স্মরণীয় মুহূর্ত
স্মরণীয় মুহূর্ত


সকাল ৭টা। ঘুম থেকে উঠে শরীর চর্চায় ব্যস্ত। হঠাৎ কানে এলো, " দাদা! দাদা! বাড়ি আছো?" আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম রতন কাকু এসেছেন। তাকে ভেতরে আসতে বললাম। দেখে মনে হল বড় সমস্যায় আছেন। আমাকে বললেন," বাবাকে একটু ডেকে দেবে?" বাবা তখন সেমিনারের জন্যে কলকাতার বাইরে গেছেন। তাই বললাম," বাবা তো বাইরে গেছেন।" মা কাকুর জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলেন। কাকু মাকে বললেন যে," বৌদি আমার কাজ চলে গেছে। আমার সংসার চালানো খুব মুশকিল হচ্ছে। তার ওপর মেয়ের পড়াশোনা আছে। একটা কাজ ঠিক করে দিলে খুব ভালো হয়।" শুনে মা বললেন," অবশ্যই আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।" রতন কাকুকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি। খুব ভালো মানুষ। আমার নিজের কোনো কাকু নেই। কিন্তু রতন কাকুর মতো কাকুরাই নিজের কাকু হয়ে উঠেছেন। তারাও আমাকে খুব ভালোবাসেন। "বাবু কি করা যায় বলতো? একটা কাজ দেখে দিতেই হবে" - রতন কাকু চলে যাওয়ার পর মা আমাকে বললেন। " তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি দেখছি।" আমার এই কথা শুনে মা বলে উঠলেন," পারবি তুই?" " আমাকে পারতেই হবে মা।" তারপর ভাবতে লাগলাম পরিচিত কাকে বললে রতন কাকু একটি কাজ পেতে পারেন। কয়েকজনকে ফোনে বললাম। অনেকেই বললেন দেখছি। তারপর ফোন করলাম পরিব
ারের পরেই যে মানুষটি আমার সবচেয়ে কাছের সেই সুভাষ জেঠুকে। তারপর জেঠুর সাথে দেখা করে বললাম রতন কাকুর পারিবারিক পরিস্থিতির কথা। তিনি খুব দয়ালু মানুষ। শুনেই কয়েকজনকে ফোন করলেন। উনি পরের দিন আমাদের বাড়িতে এসে রতন কাকুর সাথে কথা বলবেন বলে আমাকে বললেন। মনটা অশান্ত রয়ে গেল। যতক্ষণ না রতন কাকুর কিছু একটা কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ততক্ষণ মনটা শান্ত হলো না। পরের দিন সকালে রতন কাকুর আসার আগেই সুভাষ জেঠু এসে আমাদের বাড়িতে হাজির। তারপর রতন কাকু এলে কথা হলো দুজনের মধ্যে। দুদিন বাদে হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠল। সুভাষ জেঠুর ফোন দেখে খুব তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরলাম। ফোনের ওপার থেকে সুভাষ জেঠু বলে উঠলেন," তোর মনকে শান্ত কর। তোর রতন কাকুর কাজের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।" তখন সাথে সাথে মাকে ডাকলাম, " মা! মা! তাড়াতাড়ি এসো রতন কাকুর কাজের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।" মা শুনে খুব আনন্দিত হলেন। আমার মনও শান্ত হলো। রতন কাকুর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি হেঁটে আধঘন্টা। রীতিমতো দৌড়াতে দৌড়াতে ওনার বাড়িতে গিয়ে এই সুখবরটা দিতেই ওনাদের মধ্যে যে আনন্দ দেখলাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এই মুহূর্তটি ছিল আমার এই ঊনিশ বছরের জীবনের অন্যতম একটি স্মরণীয় মুহূর্ত।