হাবিবুর রহমান রাফি

Horror Classics Thriller

3  

হাবিবুর রহমান রাফি

Horror Classics Thriller

শেষটা আমার ছিল

শেষটা আমার ছিল

9 mins
387



দীর্ঘ দিন ধরে ছোট বোন নিলা অসুস্থ। বয়স যখন ২ বছর তখন থেকেই ওর বুকে ব্যাথা করে প্রচন্ড। দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু ফলাফল শুন্য। 


বাজার থেকে বাসায় ফিরছি। করিম চাচার সাথে দেখা, 

-" রাফি , তোমার বোনটা কেমন আছে এখন? 


-' ওইতো চাচা আগের মতোই, ডাক্তার তো অনেক দেখাচ্ছি কিন্তু কেউই কিছু করতে পারলো না।


-" আমি বলি কি বাবা, কুমিল্লায় এক বিশাল কবিরাজ আছে। আমার আম্মারও এমন ব্যাথা ছিলো, উনার ঔষধে এখন আম্মা পুরোপুরি সুস্থ।


-' কিন্তু চাচা, বাহিরের দেশের এতো বড় বড় ডাক্তার কিছু ধরতে পারলো না। এই কবিরাজ পারবে?


-" একবার গিয়েই দেখো। খুব নামধাম বেটার। 


-' আচ্ছা চাচা ধন্যবাদ। আজ আসি। 


চাচার কথাটা বাসায় এসে আম্মারে বললাম। আম্মা কবিরাজে বিশ্বাসী না তাই কুমিল্লায় যাওয়ার ব্যাপারে একমত না। 

রাতে আব্বু বাসায় আসার পর আব্বুকে বললাম,


-' করিম চাচা বলছিলেন, কুমিল্লায় নাকি এক নামকরা কবিরাজ আছে। অনেক লোক নাকি তার ট্রিটমেন্ট-এ সুস্থ হইসে। 


-" দেখ বাপ, অনেক তো দেশি বিদেশি বড় বড় ডাক্তার দেখাইলাম। এই কবিরাজ টবিরাজ আর কি করবো?


-' আব্বু, সব চেষ্টাই তো করলাম। এইটাও করি। অন্তত নিজের মনকে তো সান্ত্বনা দিতে পারবো যে কোনো ট্রিটমেন্ট বাদ দেইনি নিলার জন্য।


-" আচ্ছা বাপ তুই যা ভালো মনে করস কর।


গত ছয়দিন যাবৎ নিলার ব্যাথাটা বেড়েছে, তাই সকাল সকাল রওনা হয়েছি কুমিল্লার সেই কবিরাজের উদ্দেশ্যে। করিম চাচা বলেছিলো, কুমিল্লা যেয়ে কাউকে "গামা ফকির" এর নাম বললেই আস্তানা দেখায় দিবে। করিম চাচার কথা অনুযায়ী একজনকে জিজ্ঞেস করলাম গামা ফকিরের কথা। তার দেখানো রাস্তা অনুযায়ী পৌছে গেলাম কুমিল্লার সেই বিখ্যাত কবিরাজের আস্তানায়।


চারপাশের পরিবেশটা নিরিবিলি। পাশে একটি ছোট্ট খাল দেখা যাচ্ছে। একটি বিশাল বটগাছের নিচে সেই কবিরাজের আস্তানা। চারদিকে অনেক হাড়গোড় আর গাছের ছাল চামড়া ঝোলানো। 


"কবিরাজ নিলার হাতটা দেখে বললো, ওর তো মহা বিপদ, ও মৃত্যু ঝুকিতে আছে। ওর জন্য তোদের অনেক কাঠখড় পুড়াতে

 হবে। তোরা অনেক দেড়ি করে ফেলেছিস। 

-"তারপরই আব্বু বললেন, ওর বুকে ব্যাথা করে ছোটবেলা থেকে। এখন পর্যন্ত দেশে বিদেশে অনেক ডাক্তার দেখাইসি। কোনো কাজ হয়নাই। তারপর আপনের সন্ধান পাইয়া এইখানে আইসি।

-" ওর জন্য তোদের অনেক ভয়ঙ্কর পথ পারি দিতে হবে। যদি পারিস তাহলেই তোদের মেয়ে সুস্থ হবে আর সব বিপদ কেটে যাবে। 

-" কি করতে হবে? 

-"তোরা সবাই আমার এখান থেকে বের হ, তোদের মধ্যে যে সবথেকে সাহসী সে একা থাক আমার সামনে আর তোদের মেয়ে থাকবে। বাকিরা সবাই এখান থেকে বের হ।


ফকির বাবার কথা শুনে আব্বু আম্মুকে বাইরে যেতে বললাম। কারন মা এসবে বিশ্বাসী না, আর বাবা হার্টের রুগি। তাই আমি আর আমার বোন বসে আছি। 


-" কি হয় তোর?

- আমার ছোট বোন! খুব আদরের। 

-" শুন, তোর বোনের সামনে অনেক বিপদ। কিন্তু এর থিকা মুক্তির একটা পথ আছে। খুব গোপনে করতে হবে। কেউ যদি জানে তইলে কিন্তু ঔষধ কাম করবে না। 

-" কি করতে হবে বাবা? আমি পারবো। আপনে বলেন আমার বোন কিভাবে সুস্থ হবে।

-" তোর বোনের চিকিৎসার জন্যে ৩ টা জিনিস লাগবো। এই ৩ টা যদি তুই আনতে পারিস তইলেই তোর বোনের সব ব্যাথা দূর হইয়া যাইবো। তবে আমি একবার যদি আমার চিকিৎসার উপকরণ তোকে বলি, তারপর তুই যদি সেটা আনতে না পারিস অথবা ভয়ে পিছিয়ে যাস তাহলে তোর আর তোর বোনের মৃত্যু হবে। 

-" কি কি আনতে হবে, বলেন। আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি আপনাকে।

-" যত সহজ ভাবছিস খোকা, কাজটা ততটাই কঠিন। 

তোকে প্রথমে একটা দুগ্ধপান করা শিশুর রক্ত আনতে হবে এক গ্লাস। 

তারপর তোকে আনতে হবে দুই বছর আগে মারা যাওয়া কোনো মৃত ব্যক্তির বুড়ো আঙুলের হাড়। তবে সেটা করতে হবে ঠিক রাত ১ টা থেকে ১.৩০ এর মধ্যে। এই সময় অতিক্রম করলে তোর মৃত্যু নিশ্চিত। 

এরপর সদ্য মারা যাওয়া একজন মানুষের হৃৎপিন্ড আনতে হবে তোর।

আর এই সবগুলো কাজ তোর একা করতে হবে। এই কাজগুলো তুই আর তোর বোন ছাড়া ৩য় কোনো ব্যক্তি যদি জানে তাহলেও তোদের বিপদ বেড়ে যাবে। তাই খুব সাবধানে সব করতে হবে।

-" কিন্তু বাবা.....

আমার কথা শেষ না হতেই,

-" কোনো কিন্তু না, এখন যা। ভুলে যাস না, খুব গোপনে করতে হবে সব। ভয় পেলেই মৃত্যু নিশ্চিত। সবগুলো নিয়ে আমার কাছে চলে আসবি। তারপর দেখবি তোর বোন ঠিক হয়ে গেছে।


আজ দুইদিন ধরে চোখে এক ফোটা ঘুম নেই। সারাক্ষণ ভাবছি কিভাবে কি করবো। ওই কবিরাজ যা বললো সেটা খুব কঠিন কাজ। বোনের সুস্থতার জন্য একটা নিষ্পাপ শিশুকে মেরে তার শরীর থেকে রক্ত নিতে হবে, রাতের আধারে কবর খুড়ে বুড়ো আঙুলের হাড় আনতে হবে, সদ্য মৃত্যুবরণ করা কারো হৃৎপিন্ড নিতে হবে। আমি একজন মানুষ হয়ে কিভাবে করবো এগুলা। মৃত মানুষের গুলো নাহয় করলাম কোনোভাবে কিন্তু একটা নিষ্পাপ শিশুর রক্ত কিভাবে নিব। আমার মাথার একদিকে কাজ করছে বোনের সুস্থতা, অন্যদিকে আছে একটা শিশুর জীবন। কিন্তু সবশেষে আমার বোনের সুস্থতাকেই আমি বেছে নিলাম।


 সারাদিন খোজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম আমাদের তিন বিল্ডিং সামনেই মিরাজ ভাইয়ের কন্যা সন্তান হয়েছে, আজ ১ মাস প্রায়। মিরাজ ভাই সারাদিন অফিসের কাজে থাকেন আর ওনার স্ত্রী বাসায় সন্তান নিয়ে ব্যস্ত থাকে। 

দীর্ঘ ১৫ দিন তাদের বাসায় নজর রাখছি । কখন বাচ্চা ঘুমায়, কখন বাচ্চাটা একা থাকে, কোন সময় তার স্ত্রী বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে রান্নার কাজে যায় সবকিছু।

আজ সময় হয়েছে বাচ্চাটা চুরি করার। খুব কৌশলে মিরাজ ভাইয়ের স্ত্রী যখন তার বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে গোসলে গেলেন আমি পিছনের জানালা দিয়ে রুমে ঢুকে বাচ্চাটা নিয়ে আসলাম। কিন্তু এখন এই বাচ্চা নিয়ে কই যাবো? কেউ জানলে আমিও মরবো সাথে আমার বোনও মরবে। কিছু না ভেবে বাচ্চাটাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন পুশ করে দিলাম, তারপর ভার্সিটির ব্যাগে আস্তে করে ঢুকিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। 

রাতের বেলায় বাড়ির ছাদে গিয়ে বাচ্চাটাকে খুব নৃশংসভাবে ছুড়ি দিয়ে মারলাম আর কবিরাজের কথা অনুযায়ী ১ গ্লাস রক্ত নিলাম। 

প্রথম কাজ শেষ করলাম কিন্তু লাশ কই ফেলবো! ভাবতে ভাবতে বাড়ির পিছনের নির্জন জায়গায় লাশটা পুতে ফেললাম। এই জায়গায় কেউ আসেনা। সবসময় একটা শান্ত পরিবেশ বজায় থাকে।

সকালবেলা ঘুম ভেঙে গেলো আতিফের ফোনে,

-" মামা খবর শুনসস? 

-" কি?

-" মিজান ভাইয়ের মাইয়াডা কালকে থিকা নিখোঁজ। 

-" কোন মিজান ভাই? চিনলাম না তো। আর নিখোঁজ মানে?

-" আরেহ সিয়াম ভাইগো লগে আড্ডা দিতো যে, তোগো কয়েক বিল্ডিং সামনেই থাকে। লম্বা কইরা সুন্দর চেহারা। গত মাসেই ওনার মাইয়া হইসে, কালকে দুপুরে নাকি বাসা থিকাই খুইজা পাইতাসে না, ওনার বউ গোসল কইরা বাহির হইয়া দেখে মাইয়া নাইগা বাসায়।

-" ওহ আচ্ছা চিনসি। কিন্তু মাইয়া নিখোঁজ হইলো কেমবে বাসা থিকা।

-" জানিনা! আমরা সবাই মিজান ভাইয়ের বাসার সামনে তুইও আয়।


ফোনটা কেটে দিলাম। মুখে হালকা পানির ঝাপটা দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সবাই আছে সেখানে। আমি না গেলে কেউ যদি আবার সন্দেহ করে। 


রাত প্রায় ১২ টা। বাসার সবাই ঘুমের নগরীতে পাড়ি দিয়েছে। চাবিটা নিয়ে আস্তে করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম কবরস্থানের উদ্দেশ্যে।চারদিকে নিরব এক পরিবেশ। কয়েকটা কুকুর ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছেনা। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বোনের ভালোর জন্য আজ সব বাধা পার করতে হবে। হাটতে হাটতে কবরস্থানের সামনে চলে এসেছি। রাত এখন কাটায় কাটায় ১ টা বেজে ১ মিনিট। গার্ডরা সব গভীর ঘুমে ব্যস্ত।


ধীরে ধীরে পা বাড়ি সামনে আগাতে লাগলাম আর প্রত্যেকটা কবরের উপর মৃত্যুর তারিখ নজরে রাখছি। আমার প্রয়োজন ২ বছর আগের একটি কবর। আমার চারিদিকে এখন কবর আর কবর। আমি মাঝে এক জ্যান্ত মানুষ দাড়িয়ে আছি। মনে হচ্ছে কবর থেকে আত্মাগুলো আমায় এক্ষুনি টেনে নিয়ে যাবে মাটির নিচে। 


হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কবর। ঠিক দুই বছর আগের। আমি চারিদিকে একবার তাকালাম। হাতে থাকা কোদাল দিয়ে মাটি কোপাতে আরম্ভ করেছি। মনে হচ্ছে নিজের কবর নিজে তৈরি করছি। কলিজা শুকিয়ে আসছে। তাও হাত চালিয়ে যাচ্ছি। একসময় বুঝতে পারলাম সাদা কিছু উকি দিচ্ছে। বুঝতে পারলাম এটাই কাফনের কাপড়। কবরের ভিতর নেমে গিয়ে আস্তে আস্তে হাত দিয়ে মাটি গুলো সড়িয়ে নিলাম। কাপড় টা খুলতেই মনে হচ্ছে লাশটা আমার দিকে চেয়ে আছে। সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই বুঝি কেউ আমায় মাটি চাপা দিয়ে দিবে। 

 

ভয়কে দূরে সরিয়ে পকেট থেকে মিনি চাপাতিটা বের করে বুড়ো আঙুলে ফেলতেই আঙুলটা ছিটকে লাশের মুখের উপর চলে গেলো। কোনোরকমে আঙুলটা সেখান থেকে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়েছি।


কিন্তু এখন এখান থেকে বের হবো কিভাবে। আমার শরীরের সব শক্তি যে শেষ। নিজেকে এই বিশাল কবরস্থানে তুচ্ছ এক জীব মনে হচ্ছে। নিজের মনের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে কবর থেকে উপরে উঠে আসলাম। কোদাল দিয়ে মাটিগুলা ফেলেই বড় বড় পায়ে হাটা ধরলাম। ১ টা ২৭ বাজে। আমার হাতে সময় আছে ৩ মিনিট। আমি একবারের জন্যেও পিছনে তাকাচ্ছি না। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে পুরো কবরের আত্মারা যেনো আমায় ডাকছে। তারা আমার কাজের জন্য আমার উপর ক্ষেপে আছে। এক দৌড়ে সেখান থেকে বাসায় চলে আসি। একবারের জন্যও নিজেকে থামাইনি। এসেই নিজের ঘরে শুয়ে পড়লাম।


ঠিক তার নয় দিন পর খবর পেলাম পাশের এলাকার রত্না সুইসাইড করেছে। কি কারনে করেছে কেউ জানেনা। খবর পেয়েই আমি সেখানে চলে যাই। মেয়েটা গলায় ফাস দিয়েছে। একেকজন একেক ধরনের কথা বলছে। কেউ বলছে আত্মহত্যা করেছে কেউ বলছে খুন করে লাশ ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।  

যে করেই হোক এই মেয়ের হৃৎপিন্ড আমাকে নিতেই হবে। কিন্তু কিভাবে নিব বুঝতে পারছি না। হঠাৎ দেখি পুলিশ লাশ নিয়ে যাচ্ছে পোস্টমর্টেম করবে এজন্য। বাবা-মা কেউ দিতে রাজি না কিন্তু এই লাশ নিতেই হবে বারবার বলছেন একজন পুলিশ।

আমি তাদের পিছু পিছু যাচ্ছি। লাশটা যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখান থেকেই হৃৎপিন্ডটা চুরি করবো। আমার বোনকে তো আমার বাচাতেই হবে। এমন সময় বাসা থেকে আব্বুর কল,


-" কোথায় তুই? সেই দুপুরে বেড়িয়েছিস বাসা থেকে কাউকে না বলে, এখন সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। তোমার বোনটা অসুস্থ, সেই জ্ঞান কি তোমার আছে?; খুব রাগান্বিত কণ্ঠে আব্বু কথাগুলো বললো। আমি শান্ত গলায় বললাম,

-" একটু কাজে বেড়িয়েছি, আসতে রাত হবে। চিন্তা করো না। তোমরা খেয়ে নিও। 

বলেই ফোন রেখে দিলাম।


হাসপাতালের লাশঘরে ঢুকেছি। লাশটা আমার সামনে। পুরো রুমে আমি ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা। কোনার দিকে একটি বিশাল টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হরেক রকমের ছুড়ি। হয়তো এগুলো দিয়েই লাশ কাটাকাটি করা হয়। তখন কেউ একজন বলাবলি করছিলো এই লাশটার পোস্টমর্টেম হবে রাত ৩ টায়। এখন মাত্র ৮ টা বাজে। তারমানে কারো আসার চান্স নেই। নিজেকে আজ সফল মনে হচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে সেটা জানিনা। ধীর পায়ে কর্নারের টেবিল থেকে কয়েকটা ছুড়ি নিলাম। ছুড়ি যে এতো প্রজাতির হতে পারে ভাবিনি কখনো। আস্তে আস্তে মেয়েটার বুক কেটে হৃৎপিন্ডটা বের করেছি। কিন্তু কেন যেনো ভয় হচ্ছে এই মূহুর্তে। অজানা এক ভয়।


