SUBHAM MONDAL

Inspirational Others

3  

SUBHAM MONDAL

Inspirational Others

শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা

শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা

4 mins
206


কৌতূহলী সুপ্ত জিজ্ঞাসাই শিক্ষার দ্বারোদঘাটনের প্রকৃত উপায়। অনুসন্ধিৎসু মনোভাবই মানুষের শিক্ষাকে চালিত করে।


শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা প্রদান করতে হলে কোন স্থান, কাল পাত্র-পাত্রী ভেদাভেদকে উপেক্ষা করে তাকে জয় করতে হবে।


বহুমুখী কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে প্রবৃত্তিগত প্রতিভার বিকাশ ঘটানােই প্রকৃত শিক্ষার স্বরূপ। তাকে চাপিয়ে দিলে তা প্রকাশিত হতে পারে মাত্র, কিন্তু তা পরিপূর্ণ বিকশিত হয় না। পুঁথিগত বিদ্যার বাস্তবিক প্রয়োগই হল শিক্ষার প্রকৃত প্রকাশ।


শিক্ষা হল এমন একটি বিষয়, মাধ্যম বা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোনও শিক্ষার্থী প্রকৃত অর্থে বিনয়ের মধ্যে দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে, মূল্যবােধের চেতনাকে জাগ্রত করে যথার্থ মানুষ হিসাবে সমাজে পরিগণিত হতে পারে। শিক্ষা কোনও বয়স, কোনও ধর্ম, কোনও বিষয়, কোনও ব্যক্তি, কোনও সময়, কোনও জাতি, কোনও স্থান মানে না। শুধুমাত্র আগ্রহ, কৌতুহল বা জিজ্ঞাসু মনােভাব থাকলেই শিক্ষালাভ করা যেতে পারে। এই বিশ্বে জানার বা শেখার কোনও শেষ বা সীমা নেই। তাই কৌতুহলী উদ্রেককে সযত্ন বিকশিত করার মাধ্যমে শিক্ষা প্রসারিত হয়। বিভিন্ন কালভেদে, বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন মতবাদ প্রকাশ করেছেন। যা যথার্থ বলেই বিবেচিত। আবার কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে সেগুলিকে পরিমার্জিত ও উপযুক্ত করে নিতে পারলেই তা যুগােপযোগী বলে গণ্য হবে। তাই পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলাই একপ্রকার শিক্ষা। শিক্ষা তার কৌলিন্য, জৌলুস, মহত্ত, আদর্শ থেকে বিচ্যুত বলেই মনে হয়। যে মূল্যবােধ ও সৌজন্যবােধ প্রতিটি মানুষকে যথার্থরূপে পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে গড়ে তােলে, সেই মূল্যবােধ, সৌজন্যবােধ আজ কোথায় | যেন বিলীন হয়ে গেছে।


শিক্ষার সাথে মূল্যবােধের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। কারন প্রকৃত শিক্ষা তখনই সম্ভব, যখন মানুষ মূল্যবােধকে পাথেয় করে শিক্ষাকে বহন করে চলে। সম্প্রতি প্রতিটি পিতা-মাতা জীবনের সকল সুখশান্তি, স্বাচ্ছন্দ্যকে উপেক্ষা করে, তুচ্ছ করে, তাদের সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তাদের সেই সন্তান উচচশিক্ষিত হয়ে প্রবাসী, পরবাসী বা অনাবাসী হয়ে একটা বিশাল অ্কের উপার্জনশীল জীবে পরিণত হয়। জীবনের বৃহত্তম উন্নতির জন্য পিতা-মাতা একটা বাধা, বলা ভালাে অন্তরায়। তখন কি শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয়? তাদের কাছে শুধু বিষয়, সম্পতি, প্রতিপত্তি, খ্যাতি, যশ, প্রভাবই শুধু মুখ্য, বাকি জগৎসংসার তুচ্ছ। যদিও সর্বক্ষেত্রে এটা সত্য নয়।


শিক্ষাক্ষেত্রে যেভাবে বাণিজ্যিকিকরণের থাবা গ্রাস করে চলেছে, তাতে সরকারি পৃষ্ঠপােষকতায় শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিতে চলেছে। এখন অর্থের বিনিময়ে শিক্ষাকে প্রসারিত করা, যেখানে শিক্ষা একটা পণা, সেবা নয়। শিক্ষালয় একটি সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যার মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষাকে সেবা | হিসাবে প্রদান করা, যা কখনও অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় না। কিন্তু বাণিজ্যে অর্থের মাপকাঠিকে পরিমাপ করা যায় না, এমন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই শিক্ষার মধ্যে বাণিজ্য প্রৰশ করলে শিক্ষার | প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। দুখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি মুনাফা অর্জনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি মুনাফাভােগী সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই অদূর ভবিষ্যতে অমুনাফাভােগী সেবার মনােভাবে তৈরি সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা কিন্তু সত্যি চিন্তার উলােধ ঘটায়।


তাই মূল্যবােধ যেখানে প্রহসনমাত্র, শিক্ষার ব্রত যেখানে পণ্য, শিক্ষা যখন উপার্জনের একটি মাধ্যম, অনুশাসন যেখানে বাতুলতা মাত্র, পরিষেবা যখন নিমিত্ত মাত্র, শিক্ষকরা যখন হাস্যান্পদ, শিক্ষার মাধ্যম যখন বিপথগামী, শিক্ষার্থীরা যখন নিছক পরীক্ষিত, তখন আমাদের চিন্তার সময় এসেছে। আমাদের করণীয় কী? সমাজের বর্তমান এই অবক্ষয়মান পরিস্থিতির নিরিখে আমাদের কী করা উচিত ? শিক্ষাকে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদের হাতে ন্যস্ত করলে হবে না। শিক্ষাকে তাদেরই হাতে তুলে দেওয়া উচিত, যারা প্রকৃত অর্থে | শিক্ষাবিদ। কোনও রাজনৈতিক উর্দিধারী শিক্ষাবিদদের হাতে নয়। যারা প্রতিনিয়তই শিক্ষাকে নিয়ে গবেষণা করে চলেন, শিক্ষার সার্থক রূপ দান করার জন্য। তাই শিক্ষার মেরুণ বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাকে যারা পণ্য। করে কখনাে রক্তিমীকরণ, কথনাে গৈরিকিকরণ, কখনাে বা শ্যামলায়ণ না করে প্রকৃতভাবে ধবলীকরণের সদিচ্ছা প্রকাশ করতে হবে। যারা মঞ্চের আড়ালে শিক্ষাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করে, যারা | শিক্ষানুরাগী, যাঁরা শিক্ষাব্রতী, যাঁরা শিক্ষার পৃষ্ঠপােষক, যারা শিক্ষাকে বহন করতে পারবে, তাঁদের হাতে শিক্ষার পাঠক্রম পরিকাঠামোর ভার তুলে দিতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আমলা যাঁরা আছেন তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে গিনিপিগের ন্যায় প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনাে তাে পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক ভুলে ভ্রান্ত, কখনো বা ভৌগােলিক ভুলে। এখন আবার দেশিয় মনীষী, দার্শনিকদের মতবাদকে উপেক্ষা করে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রকোপে পড়ে রবীন্দ্র, নজরুল, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ ইত্যাদিকে | ভুলে বসতে চলেছি। নিজেদের রাজ্যের, দেশের পরিচিতি না জেনেও পশ্চিমী দুনিয়াকে জানতে পারলেই যেন


ধন্য করে তুলি জীবনকে, শিক্ষাকে। আমরা যেন 'নিজ গৃহে পরবাসী হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করি। তাই পরিশেষে জানাই, যাই হােক না কেন শিক্ষাকে প্রকৃরূপে বিকশিত করার জন্য কবিগুরুর কথা | দিয়েই শেষ করছি - "শিক্ষার প্রকৃত বিকাশ ঘটানোর জন্য চাই সামজিক উদ্যোগ, মানবিক উৎকর্ষতা, যখন আমরা শিক্ষাকে বাহন করতে পারব।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational