ABHISEK DUTTA

Tragedy Crime Inspirational

3  

ABHISEK DUTTA

Tragedy Crime Inspirational

সম্পর্ক

সম্পর্ক

3 mins
381



দীপ্তির বয়স সবে তেইশ আর বরুণ পঞ্চাশ পেরিয়েছে। কোনদিনই ওদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। বরুণ বরাবরই জেদি আর একগুঁয়ে - তাই প্রথম থেকেই চেয়েছিল দীপ্তি শুধু তার ইচ্ছেমতোই চলবে।দীপ্তি চেষ্টা করত যতটা সম্ভব মানিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু বরুণ উত্তরোত্তর অসহ্য হয়ে ওঠায় তার পক্ষেও আর মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।অশান্তির মাত্রা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে অবশেষে তাদের ঘরের চার দেওয়াল ছাড়িয়ে ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দাদের আলোচনার বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল।বরুণের কাছে মেয়েদের চাকরী করাটা উচ্ছন্নে যাওয়ার সমান - তাই বছর দুয়েক আগে দীপ্তির পয়ন্টমেন্ট লেটার এসেছে জানতে পেরে তার গালে সপাটে চড় কষিয়ে দিয়েছিল। দীপ্তি সেদিন বিশেষ কিছু বলেনি – শুধু দাঁতে দাঁত চেপে স্থিরকণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিল চাকরী সে করবেই, তাকে বাধা দিয়ে কোন লাভ হবে না।তারপর বাথরুমে গিয়ে ঘাড়ে মুখে ভাল করে জল দিতে দিতে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিল।এমন সময়ে আয়নায় নিজের মুখটা দেখতে পেয়ে হঠাৎই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিল।গালে পাঁচ আঙুলের দাগ কালশিটের মত বসে গেছে।সবাই বলে দীপ্তির মুখটা নাকি একেবারে তার মায়ের মত। ছোটবেলায় মায়ের গালেও কতবার এরকম দাগ সে দেখেছে। অথচ কিছু জানতে চাইলেই দীপ্তিকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলত, ও কিচ্ছু নয় রে মা, কড়া থেকে তেল ছিটকে এসেছে। শুধু একদিন, দীপ্তি যখন একটু একটু বুঝতে শিখেছে, বলে ফেলেছিল, তোমার খুব লাগে, না মা!

সেদিন ওর মা নিজেকে আর সামলাতে পারে নি, দীপ্তিকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছিল।

আজ নিজের গালে অবিকল সেইরকম দাগ দেখতে পেয়ে মার্ কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল দীপ্তির !

অথচ সেদিন রাত্রিবেলাই বরুণের মারাত্মক জ্বর এসেছিল - ফোন করে ডাক্তার ডাকা, ওষুধ কিনে আনা, সারারাত ধরে মাথায় জলপট্টি দেওয়া, বারেবারে খাবার আর জল খাওয়ান, ঘড়ি ধরে ওষুধ দেওয়া এসব করে কদিনের মধ্যেই চাঙ্গা করে তুলেছিল তাকে।

এসব নিয়ে বরুণ কোনদিনই বিশেষ ভাবে না। দীপ্তিও সেসব ঘটনা মনে রাখেনি। ছোটবেলা থেকেই মাকে এরকমভাবে করে যেতে দেখেছে সে - তাই কর্তব্য পালন করতে কখনোই পিছিয়ে আসে না।

মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে থেকেই মার্ শরীরটা বিশেষ ভাল যাচ্ছিল না। কিন্তু দীপ্তির পরীক্ষা বলে মুখে কিচ্ছু প্রকাশ করেনি - পরীক্ষা শেষ হতে সেই যে বিছানা নিল আর কোনদিন উঠল না। মাধ্যমিকে চোখ ধাঁধান রেজাল্ট করার পর দীপ্তির মাথায় অনেকক্ষণ হাত বুলিয়ে দেবার পর বালিশের তলা থেকে বের করে ওর হাতে তুলে দিয়েছিল একটা পেলিক্যান ফাউন্টেন পেন - নিজের ছাত্রীজীবনের স্মৃতি। তারপর আস্তে আস্তে বলেছিল, আমাকে কথা দে, যাই ঘটুক না কেন পড়াশোনাটা কখনো ছাড়বি না!

বেচারা দীপ্তি!এ ইঙ্গিত বোঝার মত বয়স তার হয় নি। তাই মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, কি যে বল না মা! পড়াশোনা ছাড়তে যাবো কেন!

মেয়েকে শক্ত করে ধরে নিশ্চিন্তে নিঃশ্বাস ফেলেছিল মা! 

তার ছমাস বাদে মার্ শরীরটা যখন শ্মশানের চুল্লির ভেতর ঢুকে যাচ্ছিল তখন সে আগুনের লাল আভা দীপ্তির ভেতরে পুরোন সব কিছু চিরতরে পুড়িয়ে খাক করে দিয়ে শুধু মায়ের স্মৃতিটুকুই চিরতরে খোদাই করে দিয়েছিল।

তারপর থেকেই নিজের মত করেই বেড়ে উঠেছে সে। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য নির্লিপ্ত ভাবে লক্ষ্যে অবিচল থেকে একটু একটু করে জীবনকে গড়ে তুলেছে। গ্র্যাজুয়েশনের সাথে সাথেই একটা ম্যানেজমেন্ট কোর্স কমপ্লিট করে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ দিয়ে এই চাকরীটা পেয়েছিল। তারপর থেকে কাজের মধ্যেই মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিল - বরুণের ক্রমাগত অশান্তি, গায়ে হাত তোলা, চরিত্র নিয়ে প্রথমে তির্যক তারপর সরাসরি আক্রমণ - এসব কোন কিছুই সে গায়ে মাখত না।

কিন্তু আজ বরুণ যখন তার চরিত্র নিয়ে বলতে গিয়ে শালীনতার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে মাকেও ছাড়ল না তখন দীপ্তি আহত বাঘিনীর মত ফুঁসে উঠল। সে মূর্তি দেখে বরুণও হকচকিয়ে উঠে চুপ করে গেল। ততক্ষনে নিজের কর্তব্য ঠিক করে ফেলেছে দীপ্তি - তার পক্ষে আর এখানে থাকা সম্ভব নয়। জামাকাপড় পাল্টে নিজের জিনিসপত্রগুলো চটপট ট্র্যাভেল ব্যাগটাতে গুছিয়ে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে এল। আপাতত এক বান্ধবীর বাড়ী, তারপর কোন ওয়ার্কিং ওমেন্স হোস্টেল।

রাস্তায় নামার পর দীপ্তির মনে হল তার ভেতটা যেন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।  

মাকে আগেই হারিয়েছে, আজ বাবার সঙ্গেও সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। 

আজ থেকে এই বিরাট পৃথিবীতে সে সম্পূর্ণ একা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy