলারিং শপ ও বুটিক"। "সোনালী"র মালিক সোনালীদির সাথে আমার পরিচয় সেই এক গ্রীষ্মবেলায় থেমে থাকেনি। সোনালীদি ধীরে ধীরে আমার সংসার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছেন। আমার আর মেয়ের পছন্দ ও প্রয়োজনের সব সামগ্রীর জোগানই গত কয়েকবছর ধরে সোনালীদিই দিয়ে আসছেন। তা সে শাড়ি কেনা হোক, ব্লাউজ বানানো হোক, ডিজাইনার কুর্তি বা সালোয়ার কামিজ মাপমতো সেলাই করে দেওয়া হোক, এবং সর্বোপরি সবরকম পোশাকের সাথে ম্যাচিং অ্যাক্সেসরিজ বা কসমেটিক্সের চাহিদাও সুন্দরভাবে মিটিয়ে দেন সোনালীদি।
ইতিমধ্যে খদ্দের বেড়েছে যেমন, তেমনই তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দোকানের আয়তনও। ছোট্ট একঘরের দোকান এখন গোডাউনসমেত গোটা চারেক পাশাপাশি ঘরের। সোনালীদির নিজস্ব আয়ের পুঁজি থেকে কেনা। বেড়েছে কর্মচারী মেয়েদের সংখ্যাও। এককথায় সোনালীদির দোকান আমাদের ছোট শহরতলির কিছু মেয়ের নিশ্চিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছে। আজকাল আর সোনালীদির পারিবারিক প্রতিকূলতা পোহাতে হয় না নিজস্ব স্বপ্নের ব্যবসাটিকে মসৃণভাবে চালাতে। বরং সময় বিশেষে সহযোগিতাও মেলে। ভারী অমায়িক মানুষ সোনালীদি। কাস্টমারদের পছন্দ অপছন্দ, সমকালীন ফ্যাশন ট্রেন্ড এবং কাস্টমারদের পকেটের দৌড়ের খোঁজ, যথাসর্বস্ব সোনালীদির নখদর্পণে। "সোনালী" দোকানটি অনেক বড়ো হয়েছে গত বারো বছরে, রোজ একটু একটু করে। আগামীদিনে আরো বড়ো হবে, এমনই "সোনালী"র নিয়মিত খদ্দের মহিলাদের শুভকামনা সর্বক্ষণ বলয়ের মতোই ঘিরে আছে সোনালীদিকে। এবং তা অবশ্যই সোনালীদির নিজগুণে।
হয়তো কেউ কখনো ভাবেইনি, যে সোনালীদির মতো নিতান্তই সাদামাটা আটপৌরে এক গৃহবধূ, একদিন এই শহরের চেনামুখ হয়ে উঠবেন মহিলামহলে। সোনালীদির যখন দোকান এতো বড়ো হয়নি, কাজের ফাঁকে ফাঁকে যখন সোনালীদির অবকাশ নেবার সামান্য ফুরসৎ ছিলো, তখনই সোনালীদির মুখেই শুনেছিলাম সোনালীদির গল্প। বাংলাদেশের পাবনা থেকে একসময় এদেশে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর পরিবার, আরো অনেক ভাগ্যতাড়িত মানুষের মতো। তবে হতাশ হয়ে ভেঙে পড়েনি পরিবারটি। শক্ত হাতে করেছে কিছু লড়াই, আর কিছু সঙ্কল্প ছিলো সঙ্গী। তারপর সোনালীদির বিবাহ হয়। সোনালীদির স্বামী নিজের শিক্ষা ও আর্থিক সম্বল বিনিয়োগ করে এই শহরেই গড়ে তুলেছিলেন ঔষধের দোকান। তারপর সে ব্যবসা ক্রমশঃ বড়ো হয়েছে, একসময় হয়েছে ঔষধের ডিস্ট্রিবিউটর। স্বামীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সোনালীদি ঔষধের ব্যবসার পরিচালন ভাগে সক্রিয় অংশও নিয়েছেন একদা। গুছিয়ে সংসার করেছেন, ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন সমসাময়িক গতানুগতিক নিয়ম মেনে। তবুও ছিলো সেই নিজের অন্তরাত্মার ডাক, নিজের জন্য কিছু করা চাই, একেবারে নিজের মতো করে। সে ডাককে মোটেই উপেক্ষা করেননি সোনালীদি, বরং সাড়া দিয়েছেন সর্বশক্তি দিয়ে। ফলশ্রুতিতে সোনালীদির স্বপ্নের "সোনালী লেডিজ টেইলারিং শপ ও বুটিকে"র জন্ম, আর তার বড়ো হয়ে ওঠা, ক্রমশঃ ক্রমাগত।