আরেহ রাফি! তুই কবর থেকে আঙুল চুরি করেছিস, বাচ্চা মেরে রক্ত নিয়েছিস, একটা মেয়ের শরীর থেকে হৃৎপিন্ড নিয়েছিস। এতো সাহসী সব কাজ করে এখন লাশঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছিস। 

নিজের মনকে কথাগুলো বলছিলাম, সাহস যোগান দেয়ার জন্য। লাশঘর থেকে বেড়িয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম। 


এখন আমার কাছে কবিরাজ এর বলে দেয়া সবগুলো জিনিসই আছে। কাল সকালেই বোনকে নিয়ে যাব। বোন এখন সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যাবে। ওর বুকে আর ব্যাথা করবে না। কথাগুলো ভাবতেই লক্ষ করলাম চোখের কোণায় জল এসে গেছে।


সকাল ৬ টা। আমি আর নিলা কুমিল্লা যাচ্ছি। বাবা-মা বাসায়ই আছেন। বোনটা আমায় বারবার জিজ্ঞেস করলো আমি এতো কিছু কিভাবে করলাম, আমি কি আসলেই কোনো বাচ্চাকে মেরে ফেলেছি? বারবার প্রশ্নগুলো শুনতে আর ভালো লাগছিলো না। তাই ধমকের সুরে ওকে চুপ করিয়ে দিলাম।


কবিরাজের সামনে বসে আছি আমি আর নিলা। সেই ১ গ্লাস রক্ত, কবর থেকে নিয়ে আসা বুড়ো আঙুল আর সদ্য মৃত্যু হওয়া একজনের হৃৎপিন্ড গামা ফকিরের দিকে এগিয়ে দিলাম।

সে কিছুক্ষণ দেখে বলো, অন্য কেউ এই ব্যাপারে জানে কিছু?

আমি 'না' সূচক জবাব দিলাম।

কবিরাজ আঙুলটা নিয়ে একটি তাবিজের মতো বানিয়ে নিলার হাতে পড়িয়ে দিল আর রক্ত ও হৃৎপিন্ড একসাথে নিয়ে কি যেনো মন্ত্র পড়তে লাগলো।

নিলার গায়ে কতগুলো 'ফু' দিয়ে আমাদের চলে যেতে বললো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কাজ শেষ? বোন সুস্থ হয়ে যাবে?

ফকির বাবা উত্তর দিলো, সাতদিনের মধ্যে তোর বোন সুস্থ হবে আর ঠিক সাতদিন পর এই আঙুলের তৈরি তাবিজ খুলে ফেলবি। নাহয় মহা বিপদ হবে।


কবিরাজ দেখানোর পর আজ প্রায় এক মাস হয়ে গেছে। বোন আমার সম্পূর্ণ সুস্থ। বুকের ব্যাথাটা আর নেই। কিন্তু আমি মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পরেছি। বারবার সেই ছোট্ট বাচ্চাটার কথা মাথায় ঘুরছে। একটা অপরাধবোধ আমায় তাড়া করে বেরাচ্ছে। একটা বাচ্চা মেয়েকে মেরে ফেললাম, একটা মায়ের কোল খালি করে দিলাম! কথাগুলো বারবার আমার মনে ধাক্কা দিচ্ছে। মনের এই যুদ্ধে আজ নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে। 


আমি কাজ টা ঠিক করিনি। আমার জন্য দুইজন মানুষ আজ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সেখানে আমি শান্তিতে জীবনযাপন করবো এটা হতেই পারেনা। আজ সব চাপ থেকে মুক্ত হতে হবে। ছাদের কার্নিষে দাড়িয়ে কথাগুলো বিবেকে নাড়া দিচ্ছিলো। হঠাৎ কি হলো মনে বুঝলাম না, ঝাপ দিয়ে দিলাম ছাদ থেকে। আমার নিথর দেহটা পরে গেছে রাস্তায়। মানুষজন জড়ো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই আমার পরিবারের লোকজন চলে এলো। আমি তাদের কান্না দেখছি, অনুভব করছি সেদিন মিরাজ ভাইয়ের কষ্টগুলো। মনে পড়ে যাচ্ছে পরিবারের সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো। কিন্তু যেটা চলে গেছে সেটা ফিরে আসবে না। ফিরে আসবে না সেদিনের ছোট বাচ্চাটা অথবা আমি নিজে। 




Rate this content
Log in

More bengali story from হাবিবুর রহমান রাফি

Similar bengali story from Horror