সহযোদ্ধা
সহযোদ্ধা
অফিস থেকে ফিরতেই সৃজিত কে জড়িয়ে ধরলো বহ্নি ।
--- আরে করছো টা কি? সারা গায়ে আমার ঘামে ভর্তি , আগে ফ্রেশ হয়ে আসি ।
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বহ্নি বললো,
--- ছাড়বো না, তোমার গায়ের এই ঘামের গন্ধ টা আমার ভালো লাগে ।।
--- পাগলী মেয়ে একটা, ঘামের গন্ধ আবার কারো ভালো লাগে নাকি ?
--- লাগে তো, আমার লাগে । তোমার এই ঘামে চ্যাট চ্যাটে শরীরটা র মধ্যে একটা তুমি তুমি ব্যাপার আছে, যেটা আমার খুব আপন, খুব কাছের । স্নান সেরে নিলে তো সেটা চলেই যাবে ।
--- সত্যি তুমি আমার পাগলী বউ।
--- সৃজিত , আমি এই আসল তুমি টাকে ভালোবাসি । তোমার মনে পড়ে , মর্নিং কলেজের শেষে , তুমি পাবলিশিং হাউস কাজ করে সন্ধ্যে বেলায় আমার সাথে দেখা করতে আসতে । তোমার শরীরে আধ ময়লা ঘামে ভেজা জমা , ক্লান্ত মুখে একটা উজ্জ্বল হাসি নিয়ে আমার সামনে দাঁড়াতে । আমরা মৃণাল কাকুর দোকান থেকে চা আর প্রজাপতি বিস্কুট খেতাম ।
--- হ্যাঁ মনে আবার পরবে না । খুব মনে পরে ।
সারাদিনের হাড় ভাঙা খাটুনির পর তোমাকে দেখেই তো আবার নতুন করে বেঁচে উঠতাম । কথা টা শুনে ঠোঁটের কোণে একটা উজ্জ্বল হাসি খেলে গেলো বহ্নি র ।
সৃজিতের বুকে মাথা রেখে বহ্নি বললো,
--- আর তোমার এই গায়ের গন্ধ টা আমাকে বার বার বুঝিয়ে দিতো এই ছেলে টা র জন্য আমাকে বাঁচতে হবে । যে প্রতিদিন একটু একটু করে নিজে কে নিংড়ে দিচ্ছে , আমাদের স্বপ্ন টাকে সত্যি করার জন্য ।
টেবিলের উপর হাতের ব্যাগ টা রেখে , সোফায় বসে সৃজিত বললো,
--- হঠাৎ করেই বাবা চলে গেলো । মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙে পরেছিল । পুরো সংসারের দায়িত্ব। মায়ের অসুখ , নিজের পড়াশুনা কি ভাবে সামলেছি জানি না । আমি হয়তো পাগল হয়ে যেতাম যদি তুমি আমার পাশে না থাকতে ।
--- কেনো থাকবো না শুনি !! যে ছেলেটা সংসারের সব দায়িত্ব পালন করে, রোজ দিন আমার জন্য এক কাপ চা আর একটা লাল গোলাপ বরাদ্দ রাখতো । তাঁর পাশে না থেকে কোথায় বা যেতাম বলো?
--- কিন্তু সব প্রেমিকার সখ থাকে, সে দামী রেস্টুরেন্টে যাবে, মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখবে, দামী গিফট্ পাবে, কিন্তু আমি তখন তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি । তোমার কাছে তো সেই সব কিছু পাওয়ার সুযোগও ছিলো। তবে তুমি স্যাক্রিফাইস করেছো শুধু আমার জন্য । ওত বড় বাড়ির মেয়ে তুমি । চাইলে ডাক্তার ইঞ্জনিয়ারদের লাইন পড়ে যেতো।
--- পাগল নাকি, তখন যদি কোনো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কে বিয়ে করতাম, তবে আজ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের বউ হতে পারতাম বুঝি ?
--- বহ্নি তোমার নাম টা ঠিক তোমার মতো করেই সার্থক । তোমার জেদের আগুনে পুড়ে ই আমি সফলতা পেয়েছি। তুমি না থাকলে , আমি কোনদিনই এই সফলতা অর্জন করতে পারতাম না ।
--- তোমার মধ্যে স্বপ্ন ছিলো । আমি শুধু তোমার মনে সব প্রতিকূলতা কে পার করে এগিয়ে যাওয়ার জেদ টাকে উস্কে দিয়েছি পাশে থেকে । ব্যাস আর কিছু না।
--- আর তাই আমার উপর আশা সব ঝড়ের আঁচ তুমিও ভাগ করে নিয়েছো ।
এই তোমার মনে পরে বাড়িতে ঝগরা করে তুমি , ঘোষ পাড়ায় চারটে টিউশন নিয়েছিলে। কলেজ সেরে বাড়ি ফিরে কোনো রকমে নাকে মুখে কিছু দিয়ে পড়াতে যেতে । আর ফিরতে রাত ৯ টায়। কত কিছুই না সহ্য করেছো আমার জন্য ।
আর প্রথম মাইনে পেয়ে নিজের জন্য কিছু না কিনে, আমার জন্যই আর. এস . অগ্রাওয়ালের জিকে বই কিনে আনলে । যেটা আমি সংসারের খরচ বাঁচিয়ে কিনতেই পারছিলাম না ।
কথা টা বলতে গিয়ে সৃজিতের চোখ টা জলে ভরে গেলো ।
বহ্নি ওর পাশে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
--- সকলের কাছে একটা প্রমাণ দেওয়ার ছিলো আমার সৃজিত কোনো সস্তার রোমিও নয় । ও একটা হীরে ।
বাপি তো বলেই দিলো," ওর সাথে সম্পর্ক রাখলে তোমার মুখ আমি দেখবো না । "
আমার হাত খরচ অবধি বন্ধ করে দিয়েছিলো । তবে কুণাল সেন জানতো না আমি তারই মেয়ে জেদ টাও তারই মতোই ।
আর আজ দেখো , যে সৃজিতের মুখ দেখতে চাইতো না। সেই এখন ওদের সকলের চোখের মণি ।
--- সব টাই তোমার জন্যই বহ্নি।।
--- না আমাদের জন্য। আমি আর তুমি আলাদা বুঝি ? আমরা কি শুধুই সহযাত্রী?
বহ্নিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে সৃজিত বললো,
--- আমরা সহযোদ্ধা ।।