জানুয়ারি, ২০০৭, সোনালীদির যাত্রাপথের শুরু লেডিজ ফ্যাশনের প্রতি অদম্য ভালোবাসা থেকে।
ঘরে বসে নিজের ছোট্ট ঊষা হাতমেশিন নিয়ে চলতো নিজের আর নিজের মেয়ের পোশাকআশাকে নানান কারিকুরি করে তা পাঁচজনের চোখে নজরকাড়া করে তোলা। নিজের শখকে পুঁজি করে যাত্রা শুরু, অতি সাধারণ এক গৃহবধূর খোলস থেকে বেরিয়ে এসে। কেবলমাত্র স্বামীর ব্যবসায়ে নিজের সময়, শ্রম ও স্বত্বাটুকুকে বিনিয়োগ করেও মিলছিলো না আত্মসন্তুষ্টি। তাও কিনা আবার আমাদের এই শহরের মতো ছোট্ট এক শহরতলিতে বসে। ভেতরে ভেতরে ঝড়। মুক্তি চাই, ছকে বাঁধা জীবনের নিশ্চিন্ত নিরাপত্তার ঘেরাটোপ থেকে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুরু হলো পরিকল্পনা। কিছু পরিচিতি ছিলো চেনা মহলে। সামান্য নিজস্ব আর্থিক পুঁজি আর অকুতোসাহস ও আত্মবিশ্বাস মূলধন করে রূপায়িত হোলো পরিকল্পনামাফিক... "সোনালী"। বাড়তে থাকলো "সোনালী", বাড়তে থাকলো "সোনালী"র পারিবারিক আয়। পনেরোশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট বদলে হলো তিনহাজার স্কোয়ার ফিটের। ছোট বড়ো মেজো সেজো, সব মাপের স্বপ্নেরা পেলো মসৃণ গতি।
সোনালীদির সাথে কথা বললেই বোঝা যায়, ওনার উড়ান শুরু ওনার স্বপ্নকে সাকার করার আগ্রহেই। আসলে এই স্বপ্নটাই আসল, স্বপ্ন দেখতে পারার সাহস আর মনের জোরটাই আসল। এস্বপ্ন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বন্ধ চোখে দেখার স্বপ্ন নয়। এস্বপ্ন খোলা চোখে দেখার স্বপ্ন, নিজেকে জাগিয়ে রাখার স্বপ্ন। আর নিজের স্বপ্নটিকে দশের মাঝে ফেরি করে বেড়ানোর স্বপ্ন। সোনালীদির হাত ধরে প্রত্যক্ষভাবে স্বপ্ন দেখে আরো দশটি মেয়ে-বৌ, তাদের নিজের নিজের পরিবারকে কেন্দ্র করে। পরোক্ষে জড়িয়ে শতেকেরও বেশি মহিলার স্বপ্ন, পায়েপায়ে পথ চলে তারা সোনালীদির স্বপ্নের আকাশগঙ্গায়।
সোনালীদির স্বামী শিশিরদা, যোগ্য স্বামী অর্থাৎ সদর্থক অর্ধাঙ্গ। বর্তমানে স্ত্রীর কাজে প্রচ্ছন্ন উৎসাহ আর শুভকামনা নিয়ে বটের ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে। ছেলেরা, ছেলেদের বৌয়েরা, মেয়ে, জামাই সকলে গর্বিত সোনালীদির জন্য। একজন নিতান্ত গড়পড়তা আটপৌরে বাঙালি গৃহবধূর এই অর্জন কম কিসে? সোনালীদির কাস্টমাররাও নিজেদের স্বপ্নপূরণ করে নিজেদের সাধ ও সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে। সোনালীদি যে তাদের জন্য চালু রেখেছেন ইনস্টলমেন্ট স্কিম, ইচ্ছে মতো জিনিস নাও, তারপর মাসিক কিস্তিতে শোধ করো সে টাকা। আর ক্যাশ পেমেন্ট মানেই অনেক ডিসকাউন্ট, গিফট... টেনে বেঁধে রেখেছে, সোনালীদির গুণমুগ্ধ অগণিত মহিলা কাস্টমারকুলকে।
একটি খুব ছোট্ট প্রতিষ্ঠান, উড়ালের চলা শুরু হয়েছিলো সাদামাটা সামান্য উপকরণে, "সোনালী" নামে। আজ সেই প্রতিষ্ঠান বড়ো হয়েছে, সাবালিকা হয়েছে, নামেও কিঞ্চিৎ পরিবর্তন... "সোনালী লেডিজ ফ্যাশন টেইলারিং শপ ও বুটিক"। এই পরিবর্তন ভালোর, উন্নতির, সমৃদ্ধির। সোনালীদির স্বপ্ন আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে "সোনালী"কে, আরো অনেকদূর পর্যন্ত।
বাষট্টি বছরের তরুণী সোনালীদি অনায়াসে টক্কর দিতে পারেন ছাব্বিশের যুবতীর সাথে। চনমনে, টগবগে, হাসিখুশি, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, সদালাপী, মিশুকে, পরোপকারী... এই সব বিশেষণগুলিই সোনালীদির ক্ষেত্রে খাটে নির্দ্বিধায়। ফ্যাশনদুরস্ত, প্রকৃত গুণী ভদ্রমহিলার সমান আগ্রহ ভালো রান্নায়, ব্যালকনিতে বাগান করায়, গান শোনায় এবং স্বদেশে বিদেশে ভ্রমণে। কখনো ভেঙে না পড়া লড়াকু সোনালীদির সাথে আলাপী কথায় মন ভালো হয়ে যায়। আমরা যারা নিয়মিত সোনালীদির সাথে যুক্ত, তারা জানি সোনালীদি একজন সুন্দর বন্ধুও বটে।
স্বামীর বাইপাস সার্জারির সময়ে যেমন অবিচল স্থিতধী সোনালীদি, সংসার ও দু-দুটো ব্যবসা পরিচালনা করেছেন অসামান্য দক্ষতায়, ঠিক তেমনই ইউরোপ, চীন, নেপাল, ভূটান, সিঙ্গাপুর বা ব্যাঙ্কক, শ্রীলঙ্কা অথবা ভারতবর্ষের আসমুদ্রহিমাচল ঘুরে বেড়িয়েছেন স্বামীকে সঙ্গী করেই, নির্ভীক উৎসাহে। সোনালীদি সস্বামী ষান্মাসিক পক্ষকালের ভ্রমণে সংগ্রহ করতে যান নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে আরো সুষ্ঠুভাবে মেলে ধরার রসদ। সোনালীদির প্রত্যেক ভ্রমণের পরেই আমরা পাই এক সম্পূর্ণ নতুন সোনালীদিকে, আক্ষরিক সার্বিক অর্থেই।
সোনালীদির ও সোনালীদির স্বপ্নের "সোনালী লেডিজ টেইলারিং শপ ও বুটিকে"র জন্য অনেক শুভকামনা। আরো সমৃদ্ধি এবং পরিচিতি হোক "সোনালী লেডিজ ফ্যাশন টেইলারিং শপ ও বুটিকে"র, আমাদের এই ছোট্ট শহরের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে, ডালপালা ছড়িয়ে বিস্তৃত হয়ে পড়ুক সোনালীদির স্বপ্নপূরণের স্বপ্ন।"
******
আমাদের শহরের "মহিলা মহল" সংগঠনের তরফ থেকে আরো কয়েকজন কৃতী সফল মহিলার সাথে সোনালীদির সাফল্যেরও এক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয়েছিলো, একটি সম্মাননা জানিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়ার। আর সেই সম্বর্ধনার স্পিচ হিসেবে গার্গী লিখেছিলো সোনালীদির সম্বন্ধে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই সুন্দর বিবরণীটি। পাঠও গার্গীই করবে অনুষ্ঠানের দিনে। লেখাটা সোনালীদিকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো গার্গী, সোনালীদির কাছে, লেখায় কোথাও কোনো ভুল-ত্রুটি আছে কিনা দেখাতে। খুব খুশি সোনালীদি। ভীষণ পরিতৃপ্ত গার্গীও। দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিনটি এসে গেলো। