সিংহাসন ও একটি স্বপ্ন
সিংহাসন ও একটি স্বপ্ন


পূর্ণিমার চাঁদ ঝলমল করে উঠেছে আকাশে। মৃদু মন্দ বাতাস বইছে আগ্রার দুর্গে । সিংহাসনে বসা ইস্তক মুমতাজের শারীরিক অবস্থা তেমন নয়। যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহ বাগী সম্রাট শাহজাহানের। এরমধ্যে জুজার সিংহের বিদ্রোহ রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সম্রাটের। দু দিন পরেই বুন্দেলা যেতে হবেই। এই বিদ্রোহ কে দফন না করা পর্যন্ত শান্তি নেই, মসনদে বসে। এই সব ভালোমন্দ বিচার করতে করতেই কখন যেন চোখ লেগে এসেছে সম্রাটের।
পারস্য থেকে ছুটে আসছে সৈন্য সামন্ত নিয়ে ভাতিজা দাওয়ার বক্স। বড় একটা যুদ্ধ হতে চলেছে শাহজাদা খুররমের সাথে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে মুখোমুখি দুই রণবীর। হালকা করে দাওয়ার বক্স প্রশ্ন ছুঁড়লেন শাহজাদার উদ্দ্যেশে ঃ "সুরা ছাড়া ঘুম আসে চোখে তোমার? নিজেকে বিশ্বাস করতে পারো চাচাজান ? "শাহজাহান এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই গর্জে উঠল শাহ জাহানের কামানের গোলা। পিছন থেকে শাহাজাদা পারভারেজ অস্ফুট স্বরে বললেন চাচাজান আজ ঘোড় সওয়াড় করবো দুজনে, যাবেন না আমাকে নিয়ে ? আজ পরীক্ষা হোক কে ভালো ঘোড় সওয়াড় ?
হিন্দুস্থান সম্রাটের মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। যেদিন শাহাজাদা পারভারেজ প্রথম হাঁটতে শিখেছিলেন তার আঙ্গুলে আঙ্গুল দিয়ে। দুজনে এক সাথে ঘোড়ায় চড়া শিখেছিলেন। কোথায় গেল সে সব দিন। ছোট ভাই শাহরিয়রের কান্না শোনা যায়। ফিরে তাকান সম্রাট। এ কি! অন্ধকার কালো গর্ত দুটোতে ভরা নেই উজ্জ্বল নীল বর্ণের দুটো তাজা চোখ । কী বীভৎস নরকীয় এ দৃশ্য।
অন্ধকারে তার ভয় ছিল চিরকাল। তাই কি তখত দখলের লড়াই এ হারাতে হলো তার অমূল্য সেই চোখ, যাতে আলোর বর্ণ দেখাতেই ব্যস্ত থাকতেন শাহরিয়র। সকলে আঙ্গুল তুলে দাঁড়িয়ে আছে সম্রাটের ময়ুর সিংহাসনের দিকে। বলতে চাইছে যেন তুমি একা একা একা সম্রাট!
ঘুম ভাঙে সম্রাটের গোঙানির শব্দে। আমি আমি আমি!