স্কুল জীবন
স্কুল জীবন
প্রিয় বন্ধুটি আজ হয়তো তার পুরনো বন্ধুদের জন্য কাঁদছে। সে তার পুরনো বন্ধুদের আর দেখতে পায় না। সে আকুল হয়ে আমাকে ডাকে, আমার মন চায় তার কাছে ছুট্টে যেতে। কিন্তু তার কাছে যাওয়ার কোন উপায় নেই। কারণ, আমি এক বছর হলো স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছি। তাই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ক্লাস রুমের কাছে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। যখন আমি আমার স্কুলের সামনে দিয়ে যাই তখন আমার ক্লাস রুমের জানালার দিকে তাকালে ক্লাসরুমের পূর্বস্মৃতি মানসপটে উদয় হয়। যখন স্কুলে গিয়ে প্রথম বেঞ্চে আমার জায়গা রাখত রতন, তখন আমার মন আনন্দে ভরে যেত। আমার সেই আনন্দে আনন্দিত হয়ে উঠত ক্লাসরুম। আমরা বন্ধুরা মিলে টিফিন টাইমে দেশাত্মবোধক গান গাইতাম, ঠিক তখন ক্লাস রুমের বেঞ্চগুলো আমাদের বাদ্যযন্ত্র হয়ে উঠত। কোনো বন্ধুর কাছে ক্লাসরুমে দেওয়ালই হয়ে উঠত তার ছবির ক্যানভাস। কিন্তু ক্লাসরুম তাতেও কোনো রাগ করেনি। এই ক্লাসরুমের দেওয়ালই হয়ে উঠত কতো সম্পর্ক তৈরির মাধ্যম। একদিন তো রাতুল ক্লাস রুমের দেওয়ালে তার মনের মানুষের উদ্দেশ্যে প্রেমপত্রই লিখে ফেলল। শিক্ষক-শিক্ষিকারা এসে কোন ছাত্র-ছাত্রী পড়া না পারলে যখন শাস্তি দিতেন তখন ক্লাস রুমের বুকের ভিতরে খুব কষ্ট হতো। কারণ, আমরাই ছিলাম তার ভালোবাসার মানুষজন। সারাটা স্কুলজীবন আমাদের কত আবদার মিটিয়েছে এই ক্লাসরুম। কিন্তু যেদিন উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোলো সেদিনে প্রত্যেকের আনন্দের মাঝে একটা বিষাদের বাতাবরণ বিরাজ করছিল। সবার মধ্যে একটাই কষ্ট হচ্ছিল, আমাদের প্রাণের থেকে প্রিয় এই ক্লাসরুমকে ছেড়ে যেতে হবে বলে। ক্লাসরুম যেন চিৎকার করে আমাদের বলছিল, " তোরা আমাকে ছেড়ে যাস না। আমি থাকবো কি করে তোদের ছাড়া?
কিন্তু জীবনপ্রবাহ চলমান তাকে ছেড়ে আসতে হলো আমাদের। কিন্তু আজও ক্লাসরুম আমাদের হৃদয়ে রয়ে গেছে। ভালো থেকো ক্লাসরুম।