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে আমাদের শহরেরই টাউন হলে। গণ্যমান্য অতিথি অভ্যাগতে হল ভর্তি। যথেষ্ট বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরে শুরু হোলো "সম্মাননা প্রদান" অনুষ্ঠান। স্পিচ পাঠ করার পরে গার্গী এসে বসলো সোনালীদির পাশে। অনুষ্ঠান চলছে।
******
"আমাদের ছোট্ট শহর পেলো নবরূপে দুই মহিলাকে,
সফল মহিলা ব্যবসায়ী সোনালী সরকার এবং তাঁকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো সফল মহিলা সাংবাদিক গার্গী গুহরায়।" "মহিলা মহল" সংগঠনের সভানেত্রীর এই ঘোষণার সাথে সাথে হল ফেটে পড়লো প্রবল হাততালিতে।
******
দিনকয়েক পরে ভাসুরপোর বিয়ে উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা আছে গার্গীর। ফোন করেছিলো সোনালীদিকে। সোনালীদি বলেন পরেরদিন দুপুর নাগাদ দোকানে আসতে। বিয়ের সিজন বা পুজোর সিজনে সারাদিনই দোকান খোলা থাকে... আর সোনালীদি নিজেও থাকেন দোকানে। পরদিন যথাসময়ে গার্গী ওখানে পৌঁছে হতভম্ব, দোকান বন্ধ, একেবারে সিল করে। দোকানের সামনে বিরাট পুলিশ ফোর্স। গার্গীর একটু সন্দেহ হলো, কোনো দুর্ঘটনা কী? তবে গম্ভীর মুখে দাঁড়ানো পুলিশবাহিনীকে কিছু জিজ্ঞাসা করতেই পারলো না গার্গী। দোকান থেকে কয়েকপা এগোলেইতো সোনালীদির ফ্ল্যাট! পায়ে পায়ে গার্গী সেদিকেই এগোলো। গেট দিয়ে ঢুকে গার্গী দেখে হুলুস্থুল কাণ্ড, ওখানেও অনেক পুলিশ, আর বোধহয় ফ্ল্যাটবাড়ির অন্যান্য লোকেরা, বেশ একটা ছোটখাটো ভিড় জমিয়ে ফেলেছে। উপস্থিত জমায়েতে জনতার চোখে মুখে মেশামেশি কৌতূহল ও বিদ্রূপ। একজনকে নীচুগলায় জিজ্ঞেস করলো গার্গী, "কী ব্যাপার? কী হয়েছে জানেন?" ভদ্রমহিলার মুখচেনা। সোনালীদির দোকানের উল্টোদিকের দোকানটি ঐ ভদ্রমহিলার... স্টেশনারি দোকান। ভদ্রমহিলা ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে বললেন, "আর বলবেন না... কী কাণ্ড... ইনকাম ট্যাক্স রেড পড়েছে। তাছাড়া আরো সব কীকী নাকি বেআইনী ব্যবসাপত্তর আছে সোনালীর ব্যবসার আড়ালে। তার জোরেইতো এমন আঙুল ফুলে কলাগাছ। তাইতো বলি..."! গার্গীর আর শোনার ইচ্ছে ছিলো না, ভদ্রমহিলা তখনও বলে চলেছিলেন অনেককিছু। গার্গী আর দাঁড়ালো না।
বাড়ী ফেরার পথে টোটোয় বসে গার্গী ভাবছিলো, "সব সাফল্যই সোনালী হয় না... কিছু এমন কালিমালিপ্তও হয়!" চরম বাস্তব এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো গার্গীর।